মোবাইল গার্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মোবাইল গার্ড (আরবি: طليعة متحركة, Tali'a mutaharikka) হল সিরিয়া বিজয়ের সময় খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বাধীন রাশিদুন সেনাবাহিনীর একটি এলিট অশ্বারোহী বাহিনী। এই বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োজনমাফিক ব্যবহারের জন্য রিজার্ভ রাখা হত।

৬৩৪ সালে আজনাদায়নের যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হওয়ার পর খালিদ তার ইরাকি বাহিনী থেকে ৪,০০০ অশ্বারোহী নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন। আজনাদায়নের পর এই বাহিনীতে ৮,০০০ জন সৈনিক ছিল। প্রাচীন ইতিহাসবিদরা এই বাহিনীকে শানদানকারীদের বাহিনী বলে উল্লেখ করেছেন। ভাল অনুবাদের জন্য ইংরেজিতে একে মোবাইল গার্ড বলা হয়। এই বাহিনীকে খালিদ তার নিজস্ব কমান্ডের আওতায় রাখেন।

লিখিত দলিত অনুসারে দামেস্ক অবরোধের সময় সর্বপ্রথম এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। ইয়ারমুকের যুদ্ধের সময় এদের সর্বোত্তম উপযোগীতা দৃশ্যমান হয়। এই যুদ্ধে খালিদ তার অশ্বারোহী বাহিনীর গুরুত্ব ও সামর্থ্য অনুধাবন করে যুদ্ধের চরম প্রতিকূল অবস্থা ঘুরিয়ে আনতে সমর্থ হন। সৈনিকদেরকে এক পাশ থেকে অন্য পাশ এভাবে বিভিন্ন দিকে চালনা করে তিনি বাইজেন্টাইনদের পরাজিত করতে সক্ষম হন। পরবর্তী বছরগুলোতে এই বাহিনীর দ্রুত আক্রমণ ক্ষমতাকে অগ্রভাগে ব্যবহার করা হত।[১] এটি বিরোধীপক্ষকে দ্রুত ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারত যা বাইজেন্টাইনদের পরাজিত করতে সহায়ক হয়। হাজিরের যুদ্ধে মোবাইল গার্ড বাহিনী বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয় এবং এই যুদ্ধে বাইজেন্টাইনদের একজন সৈনিক জীবিত ছিল না।[২] দ্রুত হামলা করার ক্ষমতার কারণে মুসলিমরা সহজে অল্প ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে সিরিয়া জয় করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে লোহা সেতুর যুদ্ধ অন্যতম। এরপর এন্টিওকের আত্মসমর্পণ করে।

খালিদ বিন ওয়ালিদ মিলিটারি স্টাফদের সংগঠিত করেন। এর পথ ধরে পরবর্তীতে সামরিক ইতিহাসে জেনারেল স্টাফ প্রথা চালু হয়। মূলত গোয়েন্দা অফিসার হিসেবে কাজ করার জন্য তিনি তার লড়াই করা অঞ্চলগুলো যেমন আরব, ইরাক, সিরিয়াফিলিস্তিন থেকে দক্ষ ও বুদ্ধিমান লোকদের সংগ্রহ করেন।[৩] তাদের কাজ ছিল তথ্য সংগ্রহ করা, গুপ্তচরদের সংগঠিত ও কাজ বণ্টন করে এবং খালিদকে হালনাগাদ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত রাখা। এরা সেনা সদরদপ্তরের বদলে তার ব্যক্তিগত স্টাফ ছিলেন এবং তিনি যেখানেই যেতেন তার সাথে তারা থাকতেন। লেভান্ট বিজয়ের পর খলিফা উমর কর্তৃক পদচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল গার্ড বাহিনী প্রায় চার বছর (৬৩৪ - ৬৩৮) খালিদ বিন ওয়ালিদের অধীনে ছিল।[৪]

খালিদের পদচ্যুতির পর এই শক্তিশালী রেজিমেন্টের সমাপ্তি ঘটে। এই বাহিনীর অন্যতম দক্ষ কমান্ডার কাকা ইবনে আমরকে ৬৩৭ সালে কাদিসিয়ার যুদ্ধে পারস্য ফ্রন্টে সাহায্যের জন্য অতিরিক্ত সৈন্য সহকারে পাঠানো হয়। এই যুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই বাহিনীর একটি অংশকে পরবর্তীতে পারস্য অভিযানে পাঠানো হয়। অধিকাংশ সদস্য ৬৩৯ – ৬৪০ এর প্লেগে মারা যায়। এর ফলে সিরিয়ার প্রায় ২৫,০০০ মুসলিম প্রাণ হারায়। এর ফলে বহু অধীনস্থ কমান্ডার যেমন জিরার ইবনে আযওয়ার মৃত্যুবরণ করে। তারা মিসর বিজয়ের সময় আমর ইবনুল আসের বাহিনীর সাথে যোগ দেন। রাশিদুন সেনাবাহিনীতে মোবাইল গার্ড বাহিনী নিঃসন্দেহে সর্বোৎকৃষ্ট অংশ ছিল।[১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sword of Allah: by Lieutenant-General Agha Ibrahim Akram, ISBN 978-0-7101-0104-4
  2. Tabari: Vol. 3, p. 98.
  3. Waqidi: Vol. 2, p. 47.
  4. see:The Dismissal of Khalid from army