ইরাকি যুদ্ধাপরাধসমূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইরাকি যুদ্ধাপরাধ বলতে ইরাক কর্তৃক বিভিন্ন যুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধসমূহকে বোঝায়।

দ্বিতীয় ইরাকি–কুর্দি যুদ্ধ[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় ইরাকি–কুর্দি যুদ্ধে বিজয় লাভের পর ইরাকি সরকারি বাহিনী ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে ৬০০টি কুর্দি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, এবং প্রায় ২,০০,০০০ কুর্দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাসিত করা হয়[১]

ইরাক–ইরান যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৮০ সালে ইরাক ইরান আক্রমণ করে এবং ইরানের খুররমশহরসহ প্রায় ১৫,০০০ বর্গ কি.মি. অঞ্চল দখল করে নেয়। খুররমশহর দখলের পর ইরাকি সৈন্যরা ইরানি বন্দরগুলো থেকে প্রচুর পণ্যদ্রব্য লুট করে এবং ইরাকের বসরায় প্রেরণ করে। এছাড়া ইরাকি সৈন্যরা খুররমশহরে বেশ কয়েকজন ইরানি নারীকে ধর্ষণ করে। ইরাক–ইরান যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে ইরাক ইরানি সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাপক হারে ব্যবহার করে, এবং এর ফলে ৫০,০০০-এর বেশিসংখ্যক ইরানি হতাহত হয়[২]

ইরানের সঙ্গে ইরাকের যুদ্ধের সময় ইরাকি কুর্দিরা ইরানি বাহিনীকে সহযোগিতা করে। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইরাকি সরকার আল-আনফাল অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ইরাকি সৈন্যরা নারী ও শিশুসহ ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ বেসামরিক ইরাকি কুর্দিকে হত্যা করে[৩][৪]ইরাকি কুর্দিস্তানের ৪,৬৫৫টি গ্রামের মধ্যে প্রায় ৪,০০০টি গ্রাম ইরাকি বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। ১৯৮৭ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্টের মধ্যে ইরাকি বাহিনী ২৫০টি শহর ও গ্রামে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে[৫]। এছাড়া ইরাকি বাহিনী এতদঞ্চলের ১,৭৫৪টি স্কুল, ২৭০টি হাসপাতাল, ২,৪৫০টি মসজিদ এবং ২৭টি গির্জা ধ্বংস করে দেয়[৬]। একই সময়ে কুর্দিদের পাশাপাশি প্রায় ২,০০০ আসিরীয় খ্রিস্টানও ইরাকি রাসায়নিক হামলার শিকারে পরিণত হয়[৭]

ইরাক–কুয়েত যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক কুয়েত আক্রমণ ও দখল করে এবং পরবর্তী প্রায় ৭ মাস কুয়েত ইরাকের দখলে থাকে। এসময় ইরাকি বাহিনীর হাতে ১,০০০-এর বেশি সংখ্যক বেসামরিক কুয়েতি নিহত[৮] এবং আরো প্রায় ৬০০ কুয়েতি নিখোঁজ[৯] হয়। দখলদার ইরাকি বাহিনী কুয়েতের প্রচুর ধনসম্পদ লুট করে এবং কুয়েতি জনসাধারণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হয়[১০]। এসময় প্রায় ৫,০০০ কুয়েতি নারী ইরাকি সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন[১১]। ইরাকি আক্রমণের ফলে প্রায় ৪,০০,০০০ কুয়েতি (কুয়েতের জনসংখ্যার অর্ধেক) দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়[১২]

উপসাগরীয় যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাক বিনা প্ররোচনায় ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরাকি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে মোট ৭৪ জন ইসরায়েলি নিহত[১৩] এবং প্রায় ২৩০ জন ইসরায়েলি আহত[১৪] হয়। এছাড়া ইরাকি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে ইসরায়েলের ১,৩০২টি বসতবাড়ি, ৬,১৪২টি অ্যাপার্টমেন্ট, ২৩টি সরকারি ভবন, ২০০টি দোকান এবং ৫০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়[১৫]

এছাড়া এই যুদ্ধের সময় ইরাকি সৈন্যরা যুদ্ধবন্দি সৈন্যদের ওপর নির্যাতন চালায়[১৬][১৭][১৮][১৯]। নারী যুদ্ধবন্দি ফ্লাইট সার্জন রোন্ডা কর্নাম ইরাকি সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হন[২০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Farouk-Sluglett, M.; Sluglett, P.; Stork, J. (জুলাই–সেপ্টেম্বর ১৯৮৪)। "Not Quite Armageddon: Impact of the War on Iraq"। MERIP Reports: 24। 
  2. Wright, Robin (২০০৮)। Dreams and Shadows: The Future of the Middle East। New York: Penguin Press। পৃষ্ঠা 438আইএসবিএন 9781594201110 
  3. GENOCIDE IN IRAQ Human Rights Watch, 1993
  4. The Crimes of Saddam Hussein – 1988 The Anfal Campaign PBS Frontline
  5. Michael Rubin, Are Kurds a pariah minority? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে Social Research, Spring, 2003.
  6. "List of the churches been demolished by Saddam Hussein's regime" (পিডিএফ)। Capiraq.org। ৩ জুলাই ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৩ 
  7. Certrez, Donabed, and Makko (২০১২)। The Assyrian Heritage: Threads of Continuity and Influence। Uppsala University। পৃষ্ঠা 289। আইএসবিএন 978-91-554-8303-6 
  8. "The Use of Terror during Iraq's invasion of Kuwait"। The Jewish Agency for Israel। ২৪ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১০ 
  9. "Kuwait: missing people: a step in the right direction"। Red Cross। ৭ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  10. State of Kuwait ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ মে ২০১৬ তারিখে. Atlapedia.com. Retrieved on 2011-06-12.
  11. "EJIL Issue: Issue Vol. 5 (1994) No. 1"। Ejil.org। ২০১৩-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-৩০ 
  12. Kuwait Britannica ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে. Britannica.com (1961-06-19). Retrieved on 2011-06-12.
  13. The Gulf War
  14. Fetter, Steve; Lewis, George N.; Gronlund, Lisbeth (২৮ জানুয়ারি ১৯৯৩)। "Why were Casualties so low?" (পিডিএফ)Nature। London: Nature Publishing Group361 (6410): 293–296। ডিওআই:10.1038/361293a0 
  15. "The Gulf War (1991)"। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৬ 
  16. "Frontline: War Stories"। Pbs.org। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  17. Patrice O'Shaughness."Gulf War POW denounces abuse of Iraqi detainees".New York Daily News. Lexis Nexis Academic. 12 May. 2004. Web. 15 April. 2014
  18. "The Flight That Changed My Life"। Johnnichol.com। ২৯ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  19. "War Story:John Peters"। Pbs.org। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  20. "A Woman's Burden"Time magazine। ২৮ মার্চ ২০০৩। ৪ এপ্রিল ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭