কারিবা হ্রদ
কারিবা হ্রদ | |
---|---|
![]() | |
স্থানাঙ্ক | ১৬°৫৫′ দক্ষিণ ২৮°০০′ পূর্ব / ১৬.৯১৭° দক্ষিণ ২৮.০০০° পূর্ব |
হ্রদের ধরন | জলবৈদ্যুতিক জলাধার |
অববাহিকা | ৬,৬৩,০০০ কিমি২ (২,৫৬,০০০ মা২) |
অববাহিকার দেশসমূহ | জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে |
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য | ২২৩ কিমি (১৩৯ মা) |
সর্বাধিক প্রস্থ | ৪০ কিমি (২৫ মা) |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ৫,৫৮০ কিমি২ (২,১৫০ মা২) |
গড় গভীরতা | ২৯ মি (৯৫ ফু) |
সর্বাধিক গভীরতা | ৯৭ মি (৩১৮ ফু) |
পানির আয়তন | ১৮০ ঘনকিলোমিটার (৪৩ ঘনমাইল) |
পৃষ্ঠতলীয় উচ্চতা | ৪৮৫ মিটার (১,৫৯১ ফুট) |
দ্বীপপুঞ্জ | চেতে দ্বীপ সেকুলা চিকাঙ্কা। |
কারিবা হ্রদ (ইংরেজি: Lake Kariba) হচ্ছে আয়তনের হিসেবে সর্ববৃহৎ মানবসৃষ্ট হ্রদ এবং জলাধার। এটা ভারত মহাসাগর থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার (৮১০ মাইল) উজানে, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে'র সীমানাবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এর উত্তর-পূর্ব পাশের কারিবা বাঁধ নির্মাণ শেষে, ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে, জাম্বেজি নদীর কারিবা ঘাট প্লাবিত করার মাধ্যমে এই হ্রদ পানিপূর্ণ করা হয়।
এ হ্রদের বাঁধ তৈরির সময় নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য জিম্বাবুয়ের কারিবা শহরটি গড়ে ওঠে। আবার অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ের বিংগা (Binga) ও ম্লিবিযি (Mlibizi) গ্রাম, এবং জাম্বিয়া'র সিভঙ্গা (Siavonga) ও সিনাযঙ্গে (Sinazongwe) শহরগুলো গড়ে উঠেছে হ্রদের পানিতে প্লাবিত অঞ্চলের গৃহচ্যুত মানুষদের বসতি হিসেবে।
বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যাবলি
[সম্পাদনা]কারিবা হ্রদ প্রায় ২২৩ কিলোমিটার (১৩৯ মাইল) দীর্ঘ এবং প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) পর্যন্ত চওড়া। এর আয়তন ৫,৫৮০ বর্গকিলোমিটার (৬.০১×১০১০ বর্গফুট) এবং ধারণক্ষমতা ১৮৫ ঘনকিলোমিটার (৪৪ ঘনমাইল)। হ্রদের গড় গভীরতা ২৯ মিটার (৯৫ ফুট); সর্বোচ্চ গভীরতা ৯৭ মিটার (৩১৮ ফুট)। আয়তনের হিসাবে এটা পৃথিবীর বৃহত্তম মানবসৃষ্ট জলাধার, তিন ঘাটের বাঁধ (Three Gorges Dam) এর চেয়ে চারগুণ বড়।[১] এর বিশাল ভরের পানি (প্রায় ১৮০,০০০,০০০,০০০,০০০ কিলোগ্রাম, বা ১৮০ পেটাগ্রাম [২০০ বিলিয়ন টন]), নিকটবর্তী সক্রিয় ভূকম্পন অঞ্চলে আবিষ্ট ভূকম্পনের কারণ বলে মনে করা হয়, যার মধ্যে রিখটার স্কেলে অনুভূত ৫.০ এর বেশি মাত্রার ২০টিরও বেশি ভূমিকম্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[২]
এই হ্রদের মধ্যে বেশ কতগুলো দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে মাযে দ্বীপ (Maaze), মাশাপে দ্বীপ (Mashape), চেতে দ্বীপ (Chete), সেকুলা (Sekula) , সাম্পা কারুমা (Sampa Karuma), ফদারগিল (Fothergill), স্পারউইং (Spurwing), সর্প দ্বীপ (Snake Island), অ্যান্টেলোপ দ্বীপ (Antelope Island), পালঙ্ক দ্বীপ (Bed Island), চিকাঙ্কা দ্বীপ (Chikanka) অন্তর্ভুক্ত।
বাস্তুতন্ত্র
[সম্পাদনা]
হ্রদ পানিপূর্ণ করার সময়কালে এর পানি ছিল পুষ্টি উপাদানে ভরপুর, যার উৎস ছিল প্লাবিত এলাকার গাছপালার পচন। এর ফলে উর্বর পলির একটি পুরু স্তর তৈরি হয়, যা ক্রমান্বয়ে হ্রদের তলদেশ স্তরে পরিণত হয়। ফলস্বরূপ, কারিবা হ্রদের বাস্তুতন্ত্র খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছ এই হ্রদে ছাড়া হয়েছে, যার মধ্যে সার্ডিন-সদৃশ কাপেন্টা মাছ (kapenta) উল্লেখযোগ্য (টাঙ্গানিকা হ্রদ হতে আনিত)। এটা হ্রদের বাণিজ্যিক মৎস্যপালনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কারিবা হ্রদের অন্যান্য অধিবাসী প্রাণির মধ্যে আছে নীলনদের কুমির (Nile crocodiles) এবং জলহস্তি।
জাম্বেজি নদীর আদিবাসী মৎস্য প্রজাতির মধ্যে থাকা শিকারি মাছ, যেমন– বাঘামাছ (tigerfish), এখন কাপেন্টা’র ওপর নির্ভরশীল, যেটা আবার পর্যটনের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে– উভয় দেশই এখন হ্রদের নিজ নিজ উপকূলবর্তী অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
হ্রদের উপকূলজুড়ে মৎস্য ঈগল (African fish/sea eagles), কর্মোরেন্ট বা পেটুক পাখি (cormorants; লম্বা গলা, গাঢ় রঙের পালক, ঠোঁটের নিচে থলেবিশিষ্ট, বৃহদাকার সামুদ্রিক পাখিবিশেষ) এবং অন্যান্য জলাচারী পাখির আনাগোনা রয়েছে। এছাড়াও বহুসংখ্যক হাতি এবং বড় শিকারি প্রাণি, যেমন– সিংহ, চিতা, লেপার্ড, মহিষসহ অনেক ছোটখাট শিকারি প্রাণির প্রজাতিরও বিচরণ রয়েছে। দক্ষিণে মাতুসাদোনা জাতীয় উদ্যান এককালে কৃষ্ণ ও শ্বেত গণ্ডারের স্বর্গভূমি ছিল; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধভাবে চোরাই শিকারের কারণে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
সংরক্ষিত এলাকা
[সম্পাদনা]কারিবা হ্রদের জিম্বাবুয়ের অন্তর্ভুক্ত অংশকে, জিম্বাবুয়ে উদ্যান ও বন্যপ্রাণি ভূমি (Zimbabwe Parks and Wildlife Estate) এর আওতায়, বিনোদনমূলক উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- নিয়ামি নিয়ামি - জাম্বেজি নদী'র দেবতা
- কারিবা শহর
- কারিবা ফেরিঘাট
- ভোল্টা হ্রদ - পৃষ্টতলের ক্ষেত্রফলের হিসাবে বিশ্বের বৃহত্তম জলাধার
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Kariba"। Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-৩১।
- ↑ Scholz, C. H.; Koczynski, T. A.; Hutchins, D. G. (১ জানুয়ারি ১৯৭৬)। "Evidence for Incipient Rifting in Southern Africa" (পিডিএফ)। Geophysical Journal International। 44 (1): 135–144। ডিওআই:10.1111/j.1365-246X.1976.tb00278.x।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "Lake Kariba". Zambiatourism.com. Retrieved August 11, 2005.
- "Dam Statistics: Africa and the Middle East Regions". World Commission on Dams. Retrieved August 11, 2005.
- "Lake Profile: Kariba". LakeNet. Retrieved August 11, 2005.
- World Lakes Database entry for Lake Kariba
উইকিমিডিয়া কমন্সে কারিবা হ্রদ সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।