কোলাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারতের তামিলনাড়ুতে একটি বাড়ির অনুষ্ঠানের জন্য চালের আটা এবং কাভি বর্ডার দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী কোলাম
সিঙ্গাপুরের একটি বাড়ি থেকে নেওয়া থাই পোঙ্গল উৎসবের জন্য ভেজানো চালের আটা বা রঙিন চাল দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী অগ্রহারা কোলাম

কোলাম (তামিল: கோலம், মালয়ালম: കോലം, কন্নড়: ಕೋಲಂ), এছাড়াও মুগ্গু (তেলুগু: ముగ్గు), তারাই অলঙ্গারাম (তামিল: தரை அலங்காரம் এবং রঙ্গোলি (কন্নড়: ರಂಗೋಲಿ) নামেও পরিচিত, হল ঐতিহ্যবাহী আলংকারিক শিল্পের একটি রূপ। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী চালের আটা ব্যবহার করে এটি আঁকা হয়। এটি সাদা পাথরের গুঁড়া, চক বা চক পাউডার ব্যবহার করেও আঁকা হয়। এইসঙ্গে এতে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম রঙের ব্যবহারও দেখা যায়। কোলামের উৎপত্তি প্রাচীন তামিলনাড়ুতে। মূলত তামিলকম নামে পরিচিত জনগোষ্ঠীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল এই আলংকারিক অংকন শিল্প। এরপর তামিলনাড়ু থেকে এই শিল্প কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, এবং কেরালাসহ দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। গোয়া এবং মহারাষ্ট্রের কিছু অংশেও এই শিল্পের চল দেখা যায়। যেহেতু তামিল প্রবাসীরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন তাই শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং কয়েকটি এশিয়ান দেশ সহ সারা বিশ্বে কোলামের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। কোলাম বা মুগ্গু হল জ্যামিতিক রেখা, যা সরলরেখা, বক্ররেখা এবং গোলোকের সমন্বয়ে গঠিত। সাধারনত একটি চৌকোণা আকৃতির উপর ভিত্তি করে এই নকশা আঁকা হয়। পরিবারের মহিলা সদস্যরা তাদের বাড়ির প্রবেশদ্বারের সামনে মেঝেতে এটি অংকন করেন, তবে পুরুষ এবং ছেলেরাও এটি করে।[১] নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ রূপ সহ কোলামের অনুরূপ আঞ্চলিক সংস্করণগুলি ভারতে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন মহারাষ্ট্রে রাংগোলো, মিথিলায় আরিপান, পশ্চিমবঙ্গে আল্পনা এবং কর্ণাটকের কন্নড় ভাষায় হাসে ও রংগোলি এই দুটি নাম পরিচিত।[২] কোলাম সাধারণত উৎসবের দিন, ছুটির দিন এবং বিশেষ দিনে রং যোগ করে আঁকা হয়।

অনুশীলন এবং বিশ্বাস[সম্পাদনা]

নাগাটা এস দ্বারা ৩x৩ প্রতিসাম্যে একক আবর্তন সহ ৯জন দেবীর স্বস্তিকা কোলাম, এখানে প্রত্যেকটি বৈদিক ব্যবস্থার নয়টি দেবীর (দেবী) একটিকে বোঝায়

কোলাম বা মুগ্গুলু বাড়িতে সমৃদ্ধি নিয়ে আসে বলে মনে করা হয়। তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্র প্রদেশের লক্ষ লক্ষ পরিবারে, মহিলারা প্রতিদিন ভোরবেলা তাদের বাড়ির প্রবেশদ্বারের সামনে কোলাম আঁকেন। ঐতিহ্যগতভাবে সাদা চালের আটা দিয়ে মাটির সমতল মেঝেতে বা বাড়ির উঠোনে কোলাম আঁকা হয়। সারাদিন লোকাদের হাঁটাচলায় বা বৃষ্টিতে অথবা বাতাসে এই কোলামগুলি মুছে যায়; পরের দিন ভোরবেলা নতুন তৈরি করা হয়। প্রতিদিন সকালে সূর্যোদয়ের আগে, বাড়ির সামনের প্রবেশদ্বার, বা যেখানেই কোলাম আঁকার জন্য নির্দিষ্ট করা হয় প্রথমে সেই স্থান পরিষ্কার করা হয়, জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। কোলামগুলি সাধারণত তখন আঁকা হয় যখন মেঝে বা ভূমি স্যাঁতসেঁতে থাকে, যাতে আঁকা নকশাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। চালের আটার (তামিল: கோலமாவு তেলুগু: బియ్యం పిండి) পরিবর্তে সাদা পাথরের গুঁড়োও মাঝে মাঝে কোলাম তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। কোলাম আঁকার মেঝে সমতল ও চকচকে করার জন্য গোবর ব্যবহার করা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে গোবরে জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয় এবং তাই এটি বাড়ির সুরক্ষার জন্য ব্যবহার হয়। গোবরের ব্যবহার সাদা পাউডারে তৈরি কোলামকে লক্ষণীয় করে তোলে।[৩]

কোলাম আঁকার সময় মেঝে থেকে হাত না তুলে বা মাঝখানে বিরিত না নিয়েই বড় জটিল নকশা আঁকতে পারাটা এক বিশেষ গর্বের বিষয়। মার্গলি বা মার্গশিরা মাসটির জন্য যুবতীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত। এই সময় রাস্তার পুরো প্রস্থ অংশে বড় কোলাম এঁকে তারা তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করত।[৪]

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

শ্বেতপাথর এক প্রকার কোলাম তৈরি করতে ব্যবহার হয়

বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য কোলাম আঁকতে চুনাপাথর এবং লাল ইটের গুঁড়াও ব্যবহার করা হয়। যদিও কোলাম[৫] সাধারণত শুকনো চালের আটা (কোলাপোদি) দিয়ে তৈরির রীতিই চিরাচরিত। কোলাম বানাতে সাধারণত পাতলা চালের লেই বা এমনকি রংও ব্যবহার করা হয়। আধুনিক কালে চক, এবং সম্প্রতি ভিনাইল স্টিকার দিয়েও কোলাম তৈরি হয়।

যদিও সমরূপ উত্তর ভারতীয় রঙ্গোলির মতো কোলাম অতটা উজ্জ্বল নয় কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় কোলাম তার প্রতিসাম্য, নির্ভুলতা এবং জটিলতার জন্য সুপরিচিত।[৬] জটিলতার কারণে, এই নকশাগুলি ঠিক কীভাবে আঁকা হয় তা বোঝার চেষ্টা করা বেশ কঠিন।

কোলাম, কোল্লুর মুকাম্বিকা মন্দিরে একজন ভক্তের আঁকা

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Dr.Gift Siromoney। "KOLAM"। Chennai Mathematical Institute। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১২ 
  2. "Kolams"। Auroville। ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১২ 
  3. "Traditional customs and practices - Kolams"। Indian Heritage। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১২ 
  4. "'Kolam' draws huge crowd"The Hindu। Trichy, India। ৭ জানুয়ারি ২০১০। ১০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. Gamadia, Roweena। "Rangoli Kolam- Designs and Samples of Rangoli Kolam"Rangoli Design। ১৫ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  6. Marcia Ascher (জানুয়ারি ২০০২)। "The Kolam tradition"। American Scientist। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১২