ইবনে আশআস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আব্দুর রহমান ইবনে মোহাম্মদ ইবনুল আশআস ( আরবি: عبد الرحمن بن محمد بن الأشعث; মৃ. ৭০৪), যিনি সাধারণত নিজের পিতামহের প্রতি সম্পৃক্ত হয়ে ইবনে আশ'আস নামে পরিচিত, উমাইয়া খিলাফতের সময় একজন বিশিষ্ট আরব অভিজাত ও সামরিক কমান্ডার ছিলেন। তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে একটি একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পরিচিত।[১]

ইবন আশআস কিন্দা গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন বংশধর ছিলেন, যারা ইরাকের কুফা শহরের আরব গ্যারিসন এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তিনি দ্বিতীয় ফিতনার ( ৬৮০-৬৯২) সময় একটি ছোট ভূমিকা পালন করেন এবং এরপর তিনি রায়ের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৬৯৪ সালে ইরাক এবং খিলাফতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে গভর্নর হিসেবে হাজ্জাজের নিয়োগ হওয়ার পর হাজ্জাজ এবং ইরাকি উপজাতীয় অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত খারাপ ও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর কারণ সিরিয়ার উমাইয়া শাসনের নীতিগুলি ইরাকিদের বিশেষ মর্যাদা ও পদ হ্রাস করছিল।

৬৯৯ সালে হাজ্জাজ ইবনে আশআসকে একটি বিশাল ইরাকি সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসাবে নিযুক্ত করেন জাবুলিস্তানের ঝামেলাপূর্ণ রাজত্বকে বশীভূত করার জন্য। তখন এর শাসক জুন্বিল জোরালোভাবে আরব সম্প্রসারণকে প্রতিহত করে যাচ্ছিলেন। ৭০০ সালে হাজ্জাজের অবাধ্য আচরণ ইবনে আশআস এবং তার অধীনস্থ সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহ করে দেয়। জুনবিলের সাথে একটি চুক্তি করার পর সেনাবাহিনী ইরাকে ফিরে যায়। পথিমধ্যেই হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ একটি পূর্ণাঙ্গ উমাইয়া বিরোধী বিদ্রোহ বিকশিত হয় এবং তা ধর্মীয় প্রভাব অর্জন করতে সক্ষম হয়।

হাজ্জাজ প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহীদের উচ্চতর সংখ্যার আগে পিছু হটে। কিন্তু দ্রুত পরাজিত হয়ে বসরা থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়। তবে বিদ্রোহীরা কুফা দখল করে এবং সেখানে এর সমর্থকরা ভীড় শুরু করে। বিদ্রোহ তাদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে, যারা উমাইয়া শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল, বিশেষ করে কুররা নামে পরিচিত একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী মধ্যে। খলিফা আবদুল মালিক হাজ্জাজকে বরখাস্ত করাসহ তাদের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু বিদ্রোহীদের মধ্যে কট্টরপন্থীরা খলিফার শর্ত প্রত্যাখ্যান করার জন্য ইবনে আশআসকে চাপ দেয়। ফলে চুক্তি সম্ভব হয়নি এবং যুদ্ধ চলতে থাকে।

দাইরুল জামাজিমের পরবর্তী যুদ্ধে হাজ্জাজের সিরীয় সৈন্যদের কাছে বিদ্রোহী বাহিনী চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। হাজ্জাজ বেঁচে থাকা লোকদের তাড়া করেছিলেন, যারা ইবনে আশ'আসের অধীনে পূর্ব দিকে পালিয়ে গিয়েছিল। বেশিরভাগ বিদ্রোহী খুরাসানের গভর্নরের হাতে বন্দী হয়। ইবনে আশ'আস জাবুলিস্তানে পালিয়ে যান। তার ভাগ্য অস্পষ্ট; কারণ কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাজ্জাজ তাকে আত্মসমর্পণ করার কথা বলে এবং তারপর জুনবিল তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়। বেশিরভাগ সূত্র দাবি করে যে, আশআস শত্রুদের হাতে গ্রেফতার এড়াতে লড়াই করতে করতে মারা যান বা আত্মহত্যা করেন।[২]

ইবনে আশ'আসের বিদ্রোহ দমন ইরাকের উপজাতীয় আভিজাত্যের ক্ষমতার অবসানের ইঙ্গিত দেয় এবং তা পরবর্তীতে উমাইয়া শাসনের কট্টর অনুগত সিরিয়ার সৈন্যদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তীতে ৭২০ সালে ইয়াজিদ ইবনে মুহাল্লাব ও ৭৪০ সালে জায়েদ ইবনে আলীর অধীনে সংঘটিত বিদ্রোহও ব্যর্থ হয় এবং আব্বাসীয় বিপ্লবের সাফল্য না হওয়া পর্যন্ত ইরাকের সিরীয় আধিপত্য বহাল থাকে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. 1274-1348., الذهبي، محمد بن احمد،,। تاريخ الاسلام و طبقات المشاهير و الأعلامআইএসবিএন 9953-483-00-0ওসিএলসি 1227810549 
  2. احمد البغدادي : تاريخ بغداد