ইস্পাত চুক্তি
জার্মানি এবং ইতালির মধ্যে বন্ধুত্ব এবং জোটের চুক্তি | |
---|---|
ধরণ | সামরিক-রাজনৈতিক |
স্বাক্ষর | ২২ মে ১৯৩৯ |
স্থান | বার্লিন, জার্মানি |
অবসান | ১৯৪৯ (কার্যকরভাবে: ১৯৪৩ সালে) |
স্বাক্ষরকারী | |
ভাষাসমূহ | জার্মান, ইতালীয় |
ইস্পাত চুক্তি ( জার্মান: Stahlpakt, ইতালীয়: Patto d'Acciaio) ছিল ইতালি এবং জার্মানির মধ্যে একটি সামরিক এবং রাজনৈতিক জোট গঠনের চুক্তি। চুক্তিটি জার্মানি এবং ইতালির মধ্যে বন্ধুত্ব এবং জোটের চুক্তি হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিত ছিল।
প্রাথমিকভাবে এই চুক্তিটি জাপান, ইতালি এবং জার্মানির মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সামরিক জোট হিসাবে খসড়া করা হয়েছিল। জাপান এই চুক্তির কেন্দ্রবিন্দুটি সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে লক্ষ্য করাতে চাইলেও ইতালি ও জার্মানি চেয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং ফ্রান্সকে লক্ষ্য করে চুক্তি করতে। এই মতবিরোধের কারণে জাপানকে বাদ দিয়েই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯২৯ সালের ২২ শে মে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গালিয়াজো সিয়ানো এবং জার্মানির জোয়াচিম ফন রিবেন্ট্রোপ স্বাক্ষরিত হওয়ার মাধ্যমে এটি ফ্যাসিস্ট ইতালি এবং নাৎসি জার্মানির মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে পরিণত হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি এবং ইতালি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। [১] চরমপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষে জনপ্রিয়তা এবং সমর্থন লাভের মাধমে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি এবং বেনিটো মুসোলিনির ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় আসার পর মহামন্দায় উভয় দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। [১]
১৯২২ সালে, মুসোলিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। [২] তার প্রথম পদক্ষেপ তাকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তার মূল পদক্ষেপ ছিল - জনসাধারণের কর্মসংস্থানের জন্য বিশাল কর্মসূচি গ্রহণ এবং ইতালির অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা। [২] ভূমধ্যসাগরে মুসোলিনি একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী চালু করেছিলেন, যা ছিল ব্রিটিশ এবং ফরাসি ভূমধ্যসাগরীয় বহরের মিলিত শক্তির চেয়েও বড়। [১]
অন্যদিকে ১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর সিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তিনি ব্যপক ভাবে গণপূর্ত এবং গোপনে অস্ত্র সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করেন।[৩] ফ্যাসিবাদ এবং নাৎসিবাদের বিভিন্ন নীতি অনেকাংশে একই রকম হওয়ায় হিটলার এবং মুসোলিনি ১৯৩০-এর দশকে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে দেখা করেছিলেন।[৪]
জাপান
[সম্পাদনা]১৯৩১ সালে মাঞ্চুরিয়ায় জাপানি বাহিনী আক্রমণ করে। কারণ সেখানে প্রচুর শস্যক্ষেত্র এবং কাঁচা খনিজ ছিল।[১] তবে এর ফলে মাঞ্চুরিয়ার সীমান্তে থাকা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে জাপানের কূটনৈতিক সংঘাত উস্কে দেয়। [১] এই সোভিয়েত হুমকি মোকাবেলায় জাপানিরা ১৯৩৬ সালে জার্মানির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। [১] এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের যে কোনও আক্রমণ থেকে চীনকে আক্রমণ করা থেকে রক্ষা করা।[১] ইতালি ও জার্মানির মতো পশ্চিমা বিরোধী জোটের পরিবর্তে জাপান সোভিয়েত বিরোধী জোটের দিকে মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। [৫] জার্মানি অবশ্য আশঙ্কা করেছিল যে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী জোট পশ্চিম ইউরোপ জয় করার আগে তাদের দ্বি-সম্মুখ যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করবে। [৫] তাই এই মতবিরোধের ফলে জাপানকে ইস্পাত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও তখন তারা তা প্রত্যাখান করে। [৫]
দফা
[সম্পাদনা]আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্পাত চুক্তি জার্মানি এবং ইতালিকে যুদ্ধের সময় পরস্পরকে সামরিক, অর্থনৈতিক বা অন্যকোন ভাবে সহায়তা করার জন্য এবং যুদ্ধকালীন সময়ে উৎপাদনে সহযোগিতা করতে বাধ্য করেছিল। [৬] চুক্তিটির লক্ষ্য ছিল যে কোনও দেশই অপর দেশের সম্মতি ব্যতিরেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে না। [৭] চুক্তিটি এই ধারণার ভিত্তিতে ছিল যে তিন বছরের মধ্যে কোনও যুদ্ধ সংঘটিত হবে না। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং ৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ শুরু হলে, ইতালি তখনও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না থাকায় চুক্তি দায়িত্ব পালনে অসুবিধা হয়েছিল। [৮] ফলস্বরূপ, ১৯৪০ সালের জুনে ইতালি দক্ষিণ ফ্রান্সে দেরি করে আক্রমণ চালানোর আগপর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেনি। [৯]
গোপন পরিপূরক প্রোটোকল
[সম্পাদনা]চুক্তি স্বাক্ষরের সময় চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ইস্পাত চুক্তির দুটি বিভাগে বিভক্ত গোপন পরিপূরক প্রোটোকলগুলো প্রকাশ্যে প্রকাশ করা হয়নি। [১০]
প্রথম বিভাগে দুই দেশকে তাদের যৌথ সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জীবিত করতে আহ্বান জানানো হয় এবং দ্বিতীয় বিভাগটি দু'দেশকে রোম-বার্লিন অক্ষের ক্ষমতা ও ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য "সংবাদমাধ্যম, সংবাদ পরিষেবা এবং প্রচারণার" বিষয়ে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। [১০] সহায়তার জন্য, প্রতিটি দেশকে তাদের দেশের "এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ" অপরটির রাজধানী শহরে সেই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের জন্য নিযুক্ত করা হত। [১০] ফিল্ড মার্শাল পিয়েট্রো ব্যাডোগ্লিওর অধীনে নতুন ইতালীয় সরকার সেপ্টেম্বরে [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে
নাম পরিবর্তন
[সম্পাদনা]প্রথমে চুক্তিটির মূল নাম "রক্তের চুক্তি" বা "প্যাক্ট অফ ব্লাড" রাখা হলেও সম্ভবত ইতালিতে নামটি জনপ্রিয়তা না পাওয়ায় মুসোলিনি "প্যাক্ট অফ স্টিল" নামটি প্রস্তাব করেছিলেন। এই "প্যাক্ট অফ স্টিল" বা "ইস্পাত চুক্তি" নামটিই শেষ পর্যন্ত বেছে নেওয়া হয়। [১১]
বিলুপ
[সম্পাদনা]অষ্টম অনুচ্ছেদ অনুসারে চুক্তিটি ১০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। তবে এই মেয়াদ শুধু কাগজে-কলমেই ছিল। [৭] ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে ফিল্ড মার্শাল এর্ভিন রোমেলের নেতৃত্বে উত্তর আফ্রিকার অক্ষ বাহিনী এল আলামেইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ কমনওয়েলথ বাহিনীর দ্বারা নিশ্চিত পরাজিত হয়। [১২] ১৯৪৩ সালের জুলাইয়ে সিসিলিতে আক্রমণ করে পশ্চিমা মিত্ররা একটি নতুন ফ্রন্ট খোলে। [১২] এর পরে, মুসোলিনিকে গ্রান কনসিগলিওর ১৯ জন সদস্য অর্ডিন গ্র্যান্ডির পক্ষে ভোট দিয়ে পদচ্যুত করেছিলেন। ফিল্ড মার্শাল পিয়েট্রো ব্যাডোগ্লিওর অধীনে নতুন ইতালীয় সরকার সেপ্টেম্বরে মিত্রদের সাথে একটি অস্ত্রশস্ত্র স্বাক্ষর করে এবং একটি যুদ্ধবিরোধী হয়ে ওঠে। এইভাবে চুক্তির সাথে ইতালির সম্পৃক্ততার কার্যকরভাবে অবসান ঘটে। [১২]
যদিও মুসোলিনির অধীনে ইতালির সোশ্যাল রিপাবলিক নামে একটি পুতুল সরকার উত্তর ইতালিতে নাৎসি জার্মানি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের মাধ্যমেই ইতালি কেবল নামেমাত্র চুক্তিটির সদস্য হিসাবে অব্যাহত ছিল। [১২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ The Road To War।
- ↑ ক খ Knight 2013।
- ↑ Shirer 1960।
- ↑ Corvaja 2013।
- ↑ ক খ গ Maltarich 2005।
- ↑ Hiden 2014।
- ↑ ক খ The Italo-German Alliance।
- ↑ Belco 2010।
- ↑ Knox 2002।
- ↑ ক খ গ The Pact of Steel।
- ↑ Nicholls 2000।
- ↑ ক খ গ ঘ The Mediterranean And North Africa।