কালো গুন্দ্রী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কালো গুন্দ্রী
Perdicula manipurensis
কালো গুন্দ্রী
Perdicula manipurensis
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Galliformes
পরিবার: Phasianidae
উপপরিবার: Perdicinae
গণ: Perdicula
প্রজাতি: P. manipurensis
দ্বিপদী নাম
Perdicula manipurensis
(Hume, 1880)

কালো গুন্দ্রী (বৈজ্ঞানিক নাম: Perdicula manipurensis) (ইংরেজি: Manipur Bush Quail), Phasianidae (ফ্যাসিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Perdicula (পের্ডিকুলা) গণের এক প্রজাতির অত্যন্ত দুর্লভ তিতির।[১] সারা পৃথিবীতে মাত্র ১৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস।[২] হিমালয়ের তিতির আর গোলাপি শির হাঁসের মত কালো গুন্দ্রীও পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলে ধারণা করা হলেও প্রায় ৮০ বছর পর ২০০৬ সালের জুন মাসে ভারতের অসমে মানস জাতীয় উদ্যানে এদের আবার দেখা যায়। ভারতের প্রখ্যাত বন্যপ্রাণীবিদ আনোয়ারউদ্দীন চৌধুরী প্রজাতিটি দেখতে পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।[৩] আই. ইউ. সি. এন. কখনোই এই প্রজাতিটিকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করেনি। আই. ইউ. সি. এন. এর তালিকায় প্রজাতিটি সবসময়ই সংকটাপন্ন হিসেবে পরিচিত ছিল।[৪] সমগ্র পৃথিবীতে আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার থেকে পনের হাজার কালো গুন্দ্রী রয়েছে।[২]

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

ভারতের অসম, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডপশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে (ডুয়ার্স) কালো গুন্দ্রী খুব সহজেই দেখা যেত। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামময়মনসিংহ জেলার উত্তরাংশ পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি ছিল।[২][৫] বাংলাদেশে এদের উপস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে: "সম্ভবত পশ্চিম কাছাড় আর সিলেটের একই রকম ঘাসবনে সমভাবে এদের দেখতে পাওয়া যায়।"[৬] এই পুরোন উক্তির ভিত্তিতে পাখিটি বাংলাদেশে থাকতে পারে বলে অনেক লেখক উল্লেখ করেছেন; কিন্তু তা আছে বলে প্রমাণিত হয় নি।[৭] বাংলাদেশে থেকে থাকলে এদের সংখ্যা হাতে গোনা। বাংলাদেশে না থাকলে এরা পুরোপুরি ভারতের স্থানিক পাখি।

১৯৩০ সালের এক তথ্যমতে মণিপুর রাজ্য থেকে কালো গুন্দ্রীর সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পেতে শুরু করেছিল। ১৯৩২ সালে এদের শেষ দেখতে পাওয়ার খবর জানা যায়। মাঝখানে ১৯৯৮ সালে অসমে প্রজাতিটি দেখতে পাওয়ার খবর জানা যায়। তবে তা অনিশ্চিত থাকায় গ্রহণযোগ্য হয় নি। পরবর্তীতে সর্বশেষ ২০০৬ সালে এদের প্রায় ৮০ বছর পর আবার দেখতে পাওয়ার খবর জানা যায়।[২] কিন্ত পরবর্তীকালে ২০১১ সাল পর্যন্ত আর কোন কালো গুন্দ্রী দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া যায় নি।[৮]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

এ পর্যন্ত কালো গুন্দ্রীর দুটি উপপ্রজাতি শনাক্ত করা গিয়েছে।[৯] উপপ্রজাতিগুলো হল:

  • P. m. manipurensis (Hume, 1880) - উত্তর-পূর্ব ভারত (মণিপুরের পাহাড়ি এলাকায় এবং আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ দিকে) আর বাংলাদেশ
  • P. m. inglisi (Ogilvie Grant, 1909) - উত্তর-পূর্ব ভারত (পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ দিকে)।

স্বভাব[সম্পাদনা]

কালো গুন্দ্রী সম্পর্কে অধিকাংশ তথ্যই পুরোন নথি অথবা বইপুস্তক থেকে পাওয়া। এদের সমুদ্রসমতল থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। মূলত চিরসবুজ বনের ধারে ঘন লম্বা ঘাসের ঘাসবনের স্থানীয় বাসিন্দা। যেসব ঘাসবনের আশেপাশে পানির উৎস রয়েছে, সেসব ঘাসবনে বেশি দেখা যায়। যেসব অঞ্চলে কালো তিতির দেখা যায়, ধরে নেয়া হত সেসব অঞ্চলে কালো গুন্দ্রীও রয়েছে। এই দুই প্রজাতির চমৎকার সহাবস্থান ছিল। কালো গুন্দ্রী ভোরে আর মেঘলা দিনে খোলা মাঠে খাবার খুঁজে বেড়ায়। উড়ে পালানোর চেয়ে ঘাসবনে লুকিয়ে পড়তে এরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এরা খুব লাজুক পাখি। সাড়া পেলেও ওড়ে না বলে এদের দেখা পাওয়াটা খুব কষ্টকর। এরা ৪-১২টির দলে ঘুরে বেড়ায়। দলে স্ত্রী তিতিরের সংখ্যা পুরুষ তিতিরের চেয়ে বেশি হয়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাসবীজ, বীজ, ছোট ফল, পোকামাকড়, কচি কাণ্ড ইত্যাদি। প্রজাতিটি পরিযায়ী স্বভাবের নয়। খাদ্যাভাব দেখা দিলে বা বাসস্থানের অভাব হলে এরা অন্য কোন স্থানে পাড়ি দেয়।[৫] এদের ডাক অনেকটা হুইট-টি-টি-টি-টিট এবং ডাক ক্রমে চড়তে থাকে।[২]

প্রজনন[সম্পাদনা]

এদের প্রজনন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় নি। সম্ভবত মার্চের শুরুতে এদের প্রজনন কাল। বাসা বানায় ঘাসবনে ও মাটির গর্তে। বাসা বানানোর উপকরণ হচ্ছে ঘাস ও পাতা।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ৩৩০-১।
  2. Perdicula manipurensis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ মে ২০১২ তারিখে, BirdLife International এ কালো গুন্দ্রী বিষয়ক পাতা।
  3. 'Extinct' quail sighted in India, BBC News, 28 June, 2006.
  4. Perdicula manipurensis[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ কালো গুন্দ্রী বিষয়ক পাতা।
  5. Perdicula manipurensis, কালো গুন্দ্রী বিষয়ক তথ্যাবলী।
  6. Baker, E. C. S. Fauna of British India: Aves (London: Taylor & Francis, 1922-1933), 8 Vols.
  7. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৫৭২।
  8. Rare avian species facing extinction threat ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, Anamika Das, 16 November 2011, The Assam Tribune.
  9. Manipur Bush-quail, The Internet Bird Collection এ কালো গুন্দ্রী বিষয়ক পাতা।