আব্দুর রকিব খন্দকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আব্দুর রকিব খন্দকার
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক
কাজের মেয়াদ
৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৬ – ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি
কাজের মেয়াদ
১৯৭৬ – ১৯৮৬
ডিএমপির তৃতীয় কমিশনার
কাজের মেয়াদ
২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ – ৪ এপ্রিল ১৯৮৪
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৩৩-০৩-০১)১ মার্চ ১৯৩৩
মুন্সীগঞ্জ
মৃত্যু২৫ আগস্ট ২০১০(2010-08-25) (বয়স ৭৭)
ব্যাংকক জেনারেল হাসপাতাল, থাইল্যান্ড
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নটর ডেম কলেজ
পুরস্কারজাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার -১৯৯৯

আব্দুর রকিব খন্দকার যিনি এ আর খন্দকার নামে পরিচিত ছিলেন (১ মার্চ ১৯৩৩ – ২৫ আগস্ট ২০১০)। বাংলাদেশ পুলিশের অষ্টম মহাপরিদর্শক[১][২][৩]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

এ আর খন্দকার ১ মার্চ ১৯৩৩ সালে মুন্সীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি উত্তর শেখর নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে পরবর্তীতে রায় বাহাদুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন লেখাপড়া করেন। পরে তিনি ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হয়ে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

বাংলা ভাষা আন্দোলন[সম্পাদনা]

আব্দুর রকিব খন্দকার ১৯ মার্চ ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেন। ২১ মার্চ ১৯৪৮ সালে তিনি ঘোষণা করেন যে "উর্দু এবং শুধুমাত্র উর্দু" হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। আব্দুর রকিব খন্দকার সেই গণসংবর্ধনায় যোগ দেন এবং তিনি তার সহকর্মী ব্যাচমেটদের সাথে জিন্নাহর ঘোষণার প্রতিবাদ করেন।

পরে ২৪ মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে একটি ছাত্র সমাবেশে জিন্নাহ একই কাজ করে ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদের সম্মুখীন হন। পরে জিন্নাহর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এ আর খন্দকার ছাত্রদের বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এবং তার বন্ধুরা ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হন। শহীদ আবদুস সালামকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খন্দকারকেও তার সাথে একই ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

১৯৫৩ সালে স্বাধীনতা দিবস শিল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে  বিজয়ী (এআর খন্দকার, বাম থেকে প্রথম)

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

স্বাধীনতার আগে[সম্পাদনা]

এ আর খন্দকার এমএ পরীক্ষা শেষ করার পর তিনি ঢাকার নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার মার্টিনের কাছ থেকে তার কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকরির প্রস্তাব পান। পরে সেখানে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

তিনি কায়েদ-ই-আজম কলেজেও শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, যা বর্তমানে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ নামে পরিচিত।

১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তানের সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসেস পরীক্ষা (পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস) পাস করেন। ১৯৫৭ সালে তাকে প্রশিক্ষণ শেষে ফয়সালাবাদে পোস্ট করা হয়। ১৯৫৮ সালে তিনি হাঙ্গুতে পুলিশ সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পেশোয়ারে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। এ আর খন্দকার ১৯৬১ সালের মার্চ মাসে মৌলভীবাজারে বদলি হন। ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে তিনি অতিরিক্ত এসপি পদে উন্নীত হন এবং চট্টগ্রামে বদলি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি বরিশালে বদলি হন। এ আর খন্দকার ১৯৬৫ সালে এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে বগুড়ায় বদলি হন। এরপর তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে দিনাজপুরের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি এসপি খুলনা হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে করাচিতে বদলি করা হয়।

স্বাধীনতার পর[সম্পাদনা]

আব্দুর রকিব খন্দকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে খুলনা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি দায়িত্ব পালনের সময় একটি দুর্ঘটনায় আহত হন যা তাকে সারাজীবন প্রভাবিত করে।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে নিযুক্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক ছিলেন।  তিনি রাজশাহী পুলিশ রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তৃতীয় কমিশনার হিসেবে ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ থেকে 8 ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১০ মার্চ ১৯৮৩ থেকে ৪ এপ্রিল ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন।

আবদুর রকিব খন্দকার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে নিযুক্ত ছিলেন এবং ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে নির্বাচিত হন।  তিনি জাতিসংঘের অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের অষ্টম মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪]

১৯৯৯ সালে তিনি ক্রীড়া সংগঠক এবং উৎসাহী হিসাবে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

এ আর খন্দকার ২৫ আগস্ট ২০১০ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Muhammad Nurul Huda (৩১ আগস্ট ২০১০)। "Remembering a braveheart"ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২৩ 
  2. "History, Dhaka Metropolitan Police"ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২৩ 
  3. আব্দুর রকিব খন্দকার (৩ অক্টোবর ২০২৩)। "Our parliament and parliamentarians"ডেইলি স্টার। ৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২৩ 
  4. "Former IGPs, বাংলাদেশ পুলিশ"বাংলাদেশ পুলিশ। ৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২৩