কালাকপাল বনমালী
কালাকপাল বনমালী Sitta frontalis | |
---|---|
ভারতের আসামে | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | প্যাসারিফর্মিস |
পরিবার: | Sittidae |
গণ: | Sitta |
প্রজাতি: | S. frontalis |
দ্বিপদী নাম | |
Sitta frontalis Swainson, ১৮২০ |
কালাকপাল বনমালী (বৈজ্ঞানিক নাম: Sitta frontalis) (ইংরেজি: Velvet-fronted Nuthatch), কালোকপাল বনমালী বা নীলাভ কীটকুড়ানী Sittidae (সিটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Sitta (সিটা) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির মাঝারি বৃক্ষচর পাখি।[২][৩] কালাকপাল বনমালীর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ভ্রুযুক্ত কাঠঠোকরার মত পাখি (গ্রিক: sitte = কাঠঠোকরার মত পাখি, লাতিন: frontalis = ভ্রুযুক্ত)।[৩] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৫২ লক্ষ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৪] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
বিস্তৃতি ও উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, লাওস, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম কালাকপাল বনমালীর মূল আবাস। এ প্রজাতিটির মোট পাঁচটি উপপ্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা হল:
- S. f. frontalis (Swainson, 1820) - ভারতের পাহাড়ী অঞ্চল (গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ, দাক্ষিণাত্য, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বাদে), হিমালয়ের পাদদেশে কুমায়ুন থেকে আসাম ও নাগাল্যান্ড পর্যন্ত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোচীন।
- S. f. saturatior (E. J. O. Hartert, 1902) - মালয় উপদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, লিঙ্গা দ্বীপপুঞ্জ, সুমাত্রা ও বঙ্কা
- S. f. corallipes (Sharpe, 1888) - বোর্নিও ও তৎসংলগ্ন একাধিক দ্বীপ
- S. f. palawana (E. J. O. Hartert, 1905) - পশ্চিম ফিলিপাইন
- S. f. velata (Temminck, 1821) - জাভা।[৫]
বিবরণ
[সম্পাদনা]কালাকপাল বনমালী লাল ঠোঁটের ছোট নীলচে পাখি। পাখির দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ সেন্টিমিটার, ডানা ৮ সেমি, ঠোঁট ২.২ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৪.৩ সেমি এবং ওজন ২৪ গ্রাম।[৩] প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বেগুনি-নীল; ওড়ার পালক কালচে, আগাসমেত কালচে নীল। থুতনি ও গলার মাঝখানটা সাদা। দেহতলের অবশেষ হালকা, কিছুটা পীত বাদামি। কপাল মখমল কালো, যার সঙ্গে চোখের সামনে-পেছনের কালো মোটা দাগ মিলেছে। স্ত্রীপাখির এ কালো দাগ নেই। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির উভয়ের চোখ ও চোখের বলয় হলুদ। বলিষ্ঠ লালচে ঠোঁটের ওপরের অংশের প্রান্তদেশ বাদামি, পা ও পায়ের পাতা পাটকিলে বাদামি।[৬] পায়ের তল কমলা-হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঠোঁট কালচে ও অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল ধূসর দেহতলে কমলা পীতাভের আভা থাকে।[৩]
আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস
[সম্পাদনা]কালাকপাল বনমালী প্রধানত প্যারাবনে বিচরণ করে। পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনেও দেখা যায়। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট পারিবারিক দলে বিচরণ করে। সাধারণত উড়ে এসে বসে গাছের প্রধান কাণ্ডে। বনের ভেতর থেকে উড়ে এসে কাণ্ডের বাকল ও গাছের পুরোনো বড়, শেওলাঢাকা ডালের বুকে হেঁটে এরা ঠুকরে খাবার খায়। খুব দ্রুত সময়ে লাফিয়ে লাফিয়ে গাছের কাণ্ডের পোকা খেয়ে উড়ে গিয়ে বসে অন্য এক গাছের কাণ্ডে। খাদ্যতালিকায় আছে পোকা ও লার্ভা। গাছের গা আঁকড়ে থাকতে ও ওপরে-নিচে চলাচলে এরা অত্যন্ত পটু। সাধারণত খাবারের সময় চিট চিট বা সিট সিট শব্দ করে ডেকে বেড়ায়।[৬]
প্রজনন
[সম্পাদনা]এরা গ্রীষ্মকালে (জানুয়ারি-মে মাসে) গাছের ফোকরে শ্যাওলা, পশম ও পালক বিছিয়ে ছোট বাসা বানায়। দুই থেকে ছয়টি লালচে ছোপযুক্ত সাদা ডিম পাড়ে। ডিমের মাপ ১.৭ × ১.৩ সেমি।[৩] পুরুষ ও স্ত্রীপাখি মিলে ডিমে তা দেয়।[৬] ডিম ফোটে ১৪-১৬ দিনে। ১৫ দিনের দিন ছানারা বাসা ছাড়ে।[৩]
গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
সামনের দিকের চিত্র
-
চিত্র
-
হংকংয়ে কালাকপাল বনমালী
-
কালাকপাল বনমালী
-
খাবার মুখে কালাকপাল বনমালী
-
কালাকপাল বনমালী
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Sitta frontalis"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ৯৪। আইএসবিএন 9840746901।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪১৫। আইএসবিএন 9843000002860
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)। - ↑ "Velvet-fronted Nuthatch Sitta frontalis"। BirdLife International। ২০১১-০৫-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১২।
- ↑ "Velvet-fronted Nuthatch (Sitta frontalis)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১০।
- ↑ ক খ গ কালাকপাল বনমালী[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],সৌরভ মাহমুদ, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ০৯-০৬-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ARKive, কালাকপাল বনমালীর চিত্র ও অন্যান্য তথ্য।
- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- বনমালী
- এশিয়ার পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- ভুটানের পাখি
- ব্রুনাইয়ের পাখি
- কম্বোডিয়ার পাখি
- চীনের পাখি
- ভারতের পাখি
- ইন্দোনেশিয়ার পাখি
- লাওসের পাখি
- মালয়েশিয়ার পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- নেপালের পাখি
- ফিলিপাইনের পাখি
- শ্রীলঙ্কার পাখি
- থাইল্যান্ডের পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- সিঙ্গাপুরের পাখি
- ১৮২০-এ বর্ণিত পাখি
- দক্ষিণ এশিয়ার পাখি
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাখি