সুনীল দাস (বিপ্লবী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিপ্লবী

সুনীল দাস
জন্ম(১৯০৯-০৬-১২)১২ জুন ১৯০৯
মৃত্যু১৮ এপ্রিল ১৯৯২(1992-04-18) (বয়স ৮২)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯০৯ - ১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭ - ১৯৯২)
মাতৃশিক্ষায়তনজগন্নাথ কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠানসোশ্যাল ওয়েলফেয়ার লিগ (শ্রীসংঘ)
ফরোয়ার্ড ব্লক
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

সুনীল দাস ( ১২ জুন, ১৯০৯ ― ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সংগ্রামী, বিপ্লবী। [১]

জন্ম, শিক্ষা ও পারিবারিক পরিচিতি[সম্পাদনা]

সুনীল দাসের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের বিক্রমপুর-ঢাকার পাইকপাড়ায়। পিতা ছিলেন ঢাকা জেলার শিক্ষাবিভাগের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী নিবারণচন্দ্র দাস। মাতা কিরণবালা দেবী। তাদের তিন পুত্র (অন্য দুজন- অনিলকুমার দাস, জ্যেষ্ঠ ও পরিমল দাস, অনুজ) ও এক কন্যার (লতিকা সেন) মধ্যে সুনীল ছিলেন মধ্যম পুত্র। এঁরা সকলেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জড়িত ছিলেন। অনিলকুমার দাসের জীবনাবসান হয় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন ঢাকা জেলে শারীরিক অত্যাচারে, অনুজ পরিমল পুলিশের হাত থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এবং ভগিনী লতিকা সেন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল কলকাতায় শান্তিমিছিল পরিচালনার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সুনীল দাসের পড়াশোনা শুরু হয় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরে তার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মাতামহ নিখিলনাথ রায়ের তত্ত্বাবধানে। পরে ভরতি হন ঢাকা শহরের প্রাচীন বেসরকারি বিদ্যালয় পোগোজ স্কুলে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশের পর ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। এখান থেকেই আইএসসি ও বিএসসি পাশ করেন। রসায়নশাস্ত্রে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএসসি পাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক বিজ্ঞানী ডঃ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষের অধীনে গবেষণাও শুরু করেছিলেন। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ছাত্রাবস্থাতেই অগ্রজ অনিল দাসের উদ্যোগে সুনীল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার লিগের (পরবর্তীতে - শ্রীসংঘের) সঙ্গে যুক্ত হন এবং তার বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপের সূত্রপাত হয়। প্রসঙ্গত, উল্লেখযোগ্য এই যে অধ্যাপক জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ শ্রীসংঘের সভাপতি ছিলেন। শ্রীসংঘের নেতা তথা সম্পাদক অনিলচন্দ্র রায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী, দেশনেত্রী লীলা নাগের (পরবর্তীতে বিবাহের পর লীলা রায়ের) ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যার চেষ্টার অপরাধে গ্রেফতার হন। পরে মেদিনীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় গ্রেফতার হয়ে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বিনাবিচারে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি থাকেন। মুক্তির পর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীসংঘের নেতা ও সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও একযোগে সুভাষচন্দ্র বসুর ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি মধ্যরাতে সুভাষচন্দ্রের আকস্মিক ভারতত্যাগের পর গ্রেফতারি এড়াতে আত্মগোপন করেন। কিন্তু ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জুনে তিনি গ্রেফতার হন। শেষে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভের পর ফরোয়ার্ড ব্লককে শক্তিশালী করতে তৎপর হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট কলকাতা নোয়াখালী ও ঢাকার দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সক্রিয় হন। দেশপ্রেমিক বাঙালি হিসাবে তিনি ভারতবিভাগ প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশ নেন। শেষে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার পর উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন কাজে যুক্ত হন।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

সুনীল দাস ফরোয়ার্ড ব্লকের সম্পাদক, প্রজা সোশালিস্ট পার্টির সম্পাদক ও সভাপতি, জনতা দলের সহ-সভাপতিও হয়েছিলেন। কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে দিন কাটিয়েছেন।

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে তিনি লেখালেখিও করতেন। লীলা রায় প্রবর্তিত জয়শ্রী পত্রিকায় বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, অর্থনীতি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক লীলা রায় ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত হলে সুনীল দাস আমৃত্যু পত্রিকা সম্পাদনা করেন। [৩] তার রচিত গ্রন্থগুলি হল-

সম্পাদিত গ্রন্থ-
রচিত গ্রন্থ-
  • ভূমি সমস্যা ও কৃষক আন্দোলন
  • বাংলাদেশের বিপ্লব
  • ল্যাঙ্গুয়েজ সেপারেট
  • আসাম হ্যাপেনিংস
  • ফেটফুল পার্টিশন
  • এ প্ল্যান ফর সভরিন বেঙ্গল ইত্যাদি। [১]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

বিপ্লবী সুনীল দাস ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৪৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Revolutionary Sunil Das - Jayasree Patrika (ইংরাজীতে)"। ২০২২-০৩-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০৭ 
  3. "'বিজয়িনী নাই তব ভয়' (কলকাতার কড়চা)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০৭