ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ
জন্ম
আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ

আনু. ৮৪২
মৃত্যু১৩ অক্টোবর ৯২২(922-10-13) (বয়স ৮০)
অন্যান্য নাম‘দ্য গ্লাসম্যান’
পেশাব্যাকরণবিদ, ভাষাবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক
কর্মজীবনআল মুতাদি খিলাফত
উচ্চশিক্ষায়তনিক কর্ম
যুগআব্বাসি
বিদ্যালয় বা ঐতিহ্যবসরা শাখা
প্রধান আগ্রহভাষাবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
উল্লেখযোগ্য কাজকিতাব মা ফাসারাহু মিন জামি আন-নুক্ত

আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ ছিলেন বসরার একজন ব্যাকরণবিদ, ভাষাবিজ্ঞানধর্মতত্ত্বে পণ্ডিত এবং আব্বাসি রাজদরবারের অন্যতম সদস্য। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল কিতাব মা ফাসারাহু মিন জামি আন-নুক্ত, কিতাব মানি আল-কুরআনকিতাব আল-ইশতিকাক। তিনি ৯২২ সালে[ক][১] বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩][৪]

জীবনী[সম্পাদনা]

আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ কাঁচ চূর্ণক হিসেবে কাজ করতেন। এরপর তিনি বসরা শাখার আল-মুবাররাদ এবং কুফা শাখার থা'লাবের অধীনে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন। তারা দুজনেই সে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাকরণবিদ ছিলেন। তার শ্রেণির সেরা শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আল-মুবাররাদকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। তিনি বসরার ব্যাকরণবিদ আবু ফাহদের সাথে সিবাওয়াইহের আল-কিতাব গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন।[খ][৫]

আল-জাজ্জাজ উজির উবায়েদ আল্লাহ ইবন সুলায়মান ইবন ওয়াহাবের[গ] পুত্র আল-কাসিম ইবন উবায়েদ আল্লাহের শিক্ষক হিসেবে আব্বাসি রাজদরবারে প্রবেশ করেন।[ঘ] পরে তিনি খলিফা আল-মু'তাদিদের পুত্রদেরও শিক্ষকতা করেন।

খলিফা আল-মু'তাদিদ উজির আল-কাসিমকে মাহবারাহ্‌ আল-নাদিমের কম্পোডিয়াম অব স্পিচ-এর ব্যাখাকরণের নির্দেশ দেন।[ঙ] থা'লাব জ্ঞানের স্বল্পতা[৮] ও আল-মুবাররাদ বার্ধ্যকের কারণে এই প্রকল্পে কাজের জন্য অস্বীকৃতি জানান। আল-মুবাররাদ তার বন্ধ ও আত্মীয় আল-জাজ্জাজকে এই কাজটি করার প্রস্তাব দেন। জাজ্জাজ তার সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য পরীক্ষণমূলক দুটি অনুচ্ছেদের কাজ করার সুযোগ পান। গবেষণার কাজে তিনি থা'লাব, আল-সুক্কারি ও অন্যান্যদের ভাষা সম্পর্কিত বইয়ের সাহায্য নেন। তার শ্রুতিলেখক হিসেবে তাকে সাহায্য করেন ছোট আল-তিরমিদহি। দুটি অনুচ্ছেদের কাজ খলিফা আল-মু'তাদিদকে মুগ্ধ করে এবং তিনি আল-জাজ্জাজকে সম্পূর্ণ কাজের জন্য তিনশত স্বর্ণ দিনার প্রদান করেন। সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি আল-মু'তাদিদের রাজগ্রন্থাগারে সংরক্ষিত হয় এবং অন্যান্য গ্রন্থাগারে কোন অনুলিপি রাখা নিষিদ্ধ করা হয়।[চ] খলিফার অনুগ্রহ লাভের পর তিনি তিনজন কর্মকর্তা তথা রাজ প্রতিনিধি, জুরি ও পণ্ডিতের কাজের জন্য রাজকীয় পেশসন হিসেবে তিনশত স্বর্ণমুদ্রা পান।[৯]

আল-জাজ্জাজের শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাকরণবিদ আবু আলি আল-ফারিসি, জুমাল ফি ন-নাউহির লেখক আবু আল-কাসিম আব্দ আর-রহমান[ছ] ইবন আল-সাররাজ[১১] ও আলি আল-মারাগহি।[জ]

আল-জাজ্জাজ আল-খায়াতের সাথে যুক্তিতর্কে জড়ান।[১৩][১৪] আল-খায়াত ছিলেন সমরকন্দের একজন ব্যকরণবিদ, যার সাথে আল-জাজ্জাজের পরিচয় হয়েছিল বাগদাদে।[১৫]

আল-জাজ্জাজ ৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই অক্টোবর (১৮ বা ১৯ জমাদিউস সানি ৩১০ হিজরি), অন্যান্য সূত্র অনুসারে ৯২৪ বা ৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ (৩১১ বা ৩১৬ হিজরি) আশি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

নির্বাচিত কর্ম[সম্পাদনা]

  • কিতাব মা ফাস্‌সারাহু মিন জামি আল-নুক্ত (كتاب ما فسّرة من جامع النطق)[ঝ] [২]
  • কিতাব মা'নি আল-কুর'আন (كتاب معانى القرآن)[১৬]
  • কিতাব আল-ইশতিকাক (كتاب الاشتقاق)[ঞ]
  • কিতাব আল-কাওয়াফি (كتاب القوافى);[ট]
  • কিতাব আল-আরুদ (كتاب العروض)
  • কিতাব আল-ফার্কু (كتاب الفرق)[ঠ]
  • কিতাব কুল্ক আল-ইনসান (كتاب خلق الانسان)
  • কিতাব কুল্ক আল-ফারিস (كتال خلق الفرس)
  • কিতাব মুখতাসির নুহও (كتاب مختصر نحو)
  • কিতাব ফা'আলতু ওয়া-আফ'আলতু (كتاب فعلت وافعلت)
  • কিতাব মা ইউনসারিফ ওয়া-মা লা ইউনসারিফ (كتاب ما ينصرف وما لا ينصرف)[ড]
  • কিতাব সাহর আবিয়াত সিবাওয়াহ (كتاب شرح ابيات سيبويه)
  • কিতাব আন-নাওয়াদির (كتاب النوادر); [১৭]
  • বুক অব ডিক্টেটস;(امالي);[১৮][১৯][২]
  • বুক অব অ্যানেকডোটস;
  • ট্রিটিজ অন দ্য ইনফ্লুয়েন্স অব দ্য কনস্টেলেশন আপন দ্য ওয়েদার (ইংরেজি: Treatise on the influence of the constellation upon the weather[২০][ঢ]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. আল-জুবায়েদির মতে তার মৃত্যু হয় হিজরি ৩১৬ বা ৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে।
  2. আবু ফাহদ দি এক্সপোজিশন নামে একটি ব্যাকরণের বই লিখেছিলেন।
  3. উবায়েদ আল্লাহ ইবন সুলায়মান ইবন ওয়াহাব ছিলেন আল মু'তাদিদের উজির এবং একজন দক্ষ কুশলী, মৃত্যু ৯০১ খ্রিষ্টাব্দ (২৮৮ হিজরি)
  4. আল-কাসিম আল-মু'তাদিদ ও তার পরবর্তীতে আল-মুক্তাফির উজির ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন।[৬]
  5. মাহবারাহ্‌ ছিল মুহাম্মাদ ইবন ইয়াহিয়া ইবন আবি 'আববাদ, আবু জফর আল-নাদিমের ডাকনাম। তিনি আল-মু'তাদিদের রাজদরবারের সঙ্গী ছিলেন।[৭]
  6. এই গ্রন্থাগারটি সম্ভবত ৯৪৫/৪৬ সালে যখন আহমদা ইবন বুওয়াইহ বাগদাদ দখল করে এবং খলিফা আল-মু'তাদিদকে অন্ধ করে করে দেয় তখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। যাই হোক, মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক আল-নাদিমের লিখিত বর্ণনা অনুসারে তিনি এবং তার পণ্ডিত সমাজ এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি পেয়েছিলেন, তার মতে বইটি ধ্বংস হয়নি।
  7. আবু 'ই-কাসিম আবদ আর-রহমানকে আল-জাজ্জাজ নামে ডাকা হত, যা তার নামানুসারে রাখা হয়েছিল।[১০]
  8. আবু বকর মুহাম্মাদ ইবন 'আলি আল-মারাগহি ছিলেন ইরানের পূর্ব আজারবাইজানি প্রদেশের মারাগহেহ কাউন্টির রাজধানী মারাগহেহ শহরের ভাষাতত্ত্ব ও ধর্মতত্ত্বের পণ্ডিত। যদিও আল-মারাগহি মসুলে থাকতেন এবং তিনি আল-জাজ্জাজের শিষ্য ছিলেন। তিনি আব্রিজমেন্ট অব গ্রামার, এক্সপোজিশন অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটেশন অব দি আর্গুমেন্টস অব সিবাওয়াহ লিখেছেন।[১২]
  9. সম্ভবত আল-জাজ্জাজের 'জামি আল-মুনতাক' (جامع المنطق) থেকে নেওয়া হয়েছে, হাজী খলিফার জীবনীমূলক অভিধান কাসফ আজ-জুনুন 'অ্যান 'আসামি 'ই-কুতুব ওয়া-ই'ফানুন-এ উল্লেখ করা হয়েছে
  10. ইবন খালিকান এর নাম প্রদান করেন ডিফারেন্ট ট্রিটিজ অন এটিমলজি ("Different treatises on etymology")।
  11. Listed by al-Nadīm but not Ibn Khallikān
  12. ইবন খালিকান এর নাম প্রদান করেন মুসলিম সেক্টস ("Muslim Sects")।
  13. ইবন খালিকান এর নাম প্রদান করেন অন নাউনস অব দ্য ফার্স্ট অর সেকেন্ড ডিক্লেনশন ("On Nouns of the First or Second Declension")।
  14. হাজী খলিফা মন্তব্য করেন যে এই বিষয়ে অসংখ্য কাজ হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আল-জুবায়েদি ১৯৮৪, পৃ. ১১২, §9 (#39)।
  2. ইবন খালিকান ১৮৪৩, পৃ. ২৮, I।
  3. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ৭৭, ১৩১-১৩৩, ১৩৫, ১৭৮, ১৮৫, ১৮৭, ১৯১।
  4. আল-জুবায়েদি ১৯৮৪, পৃ. ১১১-১১২, §9 (#39)।
  5. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৮৫।
  6. ইবন খালিকান ১৮৪৩, পৃ. ২৯, n. ৪।
  7. আল-মাস'উদি ১৮৭৪, পৃ. ২০৫, viii।
  8. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৩২।
  9. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৩৩।
  10. ইবন খালিকান ১৮৪৩, পৃ. ২৯, I।
  11. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৩৫।
  12. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৮৭।
  13. আল-সুয়ুতি ১৯০৯, পৃ. ১৯।
  14. আল-জুবায়েদি ১৯৮৪, পৃ. ১১১-১১২, §9 (#৩৮)।
  15. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৭৮।
  16. আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ৭৬-৭৭।
  17. ফ্লুগেল ১৯০৭, পৃ. ৬৬১ (৬১)।
  18. ডি স্যাসি ১৮২৯, পৃ. ১৩৭।
  19. ফ্লুগেল ১৮৩৫, পৃ. ৪২৭, I।
  20. পোকোক ১৮০৬, পৃ. ১৬৮।