কাতার–সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কাতার–সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক
মানচিত্র কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান নির্দেশ করছে

কাতার

সংযুক্ত আরব আমিরাত

কাতার–সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক হল কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। দোহায় ইউএই'র একটি দূতাবাস রয়েছে; ওদিকে এবং দুবাইয়ে রয়েছে কাতারের কনস্যুলেট আর আবু ধাবিতে রয়েছে মূল দূতাবাস।

উভয় দেশেরই সামুদ্রিক সীমানা রয়েছে এবং উভয়েই পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অংশ। দুই দেশই জিসিসির সদস্য।[১]

কূটনৈতিক সম্পর্ক[সম্পাদনা]

১৯৯৫ সালে হামাদ বিন খলিফা আল থানি পিতাকে পদচ্যূত করার পর কাতারের আমির হিসেবে আসীন হন। তখন ইউএই পদচ্যূত খলিফা বিন হামাদ আল থানের জন্য আবুধাবির একটি মানসিক হাসপাতালের কোয়ার্টারের ব্যবস্থা করে দেয়। তখন কাতার নতুন আমিরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ করে, ইউএই'র সাথে সাথে সৌদি আরব এবং বাহরাইনকেও। অভিযুক্ত রাষ্ট্রগুলো এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরের দুই বছর ধরে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ্কাতার আমিরি গার্ড নিযুক্ত করা হয়।[২]

২০১৪ সালের মার্চ মাসে ইউএই, সৌদি আরব ও বাহরাইনের সাথে একত্রে কাতার থেকে তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে বলা হয় এইসকল দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে কাতারের হস্তক্ষেপ না করার চুক্তির নিয়ম রক্ষা না করা।[৩] এ ঘটনার মূল কারণ ছিল মিশরে সামরিক বাহিনী ও আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বে রাজনৈতিক বিপ্লবের প্রতি ইউএই'র সমর্থন, যা কাতারের সমর্থনকে ঠেলে দেয় মুসলিম ব্রাদারহু্ডের দিকে।[৪] ইউএই মুসলিম ব্রাদারহুডের বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাজনিত ব্যাপার বলে মনে করত, কারণ আবুধাবির স্টেট সিকিউরিটি কোর্টে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবদলের অভিযোগে মুসলিম ব্রাদারহুডের এক কর্মীকে কঠিন শাস্তি দেয়।[৪] ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে দুবাই পুলিশ বাহিনীর প্রধান দাহি খলফান বলেন, “তথাকথিত ‘মুসলিম’ ব্রাদারহুডের নিরাপদ স্বর্গ হয়ে ওঠা কাতারের পক্ষে মোটেও উচিত কাজ হবে না।” তিনি আরো বলেন যে ইউএই'র উচিত হবে কাতারকে রিক্লেইম করা।[৫]

কাতার সরকার মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে অনবরত সমর্থন দিয়ে যায়। কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি, আল সিসির নির্বাচনের নিন্দা করে বলেন, ২০১৪ সালের জুনের সেই রাষ্ট্রপতি হওয়া ছিল সামরিক অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে।[৪] রাষ্ট্রদূতেরা জুনমাসে তাদের নিজস্ব পদে ফিরে যায়।[৬]

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায় যে আমিরাত সরকার ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে কাতারের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য, প্রাথমিকভাবে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি কাতারের সমর্থনের বিরুদ্ধে।[৭] এই প্রচারণার লক্ষ্য ছিল কাতার যে ইসলামিক দলগুলোকে অর্থ দেয়, তার বিরুদ্ধে মার্কিন সাংবাদিকদের দিয়ে সমালোচনামূলক নিবন্ধ লেখানো।[৮] ইউএই'র বিরুদ্ধে সংবাদ লেখানোর জন্য কাতার প্রভার বিস্তার করেছে বলেও জানা যায়।[৯]

সাংবাদিক ব্রায়ান হুইটটেকার বলেন ইউএই গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ফর রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামক এনজিওকে রাজনৈতিক খেলনা হিসেবে ব্যবহার করেছে। হুইটটেকার আরো বলেন যে সংস্থাটি ইউএই'র প্রতি একচোখা আচরণ করে ২০১৪ সালের মানবাধিকার সারিতে ইউএইকে ১৪ এবং কাতারকে ৯৭তম স্থান দেয়। এই সংস্থাটিই কাতার আয়োজিত ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের বিরুদ্ধে বাঁধা দিচ্ছে বলেও দাবি করা হয়। সংস্থাটির দুই কর্মী কাতার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়, যখন তারা প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে তদন্ত করছিল[১০]

কূটনৈতিক সফর[সম্পাদনা]

২০০৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দোহায় সফর করেন। সেখানে তিনি কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানির সাথে সাক্ষাৎ করেন। দুই নেতা একত্রে বিনিয়োগসম্পর্কিত তহবিল গঠন করেন।[১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Profile: Gulf Co-operation Council"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫ 
  2. "Qatar's history of turbulent relations with UAE"। গালফ নিউজ। ২ এপ্রিল ২০১৪। ১১ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫ 
  3. Marie-Louise Gumuchian and Saad Abedine (৫ মার্চ ২০১৪)। "Saudi Arabia, UAE, Bahrain withdraw envoys from Qatar"সিএনএন। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৪ 
  4. Islam Hassan (৩১ মার্চ ২০১৫)। "GCC's 2014 Crisis: Causes, Issues and Solutions"। আল জাজিরা রিসার্চ সেন্টার। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫ 
  5. Daniel Greenfield (৫ এপ্রিল ২০১৪)। "Dubai Police Chief Declares Qatar Part of UAE"। ফ্রন্টপেইজ ম্যাগাজিন। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৪ 
  6. "Withdrawn Gulf ambassadors to return to Doha within days"। মিডল ইস্ট মনিটর। ৭ জুন ২০১৪। ২২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৪ 
  7. Julian Pecquet (৩ আগস্ট ২০১৫)। "Qatar crawls in from the cold"। Al Monitor। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫ 
  8. Lesley Walker (২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Qatar, UAE under fire for PR tactics over 2022 and Islamist backing"। Doha News। ২২ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫ 
  9. Chris Mondloch (৩ এপ্রিল ২০১৫)। "The UAE Campaign Against Islamist Extremism Is a Royal Pain For Qatar"। ভাইস নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  10. James Dorsey (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "UAE Embarks on Global Campaign to Market Its Brand of Autocracy"দ্য হাফিংটন পোস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  11. "UAE and Qatar enhance relations"। গালফ নিউজ। ২৫ মার্চ ২০০৮। ১১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 

টেমপ্লেট:সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক সম্পর্ক