টপস্পিনার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

টপস্পিনার হলেন ক্রিকেটের এমন এক বোলার যিনি হয় কব্জি স্পিন অথবা আঙুলের স্পিন বোলিং করতে পারেন। উভয় ক্ষেত্রেই বোলার তাঁর হাত থেকে ছাড়ার আগে নিজের হাতের আঙ্গুলের মোচড় দিয়ে বলটিতে শীর্ষ স্পিন প্রয়োগ করে দেন। উভয় ক্ষেত্রেই টপস্পিনারের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া বলটি - কব্জি স্পিনারের ক্ষেত্রে হয়ে যায় তাঁর গুগলি এবং আঙুলের স্পিনারের ক্ষেত্রে হয়ে যায় তাঁর দুসরা। এডি ‘স্পিনের রাজা’ ম্যাকগুইয়ার এবং ২০২০ সালের জন্য স্পিনার ক্লাবের শীর্ষস্থান লাভ করেছে কলিংউড ফুটবল ক্লাব।

মেকানিক্স[সম্পাদনা]

টপস্পিনার তাঁর আঙ্গুলকে শীর্ষ এনে এমনভাবে বলটিকে মুক্ত করেন যে সেটি ঘূরতে ঘূরতে ব্যাটসম্যানের দিকে বাতাসে ভর করে উড়ন্তভাবে (ফ্লাইট) এগিয়ে যায়। বলের ঘূর্ণনশীল অগ্রগতি বাতাসে এগোনোর সময় বাধাগ্রস্ত হলেও বলের নীচের অংশ তাকে বাতাসে এগোতে সহায়তা করে। বলের ওপরে এবং নীচে বায়ুচাপের এই পার্থক্য (ম্যাগনাস এফেক্ট নামে বর্ণিত) একটি নিম্নগামী বল প্রয়োগ করে যার অর্থ বলটি স্বাভাবিকের চেয়ে আগে এবং দ্রুততার সঙ্গে পতনশীল হয়।

ক্রিকেটীয় শর্তে এর অর্থ দাঁড়ায় বলটি তুলনায় স্বল্প দূরত্বে দ্রুততার সঙ্গে পড়ে এবং ব্যাটসম্যানের প্রত্যাশার তুলনায় সেটি উচ্চতর বাউন্সযুক্ত হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রে ক্রিকেটীয় পরিভাষায় বলা হয় "লুপিং" বা "লুপী" বল ছাড়া (ডেলিভারী)। এছাড়াও কব্জি স্পিন এবং আঙুলের স্পিন -এ স্টক ডেলিভারির তুলনায় বলটি প্রায় সোজা দিকে চালিত হয়ে বামে বা ডানদিকে ভেঙ্গে যেতে প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে স্টক ডেলিভারীর সাথে এই ভঙ্গীমাটির খুব মিল থাকায় কোনও ব্যাটসম্যান সহজেই এই ধরনের বল দ্বারা প্রতারিত হতে পারেন। স্টক ডেলিভারীর তুলনায় এই বলের উড়ান (ফ্লাইট) আরও গভীর হওয়ার কারণে প্রত্যাশার চেয়ে বলটি মাটিতে ব্যাটসম্যানের থেকে কম দূরত্বে পড়ে। বেশিরভাগ সময় উত্থানের এই বর্ধিত কোণটি বাড়তি বাউন্সের সাথে ঘটে। তখন এই বলকে আক্রমণ করা বিশেষ কঠিন হয়ে পড়ে। কৌশলগতভাবে টপ স্পিনার এই গভীর ও অতিরিক্ত বাউন্স প্রয়োগ করার আগে ব্যাটসম্যানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসতে প্রলুব্ধ করেন। বিশেষ করে ব্যাটসম্যান সুইপ অথবা ড্রাইভ মারতে গেলে বাড়তি বাউন্সের দ্বারা পরাজিত হতে পারেন এবং ক্যাচ উঠে যেতে পারে। তবে কোনও অপ্রস্তুত নরম উইকেটে বলের স্পিন প্রকৃতপক্ষে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে ঢিমে হয়ে চালিত হয়। সেটি আবার ব্যাটসম্যানের মোকাবেলার পক্ষেও কঠিন ডেলিভারি হয়ে পড়ে। [১]

আঙুলের স্পিন[সম্পাদনা]

টপস্পিনারদের একটি সাধারণ প্রকারভেদ হ'ল আঙুলের স্পিনের অস্ত্র।[২] এ রকম ডেলিভারির সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি হ'ল হাতের পাশ দিয়ে ব্যাটসম্যানের দিকে হাতকে তাক করে স্টক ডেলিভারির চেয়ে আরও ভালভাবে বাহু দিয়ে বল ডেলিভারী করা হয় এবং বলটিকে প্রথম আঙুলের সাহায্যে বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এইভাবে বলটি সরাসরি ব্যাটসম্যানের দিকে স্পিন করে। [৩] তবে মুত্তিয়া মুরালিধরন ব্যবহৃত দ্বিতীয় পদ্ধতিটিতে হাত আরও ঘোরানো হয় যাতে হাতের পিছনের দিকটি ব্যাটসম্যানের মুখোমুখি দিকে হয়ে যায়; তার পরে কব্জির মোচড় দিয়ে বলটিকে প্রচুর পরিমাণে স্পিন দেওয়া হয়। ডানহাতি অফস্পিনার বোলার পিচের অন অথবা অফ-স্টাম্পের বাইরে এই ডেলিভারিটি দিয়ে থাকেন। তাঁর প্রত্যাশা থাকে ব্যাটসম্যান বাঁকে খেলবেন এবং ব্যাটের কিনারায় লেগে উইকেটের পিছনে বলটি (ক্যাচযোগ্য) যাবে। ব্যাটের অভ্যন্তর প্রান্তে লাগিয়ে পরাস্ত করে বোল্ড বা এলবিডব্লিউ করার উদ্দেশ্যে বাঁহাতি অর্থোডক্স বোলার সাধারণত মিডল স্টাম্পে বলটি করেন। মুত্তিয়া মুরালিধরন, টিম মে এবং হরভজন সিং এর মতো অফস্পিনার এই ডেলিভারী প্রায়ই ব্যবহার করতেন।

কব্জি স্পিন[সম্পাদনা]

টপস্পিনারদের আর একটি প্রকারভেদ হ'ল কব্জি স্পিনের অস্ত্র এবং সাধারণত স্টক ডেলিভারীতে দক্ষতা অর্জনের পরে তরুণ কব্জি স্পিন বোলারকে তাঁর প্রথম প্রকরণটি শেখানো হয়। এ রকম ডেলিভারির সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতিটি হ'ল হাতের পাশ দিয়ে ব্যাটসম্যানের দিকে হাতকে তাক করে বলটি স্টক ডেলিভারির চেয়ে আরও উচ্চতায় বাহু দিয়ে ডেলিভারি করা হয় এবং বলটিকে তৃতীয় আঙুল থেকে এমনভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় যেন সেটি স্পিন করে সরাসরি ব্যাটসম্যানের দিকে যায়। ডানহাতি লেগস্পিন বোলার সাধারণত মিডল স্টাম্পে বলটি ডেলিভারি দেন। এই ভাবে বোলার ব্যাটের অভ্যন্তর প্রান্তকে পরাস্ত করে বোল্ড বা এলবিডব্লিউ লাভের চেষ্টা করেন। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের কাছে তিনি বলটি দিয়ে ব্যাটের বাইরের প্রান্তে স্পর্শ করানোর চেষ্টা করেন এবং ব্যাটসম্যানকে ক্যাচ করে আউট করার জন্য তা ব্যবহার করেন। [১] শেন ওয়ার্ন এবং অনিল কুম্বলে এর মতো আধুনিক কব্জি স্পিনার প্রায়ই এই ধরনের বল করতেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Peter Philpott "The Art of Wrist Spin Bowling"
  2. http://video.google.com/videoplay?docid=-1622125182818951912#
  3. Bob Woolmer "the Art and Science of Cricket"