ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস ৯ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল।[১][২]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। রক্ত ঝরা সেই উত্তাল দিনে দামাল ছেলেরা দেশকে শত্রুমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। নিজ থানাকে শত্রুমুক্ত করতে একাত্তরের ১৬ অক্টোবর রাতে কাজী আলম, আলতাব ও হাবিবুল্লাহ খান ওই তিন কোম্পানির মুক্তিসেনারা ময়মনসিংহ, ভৈরব রেল-লাইনে মাইজহাটি ব্রিজটি ডিনামাইট ছুড়ে বিধস্তসহ টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করার পর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুরের কটিয়াপুরি ব্রিজটি বিধস্ত করতেই ভোর হয়ে যায়। প্রর্ত্যুষে মুক্তিসেনারা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিলেও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হাসিম উদ্দিন আহাম্মদের পরামর্শে থানা আক্রমণণের সিদ্ধান্ত নেয় । ওই তিন কোম্পানির মুক্তিসেনারা সড়ক পথে অগ্রসর হয়ে ঈশ্বরগঞ্জের দওপাড়া শ্বসান ঘাটে এসে তিন ভাবে বিভক্ত হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্লাটুন কমান্ডার কাজী হাসানুজ্জামান হীরুর গ্রুপ সোনালি ব্যাংক সম্মুখে, হাবিবুর রহমান হলুদের গ্রুপ চরহোসেনপুর নলুয়া পাড়া মসজিদের পাশ থেকে, আব্দুস ছাওার ও মতিউর রহমানের গ্রুপ থানার পেছন থেকে থানা আক্রমণ করেন। পাকহানাদারদের সাথে শুরু হয় তুমুলযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনায় ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে যুদ্ধের চেইন অব কমান্ড। ফলে তাদের যুদ্ধ অভিযান ব্যর্থ হয়। এ সময় সম্মুখযুদ্ধে পাকহানাদার ও রাজাকার আলসামসদের হাতে প্রাণ দেন ৭ মুক্তিযোদ্ধা। এ যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, আব্দুল মান্নান, আব্দুল খালেক, দুলাল, মতিউর রহমান, আবু তাহের ও হাতেম আলী। শহীদদের রক্তের বদলা নিতে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ভয়াবহ আক্রমণের মুখে পাকহানাদাররা ভীত হয়ে গভীর রাতে থানা ছেড়ে পালিয়ে যায়। যুদ্ধ ছাড়াই শত্রুমুক্ত হয় ৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ। তাই ঈশ্বরগঞ্জবাসীর কাছে এ দিনটি অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের । ওই দিনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয়ে উড়েছিলো স্বাধীনতার পতাকা। ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে।

সংশ্লিষ্ট অঞ্চল[সম্পাদনা]

ঈশ্বরগঞ্জ ছাড়াও এ দিনে যেসকল জায়গা শত্রুমুক্ত হয় -

  • পূর্বধলা : ১৯৭১ সালের এই দিনে নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলা শত্র“মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতার যৌথ আক্রমণে পাকহানাদার বাহিনী ৮ ডিসেম্বর রাতে পূর্বধলা থেকে পালিয়ে যায়।
  • অভয়নগর : এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে অভয়নগর উপজেলা মুক্ত হয়।
  • সাঁথিয়া : ওইদিন পাকসেনারা পাবনা থেকে এসে সাঁথিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করে। পুনরায় আক্রমণের আশংকায় মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকে সাঁথিয়া-মাধপুর সড়কের নন্দনপুর জোড়গাছার মাঝখানের ব্রিজটি উড়িয়ে দিয়ে বাংকার করে সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। [৩]
  • কাউনিয়া : ১৯৭১ সালের এই দিনে এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধারা।
  • নেত্রকোণা : এ দিন মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মুখী আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পথে মোক্তারপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন কৃষি ফার্মের কোনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক হানাদারদের মরণপণ লড়াই হয়।
  • পাইকগাছা (খুলনা): ১৯৭১ সালের এদিনে ১৫৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করলে কপিলমুনি মুক্ত হয়। [৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪ 
  2. "ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত"DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪ 
  3. www.ittefaq.com.bd https://www.ittefaq.com.bd/print-edition/country/2017/12/09/241667.html। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  4. jugantor.com। "যেসব এলাকা মুক্ত হয় আজ | বাংলার মুখ | Jugantor"jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]