গুরুচাঁদ ঠাকুর
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর | |
|---|---|
| ব্যক্তিগত তথ্য | |
| জন্ম | ১৩ মার্চ ১৮৪৬ বর্তমান বাংলাদেশের ওড়াকান্দী গ্রাম, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ |
| মৃত্যু | ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭ (বয়স ৯১) |
| ধর্ম | হিন্দু |
| পিতামাতা | হরিচাঁদ ঠাকুর পিতা) শান্তি (মাতা) |
| আত্মীয় | যশোমন্ত ঠাকুর (ঠাকুরদা) |
গুরুচাঁদ ঠাকুর (১৩ মার্চ ১৮৪৬ - ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭) একজন বাঙালি হিন্দু সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাব্রতী। তিনি মতুয়া মহাসঙ্ঘ উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের পথিকৃৎ। তৎকালীন ব্রাহ্মণ কর্তৃক চন্ডাল তথা নিচু জাতের প্রতি নিপীড়ন ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সহ সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে "নমশূদ্র" নামকরন করেন।[১] চন্ডাল জাতি চন্ডাল বংশের উত্তরসূরী । ৮৩১ সাল চন্ডাল বংশ স্থাপিত হয় নন্নুক দ্বারা। চন্ডাল বংশের শাসনকাল (৮৩১-১২১৫ )খ্রিষ্টাব্দ । চন্ডালদের রাজ্যসীমা বর্তমানে গুজরাত, উত্তর প্রদেশ ,মধ্যপ্রদেশ ,বাঙ্গাল (বাংলাদেশ ,পশ্চিমবঙ্গ)পুরোটাই তাদের শাসন স্থল । রাজশক্তি পতনের পর তাদেরকে নিম্নমানের কাজ কর্মে বাধ্য করা হয় এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয়। বর্তমানে তারা নমঃশূদ্র নামে পরিচিত। নমঃশূদ্র জাতির পূর্বপুরুষ গোন্ড জাতির আদিবাসী ।
চন্ডালদের শুদ্র হয়ে ওঠার কাহিনী
[সম্পাদনা]অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সাফলিডাঙা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গুরুচাঁদ। পিতা ছিলেন মতুয়া আন্দোলনের সূচনাকারী হরিচাঁদ ঠাকুর। সামাজিক বৈষম্যের কারণে গুরুচাঁদ কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পারলে পিতা হরিচাঁদ তাকে মক্তবে ভর্তি করেন।[২] ও পরামর্শ দেন ভবিষ্যতে শিক্ষার উন্নতি করার। পিতার মৃত্যুর পর এই সামাজিক আন্দোলনের দায়িত্ব নেন গুরুচাঁদ।[৩] চন্ডাল জাতি বা চন্ডাল বংশ বলে গালি দিতে । চন্ডাল কোনো গালি নয় চন্ডাল একটি বংশ। চন্ডাল বংশ স্থাপিত হয় ৮৩১ খ্রিস্টাব্দে, নন্নুক এ বংশের স্থাপক। চন্ডাল বংশের শাসনকাল ৮৩১ থেকে শুরুকরে ত্রয়োদশ পর্যন্ত । তাদের রাজধানী ছিল বর্তমানে বুন্দেলখন্ড খেজুরাহ । এদের স্থাপত্য সোমনাথ মন্দির উল্লেখযোগ্য,রাজ্য সীমান া গুজরাত ,উত্তর প্রদেশ ,মধ্যপ্রদেশ ,বাঙ্গাল বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ,বাংলাদেশ । বর্তমানে চন্ডাল বংশের উত্তরসূরীদের নমঃশূদ্র বলা হয়। নমঃশূদ্র জাতির পূর্বপুরুষ গোন্ড জাতির আদিবাসী ।
শিক্ষাবিস্তার ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ননের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। সামাজিক ও বর্ণহিন্দুর বাধা অতিক্রম করে ১৮৮০ সালে ওড়াকান্দিতে প্রথম বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তার উৎসাহে ১৮ বছরের মধ্যে এটি প্রাথমিক স্তর হতে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নিত হয়। অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গণআন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তিনি। ৯০ বছরের জীবনে ৩৯৫২ টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন বাঙ্গাল (বাংলাদেশ, ভারত) জুড়ে । সমস্ত স্কুল গুলিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ ছিল ।[২] ১৮৮১ সালে তার উদ্যোগে ও সভাপতিত্বে খুলনার দত্তডাঙায় প্রথম নমঃশূদ্র মহাসম্মেলন হয়। তখনকার সময়ে পণ্ডিতেরা চন্ডাল শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করে নিকৃষ্ট বলে প্রমাণ দেখায় । এ ব্যাখ্যায় নমঃ জাতি হীনমন্যতার শিকার হয়। শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর এ পরিস্থিতি উপলব্ধি করে চন্ডাল জাতিকে নমঃ জাতিতে উত্তরণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তার চেষ্টায় একটি প্রতিনিধিদল ১৯০৭ সালে বাংলা ও আসাম গভর্নর জেনারেলের কাছে এই মর্মে প্রতিবেদন পেশ করেন। যার সাফল্যস্বরূপ ১৯১১ সালের জনগণনায় নমশূদ্র নামটি পরিচিতি লাভ করেছিল। তার মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের দায়িত্ব নেন রাজনীতিবিদ ও সাংসদ প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের কনিষ্ঠ সহোদর মন্মথরঞ্জন ঠাকুর হাইকোর্টের ওকালতিতে খুব বেশি ব্যস্ত থাকতেন, সাথে তাঁর বড় খুড়তুতো ভাই (সুধন্য ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র) ড. ভগবতী প্রসন্ন ঠাকুর মতুয়া মতাদর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না। ভগবতী প্রসন্ন ঠাকুর বেশ ভাবুক ও কিছুটা অলস প্রকৃতির ছিলেন। এজন্য, ভগবতী ঠাকুরের ছোট ভাই শ্রীপতি প্রসন্ন ঠাকুর ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশবিভাগের পর সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান কেন্দ্র গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার ঠাকুরনগরে। দেশভাগের পূর্বে ও পরে গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি ছিল সমগ্র বিশ্বের মতুয়া মতাদর্শের মূল পীঠ ।[৩][৪]
শ্রীধাম ওড়াকান্দী ও শ্রীধাম ঠাকুরনগরের মতুয়া মেলা
[সম্পাদনা]হিন্দুধর্মে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ধাম মহাতীর্থে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম তিথিতে বারুণীস্নানে লক্ষ মতুয়া ভক্তের আগমন ঘটে।
একই তিথিতে পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগর মতুয়া মহামেলা ও বারুণীস্নানে লক্ষ মতুয়া ভক্তের আগমন ঘটে। ঠাকুরনগরে শ্রীধাম ঠাকুরনগর ঠাকুরনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "কেন গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি সফর করছেন নরেন্দ্র মোদী?"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০২১।
- 1 2 ড. নজরুল ইসলাম। মুসলমানদের করণীয়। কলকাতা: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স। পৃ. ৫৫। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৩-৫০২০-০৭৭-৩।
- 1 2 দ্বিতীয় খন্ড, অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০৪)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃ. ৯৪। আইএসবিএন ৮১-৮৬৮০৬-৯৯-৭।
{{বই উদ্ধৃতি}}:|প্রথমাংশ=প্যারামিটারে সাধারণ নাম রয়েছে (সাহায্য) - ↑ "মতুয়া বিষয়ে কিছু সওয়াল জবাব"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭।