জাতিসংঘে বাংলা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলা ভাষা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা এবং এটি প্রায় ২৬ কোটি লোকের মাতৃভাষা। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রধান ভাষা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা এবং বাংলাদেশ, ভারত, নেপালপাকিস্তানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে: ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, স্প্যানিশ, চীনা এবং আরবি। বাংলা এই ভাষাগুলোর মধ্যে একটি নয়। বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘে বাংলা ভাষার দাবিকে সমর্থন করার জন্য অন্যান্য দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করছে।[১]

জাতিসংঘে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি পেলে এর অনেক সুবিধা হবে। এটি বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার মর্যাদা বাড়াবে এবং বাংলাভাষী মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করা সহজ করবে।[১]

উদ্যোগ[সম্পাদনা]

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য কাজ শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টকে একটি চিঠি লেখেন এবং বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করার অনুরোধ জানান।[২]

১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল সহ ১৪টি দেশের সমর্থন পায়।[৩]

প্রতিকূলতা[সম্পাদনা]

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য বেশ কিছু প্রতিকূলতা/চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অর্থের অভাব।[৪][৫] জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি পেতে হলে একটি দেশের অবশ্যই জাতিসংঘের বার্ষিক বাজেট নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং জাতিসংঘের বাজেটে এর অবদান খুবই সামান্য।[৪][৫][৬]

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক প্রভাব। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি পেতে হলে একটি দেশের অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাবশালী হতে হবে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ এবং এর আন্তর্জাতিক প্রভাব সীমিত। বাংলা ভাষার জন্য জাতিসংঘের সভাগুলোতে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং দক্ষতা তৈরি করা ব্যয়বহুল। বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।[৬] বাংলাদেশ সরকার যদি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারে, তাহলে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার সম্ভাবনা রয়েছে।[৭]

বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।[৮] বাংলাদেশের সরকার বিশ্বাস করে যে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা হলে এটি বাংলা ভাষার মর্যাদা এবং গুরুত্ব বাড়াবে এবং এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Editor। "বাংলা কবে হবে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা?"www.amadershomoy.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮ 
  2. "বঙ্গবন্ধু ও জাতিসংঘে বাংলা ভাষা"www.kalerkantho.com। ২০২৩-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮ 
  3. "জাতিসংঘ ও বাংলা ভাষার মর্যাদা"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮ 
  4. "অর্থের জন্য বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা যাচ্ছে না ----------পররাষ্ট্রমন্ত্রী"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮ 
  5. "জাতিসংঘে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ 
  6. হোসেন, মো তৌহিদ (২০২১-০৩-০৯)। "জাতিসংঘে বাংলা ভাষা: গরিবের ঘোড়ারোগ"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮ 
  7. "জাতিসংঘে বাংলা ভাষা"BBC News বাংলা। ২০১২-০২-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮ 
  8. "বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি"banglanews24.com। ২০১৯-০২-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮ 
  9. "বঙ্গবন্ধু ও জাতিসংঘে বাংলা ভাষা"www.kalerkantho.com। ২০২৩-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮