ইংকিয়ং
ইংকিয়ং | |
---|---|
নগর | |
ভারতের অরুণাচল প্রদেশে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৮°৩৬′৩৭″ উত্তর ৯৫°০২′৫১″ পূর্ব / ২৮.৬১০৩৭° উত্তর ৯৫.০৪৭৫৩১° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | অরুণাচল প্রদেশ |
স্থাপিত | ১৯৯৯ |
উচ্চতা | ২০০ মিটার (৭০০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১ সালের আদমশুমারি) | |
• মোট | ৮,৫৭৩ |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন | ৭৯১০০২ |
যানবাহন নিবন্ধন | এআর -১৪ |
ওয়েবসাইট | https://uppersiang.nic.in/ |
ইংকিয়ং ভারতের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের উচ্চ সিয়াং জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর।[১] এটি অরুণাচল প্রদেশের উচ্চ সিয়াংয়ের সিয়াং নদীর পূর্বদিকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিতএকটি ছোট শহর।[২] এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার (৭০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত, এর পশ্চিম দিকে সিয়াং নদী প্রবাহিত হয়েছে। আসাম অঞ্চলে এর নাম ব্রহ্মপুত্র নদ এবং তিব্বতে এর নাম ইয়ারলুং জাংবো বা সাঙ্গপো নদী। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে এই নগরীর জনসংখ্যা হল ৮৫৭৩ জন।[৩]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৯৫ সালের আগে উচ্চ সিয়াং জেলা পূর্ব সিয়াং জেলার অন্তর্গত ছিল। সেই বছরেই পূর্ব সিয়াং থেকে একে খণ্ডিত করে নতুন জেলা স্থাপিত হয়েছিল।[৪] যেখানে শহরটি অবস্থিত, সেই প্রশাসনিক জেলা উচ্চ সিয়াংসহ অরুণাচল প্রদেশ বহুদিন আগে একটি স্বাধীন অঞ্চল ছিল। ১৮২৬-১৮৬১ এর অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধের আগে অবধি এই অঞ্চলটির ওপর ব্রিটিশ বা অন্যান্য শক্তির প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধ এবং বার্মা এবং ব্রিটিশ অভিযাত্রী বাহিনীর মধ্যে ইয়াণ্ডাবুর চুক্তির পর, আসামের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল,[৫] কাছাড়, মণিপুর[৬] যা আগে বার্মিজদের দখলে ছিল, তা ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।[৭] তবে সামগ্রিকভাবে অরুণাচল প্রদেশ ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কারণ ব্রিটিশরা অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সিয়াং জেলার পাসিঘাট শহর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল। ১৯১১ সালে অ্যাংলো-অ্যাওর যুদ্ধের পরে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটিকে তাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলতে পেরেছিল। এই সময়কালে এটি আসামের সাদিয়াতে অবস্থিত সহকারী রাজনৈতিক কর্মকর্তার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়ত। যার মধ্যে ফ্রান্সিস জ্যাক নিডহাম ১৮৮২ সালে সহকারী রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।[৮] এছাড়া সবচেয়ে বিশিষ্ট ছিলেন নোয়েল উইলিয়ামসন, তিনি পরে পূর্ব সিয়াং জেলার কমসিং গ্রামের স্থানীয়দের দ্বারা খুন হয়েছিলেন।[৯][১০]
ভূগোল
[সম্পাদনা]ইংকিয়ং শহরের ভূসংস্থান অনুসারে অঞ্চলটি পাহাড়ি এবং নদী উপত্যকা সমৃদ্ধ,[১১] এই শহরটির স্থানাঙ্ক ২৮.৬১০৩৭° উত্তর ৯৫.০৪৭৫৩১° পূর্ব। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার (৭০০ ফু) উচ্চতায় অবস্থিত। এর পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সিয়াং নদী, তিব্বতে যার নাম ইয়ারলুং (সাংপো) এবং আসাম অঞ্চলে একে বলা হয় ব্রহ্মপুত্র নদ।[১২] এটি উত্তর সীমানায় আছে তিব্বত, পূর্বে দিবাং উপত্যকা, এর পশ্চিমে আছে পশ্চিম সিয়াং জেলা এবং দক্ষিণ সীমানায় আছে পূর্ব সিয়াং জেলা।[১৩] শহরটি চারদিকে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত এবং পশ্চিম দিকে প্রবাহিত চিরজীবী সিয়াং নদী। ইন্দো-চীন সীমান্তের নিকটে ইয়িংকিওংয়ের উত্তরে যে শহরগুলি রয়েছে সেগুলি হল টিউটিং, সিঙ্গিং, বিশিং। জনপদের আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম এবং পল্লীগুলি হল সিমং, গোবুক, পুগিং, পাংকাং, গেটে, ময়িং, বোমডো, লাইকোর, মিল্লাং প্রমুখ।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]ইংকিয়ং শহরটিতে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ উপক্রান্তীয় আবহাওয়া থাকে, এখানে গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা দেখা গেছে।[১১] এটি তুলনামূলকভাবে আর্দ্র অঞ্চল। ইংকিয়ং শহরে সর্বাধিক বার্ষিক বৃষ্টিপাত, নথি অনুসারে ৩১১৬ মিমি।[১৪] উপরের অঞ্চলগুলি বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে তুষারপাত হয়।
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]এখানে কৃষিকাজই হল মূল পেশা, জীবিকার এক প্রধান উৎস। পুরো উচ্চ সিয়াংয়ের মোটামুটি ৬৯ শতাংশ পরিবার কৃষিতে নিযুক্ত, ইংকিয়ং জনপদে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শহুরে কৃষক পরিবার রয়েছে।[১১] এখানে সবচেয়ে বেশি করা হয় ঝুম চাষ (কাটা এবং পোড়ানো) এবং ধাপ চাষ। ভাত, ভুট্টা এবং মিলেট এখানকার প্রধান খাদ্য শস্য। এখানে হলুদ, আখ ইত্যাদির মত অর্থকরী ফসলও জন্মায়।[১৫] কৃষির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন জাতের শাকসব্জী চাষ ও বিক্রয় চলে এবং 'মুরহা' নামে পরিচিত বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প এখানকার ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। অনুকূল সময়ে কমলালেবু, আনারস জাতীয় মৌসুমী ফলের চাষ এখানে ভাল হয় এবং তারপরে উদ্বৃত্ত ফসল স্থানীয় বাজারে বা পাসিঘাট শহরের বাইরে বিক্রি করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পাঠানো হয়। মৎস্য চাষও এখানে প্রচলিত আছে এবং স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক সংস্থা এফএফডিএ (ফিশ ফার্মার ডেভলপমেন্ট এজেন্সি)র কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান করা হয় এবং রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের জন্য সাহায্য করা হয়।[১৬] আদি লোকেরা 'ইগিন' নামক স্বতন্ত্র ধরনের ঐতিহ্যশালী ঝুড়ি তৈরিতে দক্ষ। এটি প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন চাল, গম এবং শুকনো কাঠ বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।[১৭] রামসিং ভিলেজে ডেকি টি এস্টেটে সিয়াং চা নামে বিভিন্ন ধরনের কালো এবং লাল চা[১৮] ও উৎপাদিত হয়, যেগুলি রপ্তানি যেমন হয় এবং তেমনি স্থানীয়ভাবেও বিক্রি হয়। [১৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Upper Siang | Arunachal Pradesh | DISTRICTS OF INDIA"। districts.nic.in (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১০-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯।
- ↑ "Unnamed Road to Unnamed Road"। Unnamed Road to Unnamed Road (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৪।
- ↑ 2011, Yingkiong। "Census, Govt of India"।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ৮ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "LEST WE FORGET: The Burmese Invasions of Assam (1817-1826)"। TNT-The NorthEast Today (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-১১।
- ↑ "RCILTS, IIT Guwahati"। www.iitg.ac.in। ২০১৯-০৪-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-১১।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ Report on the Administration of North East India (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। ১৯৮৪।
- ↑ "Forgotten fighter of Arunachal - Work on promised memorial yet to begin"। www.telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৬।
- ↑ "Northeast India's 5 unforgettable freedom fighters"। TNT-The NorthEast Today (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৬।
- ↑ ক খ গ http://cgwb.gov.in/District_Profile/Arunachal/UPPER%20SIANG.pdf
- ↑ "Brahmaputra/Yarlung Tsangpo"। International Rivers (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯।
- ↑ "About District | District Upper Siang, Government of Arunachal Pradesh"। uppersiang.nic.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯।
- ↑ Managing natural resources : focus on land and water : felicitation volume in honour of Professor R.L. Dwivedi। Dwivedi, R. L., 1924-, Misra, H. N. (Harikesh N.), 1945-। Delhi। আইএসবিএন 9788120349339। ওসিএলসি 893309586।
- ↑ "ARUNACHAL PRADESH | Department of Agriculture Cooperation & Farmers Welfare | Mo A&FW | GoI"। agricoop.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৩।
- ↑ "Department of Fisheries | Arunachal Pradesh"। meenarun.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৩।
- ↑ Sharma, Tika Prasad (অক্টোবর ২০০৮)। "Ethnobotanical observations on Bamboos among Adi tribes in Arunachal Pradesh"। Indian Journal of Traditional Knowledge। 7 (4): 594–597 – Department of Botany, Gauhati University, Guwahati 781014, Assam-এর মাধ্যমে।
- ↑ "SIANG TEA AND INDUSTRIES PVT LTD - Company, directors and contact details | Zauba Corp"। www.zaubacorp.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৯।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৯।