স্বপ্নলোক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিউ হারমোনি, ইন্ডিয়ানা।

স্বপ্নলোক হলো একটি সম্প্রদায় বা সমাজ যেটি উচ্চমাত্রায় কাঙ্ক্ষিত বা পরিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। একে স্বপ্নরাজ্য, স্বপ্নপুরী, কল্পলোক, কল্পরাজ্য, কল্পস্বর্গ, কল্পভুবন, সব পেয়েছির দেশ, স্বপ্নের দেশ, ইত্যাদি সমার্থক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দিয়ে ডাকা হতে পারে।

সহজ কথায় স্বপ্নলোক বলতে এমন সব চিন্তাচেতনা বা ধ্যানধারণাকে বোঝায় যা শুধু কল্পনা বা স্বপ্নেই সম্ভব, বাস্তবে একেবারেই অসম্ভব।

স্বপ্নলোকের বিপরীত ধারণাটি হল দুঃস্বপ্নলোক

ইংরেজি পরিভাষার ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

স্বপ্নলোকের ইংরেজি পরিভাষা হল "ইউটোপিয়া"। ইংরেজ পণ্ডিত ও রাষ্ট্রপরিচালনাবিদ টমাস মুর ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর লাতিন ভাষায় রচিত ইউটোপিয়া নামক বইয়ের জন্য সর্বপ্রথম এই নামটি গ্রিক থেকে উদ্ভাবন করেন। বইটিতে তিনি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি কাল্পনিক দ্বীপ সম্প্রদায়ের বর্ণনা দেন, যেখানে একটি নিখুঁত সামাজিক, আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। গ্রিক "ওউ" (অর্থাৎ "নয়") এবং "তোপোস" (অর্থাৎ "স্থান") শব্দাংশ দুইটি সংযুক্ত করে সৃষ্ট "ওউতোপোস" শব্দটির ভাবার্থ দাঁড়ায় "যে স্থানের কোনও অস্তিত্ব নেই"। আবার গ্রিক "এউ" (অর্থাৎ "সু") এবং "তোপোস" (অর্থাৎ "স্থান") শব্দাংশ দুইটি সংযুক্ত করে "এউতোপোস" শব্দটির ভাবার্থ হল "সুরম্য স্থান"। কারও কারও মতে, মুরের সৃষ্ট "ইউটোপিয়া" শব্দটি এই দুইটি শব্দকে ভিত্তি করে সৃষ্ট এক ধরনের শব্দের খেলা, কেননা মুরের বইতে বর্ণিত কাম্য সুরম্য স্থানটির আসলে কোনও অস্তিত্ব নেই।[১]

সাহিত্যে "স্বপ্নলোক" ধারণার ব্যবহার[সম্পাদনা]

"ইউটোপিয়া" শব্দটি দিয়ে মূলত কল্পলৌকিক আদর্শ স্থান। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় কোনও উপন্যাস বা দার্শনিক চিন্তাভাবনাসম্পন্ন কোনও রচনাকে যেখানে একটি আদর্শ স্থান বা কল্পলোকের বিবরণ দেয়া হয়। মূল গ্রিক শব্দ:eutopos অর্থ সুরম্য স্থান। এটিকে কল্পভুবন বা কল্পস্বর্গও বলা হয়।[২] আধুনিককালে ইউটোপিয়া বলতে সেই শ্রেণির কথাসাহিত্য বুঝি যা একটি আদর্শ রাষ্ট্র ও জীবনব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে। এর সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত সম্ভবত প্লেটোর রিপাবলিক। পরবর্তীকালের এই প্রকারের রচনায় কখনো কখনো নিছক স্বপ্নকল্পনা প্রশ্রয় পেয়েছে, কখনো কখনো ভবিষ্যতে সামাজিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতির মধ্য দিয়ে নতুন জীবনে যে-উত্তরণ বাস্তবসম্মতভাবে আকাঙ্ক্ষিত তার রূপরেখা আঁকা হয়েছে। এইসব গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সিস বেকনের নিউ আটলান্টিস, এডওয়ার্ড বেলামির লুকিং ব্যাকওয়ার্ড, উইলিয়াম মরিসের নিউজ ফ্রম নোহোয়্যার এবং জেমস হিল্টনের লস্ট হরাইজন[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Chris Baldick (২০০৮), The Oxford Dictionary of Literary Terms (৩য় সংস্করণ), Oxford University Press, পৃষ্ঠা 348 
  2. সুরভী বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্যের শব্দার্থকোষ, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯, কলকাতা, পৃষ্ঠা-৩৬-৩৭
  3. কবীর চৌধুরী, সাহিত্যকোষ, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, অষ্টম মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারি, ২০১২, পৃষ্ঠা-১২৮।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]