ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউল্ড কাস্ট পার্টি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউল্ড কাস্ট পার্টি
স্বতন্ত্র তফসিলি জাতি দল
সভাপতিহেমচন্দ্র নস্কর
সাধারণ সম্পাদকযোগেন্দ্রনাথ মন্ডল 
প্রতিষ্ঠা১৯৩৮
ভাঙ্গন১৯৪৩
পূর্ববর্তীক্যালকাটা শিডিউল্ড কাস্ট লীগ
একীভূত হয়েছেবেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল সিডিউল্ড কাস্ট ফেডারেশন
ভাবাদর্শনমঃশূদ্রদের অধিকার আদায়
ধর্মহিন্দু ধর্ম

এটি কোন গতানুগতিক রাজনৈতিক দল নয় ছিলনা; এটি ছিল নির্বাচিত সাংসদদের একটি সংসদীয় দল।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউল্ড কাস্ট পার্টি (অর্থ: "স্বতন্ত্র তফসিলি জাতি দল") হচ্ছে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির একটি সংসদীয় দল। ১৯৩৭ সালের বঙ্গীয় আইন সভার নির্বাচনে নির্বাচিত হিন্দু নিম্নবর্ণের আইনসভার সদস্যরা ১৯৩৮ সালে এই দলটি গঠন করেন।

নিম্নবর্ণের হিন্দুদের জন্য এ নির্বাচনকে খুব তাৎপর্যমণ্ডিত বলে মনে করা হয়। কারণ ভারতবর্ষের ইতিহাসে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা এই প্রথম কোনো নির্বাচনে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন ছাড়াও সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে; এমনকি কেউ কেউ সাধারণ আসনেও নির্বাচিত হন।[১]

পটভূমি[সম্পাদনা]

১৯৩০-এর দশকে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষকদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলে হিন্দু নিম্নবর্ণের নমঃশূদ্র সম্প্রদায় কৃষক প্রজা পার্টিকে সমর্থন করে। কৃষক প্রজা পার্টির নেতৃত্বে মুসলিম এবং নমঃশূদ্র কৃষকেরা সংগঠিত হতে থাকে। কিন্তু ১৯৩৭ সালের বঙ্গীয় আইনসভার নির্বাচনের প্রাক্কালে কৃষক প্রজা পার্টি মুসলিম লীগের সঙ্গে শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায়, নমঃশূদ্রদের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে হয়।

নিম্নবর্ণের নমঃশূদ্র তফসিলিদের সংরক্ষিত আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনেউ অ-কংগ্রেসি স্বতন্ত্র নমশূদ্র প্রার্থীরা জয়ী হয়। বাখরগঞ্জ জেলার (বর্তমান বরিশাল বিভাগ) একটি নমশূদ্র অধ্যুষিত সাধারণ আসনে (অসংরক্ষিত আসনে) যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল নামক একজন নমঃশূদ্র স্বতন্ত্র প্রার্থী অশ্বিনীকুমার দত্তের রাজনৈতিক উত্তরসূরি এবং ভাতুষ্পুত্র কংগ্রেসের মনোনীত কায়স্থ প্রার্থী সরল দত্তকে পরাজিত করেন। তিনি ছাড়াও সংরক্ষিত আসনে বিভিন্ন প্রভাবশালী নমঃশূদ্র নেতা নির্বাচিত হন।[২]

নির্বাচনের পর সার্বিক ফলাফল গণনার পর দেখা যায়, বঙ্গীয় আইন পরিষদের ৩২ জন নির্বাচিত তফশিলি নমঃশূদ্র সদস্যের মধ্যে মোট ২৩ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়া কংগ্রেস থেকে ৭ জন এবং হিন্দু মহাসভা থেকে ২ জন নির্বাচিত হন।[১]

দল গঠন[সম্পাদনা]

কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই উচ্চবর্ণের হিন্দু হওয়ায় ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত নমশূদ্রদের দূরত্ব ছিল। তাই নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত সাংসদরা শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের মুসলিম লীগ-কৃষক প্রজা পার্টির কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। নমশূদ্রদের মধ্যথেকে মুকুন্দবিহারী মল্লিক সমবায় ঋণদান ও গ্রামীণ ঋণবদ্ধতা মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

কিন্তু কৃষক প্রজা পার্টির এই মন্ত্রীসভার কার্যক্রম নমঃশূদ্রদের সন্তুষ্ট করতে না পারায় তাদের মোহভঙ্গ ঘটে। এমনকি তারা তাদের মন্ত্রী মুকুন্দবিহারী মল্লিকের প্রকাশ্য সমালোচনা শুরু করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস নমঃশূদ্র দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালায়।

তারপর এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে ১৯৩৭ সালেই প্রতিষ্ঠিত 'ক্যালকাটা শিডিউল্ড কাস্ট লীগ'। এই সংগঠনের বিশিষ্ট নেতা নেতাদের মধ্যে ছিলেন নমঃশূদ্র নেতা গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাতি প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর

পরবর্তীতে কংগ্রেস ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কংগ্রেস বিজেপি কংগ্রেস এর প্রত্যক্ষ প্রভাবে, বিশেষ করে সুভাষচন্দ্র বসুশরৎ বসুর প্রচেষ্টায় ১৯৩৮ সালের ১৩ মার্চ কলকাতার অ্যালবার্ট হলের এক সভায় এই দলের বীজ বপিত হয়।

এর তিনদিন পর ১৬ মার্চ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল এবং প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরসহ মোট ২০ জন নমশূদ্র সাংসদ, কংগ্রেস নেতা এবং সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে আলোচনা সভা করে তৎকালীন কৃষক প্রজা পার্টি-মুসলিম লীগ কোয়ালিশন সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন তুলে কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিনই ১৯৩৮ সালের ১৬ মার্চে একই সভায় তারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউল কাস্ট পার্টি নামক একটি সংসদীয় দল গঠন করেন।[২]

পরবর্তী কার্যক্রম[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি ভীমরাও রামজি আম্বেডকরের প্রতিষ্ঠিত ‘সিডিউল্ড কাস্ট মুভমেন্ট’-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিল। এই দলটিও দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে কাজ করত। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলরা রক্ষার্থে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতা সত্বেও তারা একই সাথে মুসলিম লীগের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার (শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা) পতন ঘটলে তারা নাজিমউদ্দিন মন্ত্রিসভাকে সমর্থন করে।

এই মন্ত্রিসভায় ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউল্ড কাস্ট পার্টি’র মধ্য থেকে প্রেমহরি বর্মণ, পুলিনবিহারী মল্লিক (প্রচার), এবং যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল (সমবায়, ঋণ ও পল্লী উন্নয়ন) মন্ত্রিত্ব লাভ করেন।[১]

বিলুপ্তি[সম্পাদনা]

১৯৪৩ সালে দলিত সম্প্রদায়ের নেতারা মিলে পুরো বাংলায় একটি মূল ধারার রাজনৈতিক দল ‘বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল সিডিউল্ড কাস্ট ফেডারেশন’ গঠন করেন। এর ফলে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউল্ড কাস্ট পার্টি’র বেশিরভাগ সদস্যই ঐ দলে যোগদানের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ফলে দলটি ১৯৪৩ সালে বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল সিডিউল্ড কাস্ট ফেডারেশন’র সাথে একীভূত হয়ে যায়। [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বসু, রাজশেখর। "ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিডিউল্ড কাস্ট পার্টি"bn.banglapedia.orgবাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২২ 
  2. শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়; অভিজিৎ দাশগুপ্ত; ভেলাম ভান সেন্দেল, সম্পাদকগণ (১৯৯৪)। Bengal: Development, Communities and States [বঙ্গ: উন্নয়ন, সম্প্রদায় এবং রাজ্যসমূহ] (ইংরেজি ভাষায়)।