চিত্রা বিশ্বেশ্বরন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চিত্রা বিশ্বেশ্বরন
সিয়াটেলে এক অনুষ্ঠানে চিত্রার নৃত্য পরিবেশন]]
জাতীয়তাভারতীয়
পেশানৃত্যশিল্পী
পরিচিতির কারণএকাডেমি অফ পারফর্মিং আর্টসের প্রতিষ্ঠাতা
ভারতের কেরালায় এক অনুষ্ঠানে চিত্রার নৃত্যানুষ্ঠান

চিত্রা বিশ্বেশ্বরন হলেন একজন ভারতীয় ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী, যিনি চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম একাডেমি অফ পারফর্মিং আর্টস নামে একটি নৃত্য প্রশিক্ষণালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক।

ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পে তাঁর অবদানের জন্যে ১৯৯২ সালে ভারত সরকার দ্বারা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছেন তিনি।[১][২][৩]

প্রাথমিক জীবন ও প্রশিক্ষণ[সম্পাদনা]

চিত্রা তিন বছর বয়সে তাঁর মা রুক্মিণী পদ্মনাভনের কাছে নৃত্য প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন; তাঁর মা রুক্মিনী ছিলেন সমসাময়িক ভারতীয় নৃত্য এবং ভরতনাট্যমের একজন প্রশিক্ষিত শিল্পী। তাঁর বাবা ভারতীয় রেলওয়ের একজন প্রকৌশলী ছিলেন এবং বাবার চাকরিসূত্রে সপরিবারে লন্ডনে চলে যাওয়ার পরে চিত্রা ধ্রুপদী ব্যালে নৃত্যে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন। পরে, কলকাতায় ফিরে আসার পরে, তিনি মণিপুরী এবং কত্থক নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়া, দশ বছর বয়সে, তিনি কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী তিরুভিদাইমারুদুরের অন্যতম সেরা দেবদাসী টি.এ.রাজলক্ষ্মীর অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম মঞ্চাভিনয় হয়েছিল নৃত্য প্রশিক্ষণের দশ মাসের মধ্যেই এবং তিনি প্রায় এক দশক ধরে রাজলক্ষ্মীর সাথে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছিলেন।

তেরো বছর বয়সে, চিত্রা ভরতনাট্যমের সবথেকে কঠিন অংশ 'বর্ণের' মাধ্যমে সন্ত ত্যাগরাজের জীবনের উপর আধারিত নৃত্য পরিকল্পনা করেছিলেন।চিত্রা স্কুল শেষ করেই ভরতনাট্যমের প্রশিক্ষণের জন্যে চেন্নাই (তৎকালীন মাদ্রাজ নামে অভিহিত) চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর বাবা-মা জোর দিয়েছিলেন যে তিনি যেন কলেজ ডিগ্রি শেষ করার পরে নৃত্য প্রশিক্ষণের ব্যাপারে মনোনিবেশ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক অর্জন করেছিলেন এবং একই সাথে নিজের মত করে নৃত্য তত্ত্ব এবং নাচের ইতিহাস অধ্যয়ন করে চলেছিলেন।

১৯৭০ সালে, তিনি ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে ভরতনাট্যমে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বৃত্তি পেয়েছিলেন; প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে তখনকার দিনে বার্ষিক মাত্র দুইটি বৃত্তিই প্রদান করা হত, এখনকার মত ২৫টি করে নয়। তিনি ভজনুর রামাইয়া পিল্লাইয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে চেন্নাইতে তাঁর চার বছরের বৃত্তিকালীন সময় কাটিয়েছিলেন। শুরু করার তিন মাসের মধ্যেই, গুরু পিল্লাই তাঁর নিজের পরিকল্পনা করা একটি নৃত্যানুষ্ঠানের জন্যে চিত্রাকে মনোনীত করেছিলেন। সংগীতবিদ পি.সম্বমূর্তি, শিল্প ইতিহাসবিদ কপিলা বাতস্যায়ন এবং নৃত্য সমালোচক সুনীল কোঠারি সকলেই তাঁদের রচনাতে চিত্রার কথা উল্লেখ করেছেন।

প্রশিক্ষণ[সম্পাদনা]

চিত্রা বিশ্বেশ্বরান মাত্র ষোল বছর বয়সে কলকাতায় নৃত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে তিনি চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম একাডেমি অফ পারফর্মিং আর্টস (সিএপিএ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ, সিএপিএর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে এর শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এছাড়াও চিত্রা বিশ্বেশ্বরান আরএএসএ নামক একটি সংস্থা, যা শিক্ষণ-প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নৃত্য ও সঙ্গীত চিকিৎসা ব্যবহার করে, তাদের জন্য অর্থও জোগাড় করেন নিজের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

নৃত্য প্রযোজনা[সম্পাদনা]

১৯৮০ সালে, বিশ্বেশ্বরন তাঁর প্রথম প্রধান নৃত্যনাট্য, দেবী অষ্ট রস মালিকা নৃত্যনাট্য পরিকল্পনা করেছিলেন, যা ভরতনাট্যমে দলগঠনের ধারণাকে জনপ্রিয় করতে সহায়তা করেছিল। তিনি বেশ কয়েকটি বিষয়নির্ভর একক প্রযোজনাও পরিকল্পনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ভরতনাট্যমের ফ্ল্যাশব্যাক কৌশল ব্যবহার করে কৃষ্ণাঞ্জলি
  • কন্নড় গীতিকার পুরন্দরদাসের প্রায়-অবলুপ্ত কৃতি ব্যবহার করে পুরন্দর কৃষ্ণামৃতম
  • সপ্তসতী- সাত সংখ্যার সাত রকমের বহিঃপ্রকাশ
  • স্ত্রী শক্তি- সীতা থেকে ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ অবধি ভারতীয় নারীদের যাত্রা

১৯৮৯ সালে, ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি তাঁকে গঙ্গা নদী সম্পর্কে একটি প্রযোজনা পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছিল; যেটি গঙ্গার ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যকে তুলে না ধরে বরং এটিকে ভারতের নীতি-নৈতিকতার প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন।

নৃত্যানুষ্ঠান[সম্পাদনা]

চিত্রা বিশ্বেশ্বরান ভারতের সমস্ত প্রধান নৃত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, কানাডা, ফিজি, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কুয়েত, লাক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, দ্য ইউনাইটেড আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশেও নৃত্যানুষ্ঠান করেছেন।

পুরস্কার এবং সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৮০ সালে একটি ভারতীয় সংস্কৃতি সংস্থা শ্রীকৃষ্ণ গণ সভা, চিত্রা বিশ্বস্বরণকে নৃত্য চূড়ামণি পুরস্কারে ভূষিত করেছিল। ১৯৯৬ এবং ১৯৯৭ সালে তিনি সভাটির নাট্য কলা সম্মেলনে (ভারতে এ জাতীয় একমাত্র নাচ সেমিনার) সভাপতিত্ব করেছিলেন।তিনি আর্টস অফ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের একজন ট্রাস্টি এবং ভারত সরকারের ভরতনাট্যমে বৃত্তি প্রদানের জন্যে প্রার্থী বাছাই কমিটির একজন সদস্য। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়ারের সভাপতি এবং ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পকলা সংস্থা সংগীত নাটক আকাদেমির সাধারণ পরিষদ এবং কার্যনির্বাহী বোর্ডের সদস্যও ছিলেন।

১৯৮২ সালে তামিলনাড়ু সরকার তাকে "কালাইমামাণি" উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তিনি ১৯৮৭ সালে সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার এবং ১৯৯২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন। জাপান ফাউন্ডেশন তাঁকে ২০০০ সালে বিশেষ অতিথি হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ২০১৩ সালে, তিনি নাচের জন্য সংগীত একাডেমির নাট্য কলা আচার্য পুরস্কার পেয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  2. "Changing narrative of dance: Group acts take centre stage"Arjun NaraynanThe Times of India। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৭ 
  3. Eve's Weekly। অক্টোবর ১৯৭৫। পৃষ্ঠা ২৫৩। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]