ইরাক–ইরান যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইরাক–ইরান যুদ্ধ

ইরানি ফ্রন্টে শিশু সৈন্যদের অংশগ্রহণ (উপরে বামদিকে); ইরাকি আক্রমণের সময় নিহত ইরানি বেসামরিক নাগরিকদের মৃতদেহ (উপরে ডানদিকে); ইরাকি যুদ্ধবিমান কর্তৃক ভুলক্রমে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ 'ইউএসএস স্টার্ক' আক্রমণের পর জাহাজটির চিত্র (মাঝে বামদিকে); অপারেশন মেরসাদের সময় নিহত ইরাকপন্থী পিএমওআই যোদ্ধাদের মৃতদেহ (মাঝে ডানদিকে); ইরানিরা খুররমশহর পুনর্দখল করার পর ইরাকি যুদ্ধবন্দিরা (নিচে বামদিকে); ইরানি সেনাবাহিনীর দ্বারা ব্যবহৃত জেডইউ-২৩-২ (নিচে ডানদিকে)
তারিখ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ – ২০ আগস্ট ১৯৮৮
অবস্থান
ফলাফল

সামরিক অচলাবস্থা

  • শাত আল-আরবের পূর্বদিকের ভূমি দখল করতে এবং খুজেস্তানে আরব বিচ্ছিন্নতাবাদের জাগরণ ঘটাতে ইরাক ব্যর্থ হয়
  • সাদ্দাম হুসেইনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কিংবা ইরাকি সামরিক শক্তি ধ্বংস করতে ইরান ব্যর্থ হয়
  • জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
অপরিবর্তিত
বিবাদমান পক্ষ
 ইরান

কেডিপি
পিইউকে
আইএসসিআই
ইসলামিক দাওয়া পার্টি

 ইরাক

এমইকে
DRFLA[১০][১১]
আরব স্বেচ্ছাসেবকs[ক]

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী

ইরান রুহুল্লাহ খোমেনি

অন্যান্য:
ইরান আবুলহাসান বনিসদর
ইরান মোহাম্মদ আলী রাজাই
ইরান আলী খামেনেই[৩৫]
ইরান আকবর হাশেমি রাফসানজানি
ইরান মোহাম্মদ জাভেদ বাহোনার 
ইরান মীর হোসেইন মৌসাভি
ইরান মোস্তফা সামরান 
ইরান ওয়ালিউল্লাগ ফাল্লাহি
ইরান আলী সাঈদ শিরাজী
ইরান জাভেদ ফাকোরি
ইরান মোহাম্মদ হোসেইন মঈনপুর
ইরান বাহরাম আফজালি
ইরান মোহসিন রেজাই
মাসুদ বারজানী
জালাল তালাবানি
নওশিরওয়ান মুস্তাফা
মোহাম্মেদ বাকির আল-হাকিম
আব্দুল আজিজ আল-হাকিম

ইরাক সাদ্দাম হোসেন

অন্যান্য:
ইরাক আলী হাসান আল-মাজিদ
ইরাক তাহা ইয়াসিন রমাদান
ইরাক ইজ্জত ইব্রাহিম আদ-দৌরি
ইরাক আবিদ হামিদ মানহুদ
ইরাক সালাহ আবুদ মাহমুদ
ইরাক তারেক আজিজ
ইরাকআদনান খাইরাল্লাহ
ইরাক সাদ্দাম কামেল
ইরাক উদে হুসেইন
ইরাক কুশে হুসেইন
ইরাক মেহের আব্দুল রাশিদ
আব্দুল রহমান ঘাসেমলু
মাসুদ রাজাভি
মরিয়াম রাজাভি
শক্তি

যুদ্ধের শুরুতে[৩৬]
১,১০,০০০–১,৫০,০০০ সৈন্য
১,৭০০–২,১০০টি ট্যাংক[৩৭] (৫০০টি কর্মক্ষম)[৩৮]
১,০০০টি সাঁজোয়া গাড়ি
৪৮৫টি যুদ্ধবিমান
৭৫০টি হেলিকপ্টার

১৯৮২ সালে ইরান থেকে ইরাকি সৈন্য প্রত্যাহারের পর:
৩,৫০,০০০ সৈন্য
৭০০টি ট্যাংক
২,৭০০টি সাঁজোয়া গাড়ি
৪০০টি কামান
৩৫০টি যুদ্ধবিমান
৭০০টি হেলিকপ্টার

১৯৮৮ সালের শুরুতে:[৩৯]
৬,০০,০০০ সৈন্য
১,০০০টি ট্যাংক
৮০০টি সাঁজোয়া গাড়ি
৬০০টি ভারী কামান
৬০–৮০টি যুদ্ধবিমান
৭০–৯০টি হেলিকপ্টার

যুদ্ধের শুরুতে:[৪০]
২,০০,০০০ সৈন্য
২,৮০০টি ট্যাংক
৪,০০০টি এপিসি
১,৪০০টি কামান
৩৮০টি যুদ্ধবিমান
৩৫০টি হেলিকপ্টার

১৯৮২ সালে ইরান থেকে ইরাকি সৈন্য প্রত্যাহারের পর:
১,৭৫,০০০ সৈন্য
১,২০০টি ট্যাংক
২,৩০০টি সাঁজোয়া গাড়ি
৪০০টি কামান
৪৫০টি যুদ্ধবিমান
১৮০টি হেলিকপ্টার

যুদ্ধের শেষে:[৪১]
১৫,০০,০০০ সৈন্য
~৫,০০০টি ট্যাংক
৮,৫০০–১০,০০০টি এপিসি
৬,০০০–১২,০০০টি কামান
৯০০টি যুদ্ধবিমান
১,০০০টি হেলিকপ্টার
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
১,২৩,২২০–১,৬০,০০০ সৈন্য নিহত এবং ৬০,৭১১ সৈন্য নিখোঁজ (ইরানি তথ্যানুযায়ী)[৪২][৪৩]
২,০০,০০০–৬,০০,০০০ সৈন্য নিহত (অন্যান্য তথ্যানুযায়ী)[৪২][৪৪][৪৫][৪৬][৪৭][৪৮][৪৯][৫০][৫১]
৮,০০,০০০ সৈন্য নিহত (ইরাকি তথ্যানুযায়ী)[৪২]
৩,২০,০০০–৫,০০,০০০ সৈন্য আহত[৪৫][৫২][৫৩]
৪০,০০০–৪২,৮৭৫ সৈন্য যুদ্ধবন্দি[৫২][৫৩]
৬২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি[৪৪][৫৪]
১,০৫,০০০–৩,৭৫,০০০ সৈন্য নিহত[৫২][৫৪][৫৫][৫৬][৫৭]
২,৫০,০০০–৫,০০,০০০ সৈন্য নিহত (অন্যান্য তথ্যানুযায়ী)[৫৮]
৪,০০,০০০ সৈন্য আহত[৫৬]
৭০,০০০ সৈন্য যুদ্ধবন্দি[৪৫][৫৬]
৫৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি[৪৪][৫৪]

উভয় পক্ষে ১ লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত[৫৯]
(আল-আনফাল অভিযানে নিহত ৫০,০০০–১,০০,০০০ বেসামরিক মানুষ ব্যতীত)[৬০]

¹ ঠিক কত সংখ্যক ইরাকি শিয়া ইরানের পক্ষে লড়েছিলেন সেটা অজ্ঞাত। ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অফ ইরাক এবং ইসলামিক দাওয়া পার্টি যুদ্ধের সময় ইরানকে সমর্থন করেছিল। ইরান কখনো কখনো ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইরাকি যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে ডিভিশন তৈরি করত।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সূচনা হয় ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ১৯৮৮ সালের আগস্টে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এর অবসান ঘটে। ইরানের কাছে এ যুদ্ধ অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ (جنگ تحمیلی, Jang-e-tahmīlī/জাংগে তাহমিলি) and পবিত্র প্রতিরোধ (دفاع مقدس, Defa-e-moghaddas/দেফা এ মাক্বাদ্দাস) হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন এ যুদ্ধকে ব্যাটল অব ক্বাদেসিয়া (قادسيّة صدّام, Qādisiyyat Saddām) নামে অভিহিত করতেন।

সীমান্ত বিরোধ এবং ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া জংগীদের ইরানি মদদ দেয়ার অভিযোগে ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বাহিনী পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবৈধভাবে ইরানি ভূ-খন্ড আক্রমণ এবং অণুপ্রবেশ চালায়। সদ্য ঘটে যাওয়া ইরানি ইসলামি বিপ্লবের নাজুক অবস্থাকে ব্যবহার করে ইরাক যুদ্ধে দ্রুত অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু কার্যত সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৯৮২ সালের জুনের মধ্যে ইরান তার হারানো সমস্ত ভূ-খন্ড পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়। এর পরের ৬ বছর ইরানি বাহিনী যুদ্ধে অগ্রসর ভূমিকায় ছিল। [৬১] জাতিসংঘের বারবার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয় । ২০০৩ সালে দু'দেশের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধবন্দীর বিনিময় ঘটে।[৬২][৬৩]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কৌশলের সাথে এ যুদ্ধের বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায় । পরিখা, কাঁটাতার, মানব স্রোত, বেয়নেট চার্জ এ যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ইরাকি বাহিনী ইরানি সৈন্য, বেসামরিক নাগরিক এবং ইরাকি কুর্দিদের উপর রাসায়নিক গ্যাস এবং মাস্টারড গ্যাস প্রয়োগ করে।

পটভূমি[সম্পাদনা]

যুদ্ধের নামকরণের ইতিহাস[সম্পাদনা]

ইরাকের কুয়েত দখলকে কেন্দ্র করে ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে সাধারণভাবে ইরাক–ইরান যুদ্ধকেই উপসাগরীয় যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হত । পরবর্তিতে কেউ কেউ একে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেন। যুদ্ধের শুরুর দিনগুলিতে সাদ্দাম হোসেন একে "ঘূর্ণিবায়ুর যুদ্ধ" হিসেবে উল্লেখ করতেন ।[৬৪]

যুদ্ধের সূচনা[সম্পাদনা]

যুদ্ধের শুরুর ব্যাপারে ইরাকি অজুহাত এবং ইরাকি আক্রমণের উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

ইরাক যুদ্ধ শুরুর কারণ হিসেবে দক্ষিণ ইরাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারিক আজিজের হত্যা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে। সাদ্দাম হোসেনের ভাষায় "ইরানি এজেন্ট" রা এ হামলার পেছনে দায়ী ছিল।

ইরান-ইরাক সীমান্তে সীমানা নির্ধারণকারী নদী শাতিল আরব

১৯৮০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ইরান ইরাক থেকে তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক শার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স পর্যায়ে নামিয়ে আনে। একই সাথে ইরান তার দেশ থেকে ইরাকি রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাহার দাবী করে।

তারিক আজিজকে হত্যা প্রচেষ্টার তিনদিন পরেই এক নিহত ছাত্রের শেষকৃত্য অণুষ্ঠানে পুনরায় হামলার ঘটনা ঘটে। ইরাক ইরানকে দোষারোপ করে ১৯৮০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ইরানের উপর হামলা চালায়[৬৫]

১৭ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টে এক ভাষণে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইরাকি সার্বভৌমত্বে উপর্যুপরি এবং নির্লজ্জ ইরানি হস্তক্ষেপ, ১৯৭৫ সালে স্বাক্ষরিত আলজিয়ার্স চুক্তিকে ইতিমধ্যে বাতিল করে দিয়েছে। শাতিল আরব নদী ঐতিহাসিক এবং নামকরণের দিক থেকে ইরাকের এবং আরবদের একচ্ছত্র অধিকারে ছিল, এবং এর উপর ইরাকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে[৬৬]

খোররামশাহর মুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে গ্রেফতার হওয়ার ইরাকি সৈন্য

ইরান আগ্রাসনের পেছনে ইরাকের নিম্নোক্ত কারণগুলো ছিল :

  1. শাতিল আরব নদীর মোহনা নিজেদের দখলে নেয়া
  2. সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে তিনটি ইরানি দ্বীপ আবু মুসা, গ্রেটার টুনব এবং লেসার টুনব দখল করে নেয়া
  3. ইরানের খুজেস্তান প্রদেশ ইরাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া
  4. তেহরানের ইসলামী সরকারকে উৎখাত করা[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
  5. এই অঞ্চলে ইসলামী বিপ্লব ছড়িয়ে যাবার সম্ভাবনাকে উৎপাটন করা

১৯৮০: ইরাকি আগ্রাসন[সম্পাদনা]

ইরাক–ইরান যুদ্ধ - ১৯৮০ সালের ২২ - তেহরান
Khūzestān Province of Iran, native name, استان خوزستان

১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বিমান বাহিনী ইরানের ১০ টি বিমানবাহিনী ঘাঁটির উপর অতর্কিত পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়।[৬৭] আক্রমণের ফলে ইরানের বিমানঘাঁটিগুলোর অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খুব বেশি বিমান ধ্বংস হয়নি। ইরাকি বাহিনী কিছু মিগ-২৩বিএন, তু-২২ এবং সু-২০ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়, কিন্তু ইরানি বিমানবহরে অন্যান্য বিমানের সংখ্যাধিক্যের কারণে এই ক্ষতি খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না। একই সময় তিনটি মিগ-২৩এস তেহরান বিমানবন্দরে হামলা পরিচালনা করে কেবল স্বল্পমাত্রার ক্ষতিসাধনে সক্ষম হয়।[৬৮]

পরের দিন ইরাকি বাহিনী ৬৪৪ কিলোমিটার সীমান্ত ফ্রন্ট জুড়ে ত্রিমুখী স্থল আক্রমণের সূচনা করে।[৬৭] সাদ্দাম হোসেন দাবী করেন, অন্যান্য আরব এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রে ইরান তাদের বিপ্ল ছড়িয়ে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র করছে, তা রুখতেই মূলত এই অভিযান।"[৬৫] ইরানের তেল সমৃদ্ধ খুজেস্তান প্রদেশের ইরাকের দখল করে নেয়ার মাধ্যমে ইরান চরমভাবে বিপর্যস্ত হবে, এবং এই বিপর্যয় তেহরানের সরকারের পতন ত্বরান্বিত করবে, এমন ভাবনা থেকে সাদ্দাম হোসেন খুজেস্তানের উপর পূর্ণমাত্রার অভিযান শুরু করেন।[৬৯]

ইরাকের স্থলবাহিনীর ৬টি ডিভিশন প্রাথমিক আক্রমণে অংশ নেয়। এর মাঝে চারটি ডিভিশন ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ খুজেস্তান আক্রমণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরভান্দ নদীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার কথা ভাবা হয়। এটি করতে পারলে খুজেস্তানের অনেকাংশ ইরান থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে করে ইরাকিদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।[৬৭]

ইরানের পাল্টা হামলা প্রতিহত করতে অপর দু'টি ইরাকি ডিভিশন যথাক্রমে উত্তরাঞ্চলীয় এবং মধ্যাঞ্চলীয় ফ্রন্টে ইরানের অভ্যন্তরে সাঁড়াশি আক্রমণের সূচনা করে।[৭০] খুজেস্তান আক্রমণকারী চারটি ডিভিশনের মাঝে একটি আর্মার্ড এবং একটি মেকানাইজড ডিভিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয় সর্বদক্ষিণ প্রান্তে কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ ইরানি বন্দর আবাদান এবং খোররামশাহর দখল করে নেয়ার।[৬৭]

ইরাকের অন্য দু'টি ডিভিশন মধ্যবর্তী ফ্রন্টে আক্রমণ পরিচালনা করে। এই ফ্রন্টে ইরাকি বাহিনী, ইরানের ইলাম প্রদেশের মেহরান শহরের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে জাগ্রোস পর্বতমালার পাদদেশ বরাবর অগ্রসর হয়। তেহরান থেকে বাগদাদ অভিমুখী অভিযান বন্ধকল্পে এই দুই শহরের সংযোগকারী সর্বপ্রধান রুট বরাবর কাসর-এ-শিরিন[৭০] এবং এর অগ্রভাগের ইরানি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইরাকি সেনারা।

উত্তরাঞ্চলীয় ফ্রন্টে ইরাকি বাহিনীর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ইরাকের অভ্যন্তরে কিরকুক তৈলক্ষেত্রকে ইরানি লক্ষ্যবস্তু থেকে রক্ষা করতে সুলেমানিয়ে বরাবর শক্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা।[৭০] ইরাক আশা করছিল, খুজেস্তান প্রদেশের ইরানের সংখ্যালঘু আরবরা তেহরানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইরাকি দখলদারিত্বকে স্বাগত জানাবে। কিন্তু শিয়া মতাবলম্বী ইরানি আরবরা পুরোপুরিভাবে ইরানের প্রতি তাদের আনুগত্য ঘোষণা করলে, ইরাক সর্বপ্রথম কৌশলগত পরাজয় হয়।[৬৯] ব্রিটিশ সাংবাদিক প্যাট্রিক বোগানের মতে, ইরাকের অতর্কিত এই আক্রমণে সুস্পষ্টভাবেই দূরদৃষ্টিপূর্ণ মনোভাবের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল।[৭১]

ইরাকের অতর্কিত আক্রমণ ইরানের জন্য ছিল বিস্ময়কর। ফলে বিভিন্ন স্থানে ইরানের নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী পাসদারান প্রতিরোধযুদ্ধের সূচনা করে। তবে, বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া এই প্রতিরোধের মাঝে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় না থাকায় ইরাকি বাহিনীকে শুরুতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।[৭০] আধা-সামরিক বাহিনী পাসদারান সদস্যরা খুব একটা প্রশিক্ষিত না হলেও নিবেদিত এবং উদ্দীপ্ত হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন।[৭২][৭৩]

আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে ইরান বিমানবাহিনীর এফ-৪ ফ্যান্টম বিমান ইরাকি লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা আঘাত হানে। অল্প কয়েকদিনের মাঝেই আকাশ-যুদ্ধে ইরানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।[৭৪] সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে ইরান নৌবাহিনী,বসরা অভিমুখে অভিযান পরিচালনার পথে ইরাকের পারস্য উপসাগরীয় বন্দর ফাও এর নিকটে দু'টি তেল টার্মিনাল ধ্বংস করলে ইরাকের তেল রপ্তানী ক্ষমতা বিপুলভাবে হ্রাস পায়।[৭৫] ইরান বিমানবাহিনী এছাড়াও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইরাকের তেল স্থাপনা, বাঁধ, পেট্রোকেমিকেল প্ল্যান্ট এবং বাগদাদের কাছে একটি পারমাণবিক চুল্লীতে আক্রমণ পরিচালনা শুরু করে।[৭৫]

২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে দু'টি দেশকে নীরস্ত হওয়ার আহবান জানায়।অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা করছিলেন ইরাকি আগ্রাসনে ইরানের অভ্যন্তর থেকে সমর্থন নাজুক তেহরান সরকারের পতন ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু বাস্তবে সেসব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়। নভেম্বরের মাঝে ইরান ২ লক্ষ্য নতুন যোদ্ধার সমাবেশ ঘটাতে সক্ষম হয়। এদের মাঝে বেশিরভাগই ছিলেন আদর্শগতভাবে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবক।[৭৬]

অক্টোবর মাসে খোররামশাহর শহরের রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় রক্তক্ষয়ী নগর যুদ্ধের। উভয় পক্ষের প্রায় ৭ হাজার করে যোদ্ধা এতে নিহত হন।[৬৯] বিপুল রক্তক্ষয়ের কারণে সেসময় খোররামশাহর উভয়পক্ষের কাছেই "খুনিস্তান"(রক্তের শহর) নামে পরিচিত ছিল।[৬৯] অক্টোবরের ২৪ তারিখে অবশেষে শহরটি ইরাকের পদানত হয়।[৭২]

নভেম্বর মাসে সাদ্দামের নির্দেশে পরিচালিত দেজফুল এবং আহভাজ অভিমুখে ইরাকি অভিযান শক্ত ইরানি বাধার মুখে পড়ে,[৭৫] এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিসেম্বরের ৭ তারিখ সাদ্দাম কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।[৭৭] পরবর্তী ৮ মাসের মাঝে উল্লেখ করার মত সবচেয়ে তীব্র যুদ্ধটি ছিল দেজফুলের যুদ্ধ

এর বাইরে, ১৯৭৯-৮০ সালের বিপ্লবের সময় অবিন্যস্ত হয়ে পড়া ইরান সামরিক বাহিনী পুনঃসংঘটিত করতে ইরানও এই দীর্ঘ আট মাস রক্ষণাত্মক নীতি গ্রহণ করে।[৭৭][৭৮] ইরাক এই সময়ের মাঝে ২১ টি যুদ্ধ ডিভিশনের সমাবেশ ঘটায়। অন্যদিকে ইরান সব মিলিয়ে ১৩ টি ডিভিশন এবং ১ টি ব্রিগেড প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়। যদিও এরমাঝে কেবল ৭ টি ডিভিশনকে সীমান্ত ফ্রন্টে যুদ্ধের জন্য পাঠানো সম্ভবপর হয়।

১৯৮১: সাম্যাবস্থা[সম্পাদনা]

152 mm howitzer D-20 belong to Military of Iran

১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি ইরান ভারী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সুসানজার্দ এর আক্রমণ চালিয়ে ইরাকি নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ফেলতে সমর্থ হয়। [৭৯] অগ্রগামী ইরানি ট্যাংক বহর ইরাকি প্রতিরোধ বেষ্টনী ভেঙে অনেক ভেতরে অগ্রসর হয়ে পড়লে পেছনের অন্যান্য ইরানি ডিভিশন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইরাকি ট্যাংকের বহর এমতাবস্থায় চারপাশ থেকে অগ্রগামী বিচ্ছিন্ন ইরানি ট্যাংক বহরকে ঘেরাও করে ফেলে।[৮০]

ইতিহাসের অন্যতম বড় এই ট্যাংক যুদ্ধে প্রথমে একক প্রাধান্য বিস্তার করেও কৌশলগতভাবে ভুল করায় ইরানি ট্যাংক ডিভিশনটি প্রায় পুরোপুরিভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[৮০] এই যুদ্ধে ইরাক প্রায় ৫০ টি টি-৬২ ট্যাংক হারায়। ইরান হারায় ১০০ টি চিফটেইন এবং এম-৬০ ট্যাংক।[৮০] একই বছর ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবোলহাসান বানি-সাদর রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েন।

যুদ্ধে বড় কোন বিজয়ের বিনিময়ে নিজের অবস্থানকে সমুন্নত করার প্রয়াসে তিনি ব্যাটল অফ দেজফুল এর নির্দেশ দেন। কিন্তু এই যুদ্ধে ইরানের বিপর্যয় বানি-সাদর এর পতনকে ত্বরান্বিত করে।[৮১] দেশের অভ্যন্তরেও ইরানকে এই বছর বেশ কিছু সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। জুন এবং সেপ্টেম্বর মাসে সরকার এবং বিরোধী বামপন্থী মুজাহিদিন-খালক্ব গেরিলাদের কয়েকটি বড় শহরের রাস্তায় সংঘাত হয়।[৮২]

বছরের শুরুতে বেশ কিছু বিপর্যয় কাটিয়ে ইরানি বাহিনী সে বছর বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করে । মে মাসে সুসানজার্দ এর নিকটবর্তী উচ্চভূমি ইরান পুনর্দখল করতে সমর্থ হয়। ইরানি আক্রমণে সেপ্টেম্বর মাসে ইরাকের আবাদান অবরোধ এর সমাপ্তি ঘটে। উল্লেখ্য ১৯৮০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ইরাক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তেল সমৃদ্ধ এ বন্দরটি অবরোধ করে রেখেছিল।[৮৩]

১৯৮১ সালের শরৎে ইরান অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়ে ইরাক সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাঝেই বেশ জোরেশোরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।[৮৪] ২৯ নভেম্বর ৩ টি সেনা ব্রিগেড এবং ৭ টি আধা-সামরিক রেভুলুশনারি গার্ড ব্রিগেড নিয়ে শুরু হয়ে ইরানের অপারেশন তারিক-আল-কুদস। এ অভিযানের ফলে ৭ ডিসেম্বর ইরান বোস্তান শহরটি পুনরুদ্ধার করে।[৮৪] যুদ্ধ প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রে ইরাক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকায়,

এই অপারেশনে ইরান প্রথমবারের মত তাদের "মানব-ঢেউ" কৌশলের প্রয়োগ ঘটায়। এ কৌশলে আকাশপথে বা ভূমিতে কোন ভারী আর্টিলারীর সাহায্য ছাড়াই রেভুলশনারী গার্ডের বিপুল সংখ্যক সদস্য বারবার ইরাকি অবস্থানে আক্রমণ চালায়।[৮৫] বোস্তানের পতনের ফলে ইরাক খুজেস্তান প্রদেশে তাদের সেনাদের রসদ সরবরাহে বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়।[৮৫]

১৯৮৪: পারস্য উপসাগরে "ট্যাংকার যুদ্ধ"[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালের শুরুর দিকে ইরাক পারস্য উপসাগরে ইরানি ট্যাংকার এবং খারাগ দ্বীপে তৈল-টার্মিনালে হামলা করলে ট্যাংকার যুদ্ধের সূচনা হয়।[৮৬] ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কুয়েত ছেড়ে আসা ইরাকি তেলবাহী ট্যাংকারে আক্রমণ চালাতে শুরু করে। উপসাগরীয় যেসব দেশ যুদ্ধে ইরাককে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছিল, তাদের ট্যাংকারও ইরানের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। দুই দেশ একে অপরের অর্থনীতি ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে অনেক তৃতীয় পক্ষের বাণিজ্যিক জাহাজেও আক্রমণ করতে শুরু করে। ইরাক ঘোষণা করে পারস্য উপসাগরের উত্তরাংশে ইরানি বন্দর অভিমুখী বা ইরান ছেড়ে আসা যে কোন জাহাজ তাদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হবে।[৮৬] ট্যাংকার যুদ্ধ শুরুর পেছনে সাদ্দাম হোসেনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল।

ইরাকের আশা ছিল, আক্রান্ত হলে কড়া প্রতিশোধ হিসেবে ইরান হরমুজ প্রণালী পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে।[৮৬] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে তারা ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।[৮৬] এ কারণে ইরান প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে দূরে থেকে কেবলমাত্র ইরাকি জাহাজের উপর আক্রমণ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত অটল থাকে।[৮৭] ইরাকের আক্রমণের মুখে ইরান হরমুজ প্রণালীতে অবস্থিত লারাক দ্বীপ এ তাদের বন্দর সরিয়ে নেয়।[৮৮]

ইরাক উপসাগরে উপস্থিতি বলিষ্ঠ করতে জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল সমৃদ্ধ হেলিকপ্টার, এফ-১ মিরেজ এবং মিগ-২৩ যুদ্ধবিমান কাজে লাগায়। খারক দ্বীপ এ অবস্থিত ইরানের সর্বপ্রধান তেল রপ্তানী কেন্দ্রে বারংবার ইরাকি হামলা হওয়ার পর ইরান ১৯৮৪ সালের ১৩ মে বাহরাইন এর নিকটে একটি কুয়েতি ট্যাংকারে হামলা চালায়। ১৬ মে সৌদি জলসীমার অভ্যন্তরে একটি সৌদি ট্যাংকারও আক্রান্ত হয়। উল্লেখ্য, উপসাগরীয় যুদ্ধে এসব দেশ ইরাককে পূর্ণ সহযোগিতা এবং সমর্থন করে আসছিল। তৃতীয় পক্ষের এসব দেশের জাহাজ আক্রান্ত হতে শুরু করার পর যুদ্ধের এ পর্যায়টি 'ট্যাংকার যুদ্ধ' নামে পরিচিত হয়। সৌদি আরব প্রতিশোধ হিসেবে ১৯৮৪ সালের ৫ জুন একটি ইরানি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে।[৮৭]

ইরান এ পর্যায়ে ইরাকের উপর উপসাগরে নৌ-অবরোধ আরোপ করে। ইরানি ফ্রিগেটগুলো ইরাকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোন দেশের জাহাজ থামিয়ে তল্লাশী করতে শুরু করে। ইরানি যুদ্ধ্বজাহাজগুলি থেকে অনেক ট্যাংকার পানির নীচ দিয়ে ছোঁড়া মিসাইলে আক্রান্ত হতে থাকে। এ ছাড়াও রাডারের সাহায্য নিয়ে ভূমি থেকে উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েও অনেক জাহাজে হামলা চালানো হয়।[৮৯]

ট্যাংকার যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচলিত করে তুললেও ১৯৮৭ সালের পূর্বে মার্কিনীরা সরাসরি কোন হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে।[৮৭] কুয়েতের বেশ কিছু জাহাজ ইরান কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পর ১৯৮৭ সালের মার্চ মাস থেকে মার্কিন পতাকাবাহী কুয়েতি জাহাজগুলিকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌসেনারা নিরাপত্তা প্রদান করতে শুরু করে।[৮৭] ৮৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে সোভিয়েত নৌবাহিনীও কুয়েতি জাহাজের নিরাপত্তায় অংশ নেয়।[৮৭] ১৯৮৭ সালের ১৭ মে ইরাকি এফ-১ মিরেজ বিমান থেকে ছোঁড়া দু'টি জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন রণতরী ইউএসএস স্টার্কে আঘাত করে। [৯০][৯১]

রণতরীটি থেকে তার কিছু সময় আগেই নিয়মমাফিক যুদ্ধবিমানে সতর্কতা বার্তা পাঠানো হয়েছিল।[৯২] ইরাকি বিমান থেকে মিসাইল হামলার আশঙ্কা না করায়, মার্কিন রণতরীটি একদম শেষ মূহুর্তে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি অণুধাবন করে।[৯৩] হামলায় ৩৭ জন মার্কিন নাবিক নিহত এবং অপর ২১ জন আহত হয়।[৯৩]

লয়েড'স অফ লন্ডন নামে একটি ব্রিটিশ বীমা প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী ট্যাংকার যুদ্ধে সর্বমোট ৫৪৬ টি বাণিজ্যিক জাহাজের উপর হামলা হয়। এতে অন্তত ৪৩০ জন বেসামরিক নাবিক প্রাণ হারায়। ইরানের আক্রমণের একটি বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল কুয়েতি জাহাজ। ১৯৮৬ সালের ১ লা নভেম্বর কুয়েত বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের ট্যাংকার ব্যবহারে কুয়েত অণুমতি দেয় । ট্যাংকারে মার্কিন পতাকা উত্তোলনের শর্তে যুক্তরাষ্ট্র সেগুলোর নিরাপত্তা বিধানের ওয়াদা করে। এ অপারেশনটির নাম ছিল অপারেশন আর্নেস্ট উইল এবং অপারেশন প্রাইম চান্স[৯৪]

ইরান এরপর সোভিয়েত নৌবাহিনীর দু'টি জাহাজে হামলা করে।[৯৫] ট্যাংকার যুদ্ধ চলাকালে ইরানের অপরিশোধিত তেলবাহী একটি জাহাজে ইরাকি হামলার ঘটনায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেলবাহী জাহাজটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৯৬]

যুদ্ধের অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

১৯৮০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইরান বিমানবাহিনীর দু'টি ফ্যান্টম-৪ যুদ্ধবিমান ইরাকের অভ্যন্তরে ওসিরাক পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে এর আংশিক ক্ষতিসাধন করে। ইতিহাসে পারমাণবিক চুল্লী আক্রমণের এটি প্রথম, এবং সবমিলিয়ে যে কোন ধরনের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার তৃতীয় ঘটনা। এছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন ঠেকাতে আগে-ভাগেই পারমাণবিক কর্মসূচী বাধাগ্রস্থ করে দেয়ার ঘটনার ক্ষেত্রে এটি প্রথম নজির।

ফ্রান্স অবশ্য দ্রুত ইরাকের চুল্লী মেরামত করে দিলে ইরানের আক্রমণের লক্ষ্যটি ব্যাহত হয়।[৯৭] তবে কিছুদিনের মাঝেই এই চুল্লিটি ইসরায়েলের তরফ থেকে দ্বিতীয় আক্রমণের শিকার হয়। ফ্রান্সের কিছু প্রকৌশলী এই হামলায় হতাহত হলে ফ্রান্স তার কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওসিরাক স্থাপনাটিও কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সাদ্দাম হোসেনের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের লক্ষ্য এই ঘটনায় চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হয়।[৯৮][৯৮][৯৯][১০০][১০১][১০১][১০২][১০৩]

ইতিহাসে এটি একমাত্র যুদ্ধ যেখানে দু'পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।[৯৯]

এই যুদ্ধের আগে অন্য কোন যুদ্ধে সরাসরি হেলিকপ্টার যুদ্ধের ইতিহাসও জানা যায় না। হেলিকপ্টার ডগফাইটের প্রথম ঘটনাটি ঘটে যুদ্ধের প্রথম দিনেই। ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ ইরানের দু'টি সুপারকোবরা হেলিকপ্টার ইরাকের দু'টো মি-২৫ কপ্টার লক্ষ্য করে ট্যাংক বিধ্বংসী বিজিএম-৭১ গাইডেড মিসাইল ছুঁড়লে একটি ইরাকি কপ্টার তাৎক্ষণিকভাবে ভূপাতিত হয়। অপরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইরাকের অভ্যন্তরে ঘাঁটিতে অবতীর্ণ হওয়ার আগেই বিধ্স্ত হয়। ২৪ এপ্রিল, ১৯৮১ একই রকম ঘটনায় ইরাক আরও দু'টো কপ্টার হারায়। অসমর্থিত সূত্রের তথ্যানুযায়ী হেলিকপ্টার যুদ্ধে ইরান-ইরাকের সাফল্যের অণুপাত ছিল ১০:১।[১০৪][১০৫]

অন্যান্য অনেক যুদ্ধের মত এই যুদ্ধের ফলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বেশ কিছু নতুন গবেষণা সূত্রপাত হয়।[১০৬]। মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্তদ ইরানি সৈন্যদের চিকিৎসায় নতুন উদ্ভাবিত একটি পদ্ধতি এখনও অণুসৃত হয়।[১০৭][১০৮][১০৯]

"বড় শহরের যুদ্ধ"[সম্পাদনা]

১৯৮৫ সাল থেকে ইরাক তেহরানসহ বড় ইরানি শহরগুলোকে লক্ষ্য করে আকাশপথে নিয়মিত হামলা পরিচালনা শুরু করে। ইরান বিমানবাহিনী সংখ্যাগত এবং কৌশলগত দিক থেকে এগিয়ে থাকায় ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে ইরাক বিমান হামলার তুলনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অধিকতর মনোনিবেশ করেন। ইরাক মূলত স্কাড এবং আল-হুসেইন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইরান এসময় লিবিয়া এবং সিরিয়ার কাছ থেকে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করে পাল্টা হামলা চালায়। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরাকের প্রাধান্য ছিল বেশি। যুদ্ধে ইরানের ১৭৭ হামলার বিপরীত ইরাক ৫২০ টি স্কাড এবং আল-হুসেইন নিক্ষেপ করে। ১৯৮৬ সালের অক্টোবর থেকে ইরানি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং বিমান ইরাকের নতুন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সিরাজ বিমানবন্দরে একটি বোয়িং-৭৩৭ থেকে যাত্রী অবতরণকালে ইরাকি হামলা এর মাঝে উল্লেখযোগ্য।[১১০]

১৯৮৭ সালের শুরুর দিকে ইরান, বসরা নগর দখলের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শুরু করে অপারেশন কারবালা-৫। এর প্রতিশোধ নিতে ইরাক ৪২ দিনের মাঝে ৬৫ টি ইরানি শহর এবং ২২৬ টি লোকালয়ে হামলা করে। ৮ টি বড় শহরে মূলত চলে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ। এ ঘটনায় অনেক ইরানি বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারায়। ব্রুজার্দ শহরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ৬৫ টি শিশু। ইরানের একটি স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র এরপর বাগদাদের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আঘাত করে। দু'টি দেশ একে অন্যের শহরগুলিকে লক্ষবস্তুতে পরিণত করায়, যুদ্ধটি বড় শহরের যুদ্ধ("the War of the Cities") হিসেবেও পরিচিত পায়।[১১১]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Iran and Syria ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে Jubin Goodarzi
  2. "Iraq Breaks Ties with Libya over Support for Iran"। ২৭ জুন ১৯৮৫। ২৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৮ 
  3. Allam, Shah (অক্টোবর–ডিসেম্বর ২০০৪)। "Iran-Pakistan Relations: Political and Strategic Dimensions" (pdf)Strategic Analysis। The Institute for Defence Studies and Analyses। 28 (4): 526। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৩ 
  4. Ansar, Arif (জানুয়ারি ২৭, ২০১৩)। "Preventing the next regional conflict"Pakistan Today। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৩ 
  5. Shah, Mehtab Ali (১৯৯৭)। The Foreign Policy of Pakistan: Ethnic Impacts on Diplomacy, 1971–1994। London [u.a.]: Tauris। আইএসবিএন 1-86064-169-5 
  6. "The Iran-North Korea Connection"। ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৯ 
  7. Karsh, Efraim (৩ জুলাই ১৯৮৯)। The Iran–Iraq War: Impact and Implicationsআইএসবিএন 9781349200504 
  8. El-Azhary, M. S. (২৩ মে ২০১২)। The Iran–Iraq War (RLE Iran A)আইএসবিএন 9781136841750 
  9. Razoux, Pierre (৩ নভেম্বর ২০১৫)। The Iran–Iraq Warআইএসবিএন 9780674088634 
  10. Johnson, Rob (২৪ নভেম্বর ২০১০)। The Iran–Iraq War। Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 9781137267788 – Google Books-এর মাধ্যমে। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. Murray, Williamson; Woods, Kevin M. (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। The Iran–Iraq War: A Military and Strategic History। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781107062290 – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  12. Middleton, Drew (৪ অক্টোবর ১৯৮২)। "SUDANESE BRIGADES COULD PROVIDE KEY AID FOR IRAQ; Military Analysis (The New York Times)"The New York Times। ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  13. "Iraq-Iran war becoming Arab-Persian war? (The Christian Science Monitor)"Christian Science Monitor। ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২। ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  14. "Jordan's call for volunteers to fight Iran misfires (The Christian Science Monitor)"Christian Science Monitor। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২। ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  15. Schenker, David Kenneth (২০০৩)। Dancing with Saddam: The Strategic Tango of Jordanian-Iraqi Relations (পিডিএফ)The Washington Institute for Near East Policy / Lexington Booksআইএসবিএন 0-7391-0649-X। ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  16. "Jordanian Unit Going To Aid Iraq 6 Hussein Will Join Volunteer Force Fighting Iranians (The Washington Post)"। ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  17. Berridge, W. J. "Civil Uprisings in Modern Sudan: The 'Khartoum Springs' of 1964 and 1985", p. 136. Bloomsbury Academic, 2015
  18. Dictionary of modern Arab history, Kegan Paul International 1998. ISBN 9780710305053 p. 196.
  19. Metz, Helen Chapin, ed. (1988), "The Soviet Union" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে, Iraq: a Country Study, Library of Congress Country Studies
  20. Metz, Helen Chapin, ed. (1988), "Arms from The Soviet Union" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, Iraq: a Country Study, Library of Congress
  21. Ibrahim, Youssef M. (২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯০), "Confrontation in the Gulf; French Reportedly Sent Iraq Chemical War Tools", The New York Times 
  22. Metz, Helen Chapin, ed. (1988), "Arms from France" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে, Iraq: a Country Study, Library of Congress[যাচাই প্রয়োজন]
  23. Timmerman, Kenneth R.। "Chapter 7: Operation Staunch"। Fanning the Flames: Guns, Greed & Geopolitics in the Gulf War। ১৩ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ – Iran Brief-এর মাধ্যমে।  (syndicated by New York Times Syndication Sales, 1987, published in book form as "Öl ins Feuer Internationale Waffengeschäfte im Golfkrieg" Orell Füssli Verlag Zürich and Wiesbaden 1988 আইএসবিএন ৩-২৮০-০১৮৪০-৪
  24. Anderson, Jack; Spear, Joseph (মে ১৭, ১৯৮৮)। "Greece Arms Both Sides in Iran–Iraq War"Washington Post 
  25. "U.S. Links to Saddam During Iran–Iraq War"। NPR। ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৫। 
  26. Friedman, Alan. Spider's Web: The Secret History of How the White House Illegally Armed Iraq, Bantam Books, 1993.[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  27. Timmerman, Kenneth R. (১৯৯১)। The Death Lobby: How the West Armed Iraq। New York, NY: Houghton Mifflin Company। আইএসবিএন 0-395-59305-0 
  28. Stothard, Michael (৩০ ডিসেম্বর ২০১১)। "UK secretly supplied Saddam"Financial Times 
  29. "US and British Support for Hussein Regime"। ২৪ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯ 
  30. Vatanka, Alex (২২ মার্চ ২০১২)। "The Odd Couple"The MajallaSaudi Research and Publishing Company। ২৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১২ 
  31. Anthony, John Duke; Ochsenwald, William L.; Crystal, Jill Ann। "Kuwait"Encyclopædia Britannica। ১২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১২ 
  32. "Iraqi Scientist Reports on German, Other Help for Iraq Chemical Weapons Program"। ১৩ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫ 
  33. Sciolino, Elaine; Baquet, Dean (১৮ অক্টোবর ১৯৯২), "Review Finds Inquiry into Iraqi Loans Was Flawed", The New York Times, ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা 
  34. El camino de la libertad: la democracia año a año (1986) [The Path of Liberty: Democracy Year to Year] (স্পেনীয় ভাষায়)। El Mundo। পৃষ্ঠা 27–32। 
  35. Mearsheimer, John J.; Walt, Stephen M. (১২ নভেম্বর ২০০২)। "Can Saddam Be Contained? History Says Yes"International Security। Belfer Center for Science and International Affairs। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  36. Pollack, p, 186
  37. Farrokh, Kaveh, 305 (2011)
  38. Pollack, p. 187
  39. Pollack, p. 232
  40. Pollack, p. 186
  41. Pollack, p. 3
  42. Hiro, Dilip (১৯৯১)। The Longest War: The Iran–Iraq Military Conflict। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 205আইএসবিএন 9780415904063ওসিএলসি 22347651 
  43. Abrahamian, Ervand (২০০৮)। A History of Modern Iran। Cambridge, U.K.; New York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 171–175, 212। আইএসবিএন 9780521528917ওসিএলসি 171111098 
  44. Rajaee, Farhang (১৯৯৭)। Iranian Perspectives on the Iran–Iraq War। Gainesville: University Press of Florida। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 9780813014760ওসিএলসি 492125659 
  45. Mikaberidze, Alexander (২০১১)। Conflict and Conquest in the Islamic World: A Historical Encyclopedia। Santa Barbara, California: ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 418। আইএসবিএন 9781598843361ওসিএলসি 775759780 
  46. Hammond Atlas of the 20th Century (1999) P. 134-5
  47. Dunnigan, A Quick and Dirty Guide to War (1991)
  48. Dictionary of Twentieth Century World History, by Jan Palmowski (Oxford, 1997)
  49. Clodfelter, Michael, Warfare and Armed Conflict: A Statistical Reference to Casualty and Other Figures, 1618–1991
  50. Chirot, Daniel: Modern Tyrants : the power and prevalence of evil in our age (1994)
  51. "B&J": Jacob Bercovitch and Richard Jackson, International Conflict : A Chronological Encyclopedia of Conflicts and Their Management 1945–1995 (1997) p. 195
  52. Potter, Lawrence G.; Sick, Gary (২০০৬)। Iran, Iraq and the Legacies of War। Basingstoke: Palgrave Macmillan। পৃষ্ঠা 8আইএসবিএন 9781403976093ওসিএলসি 70230312 
  53. Zargar, Moosa; Araghizadeh, Hassan; Soroush, Mohammad Reza; Khaji, Ali (ডিসেম্বর ২০১২)। "Iranian casualties during the eight years of Iraq-Iran conflict" (পিডিএফ)Revista de Saúde Pública। São Paulo: Faculdade de Higiene e Saúde Pública da Universidade de São Paulo। 41 (6): 1065–1066। আইএসএসএন 0034-8910ওসিএলসি 4645489824ডিওআই:10.1590/S0034-89102007000600025। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৩ 
  54. Hiro, Dilip (১৯৯১)। The Longest War: The Iran–Iraq Military Conflict। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 251আইএসবিএন 9780415904063ওসিএলসি 22347651 
  55. Rumel, Rudolph। "Centi-Kilo Murdering States: Estimates, Sources, and Calculations"Power Kills। University of Hawai'i। 
  56. Karsh, Efraim (২০০২)। The Iran–Iraq War, 1980–1988। Oxford: Osprey Publishing। পৃষ্ঠা 89আইএসবিএন 9781841763712ওসিএলসি 48783766 
  57. Koch, Christian; Long, David E. (১৯৯৭)। Gulf Security in the Twenty-First Century। Abu Dhabi: Emirates Center for Strategic Studies and Research। পৃষ্ঠা 29। আইএসবিএন 9781860643163ওসিএলসি 39035954 
  58. Ian Black। "Iran and Iraq remember war that cost more than a million lives"the Guardian 
  59. Rumel, Rudolph। "Lesser Murdering States, Quasi-States, and Groups: Estimates, Sources, and Calculations"Power Kills। University of Hawai'i। 
  60. Sinan, Omar (২৫ জুন ২০০৭)। "Iraq to hang 'Chemical Ali'"Tampa Bay Times। Associated Press। 
  61. Molavi, Afshin, The Soul of Iran Norton, (2005), p.152
  62. Molavi, Afsin (২০০৫)। The Soul of Iran। Norton। পৃষ্ঠা 152 
  63. "THREATS AND RESPONSES: BRIEFLY NOTED; IRAN-IRAQ PRISONER DEAL", by Nazila Fathi, New York Times, March 14, 2003
  64. The Great War for Civilisation by Robert Fisk, আইএসবিএন ১-৮৪১১৫-০০৭-X pages 219
  65. Cruze, Gregory S. (Spring ১৯৮৮)। "Iran and Iraq: Perspectives in Conflict"। research। report। U.S. Marine Corps Command and Staff College। 
  66. Karsh, Efraim (২০০২)। The Iran–Iraq War, 1980–1988। Osprey Publishing। পৃষ্ঠা 22 
  67. The Iran–Iraq War: 1980–1988। পৃষ্ঠা 22। 
  68. Cordesman, Anthony and Wagner,Abraham R. (১৯৯০)। The Lessons of Modern War: Volume Two – The Iran-Iraq Conflict। Westview। পৃষ্ঠা 102। 
  69. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 27
  70. The Iran–Iraq War: 1980–1988। পৃষ্ঠা 23। 
  71. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Brogan, Patrick page 261 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  72. The Iran–Iraq War: 1980–1988। পৃষ্ঠা 27। 
  73. The Iran–Iraq War: 1980–1988। পৃষ্ঠা 25। 
  74. "Modern Warfare: Iran-Iraq War" (Film Documentary)
  75. The Iran–Iraq War: 1980–1988। পৃষ্ঠা 29। 
  76. "Iran–Iraq War (1980–1988)"। Globalsecurity.org (John Pike)। 
  77. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 30
  78. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 8
  79. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 pages 31–32
  80. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 32
  81. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 71
  82. Brogan, Patrick World Conflicts, Bloomsbury: London, 1989 pages 250-251
  83. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 33
  84. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 34
  85. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 35
  86. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 50
  87. Karsh, Efraim The Iran-Iraq War 1980–1988, London: Osprey, 2002 page 51
  88. Dugdale-Pointon, TDP (২৭ অক্টোবর ২০০২)। "Tanker War 1984–1988," 
  89. Wars in Peace: Iran-Iraq War (Documentary Film)
  90. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১ মে ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১১ 
  91. Desert Storm at sea: what the Navy really did by Marvin Pokrant, P 43.
  92. Stephen Andrew Kelley (জুন ২০০৭)। "Better Lucky Than Good: Operation Earnest Will as Gunboat Diplomacy" (পিডিএফ)Naval Postgraduate School। ২৭ জুন ২০০৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০০৭ 
  93. "Formal Investigation into the Circumstances Surrounding the Attack of the USS Stark in 1987" (পিডিএফ)। ২৮ মে ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১১ 
  94. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Kelley2007 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  95. Iran। "AllRefer.com - Iran - Gradual Superpower Involvement | Iranian Information Resource"। Reference.allrefer.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  96. "Seawise Giant (Happy Giant) (Jahre Viking) (Knock Nevis) (Mont)"। Relevantsearchscotland.co.uk। ২০১১-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  97. "IRAN: Eyes on the Skies Over Bushehr Nuclear Reactor - IPS"। Ipsnews.net। ২০১০-০৮-০৬। ২০১১-০৮-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  98. "McNair Paper 41, Radical Responses to Radical Regimes: Evaluating Preemptive Counter-Proliferation, May 1995"। Au.af.mil। ১৯৮০-০৯-৩০। ২০১৯-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  99. "McNair Paper 41, Radical Responses to Radical Regimes: Evaluating Preemptive Counter-Proliferation, May 1995"। Au.af.mil। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  100. "Osiraq - Iraq Special Weapons Facilities"। Fas.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  101. http://google.com/search?q=cache:ZlBdwCEy9yAJ:www.diplomatie.gouv.fr/fr/IMG/pdf/Osirak.pdf+osirak+repair+after+iranian+attack&cd=3&hl=en&ct=clnk&gl=ca&client=firefox-a
  102. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  103. "پايگاه هشتم شكاري"। Airtoair.blogfa.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  104. "Fire in the Hills: Iranian and Iraqi Battles of Autumn 1982"। Acig.org। ২০১৪-০৮-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  105. "Hind In Foreign Service / Hind Upgrades / Mi-28 Havoc"। Vectorsite.net। ২০১১-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  106. "Medscape: Medscape Access"। Emedicine.medscape.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  107. Healy, Melissa (২৪ জানুয়ারি ২০১১)। "Advances in treatment help more people survive severe injuries to the brain"Los Angeles Times 
  108. "Advances in treatment help more people survive severe injuries to the brain"। Quedit.com। ২০১১-০১-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  109. Healy, Melissa (২০১১-০১-২৪)। "Brain injuries: Changes in the treatment of brain injuries have improved survival rate"। baltimoresun.com। ২০১১-০৬-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০২ 
  110. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; r1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  111. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; AggrPolitics নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি