কমলাপেট পাতা বুলবুলি
কমলাপেট পাতা বুলবুলি Chloropsis hardwickii | |
---|---|
![]() | |
পুরুষ | |
![]() | |
স্ত্রী | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | প্যাসারিফর্মিস |
পরিবার: | Chloropseidae |
গণ: | Chloropsis |
প্রজাতি: | C. hardwickii |
দ্বিপদী নাম | |
Chloropsis hardwickii জার্ডিন ও সেলবি, ১৮৩০ |
কমলাপেট পাতা বুলবুলি (বৈজ্ঞানিক নাম: Chloropsis hardwickii), কমলাপেট হরবোলা বা কমলাবুক সবুজ বুলবুলি Chloropseidae (ক্লোরোপসিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Chloropsis (ক্লোরোপসিস) গণের এক প্রজাতির কমলা-সবুজে মেশানো বৃক্ষচারী পাখি।[১][২] নামে বুলবুলি হলেও এরা আসলে বুলবুল গোত্রের পাখি নয়।[৩] হরবোলা হওয়ার কারণ এরা বিভিন্ন পাখি ও প্রাণীর ডাক চমৎকার নকল করতে পারে। কমলাপেট পাতা বুলবুলির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হার্ডউইকের সবুজ পাখি (গ্রিক: kholoros = সবুজ, opsis = চেহারা; লাতিন hardwickii = মেজর জেনারেল টমাস হার্ডউইকের, ভারতীয় প্রকৃতিবিদ ও সেনা সদস্য, ১৭৫৬-১৮৩৫)।[১] প্রায় ১৫ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে এদের বিস্তৃতি।[৪] বিগত কয়েক বছরে এদের সংখ্যা কমছে, তবে আশঙ্কাজনক হারে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৫] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[১]
বিস্তৃতি[সম্পাদনা]
কমলাপেট পাতা বুলবুলির মূল আবাস চীন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। ভারত, ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, মালয়েশিয়া, ম্যাকাও, হংকং ও ভিয়েতনাম জুড়ে এদের বিস্তৃতি।[৫] বাংলাদেশের চট্টগ্রামের গহীন বনে এদের দেখা মেলে।[১]
উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]
কমলাপেট পাতা বুলবুলির মোট চারটি উপপ্রজাতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[৬] উপপ্রজাতিগুলো হচ্ছে:
- C. h. hardwickii (Jardine & Selby, 1830) - উত্তর ভারত, বাংলাদেশ, দক্ষিণ চীন (ইউনান ও দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বত), মায়ানমার, উত্তর-পশ্চিম থাইল্যান্ড এবং উত্তর লাওস এদের প্রধান আবাসস্থল
- C. h. malayana (Robinson & Kloss, 1923) - এদের প্রধাপন বিস্তৃতি দক্ষিণ মায়ানমারের পার্বত্য অঞ্চল ও মালয় উপদ্বীপ জুড়ে
- C. h. melliana (Stresemann, 1923) - দক্ষিণ চীনের পার্বত্য অঞ্চল এবং মধ্য ও উত্তর ভিয়েতনাম জুড়ে এরা বিস্তৃত
- C. h. lazulina (Swinhoe, 1870) - হাইনান দ্বীপের পাহাড়ী অঞ্চলে এরা বিস্তৃত।
বিবরণ[সম্পাদনা]
কমলাপেট পাতা বুলবুলি পাতার মত সবুজ রঙের ছোট বৃক্ষচারী পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৯ সেন্টিমিটার, ডানা ৯.৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৪ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ৭.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৫ গ্রাম।[১] পুরুষ ও স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির পিঠ কচি পাতার মত সবুজ। রানের পালকসহ পুরো দেহতল ফিকে কমলা। কপাল হলদে। মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছনের অংশ হলদে-সবুজ। গলা ও বুক কালো। ডানা সবুজ। কাঁধের পট্টি নীল। ডানার প্রান্তপালক কালচে। লেজ কালচে। নীল রঙের গুম্ফডোরা রয়েছে। স্ত্রীপাখির লেজসহ পুরো পিঠ সবজে। কাঁধের পট্টি অস্পষ্ট। বুকের মাঝখানে কমলা অংশ রয়েছে। পুরো দেহতল হলদে-সবুজ। মাথা ও ঘাড় নীলচে। নীল গুম্ফডোরা দেখা যায়। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পাখির চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট ধূসর। পুরুষ পাখির ঠোঁট কিছুটা নিচের দিকে বাঁকানো ও কালো। স্ত্রীপাখির ঠোঁট শিঙ-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রী পাখির মত কিন্তু কোন নীল গুম্ফডোরা থাকে না।[১]
স্বভাব[সম্পাদনা]
কমলাপেট পাতা বুলবুলি পাহাড়ি এলাকার চিরসবুজ বন ও পাতাঝরা বনে বিচরণ করে। সচরাচর একা, জোড়ায় বা পারিবারিক দলে থাকে। প্রধানত ফুলগাছে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া বনের বৃক্ষে লতাগুল্ম, ও পাতায় ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার খোঁজে। ফুলের মৌসুমে ছোট পতঙ্গভূক পাখির মিশ্রদলে যোগ দেয়। ফুলের মধু, ফল, শুঁয়োপোকা, পিঁপড়া ও পরাগায়নে সহায়তা করে এমন পোকা-মাকড় এদের প্রধান খাদ্য। অন্যসব পাতা বুলবুলির মত এরাও অন্য পাখি ও পশুর ডাক অনুকরণে এরা খুবই দক্ষ। সে কারণে এদের আরেক নাম হরবোলা। এদের ডাকে বেশ বৈচিত্র্য আছে: শিওয়াটশিশি-ওয়াটশিশি-ওয়াটশিশি...... অথবা; টিটু-টিটু....টিটু-টিটু..... কিংবা; টপ...টপ...টপ...টপ এবং; টিয়াউইট...টিয়াউই-টিয়া..... ইত্যাদি।[১]
প্রজনন[সম্পাদনা]
মে থেকে আগস্ট কমলাপেট পাতা বুলবুলির প্রধান প্রজনন ঋতু। স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনে মিলেই বাসা বানায়। গাছের সরু মূল, ঘাস ও আঁশের সঙ্গে মাকড়শার জাল জড়িয়ে পেয়ালার মত বাসা সাজায়। সচরাচর ঘন বনে বাসা বাঁধে। বাসা প্রকৃতির সাথে এমনভাবে মিশে থাকে যে হঠাৎ শনাক্ত করা বেশ কষ্টকর। বাসা সাধারণত ভূমি থেকে ৬-১০ মিটার উঁচুতে বড় কোন গাছে বানায়। বাসা বানানো হয়ে গেলে ২-৩ টি ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ সাদা কিংবা পাটকিলে-সাদা। ডিম তিলাযুক্ত। ডিমের মাপ ২.৩ × ১.৬ সেন্টিমিটার।[১]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৩১৬।
- ↑ রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি, (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ৮৪।
- ↑ শরীফ খান, বাংলাদেশের পাখি, (ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ, ২০০৮), পৃ. ৫৩।
- ↑ Chloropsis hardwickii ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে, BirdLife International এ কমলাপেট পাতা বুলবুলি বিষয়ক পাতা।
- ↑ ক খ Chloropsis hardwickii[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ কমলাপেট পাতা বুলবুলি বিষয়ক পাতা।
- ↑ Orange-bellied Leafbird (Chloropsis hardwickii) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে, The Internet Bird Collection এ কমলাপেট পাতা বুলবুলি বিষয়ক পাতা।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

- কমলাপেট পাতা বুলবুলির আরও আলোকচিত্র ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে, Oriental Bird Images.
