আহমদ বিন আলী আল থানি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আহমদ বিন আলী আল থানি
أحمد بن علي آل ثاني
কাতারের আমির
রাজত্ব২৪ অক্টোবর, ১৯৬০–২২, ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২
রাজ্যাভিষেক২৪ অক্টোবর, ১৯৬০
পূর্বসূরিআলী বিন আব্দুল্লাহ আল থানি
উত্তরসূরিখলিফা বিন হামাদ আল থানি
জন্ম১৯২২
দোহা, কাতার[১]
মৃত্যু২৫ নভেম্বর ১৯৭৭(1977-11-25) (বয়স ৫৪–৫৫)
লন্ডন, ইংল্যান্ড,
দাম্পত্য সঙ্গী
  • হাসা বিনতে হামাদ আল থানি
  • আল-আনোদ বিনতে ফালেহ আল থানি
  • মরিয়ম বিনতে রশিদ আল মাকতুম
বংশধর
  • আব্দুল লাজিজ বিন আহমেদ আল থানি
  • নাসের বিন আহমদ আল থানি
  • হামাদ বিন আহমদ আল থানি
  • সৌদ বিন আহমদ আল থানি
  • আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আল থানি
  • খালিদ বিন আহমদ আল থানি
  • মনসুর বিন আহমদ আল থানি
পূর্ণ নাম
আহমাদ বিন আলী বিন আব্দুল্লাহ বিন জসিম
রাজবংশথানি
পিতাআলী বিন আবদুল্লাহ আল থানি

শেখ আহমদ বিন আলী বিন আব্দুল্লাহ বিন জসিম আল থানি (আরবি: أحمد بن علي بن عبد الله بن جاسم بن محمد آل ثاني ; ১৯২২–১৯৭৭) ছিলেন কাতারের একজন আমির, যিনি ১৯৬০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। বেশ কিছু নতুন তেলক্ষেত্র সমৃদ্ধকরণ ও আবিষ্কারের ফলে কাতারের আর্থিক অবস্থা তার শাসনামলে উল্লেখযোগ্য উন্নতির সাক্ষী হয়। কাতার তার শাসনামলেই ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে।[২] তিনি ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার চাচাতো ভাই খলিফা বিন হামাদ আল থানি কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন।[৩]

জীবনী[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শেখ আহমাদ ১৯২২ সালে কাতারের রাজধানী শহর দোহায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আলী বিন আবদুল্লাহ আল থানির ১২ জন সন্তানের মধ্যে ২য় পুত্র ছিলেন। সঠিক তথ্যমতে তারা ৯ ভাই ও ৩ বোন ছিলেন। যদিও কিছু সূত্র প্রমাণ করে যে, তারা ৯ জনের পরিবর্তে ১০ ভাই ছিলেন। তার পিতা শেখ আলী বিন আবদুল্লাহ আল থানি ১৯৬০ সালের ২৪ অক্টোবর সিংহাসন গ্রহণ করেন।[৪] শেখ আহমদ তারপর সিংহাসন গ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে ব্রিটেন থেকে কাতারের স্বাধীনতার চূড়ান্ত সময়গুলির সময় তিনি আমির ছিলেন।

শেখ আহমদ ১৯৫৩ সালে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকসহ অসংখ্য রাজকীয় রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। যেদিন তার রাজত্ব শুরু হয়, তার চাচাতো ভাই শেখ খলিফা বিন হামাদ আল থানি তার উত্তরাধিকারী এবং উপ-শাসক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি শেখ খলিফা তাকে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করেন।[৩] অভ্যুত্থানের সময় শেখ আহমাদ শিকারে ইরানে ছিলেন।[৩] তার জবানবন্দির পর শেখ আহমদ তার স্ত্রী দুবাইয়ের প্রয়াত শাসকের কন্যা এবং সন্তানদের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্বনির্বাসনে বসবাস শুরু করেন।[২]

রাজত্ব[সম্পাদনা]

১৯৬৩ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে পরিচিত একটি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল গঠিত হয়, যা শেখ আহমদের এক আত্মীয় কর্তৃক জাতীয়তাবাদী বিক্ষোভে গুলি চালানো ও একজন প্রতিবাদকারীকে হত্যা করার প্রতিক্রিয়ায় গঠিত হয়েছিল। বিক্ষোভটি উত্তর ইয়েমেনি অভিবাসী শ্রমিকদের দ্বারা সংগঠিত হয়, যারা সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের সাথে তাদের সরকারের ইউনিয়নকে সমর্থন করেছিল। ১৯৬০ সালে সিংহাসনে আরোহণের পর থেকে শাসক পরিবারের অসামাজিক জীবনধারা ও শেখ আহমেদের দেশে দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে এই গোষ্ঠীর গঠনের সূচনা হয়।[৫] একজন ধনী ব্যবসায়ী ও একজন উপজাতীয় নেতা কর্তৃক সহ-প্রতিষ্ঠিত গ্রুপটি আরব জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।[৬][৭]

গুলি চালানোর প্রতিক্রিয়ায় শ্রমিকরা সে বছর কেন্দ্রীয় দোহার বাজারে একটি ছোট অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেখানে তারা সরকারের কাছে তাদের দাবি পেশ করে। তাদের দাবিগুলির মধ্যে কিছু শেখ আহমদের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিল।[৮] সরকার এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং উত্তেজনাকর পরিবেশের মধ্যে এর অনেক সদস্যকে বিনা বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়।[৬] এর ফলে শেখ আহমাদ দরিদ্র কৃষকদের জমি ও ঋণ প্রদানের মতো কিছু সংস্কারমূলক কাজ করেছিলেন।

অর্জন[সম্পাদনা]

অর্থনৈতিক অর্জন[সম্পাদনা]

কাতারে বিপুল সংখ্যক তেলক্ষেত্র আবিষ্কারের ফলে শেখ আহমদের শাসন দেশে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়। সেই সময়ে, এবং জানুয়ারী 1964 সালে, ইদ আল-শার্গি ক্ষেত্রে পূর্ণ-স্কেল উত্পাদন শুরু হয়েছিল, বিশ্বের প্রথম সমুদ্রতল ক্ষেত্র যা সম্পূর্ণরূপে অফশোর সুবিধা হিসাবে পরিচালিত হয়েছিল।[২] তদুপরি, 1963 সালে, মায়দান মাহজামের বৃহত্তর ক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয় এবং 1965 সালে হালুল দ্বীপে একটি তেল টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছিল। বুল হ্যানিয়েন ক্ষেত্রের অনুসন্ধান 1965 সালে শুরু হয় এবং 1977 সালে উৎপাদন[২] হয়। তেল অর্থনীতির বৃদ্ধির সাথে সাথে কাতার আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়। শেখ আহমদ 1960 সালের নভেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই সময়ে উত্তরাধিকারী এবং উপ-শাসক শেখ খলিফাকে প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।[২] এর পরে, শেখ আহমেদ আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রকৃতির সমস্ত সরকারী বিষয় পরিচালনার জন্য সাধারণ আর্থিক ও প্রশাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।[২] তারপর, 1967 সালে, সিভিল সার্ভিস বিভাগও স্থাপন করা হয়।[২]

কাতারের স্বাধীনতা[সম্পাদনা]

ধীরে ধীরে কাতারের প্রশাসন চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে এবং দেশটি স্বাধীনতার জন্য অগ্রসর হতে থাকে। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকার উপসাগরীয় শাসকদের সাথে সুরক্ষা চুক্তি বাতিল করে সুয়েজের পূর্ব থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং নয়টি উপসাগরীয় রাষ্ট্রের একটি কনফেডারেশন গঠনে তাদের ব্যর্থতার জন্যে কাতার একটি মন্ত্রিসভা গঠনের দিকে এগিয়ে যায়। ১৯৭০ সালের ২ এপ্রিল কাতারের জন্য অস্থায়ী সংবিধান জারি করা হয় এবং ২৮ মে দেশের প্রথম মন্ত্রী পরিষদ গঠিত হয়। সবশেষে ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৬ সালের অ্যাংলো-কাতারি চুক্তি বাতিল করে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে কাতারের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়।[২]

বিয়ে ও সন্তান[সম্পাদনা]

শেখ আহমাদ বিন আলী আল থানি তিনবার বিয়ে করেন। তার স্ত্রীদের একজন ছিলেন দুবাইয়ের তৎকালীন শাসক শেখ রশিদ বিন সাইদ আল মাকতুমের কন্যা।[৯] তার নয় সন্তান ছিল : সাত ছেলে ও দুই মেয়ে।

  • শেখ আবদুল আজিজ বিন আহমদ আল থানি
  • শেখ নাসের বিন আহমাদ আল থানি
  • শেখ হামাদ বিন আহমাদ আল থানি
  • শেখ সৌদ বিন আহমাদ আল থানি
  • শেখা হেসা বিনতে আহমাদ আল থানি
  • শেখ আবদুল্লাহ বিন আহমাদ আল থানি
  • শেখ খালিদ বিন আহমাদ আল থানি
  • শেখা মুনিরা বিনতে আহমাদ আল থানি
  • শেখ মনসুর বিন আহমাদ আল থানি

মৃত্যু[সম্পাদনা]

যদিও তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে কিছু পুনর্মিলন অর্জিত হয়েছিল শেখ আহমদ নির্বাসনে থাকার জন্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৭ সালের ২৫ নভেম্বর ক্যান্সারের চিকিৎসার সময় লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন এবং তার দেহ কাতারে ফিরিয়ে আনা হয়। শাসক পরিবার তাকে গ্রহণ করে এবং তার আনুষ্ঠানিক শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। আমির ও শাসক পরিবার উপস্থিত ছিলেন এবং আল রাইয়ান কবরস্থানে সমাহিত করা হয় এবং তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছিল।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'Pocket No. 8: Enclosure to Part III of Volume I of the Persian Gulf Gazetteer: Genealogical Table of the Āl Thāni (Ma'ādhīd) Family of Dōhah in Qatar' [10ar] (1/2)"। ৭ নভেম্বর ২০১৪। 
  2. "Shaikh Ahmed bin Ali Al Thani: Amiri Diwan"। Diwan। ১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১২ 
  3. "Qatar PM seizes power from cousin"Ottawa Citizen। Beirut। AP। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৩ 
  4. Rathmell, Andrew; Kirsten Schulze (অক্টোবর ২০০০)। "Political Reform in the Gulf: The Case of Qatar": 47–62। জেস্টোর 4284113ডিওআই:10.1080/00263200008701331 
  5. Hiro, Dilip (২০১৪)। Inside the Middle East। Routledge। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 978-0415835084 
  6. Kadhim, Abbas (২০১৩)। Governance in the Middle East and North Africa: A Handbook। Routledge। পৃষ্ঠা 258। আইএসবিএন 978-1857435849 
  7. Commins, David (২০১২)। The Gulf States: A Modern History। I. B. Tauris। পৃষ্ঠা 188। আইএসবিএন 978-1848852785 
  8. "Qatar - Historical Background"। countrystudies.us। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ 
  9. Peterson, J. E. (২০০৭)। "Rulers, Merchants and Shaikhs in Gulf Politics" (পিডিএফ)