ইরাকে সংখ্যালঘু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইরাকে সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কুর্দি[সম্পাদনা]

ইরাকের কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের পতাকা

কুর্দিরা ইরান শাখার ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর মানুষ। জাতিগত ও ভাষাতাত্ত্বিকভাবে এরা ইরানীদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং আরব-ইসলামিক বিজয়ের আগে থেকেই ইরাকে এদের অস্তিত্ব রয়েছে। সম্ভবত প্রাচীন কর্দুয়েন থেকে এদের উৎপত্তি॥

কুর্দিদের সিংহভাগই সুন্নি মুসলমান তবে কিছু পরিমাণে শিয়া ও আলেভি মুসলিমও আছে। ইয়ারসেনিয়দের মতো স্থানীয় কুর্দি/ইরানীয় ধর্মেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী রয়েছে। কিছু কমিউনিস্ট এবং সমাজতান্ত্রিক কুর্দি হলো নাস্তিক

ইরাক রাজ্যে কুর্দি নেতা মোস্তফা বারজানি ১৯৪৫ সালে বাগদাদের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।বিদ্রোহে ব্যর্থতার পর বার্জানি এবং তার অনুসারীরা সোভিয়েত ইউনিয়নে পালিয়ে যায়। ১৯৬০ এর দশকে ইরাকি ব্রিগেডিয়ার আবদুল-করিম কাসেম মিশরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসেরের কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি করলে তিনি ইরাকি সেনাবাহিনীতে মিশর সমর্থক কর্মকর্তাদের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার সম্মুখিন হন। মসুলে গ্যারিসন যখন কাসেমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন তিনি নাসেরপন্থী বিদ্রোহীদের দমন করতে সাহায্য করার জন্য বার্জানিকে নির্বাসন থেকে ফিরে আসতে দেন। ১৯৬১ সালের মধ্যে বার্জানি এবং কুর্দিরা পুরোমাত্রায় বিদ্রোহ শুরু করে।

বাথ পার্টি ইরাকে ক্ষমতা গ্রহণ করলে নতুন সরকার কুর্দি বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে কুর্দিদের তাদের নিজস্ব সীমিত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে। তবে, ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় কিছু কুর্দিদের ইরানপন্থী সহানুভূতি সহ বিভিন্ন কারণে, এই শাসন ব্যবস্থাটি কুর্দি-বিরোধী নীতি বাস্তবায়িত করে এবং একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৮৭ সালের ২৯ শে মার্চ থেকে ১৯৮৯ সালে ২৩ শে এপ্রিল পর্যন্ত কুখ্যাত আল-আনফাল অভিযানটি শুরু হয়, ইরাকের কুর্দি জনগণের উপর সুসম্বদ্ধ গণহত্যা চলে। এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা ইরাককে ব্যাপকভাবে নিন্দা জানায়, কিন্তু কুর্দিদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার সহ অত্যাচারমূলক পদক্ষেপের জন্য কখনও গুরুতর শাস্তি দেওয়া হয়নি, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়।

পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের পর কুর্দিরা বাথপন্থিদের বিরুদ্ধে আরও একটি বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহটি নির্মমভাবে দমন করা হয়। একই বছর, তুরস্ক তার ভূখণ্ডে কুর্দিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, উত্তর ইরাকের কুর্দি অঞ্চলগুলিতে বোমাবর্ষণ করে এবং দাবি করে যে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির ঘাঁটি আছে। তবে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ এবং সাদ্দামের পতন কুর্দিদের মধ্যে নতুন আশা জেগে উঠে। নবনির্বাচিত ইরাকি সরকার উত্তর ইরাকে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়। কুর্দিরা তখন থেকে এই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং দেশে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে। তবে, বেশিরভাগ কুর্দি দৃঢ়ভাবে একটি স্বাধীন জাতি হওয়ার পক্ষে।" ২০০৫ সালের জানুয়ারির ইরাকি নির্বাচনে, ৯৮.৭ শতাংশ কুর্দি আরব ইরাকের সাথে পুনর্মিলন না করে পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়।"[১] এই অঞ্চলের প্রায় সকল রাজনৈতিক বা সামাজিক গোষ্ঠী কুর্দিদের স্বাধীনতার ধারণার সাথে একমত নয়। তুরস্কের মতো ইরাকের প্রতিবেশি দেশগুলি বিশেষত এই আন্দোলনের বিরোধী কারণ তারা আশঙ্কা করে যে একটি স্বাধীন ইরাকি কুর্দিস্তান তাদের অঞ্চলেও কুর্দি স্বাধীনতা আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে।

নুরি আল-মালিকি নৃগোষ্ঠী কুর্দি নেতার সাথে আলাপ-আলোচনা করেন, যিনি স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিশ উত্তরের সরকারি ভবনে ইরাকি জাতিয় পতাকা উড়ানোর প্রতীকী ইস্যু নিয়ে ক্রমবর্ধমান ভাবে বিচ্ছিন্নতার হুমকি দিচ্ছিলেন। মালিকি আরব শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকার স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিশ আঞ্চলিক সরকারের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে, যারা সরকারি ভবনে ইরাকি রাষ্ট্রীয় পতাকা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী রবিবার এক কড়া বিবৃতি জারি করে বলেন: "ইরাকি পতাকাই একমাত্র পতাকা যা ইরাকের প্রতি বর্গ ইঞ্চির উপরে উঠানো উচিত।" কিন্তু ইরাকি কুর্দিস্তান অঞ্চলের রাষ্ট্রপতি মেসুদ বারজানি কুর্দি সংসদে বলেন, জাতিয় নেতৃত্ব "ব্যর্থ" এবং ইরাকি পতাকা বাগদাদের দ্বারা তার জনগণের উপর অত্যাচারের প্রতীক: "যদি কোনও মুহূর্তে আমরা, কুর্দি জনগণ এবং সংসদ বিবেচনা করে যে স্বাধীনতা ঘোষণা করা আমাদের স্বার্থে প্রয়োজন, আমরা তা করব এবং আমরা কাউকে ভয় করব না।" এই বিরোধ আরব ও কুর্দিদের মধ্যে বিস্তৃত বিভেদ প্রকাশ করে, আরব সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের পরে রাষ্ট্র হিসাবে ইরাকের টিকে থাকার জন্য এটি দ্বিতীয় বড় হুমকি।[২]

ইরাকি তুর্কমেন / তুর্কোম্যান[সম্পাদনা]

ইরাকি তুর্কমেনের পতাকা
আলতুন কুপ্রির (তুর্কি: Altınköprö) একটি স্মৃতিস্তম্ভের উপর তথাকথিত "তুর্কমেনেলি" অঞ্চলের মানচিত্র।
ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাকে ইরাকি তুর্কমেন মেয়ে
একটি তুর্কমেনের গ্রামের দ্বিভাষিক সাইনবোর্ড (আরবি ও তুর্কি)।

খ্রিস্টান[সম্পাদনা]

আসিরিয়[সম্পাদনা]

শাবাকের পতাকা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Viviano, Frank. "The Kurds in Control ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে." National Geographic, January 2006 pg 26.
  2. "Iraq captures al Qaeda deputy"Television New ZealandReuters। সেপ্টেম্বর ৪, ২০০৬। সেপ্টেম্বর ২০, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৫, ২০১১