অশোক নাথ মিত্র
অশোক নাথ মিত্র | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৬ নভেম্বর ২০২২ | (বয়স ৯৩)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচডি), ভারত, কর্নেল ইউনিভার্সিটি (পিএইচডি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
পরিচিতির কারণ | তত্ত্বমূলক পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, কণা পদার্থবিজ্ঞান, কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব |
পুরস্কার | ভাটনগর পুরস্কার |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | আর. সি মজুমদার, হান্স বেটে |
অশোক নাথ মিত্র (১৫ এপ্রিল ১৯২৯ - ২৬ নভেম্বর ২০২২[১]) একজন ভারতীয় তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন ইমেরিটাস (সাম্মানিক অধ্যাপক পদ) অধ্যাপক ছিলেন। তিনি পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, কণা পদার্থবিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বে তার কাজের জন্য পরিচিত। বিশেষভাবে, নিউক্লিয়ন ৩- বস্তুর সমস্যা, যেগুলির পৃথকযোগ্য সম্ভাবনা আছে, সেগুলির সঠিক সমাধান পেতে তাঁর মৌলিক অবদানের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। যার ফলে কয়েকটি নিউক্লিয়ন অধ্যয়ন, কোয়ার্ক (একটি প্রাথমিক কণা)- প্রত্যাগতি প্রভাব, নিউক্লিয়ন থেকে কোয়ার্কে ২- এবং ৩-বস্তু প্রণালীর সংহত গতিশীলতার বিকাশ করা গেছে। পাশাপাশি বেথে-স্যালপেটার কাঠামোতে হ্যাড্রনগুলির জন্য কোয়ার্ক গতিশীলতার এবং আপেক্ষিক কোয়ার্ক মডেলগুলির বিকাশ করা গেছে। ১৯৬৯ সালে তাঁকে শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার প্রদান করা হয়।[২]
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]অশোক নাথ মিত্র, ১৯২৯ সালের ১৫ই এপ্রিল, বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ও মাতার নাম যথাক্রমে যতীন্দ্র নাথ এবং রমা রানী মিত্র। তাঁর বাবা যতীন্দ্র নাথ মিত্র দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামজাস কলেজে গণিত পড়াতেন। মিত্রও রামজাস কলেজে গণিত শিক্ষা করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে স্নাতক এবং ১৯৪৯ সালে তাঁর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এম.এ.) অর্জন করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি পিএইচডি এর ছাত্র হিসাবে আর. সি মজুমদারের সঙ্গে পদার্থবিদ্যায় কাজ শুরু করেছিলেন।[৩]
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]পিএইচডি করার পরে মিত্র কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যান। সেখানে তিনি ফ্রীম্যান জন ডাইসন এবং হান্স বেটের সাথে কাজ করে তাঁর দ্বিতীয় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিত্র ১৯৫৫ সালে ভারতে ফিরে আসেন, এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রীডার (অধ্যক্ষতা বিষয়ক পদ) নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসে অধ্যাপনায় যোগ দেন, যেখানে তিনি ১৯৯৪ সালে তাঁর অবসরগ্রহণ পর্যন্ত ছিলেন। মিত্র ১৯৭৩-৭৫ সালে পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ছিলেন, তবে তিনি তাঁর তিন বছরের মেয়াদ শেষ না করেই প্রধান পদ থেকে সরে দাঁড়ান।[৩] তিনি ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৬২-৬৩)) এবং শিকাগোর ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় (১৯৮৬-৮৭) তে পরিদর্শক অধ্যাপকের পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি আইএনএসএ-এর সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন: ১৯৮৯ -৯৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএনএসএ-আলবার্ট আইনস্টাইন গবেষণা অধ্যাপক হয়েছিলেন।[৪] বর্তমানে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিভাগে আজীবন ইমেরিটাস অধ্যাপক। তাঁর নির্দেশনায় কাজ করে প্রচুর ছাত্র পিএইচডি অর্জন করেছেন যাঁরা এখন বিশ্বজুড়ে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাসিংক্রান্ত পদ দখল করে আছেন।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা
[সম্পাদনা]মিত্র পারমাণবিক ও কণা পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একাধিক মূল গবেষণামূলক অবদান রেখেছেন। তার বিশিষ্ট অবদানগুলির মধ্যে রয়েছে: (১) পারমাণবিক ৩-বস্তু সমস্যার পৃথকযোগ্য সম্ভাবনার সাথে সঠিক সমাধান যা ৩-বস্তু তরঙ্গ অপেক্ষকের কাঠামোর জন্য একটি নতুন পরিজ্ঞান দিয়েছিল। তারপরেই পদার্থবিদ্যার একটি নতুন শাখা হিসাবে "কয়েকটি নিউক্লিয়ন অধ্যয়ন" শুরু হয়েছিল (২) প্রোটন বৈদ্যুতিন চৌম্বকীয় ফর্ম ফ্যাক্টরে একটি গ্রন্থি, যদি না ফার্মিয়ন কোয়ার্কের অতিরিক্ত ডি.ও.এফ (ডিগ্রী অফ ফ্রিডম-স্বাধীনতা মাত্রা) না থাকে। এটি "কালার" আবিষ্কারের অগ্রদূত এবং (৩) "কোয়ার্ক- প্রত্যাগতি প্রভাব" (মার্ক রস এর সঙ্গে একসাথে), ভারী মেসন কণার বর্ধিত ক্ষয় পদ্ধতি বোঝার জন্য। তিনি একটি বিস্তৃত গতিশীল কাঠামো তৈরি করেছেন যেটি ২- এবং ৩- বস্তু প্রণালীগুলির গতিশীলতার, একীভূত দৃষ্টিভঙ্গির, ক্রমাগত গভীর স্তরে একত্রিত হয়েছে, পারমাণবিক থেকে সাব-হ্যাড্রোনিক পর্যন্ত গঠনের শৈলী নিয়ে, তাত্ত্বিক পরিশীলন এবং গবেষণামূলক তথ্যের মধ্যে ঐতিহ্যগত শূন্যস্থান বন্ধ করার জন্য এটি পরিকল্পিত। [৪][৫]
আশির দশকে তিনি আপেক্ষিক কোয়ার্ক নকশাগুলির জন্য শক্তিশালী বেটে-সালপেটার পদ্ধতির বিকাশ করেছিলেন এবং মেসন, বেরিয়ন গতিবিদ্যা ও বর্ণালি সফলভাবে অধ্যয়ন করেছেন (অন্যান্যদের সাথে যৌথভাবে)।[৬][৭][৮][৯]
তিনি পর্যালোচনা সহ ২২০ টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন যা থেকে কয়েক হাজারেরও বেশি উদ্ধৃতি নেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য অবদান
[সম্পাদনা]প্রমনা, কারেন্ট সায়েন্স ইত্যাদি বিজ্ঞানমূলক পত্রিকায় সাধারণ ভাবে নিবন্ধ রচনা করে, পাশাপাশি আমন্ত্রিত আলোচনার মাধ্যমে, মিত্র, বৈজ্ঞানিক ধারণার কাঠামোর প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছেন। তিনি "ফিউ বডি সিস্টেম"এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি বই সম্পাদনা করেছিলেন, যার মধ্যে আছে ফিউ-বডি ডাইনামিক্স (নর্থ হল্যান্ড ১৯৭৬); নীলস বোহর এ প্রোফাইল (আইএনএসএ, ১৯৮৫); কোয়ান্টাম ফিল্ড থিয়োরি; ইন্ডিয়া ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অফ ফিজিক্স: দেন অ্যান্ড নাও (পিয়ার্সন এডুকেশন, নিউ দিল্লি, ২০০৮); অ্যান্ড এ মোনোগ্রাফ বেসিক বিল্ডিং ব্লকস (আইএনএসএ, ১৯৮৪)।[১০]
অশোক নাথ মিত্রের রচিত / সম্পাদিত বই
[সম্পাদনা]- পিয়ন-নিউক্লিওন স্ক্যাটারিং অ্যাট হাই এনার্জিস, কর্নেল ইউনিভার্সিটি, ১৯৫৫
- ফিউ বডি ডাইনামিক্স, অশোক এন মিত্র সম্পাদিত, আইভো স্লাস, ভি এস এস ভাসিন এবং ভি কে গুপ্তা, নর্থ-হল্যান্ড, ১৯৭৬
- নীলস বোহর: এ প্রোফাইল, অশোক এন মিত্র সম্পাদিত, এল এস কোঠারি, ভি সিং এবং এস কে ট্রেহান, ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী, নয়াদিল্লি, ১৯৮৫
- কোয়ান্টাম ফিল্ড থিয়োরি: এ টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি প্রোফাইল, আমেরিকান ম্যাথামেটিক্যাল সোসাইটি, ২০০১ আইএসবিএন ৮১-৮৫৯৩১-২৫-৯
- ইন্ডিয়া ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অফ ফিজিক্স: দেন অ্যান্ড নাও, অশোক এন মিত্র সম্পাদিত, পিয়ার্সন এডুকেশন ইন্ডিয়া, ২০০৯ আইএসবিএন ৮১-৩১৭-১৫৭৯-৫.
পুরস্কার এবং সম্মাননা
[সম্পাদনা]- শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার (১৯৬৯).[২]
- ইউজিসির জাতীয় প্রভাষক (১৯৭৩)
- ইউজিসির জাতীয় ফেলো (১৯৭৫–৭৮)
- মেঘনাদ সাহা পুরস্কার (১৯৭৫)
- আইএনএসএ এর এসএন বোস পদক (১৯৮৬)
- ফেলো, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স একাডেমি, নয়াদিল্লি[১১]
- ফেলো, ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস, বেঙ্গালুরু
- ফেলো, জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি (ভারত), এলাহাবাদ
- ফেলো, দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিস (টিডব্লিউএএস), ত্রিয়েস্তে[১২]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- INSA Profile ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে
- Indian Academy of Sciences, Bangaluru, Profile
- Publications Profile on INSPIRE-HEP
- Google Scholar Profile
- Current Science - Living Legends in Indian Physics
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Panchapakesan, Natarajan (২০২২-১২-১৪)। "Remembering Asoke Nath Mitra (1929-2022), theoretical physicist and role model"। frontline.thehindu.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-১২।
- ↑ ক খ "Awardee details: Shanti Swarup Bhatnagar Prize"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ ক খ Panchapakesan, N (১০ জানুয়ারি ২০১৪)। "LIVING LEGENDS IN INDIAN SCIENCE: Asoke Nath Mitra" (পিডিএফ)। Current Science। 106 (1): 106–109। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৪।
- ↑ ক খ "- INSA Profile"। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ - Publications Profile on INSPIRE-HEP
- ↑ Daya Shankar Kulshreshtha, Asoke Nath Mitra, Phys. Rev. D37 (1988) 1268, Phys. Rev. D 38 (1988) 2913 (erratum), PHYS. REV. D37 (1988) 1268-1278 (Null Plane Formulation of Bethe-Salpeter qqq Dynamics: Baryon Mass Spectra)
- ↑ Daya Shankar Kulshreshtha, Asoke Nath Mitra, I. Santhanam, Phys. Rev. D26 (1982) 3131 (Strange Baryon Spectroscopy Through Bethe-Salpeter Approach Under Harmonic Confinement)
- ↑ Asoke Nath Mitra, Daya Shankar Kulshreshtha, Phys. Rev. D26 (1982) 3123-3130 (Bethe-Salpeter Q Anti-Q Dynamics Under Harmonic Confinement)
- ↑ Publications Profile on INSPIRE-HEP
- ↑ "INSA Profile"। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "INSA: Indian Fellow"। Indian National Science Academy। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৪।
- ↑ "Mitra Asoke Nath|TWAS"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৪।