নেচার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Nature (journal) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
নেচার  
First title page, 4 November 1869
First title page, 4 November 1869
প্রক্সিমা সেন্টরাই এবং এর গ্রহ প্রক্সিমা বি এর শৈল্পিক উপস্থাপনা সমন্বিত নেচারের ২০১৬ সংখ্যার একটি প্রচ্ছদ
সংক্ষিপ্ত শিরোনাম (আইএসও ৪)
নেচার
পাঠ্য বিষয়আন্তঃশাস্ত্রীয়
ভাষাবাংলা
প্রকাশনা বিবরণ
প্রকাশক
প্রকাশনার ইতিহাস
১৮৬৯–বর্তমান
পুনরাবৃত্তিসাপ্তাহিক
৩৪.৪৮০ (২০০৯)
সূচীকরণ
আইএসএসএন০০২৮-০৮৩৬ (মুদ্রণ)
১৪৭৬–৪৬৮৭ (ওয়েব)
কোডেনNATUAS
ওসিএলসি নং০১৫৮৬৩১০
সংযোগ

নেচার (ইংরেজি: Nature) বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক একটি সাময়িকী যা ৪ নভেম্বর ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে একাধারে প্রকাশিত হচ্ছে। এটি একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় বিজ্ঞান সাময়িকী। সময়ের বিবর্তনে অধিকাংশ বিজ্ঞান সাময়িকী বিষয়ভিত্তিক হয়ে গেলেও নেচার বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ওপর মৌলিক গবেষণা প্রকাশ করে যাচ্ছে। এটি সায়েন্স এবং প্রসিডিংস অব দ্যা ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সেস সাময়িকীদ্বয়ের সমতূল্য। বিজ্ঞানের বিবিধ শাখার গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও উদ্ভাবনার খবরাখবর অগ্রগতি পত্র অথবা প্রবন্ধ হিসেবে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিতে হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ সাময়িকীটির নিবন্ধসমূহ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত হয়ে থাকে।[১] প্রধানত: গবেষকরা সাময়িকীটির মূল পাঠক হলেও সরলার্থ সারমর্ম এবং সহযোগী প্রবন্ধের যুক্ত থাকায় এর ভারী প্রবন্ধগুলো সাধারণ মানুষ ও অন্যান্য বিষয়ের বিজ্ঞানীদের কাছেও বোধগম্য। প্রত্যেক সংখ্যার সূচনাংশে সম্পাদকীয়, খবরাখবর এবং সাধারণভাবে বিজ্ঞানীদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদির ওপর নির্বাচিত প্রবন্ধ মূদ্রিত হয়। এগুলোর বিষয়বস্তু বর্তমান পরিস্থিতি, গবেষণা অনুদান, বাণিজ্য, বৈজ্ঞানিক নীতি এবং বৈজ্ঞানিক সাফল্য ইত্যাদি। বই এবং শিল্পের ওপরও ভিন্ন ভিন্ন শাখা রয়েছে। সাময়িকীটির বাকি অংশ মূলত গবেষণামূলক প্রবন্ধ যেগুলো বিশদ বৈজ্ঞানিক তথ্যে ও বিশ্লেষণে পরিপূর্ণ। প্রবন্ধের কলেবর নিয়ে কঠিন বিধি-নিষেধ থাকায় প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট গবেষণার সারমর্মে পর্যবসিত হয়। অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সাময়িকীটির তথ্যতীর্থে (ওয়েবসাইটে) সম্পূরক তথ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।

২০০৭ খ্রিস্টাব্দে নেচার এবং সায়েন্স সাময়িকীদ্বয় যৌথভাবে প্রিন্স অব আস্তুরিয়াস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

নেচারের পূর্বজ বৈজ্ঞানিক পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী[সম্পাদনা]

ঊনবিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ড ছিল বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির আধার; বিশেষ করে ঊনবিংশ শতকের অগ্রভাগে ব্রিটেন প্রযুক্তি ও শিল্পে চরম উৎকর্ষ সাধন করে।[৩] এ সময়কার প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান সাময়িকীগুলো রয়াল সোসাইটি দ্বারা অবেক্ষণীত হত এবং এগুলো আইজাক নিউটন, মাইকেল ফ্যারাডে থেকে শুরু করে চার্লস ডারউইনের প্রথম দিকের কর্মগুলোও প্রকাশ করেছিল। ১৮৫০ ও ১৮৬০ এর মর্ধ্যবর্তী সময়ে বিজ্ঞান সাময়িকীর সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।[৪] এসব সাময়িকীগুলোর সম্পাদকদের মতে, এই সাময়িকীগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল “বিজ্ঞানের প্রত্যঙ্গ” হিসেবে কাজ করা এবং সাধারণ মানুষ ও বিজ্ঞানের মাঝে সম্বন্ধ নির্মাণ করা।[৪]

১৮৬৯ সালে যখন নেচার প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন এটি অদ্বিতীয় ছিল না। এর দশ বছর আগে থেকেই রিক্রিয়েটিভ সায়েন্স: এ রেকর্ড এন্ড রেমেমব্রেন্সার অব ইন্টেলেকচুয়াল অবসারভেশন শিরোনামের একটি প্রাকৃতিক ইতিহাসের পত্রিকা প্রকাশিত হত, যা ক্রমে প্রাকৃতিক ইতিহাস থেকে সরে গিয়ে পর্যবেক্ষণভিত্তিক ভৌত বিজ্ঞান ও কৌশলী বিষয়ের উপর মনোনিবেশ করে।[৫] সাময়িকীটির নতুন নামকরণ হয় ইন্টেলেকচুয়াল অবসারভার: এ রিভিউ অব ন্যাচারাল হিস্ট্রী, মাইক্রোসকপিক রিসার্চ এন্ড রিক্রিয়েটিভ সায়েন্স এবং পরে হয় স্টুডেন্ট এন্ড ইন্টেলেকচুয়াল অবসারভার অব সায়েন্স, লিটারেচার এন্ড আর্ট[৬] রিক্রিয়েটিভ সায়েন্স যেখানে জ্যোতির্বিদ্যা এবং প্রত্নতত্ত্ব অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিল, ইন্টেলেকচুয়াল অবসারভার সেখানে নিজেকে সাহিত্য ও ললিত-কলাতেও নিজেকে বিস্তৃত করেছিল।[৬] রিক্রিয়েটিভ সায়েন্স এর মত আরেকটি সাময়িকী ছিল পপুলার সায়েন্স রিভিউ যা ১৮৬২ সালে প্রকাশিত হয়,[৭] এটি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রবন্ধ ছাপানোর পাশাপাশি পুস্তক আলোচনা এবং সর্বশেষ গবেষণা নিয়ে আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত করেছিল।[৭] নেচার এর আগে ইংল্যান্ডে প্রকাশিত আরও দু’টো সাময়িকী হল কোয়ারটারলী জার্নাল অব সায়েন্স এবং সায়েন্টিফিক অপিনিওন যা যথাক্রমে ১৮৬৪ ও ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত হয়।[৬] সম্পাদনা ও শৈলীর দিক দিয়ে নেচারের সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল ১৮৬৪ সালে প্রকাশিত দ্যা রীডার যা বিজ্ঞানের পাশাপাশি সাহিত্য ও কলা নিয়ে প্রবন্ধ ছাপিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠককে আকৃষ্ট করতে চেয়েছিল, অনেকটা পপুলার সায়েন্স রিভিউ এর মতই।[৬]

এই সাময়িকীগুলো অবশ্য পরে ব্যর্থ হয়। পপুলার সায়েন্স রিভিউ বিশ বছর পর্যন্ত্য প্রকাশনা চালিয়ে অবশেষে ১৮৮১ সালে বন্ধ হয়ে যায়, এটিই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সাময়িকী। কোয়ারটারলী জার্নাল ১৮৮৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় এবং সায়েন্টিফিক অপিনিওন মাত্র দু’বছর প্রকাশনায় থেকে ১৮৭০ সালে বন্ধ হয়ে যায়।[৫]

নেচানের আবির্ভাব[সম্পাদনা]

দ্যা রীডার এর প্রকাশনা বন্ধ হবার কিছুটা পরেই নরম্যান লকিয়ের নামের এক সাবেক সম্পাদক নেচার শিরোনামে একটি নতুন বিজ্ঞান সাময়িকী প্রকাশের পরিকল্পনা করেন।[৮] নেচার এর প্রথম দিককার নিবন্ধগুলো বেশিরভাগই এক্স ক্লাব নামক একটি দলের সদস্যদের দ্বারা রচিত হয়েছিল, তাঁরা ছিলেন মূলত এক ঝাঁক বিজ্ঞানী যাঁরা তাঁদের উদার, প্রগতিশীল ও সেই সময়ের সাপেক্ষে বিতর্কিত চিন্তাভাবনার জন্য পরিচিত ছিলেন।[৮] থমাস হেনরি হাক্সলি দ্বারা প্রবর্তিত এই দলের অন্যসব উল্লেখযোগ্য সদস্য হলেন জোসেফ ডালটন হুকার, হার্বার্ট স্পেন্সার এবং জন টিনডাল। এই দলটি ডারউইনের তত্ত্বের নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক ছিল, যা ঊনবিংশ শতকের অগ্রভাগে রক্ষণশীল বিজ্ঞানীদের কাছে সমালোচিত হয়েছিল।[৯] তার বৈজ্ঞানিক উদারতার কারণেই হয়ত নেচার এতদিন টিঁকে থাকতে পেরেছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৩ এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত্য দায়িত্ব পালন করা সম্পাদক জন ম্যাডক্স নেচার এর শততম সংখ্যা প্রকাশের উদযাপনী অনুষ্ঠানে বলেন যে নেচার এর উন্নত সাংবাদিকতাই পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে। ম্যাডক্স বলেন,

ম্যাডক্স আরও বলেন যে, "প্রথম দিকে আলেকজান্ডার ম্যাকমিলানের পরিবার থেকে পাওয়া অনুদানও নেচার এর সাফল্যের আরেকটি কারণ, যা একে অন্যসব সাময়িকী থেকে এগিয়ে রেখেছে।"[১০]

বিংশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর নেচার[সম্পাদনা]

বিংশ শতকে, বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে নেচার পত্রিকা ব্যাপক প্রসার লাভ করে।

সম্পাদকমণ্ডলী[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নরম্যান লকিয়ে ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সাময়িকীটির দ্বিতীয় সম্পাদক হিসেবে রিচার্ড গ্রেগরী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।[১১] গ্রেগরি নেচারকে আন্তর্জাতিকভাবে বৈজ্ঞানিক সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেন। তাঁর মৃত্যুতে রয়াল সোসাইটির শোকসংবাদে জানা যায়,

"গ্রেগরি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিজ্ঞান নিয়ে বেশ উৎসাহী ছিলেন, আন্তর্জাতিক সংগঠণগুলোর কার্যক্রমের খবরের জন্য তিনি সবসময়ই তাঁর কলামে বেশ বড় জায়গা বরাদ্দ রাখতেন।"

[১২]

১৯৪৫ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত্য সাময়িকীটির সম্পাদক তিনবার পরিবর্তিত হয়- প্রথমবার হয় ১৯৪৫ সালে এ.জে.ভি গেইল এবং এল.জে.এফ ব্রিম্বল (যিনি ১৯৫৮ সালে একমাত্র সম্পাদক ছিলেন), পরে ১৯৬৫ সালে জন ম্যাডক্স এবং অবশেষে ১৯৭৩ সালে ডেভিড ডেভিস সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১১] ১৯৮০ সালে ম্যাডক্স সম্পাদক হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত্য তাঁর পদ অব্যাহত রাখেন। ফিলিপ ক্যাম্পবেল এরপর নেচার এর সবগুলো প্রকাশনার প্রধান সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত হন।[১১]

নেচারের প্রসার[সম্পাদনা]

১৯৭০ সালে নেচারের প্রথম কার্যালয় স্থাপিত হয় ওয়াশিংটনে; পরে ১৯৮৫ সালে নিউ ইয়র্কে, ১৯৮৭ সালে টোকিওমিউনিখে, ১৯৮৯ সালে পারিতে, ২০০১ সালে সান ফ্রান্সিস্কোতে, ২০০৪ সালে বোস্টনে এবং ২০০৫ সালে হংকংয়ে কার্যালয় স্থাপিত হয়। ৮০ দশকের শুরুতে নেচার ব্যাপক প্রসারণের ভেতর দিয়ে যায়, দশটির মত নতুন সাময়িকীর প্রকাশনা শুরু করে। এই সাময়িকীগুলো দিয়েই ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নেচার প্রকাশনা সংস্থা।

১৯৯৭ সালে নেচার নিজস্ব আন্তর্জালিক ঠিকানা প্রকাশ করে, নেচার, এবং ১৯৯৯ সালে নেচার প্রকাশনা সংস্থা তার নেচার রিভিউজ ধারাবাহিকটি প্রকাশ করে।[১১] কিছু কিছু প্রবন্ধ ও গবেষণাপত্র নেচার ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে পাঠ করা যায়। অন্যগুলোর জন্য গ্রাহক হওয়া আবশ্যক।

নেচার ৪,২০,০০০ পাঠকসংখ্যার দাবি করে। সাময়িকীটির সারকুলেশন ৫৩০০০ হলেও গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে একটি পত্রিকা অন্তত আটজন ভাগাভাগি করে পড়ে।[১৩]

২০০৮ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর ৩০ তারিখে নেচার সাময়িকী বারাক ওবামার প্রতি তাঁর ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে সমর্থন প্রকাশ করে প্রথমবারের মত কোন নির্বাচনী প্রার্থীকে সমর্থন করে।[১৪][১৫]

নেচারের প্রবন্ধ প্রকাশ[সম্পাদনা]

নেচার এ প্রবন্ধ প্রকাশ পাওয়া মোহনীয়, বিশেষ করে এই সাময়িকীর প্রবন্ধগুলো প্রচুর উদ্ধৃত হওয়ায় পদোন্নতি, অনুদান ও মূলধারার মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করা সহজ হয়ে যায়। একারণে নেচার, ও তার প্রতিযোগী সায়েন্স সাময়িকীতে প্রবন্ধ প্রকাশ করার জন্য বিজ্ঞানীদের মাঝে প্রতিযোগিতা চরমে পৌছে যায়। ২০০৯ সালে অন্য সব প্রকাশনায় নেচার এ প্রকাশিত নিবন্ধের উদ্ধৃতির সংখ্যা ছিল ৩৪৪৮০, যা অন্যসব সাময়িকীর চেয়েও বেশি ছিল।

অন্যসব বিজ্ঞান সাময়িকীর মত প্রথমে প্রবন্ধগুলো সম্পাদক দ্বারা সম্পাদিত হয় এবং পরে পিয়ার রিভিউ এর জন্য অন্য বিজ্ঞানীদের কাছে পাঠানো হয়। নেচার এর ক্ষেত্রে প্রবন্ধ তখনই পিয়ার রিভিউ এর জন্য পাঠানো হয় যখন সেটির বিতর্কিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা তার নিজস্ব শৃঙ্খলে বড় ধরনের কোন অবদান রাখার সম্ভাবনা ধারণ করে। একারণে বেশিরভাগ নিবন্ধ রিভিউ না করেই প্রত্যাখ্যান করা হয়।

নেচারের মিশন স্টেটমেন্ট:-

"প্রথমত, বৈজ্ঞানিক কর্ম ও অনুসন্ধাএর গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলোকে জনগণের সামনে পেশ করা এবং শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের আবিস্কারগুলোর পক্ষে স্বীকৃতি আদায় করা। দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক জ্ঞানের যেকোন শাখার অগ্রগতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগাম জানান দেওয়া ও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার জন্য তাঁদেরকে সুযোগ করে দেওয়া।"

২০০০ খ্রিস্টাব্দে একে নিম্নরূপ পরিবর্তন করা হয়,

"প্রথমত, বিজ্ঞানে অগ্রগতি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকদের অবহিত করা এবং আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিকভাবে বিজ্ঞানের আবিস্কারগুলোকে জ্ঞান, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করা।"

যুগান্তকারী গবেষণাপত্রাদি[সম্পাদনা]

আধুনিক যুগের অনেক আলোচিত আবিস্কারই প্রথম নেচার এ প্রকাশিত হয়েছিল। তেমন কিছু গবেষণাপত্র নিম্মে উল্লেখ করা হল:-

পিয়ার রিভিউ নিয়ে ত্রুটি[সম্পাদনা]

নেচার সাময়িকীতে ২০০০-২০০১ খ্রিস্টাব্দে জ্যান হেনড্রিক স্খোনের পাঁচটি ভুয়া গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। অর্ধপরিবাহিতা (semi-conductivity) নিয়ে রচিত গবেষণাপত্রগুলোতে মিথ্যা প্রতিপাদিত উপাত্ত সহ আরও কিছু বৈজ্ঞানিক প্রতারণা ধরা পড়েছিল। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে নেচার Schön-এর গবেষণাপত্রগুলো প্রত্যাহার করে নেয়। সায়েন্স এবং ফিজিক্যাল রিভিউ এর মত অন্যসব প্রথিতযশা সাময়িকীগুলোও নেচার এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে।[১৬]

১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রিক ও ওয়াটসনের ডিএনএর গঠন নিয়ে রচিত গবেষণাপত্রটি নেচার প্রকাশের আগে পিয়ার রিভিউ এর জন্য পেশ করেনি। সাময়িকীটির তৎকালীন সম্পাদক জন ম্যাডক্স বলেছিলেন, “ওয়াটসন এবং ক্রিকের পত্রটি নেচার পিয়ার রিভিউ করেনি……… পত্রটি বিচার করার কোন উপায় ছিল না: গবেষণার ফলাফলটি ছিল স্বতঃসিদ্ধ। কোন বিশেষজ্ঞ গবেষণাটি সম্পর্কে জানতে পারলে মুখ বন্ধ রাখতে পারতেন না”।

এনরিকো ফের্মি যখন বেটা ক্ষয়ের উপর তাঁর দুর্বল মিথস্ক্রীয়ার যুগান্তকারী পত্রটি নেচার এর কাছে জমা দিয়েছিলেন, তখন সেটি এই মর্মে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল যে তত্ত্বটি বাস্তবতা বিবর্জিত ছিল।[১৭] ফের্মির পত্রটি ১৯৩৪ সালে Zeitschrift für Physik সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল, তাঁর গবেষণাটি সর্বজন গৃহীত হওয়ার পর অবশেষে পাঁচ বছর পর নেচার পত্রটি প্রকাশ করেছিল।[১৮]

পল লটারবার এবং পিটার ম্যানসফিল্ড যে গবেষণার জন্য শারীরবিদ্যায় নোবেল জয় করেন, সেই গবেষণাটি নেচার সাময়িকী প্রথমে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং লটারবার এই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে আপিল করার পরই কেবল প্রকাশ করেছিল।

নেচার এবং অন্য সব সাময়িকীর প্রকাশনা[সম্পাদনা]

জর্গ ভন হলৎজব্রিঙ্ক প্রকাশনা সংস্থার মালিকানাধীন ম্যাকমিলান পাবলিশার্সের অধীন নেচার পাবলিশিং গ্রুপ যুক্তরাজ্যে নেচার সম্পাদনা ও প্রকাশ করে। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক নগরী, সান ফ্রান্সিসকো, ওয়াশিনটং ডি.সি., বোসটন, টোকিও, হংকং, পারী, মিউনিখ এবং বেসিংস্টোকে নেচারের কার্যালয় আছে। নেচার পাবলিশিং গ্রুপের বিষয়ভিত্তিক সাময়িকিগুলো হল নেচার নিউরোসায়েন্স, নেচার বায়োটেকনলজী, নেচার মেথডস ইত্যাদি।

বর্তমানে নেচার এর প্রত্যেকটি সংখ্যার সাথেই নেচার পডকাস্ট যুক্ত করা থাকে যার মধ্যে সংখ্যাটি নিয়ে আলোচনা, গবেষক ও সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার থাকে। পডকাস্টগুলোতে এডাম রাদারফোর্ড এবং কেরি স্মিথ উপস্থাপনা করে থাকেন। পডকাস্টগুলোতে “পোডিয়াম” নামের একটি সাপ্তাহিক, ষাট মিনিটের মন্তব্য অনুষ্ঠান এবং “সাউন্ড অব সায়েন্স” নামের বিজ্ঞান সম্পর্কিত সঙ্গীত নিয়েও অনুষ্ঠান থাকে। এই অনুষ্ঠানগুলোতে পূর্বে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্রিস স্মিথ এবং দ্যা নেইকেড সায়েন্টিস্টস উপস্থাপনা করতেন।

২০০৭ খ্রিস্টাব্দে সালে নেচার পাবলিশিং গ্রুপ ক্লিনিক্যাল ফারমাকোলজি এন্ড থেরাপিউটিক্স (আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল ফারমাকোলজি এন্ড থেরাপিউটিক্সের আনুষ্ঠানিক সাময়িকী), মলিকুলার থেরাপি (আমেরিকান সোসাইটি অব জিন থেরাপির আনুষ্ঠানিক সাময়িকী), ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়াল ইকোলজি এবং নেচার ফোটনিক্স এর প্রকাশনা শুরু করে। সাময়িকীটি ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে নেচার জিওসায়েন্স এবং ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নেচার কেমিস্ট্রী প্রথমবারের মত প্রকাশ করে।

নেচার পাবলিশিং গ্রুপ সক্রিয়ভাবে তথ্যের স্ব-সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে প্রতিপোষণ করে। এটিই একমাত্র সাময়িকী যেটি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে গবেষকদেরকে তাঁদের গবেষণা তাঁদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার অনুমতি প্রদান করে, এর জন্য স্বত্বাধিকার হস্তান্তর করা লাগে না- নেচার এর কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি প্রার্থনা করলেই চলে।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • (১৯৫৩). "Richard Arman Gregory, 1864–1952." Obituary Notices of Fellows of the Royal Society 8(22).
  • (১৯৭০). "The 'Nature' Centenary Dinner." Notes and Records of the Royal Society of London 25(1).
  • (২০০৬). "Nature Publishing Group: History." Retrieved November 15, 2006, from NPG.nature.com
  • (২০০৬). "About the journal: Nature." Retrieved November 20, 2006, from Nature.com
  • Barton, R. (১৯৯৬). "Just Before Nature: The Purposes of Science and the Purposes of Popularization in Some English Popular Science Journals of the 1860s." Annals of Science 55: 33.
  • Browne, J. (২০০২). Charles Darwin: The Power of Place. New York, Alfred A. Knopf, Inc.
  • Partington, John S. (২০০৮). H. G. Wells in Nature, 1893-1946: A Reception Reader. Frankfurt: Peter Lang.
  • Siegel, R. S. a. G. E. (২০০৬). "A Cooperative Publishing Model for Sustainable Scholarship " Journal of Scholarly Publishing 37(2): 13.

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Nature.com
  2. "জার্নাল Nature"। ৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১০ 
  3. Siegel, "A Cooperative Publishing Model for Sustainable Scholarship," p. 88
  4. Barton, "Just Before Nature," p. 3
  5. Barton, "Just Before Nature," p. 7
  6. Barton, "Just Before Nature," p. 6
  7. Barton, "Just Before Nature," p. 13
  8. Browne, Charles Darwin: The Power of Place, p. 248
  9. Browne, Charles Darwin: The Power of Place, p. 247
  10. "The Nature Centenary Dinner," p. 13
  11. "Nature Publishing Group: History", retrieved November 15, 2006
  12. "Richard Arman Gregory, 1864–1952," p. 413
  13. Demographics: Nature, a profile of Nature's readership.
  14. Nature: America's choice
  15. Weekly science journal Nature endorses a presidential candidate: Barack Obama
  16. "Retractions' realities"Nature422 (6927): p. 1। ২০০৩-০৩-০৬। ডিওআই:10.1038/422001aপিএমআইডি 12621394 
  17. Richard Rhodes, The Making of the Atomic Bomb, Touchstone, New York, 1986. আইএসবিএন ০-৬৭১-৪৪১৩৩-৭
  18. Fermi, E (1934).' Versuch einer Theorie der beta–strahlen', Zeitschrift für Physik, vol. 88, p. 161.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]