বিষয়বস্তুতে চলুন

কুলচা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কুলচা
আলু মটরের সাথে কুলচা, ভারত
ধরনচ্যাপ্টা রুটি
উৎপত্তিস্থলভারতীয় উপমহাদেশ
অঞ্চল বা রাজ্যজম্মু, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব অঞ্চল, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ
প্রধান উপকরণময়দা
চণ্ডীগড়ের একটি জায়গায় ছোলার তরকারির সাথে অমৃতসারি আলু কুলচা।

কুলচা হলো এক ধরনের নরম হালকা খামিরযুক্ত রুটি। এটি ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।

প্রস্তুতি

[সম্পাদনা]

কুলচা তৈরি করা হয় ময়দা, জল, এক চিমটি লবণ এবং একটু ঈস্ট বা খামির মিশ্রণ দিয়ে। প্রথমে মিশ্রণের উপাদানগুলি হাত দিয়ে একসাথে ভালভাবে মিশিয়ে খুব শক্ত করে মেখে ময়দার তাল তৈরি করা হয়। এরপর ময়দার তালটিকে একটি ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয় এবং একটি উষ্ণ জায়গায় এক ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে রেখে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ময়দার তাল একটু ফুলে উঠবে কিন্তু বেশি নয়। ময়দার তাল আবার হাত দিয়ে মাখা হয় এবং বেলন বা বেলনা ব্যবহার করে চ্যাপ্টা, গোলাকার আকৃতি দেওয়া হয়। তারপরে একটি মাটির চুলায় ("তান্দুর") কুলচার দুপিঠ ভাল করে সেঁকা হয় যতক্ষণ না কুলচার গায়ে হালকা বাদামী রং ধরে। সেঁকার সময় প্রায়শই কুলচার গায়ে মাখন বা ঘি মাখানো হয়, যদিও এটি আবশ্যিক নয়। গরম গরম কুলচা তৈরির পরে যে কোনো তরকারির সঙ্গে এটি খাওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ মানুষ কুলচার সঙ্গে মশলাদার ছোলার তরকারি বা আলু মটরের তরকারি দিয়ে খাওয়া পছন্দ করেন।[]

বৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]
ছোলার তরকারি সহযোগে অমৃতসরীর কুলচা

সাধারণ কুলচা ছাড়াও বিভিন্ন রকমের পুর দিয়ে তৈরি রকমারি সুস্বাদু কুলচা তৈরি করা হয়। আবার ময়দা মাখাতে জল ব্যবহার না করে দুধ বা দইও ব্যবহার করা হয়। দুধ বা দই ব্যবহারের ফলে ময়দা আরও নরম হয়ে ওঠে। এই ধরনের কুলচাকে অনেকে দুধিয়া কুলচা বা দুধ কুলচা বলে থাকেন। দই ব্যবহার করা হলে ময়দা অনেক সময় বেশি ফোলে।এই ধরনের কুলচাগুলিতে সাধারণত পুর ভরা হয় না। এটি সাধারণভাবেই তৈরি করা হয়। তবে আমিষ বা নিরামিষ তরকারির সঙ্গে এটি পরিবেশন করা হয়।

মুঘল ও নিজামদের দরবারে পুর দিয়ে ঠাসা কুলচা পরিবেশন করা হতো।[] উদাহরণস্বরূপ, আওধ অঞ্চলে, অওধি কুলচা পরিবেশন করা হয়, নিহারীর সাথে। নিহারী বা নেহারি একটি জনপ্রিয় মাংসমিশ্রিত ঝোলযুক্ত খাদ্যবিশেষ।[] অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যে এটির উৎপত্তি হয়। নিহারী মূলত গরুর মাংস, মেষশাবক ও ভেড়ার মাংস, ছাগলের মাংস ও কখনো কখনো মুরগি এবং অস্থি মজ্জা দিয়ে রান্না করা হয়।

আজকাল কুলচা রেস্তোরাঁ ও দোকানে বিক্রি হয়। জম্মুর কালাদি কুলচা যা ঐতিহ্যবাহী কালাদি পনির দিয়ে তৈরি হয়। কালাদি পনির জম্মুর সবচেয়ে প্রিয় রাস্তার খাবারগুলির মধ্যে একটি।[] কালাদি কুলচা তৈরির জন্য প্রথমে কালাদি পনির একটি প্যানে তেল দিয়ে ভেজে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না পনিরের উপর-নিচ দুই দিকের রঙ বাদামী হয়। এই ভাজা বাদামী রঙের কালাদি পনির কুলচাগুলির মধ্যে পুর হিসাবে দেওয়া হয়।[]

অমৃতসারী কুলচা অনেক সময় অমৃতসারী নান হিসাবেও পরিচিত। এই অমৃতসারী কুলচার একটি আধুনিক রন্ধনশৈলী অমৃতসরের স্থানীয় জনগণের কাছে প্রাতঃরাশের পছন্দের একটি খাবার হয়ে উঠেছে।[]

সমগ্র উত্তর ভারতে, পনির, আলু, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য শাকসবজি কুলচার পুর হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

বহিঃস্থ চিত্র
image icon হায়দ্রাবাদি কুলচা তৈরির একটি স্লাইডশো / নান / শেরমল তৈরি। ফ্লিকার এ প্রকাশিত

পাকিস্তানে কুলচা রুটি মূলত হাজারা এবং উত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে খাওয়া হয়, সেখানকার মানুষদের এটি সকালের জনপ্রিয় জলখাবার।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. suman, haldar (১৪ ডিসেম্বর ২০২১)। "Amritsari Kulcha"one in abillion blog। ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ 
  2. Sadaf (২০১৭-০৮-১৯)। "Hidden Secrets of Amritsari Kulcha"Food and Streets by Sadaf (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০১-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৫ 
  3. Brien, Charmaine O' (২০১৩-১২-১৫)। The Penguin Food Guide to India (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। আইএসবিএন 978-93-5118-575-8 
  4. Excelsior, Daily (২০২০-১২-০৫)। "Kaladi Experience"Jammu Kashmir Latest News | Tourism | Breaking News J&K (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭ 
  5. "How kulchas from India and Pakistan act as a great unifier"Mintlounge (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭ 
  6. "Kulcha- the everlasting love of Amritsaris"Amritsar Online। এপ্রিল ৮, ২০১৯। জানুয়ারি ৮, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩ 
  7. "Traditional foods: In Pindi, a place for Kashmiri bread lovers"Express Tribune। ২ নভেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১২