কোলার জেলা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কোলার জেলা
ಕೋಲಾರ
কর্ণাটকের জেলা
কোলারে অবস্থিত সোমেশ্বর মন্দির
কোলারে অবস্থিত সোমেশ্বর মন্দির
কর্ণাটক রাজ্যে কোলার জেলার অবস্থান
কর্ণাটক রাজ্যে কোলার জেলার অবস্থান
রাষ্ট্র ভারত
রাজ্যকর্ণাটক
সদরকোলার
আয়তন
 • মোট৪,০১২ বর্গকিমি (১,৫৪৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট১৫,৩৬,৪০১
 • জনঘনত্ব৩৮০/বর্গকিমি (৯৯০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • দাপ্তরিককন্নড়, ইংরাজী
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
যানবাহন নিবন্ধনKA-07, KA-08 (কেএ-০৭, কেএ-০৮)
লিঙ্গানুপাত৯৭৬ / ১০০০
সাক্ষরতা৭৪.৩৯%
লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্রকোলার
বৃষ্টিপাত৭২৪ মিলিমিটার (২৮.৫ ইঞ্চি)
ওয়েবসাইটkolar.nic.in
Kolar district at a glance

কোলার জেলা, হলো দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি জেলা৷ এটি কর্ণাটকের চারটি প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে বেঙ্গালুরু বিভাগের অন্তর্গত৷ প্রশাসনিক জেলাসদরটি কোলার শহরে অবস্থিত৷ এই জেলাটি কর্ণাটকে অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতিসম্পন্ন জেলা৷ জেলাটির উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে চিকবল্লাপুর জেলা, পশ্চিম দিকে রয়েছে বেঙ্গালুরু গ্রামীণ জেলা, উত্তর ও পূর্ব দিকে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিত্তুর জেলা এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে তামিলনাড়ু রাজ্যের কৃষ্ণগিরি জেলা৷

২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর পূর্বতন কোলার জেলা ভেঙে কোলার ও নতুন চিকবল্লাপুর জেলা গঠন করা হয়৷ [১] এখানে কোলার স্বর্ণখনি থাকার দরুণ জেলাটি ভারতের "স্বর্ণভূমি" নামে অধিক পরিচিত৷

স্থানীয়রা অনুমান করে থাকেন কোলার স্বর্ণখনি অঞ্চলে স্বর্ণ ভাণ্ডার এখনো উপস্থিত এবং পার্শ্ববর্তী মুলবাগাল, কোলার, বঙ্গারপেট, মালুর, শ্রীনিবাসপুর তালুকগুলিতেও স্বর্ণভাণ্ডার রয়েছে৷ যদি এই তথ্য রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র সরকার কেউই নিশ্চিত করতে পারেন নি৷

ইতিহাস[সম্পাদনা]

Temple complex with a lawn and a low hedge
কোলারাম্মা মন্দির, কোলার
Three pyramidal temples
দশম শতাব্দীতে নোলম্ব রাজবংশের নির্মীত অবনির রামলিঙ্গেশ্বর মন্দিরসমূহ

কোলার, জায়গাটির নাম বিভিন্ন শিলালিপি ও গ্রন্থে বিভিন্ন নাম পাওয়া যায় যেমন কোলাহল, কুবলাল, কোলাল তবে সর্বাধিক প্রচলিত নামটি হলো কোলাহলপুরা৷ কন্নড় ভাষায় কোলাহলপুরা শব্দটির অর্থ হলো হিংস্র শহর৷ এটি উত্তরের চালুক্য ও দক্ষিণের চোলদের মধ্যে হওয়া একাধিক যুদ্ধের সাক্ষ্যবহন করছে৷ ১০০৪ খ্রিস্টাব্দে চোলরা কোলার দখল করে ও ১১১৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি শাসন করে৷ রাজা বিষ্ণুবর্ধন (১১০৮-১১৪২) চোলদের হাত থেকে গঙ্গাবতীকে মুক্ত করেন এবং তার জয় নিশ্চিত হলে বর্তমান কর্ণাটকের বেলুরুতে চেন্নাকেশব মন্দির নির্মাণ করান৷

কোলারাম্মা মন্দিরসোমেশ্বর মন্দির হলো কোলারের দুটি বিখ্যাত মন্দির৷ দ্বিতীয় শতাব্দীতে দ্রাবিড়ীয় বিমান স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে নির্মিত কোলারাম্মা মন্দিরটি শক্তি তথা শাক্তধর্মের প্রতি সমর্পিত৷ দশম শতাব্দীতে প্রথম রাজেন্দ্র চোল এটির সংস্কার করেন, আবার পঞ্চোদশ শতাব্দীতে বিজয়নগরের রাজারা এটিকে আবার সংস্কার করেন৷ [২][৩] আবার চতুর্দ্দশ শতাব্দীর বিজয়নগর স্থাপত্যের নিদর্শন হলো বর্তমান কোলার সোমেশ্বর মন্দির৷

ফ্রেড গুডউইল কোলারের ইতিহাস পুনরুদ্ধার করেছেন, বেঙ্গালুরুর ওয়েস্লীয় তামিল মিশন ও কোলার স্বর্ণখনির সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট এই ব্যক্তির খোঁজ একাধিক জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছে৷ [৪][৫][৬] বেঙ্গালুরুর থেকে প্রাচীন এই কোলারের ইতিহাস খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর সমসাময়িক৷ পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশের শাসকরা মহীশূর, কোয়েম্বাটুর, সালেম এবং তিরুবনন্তপুরমে নিজ সাম্রাজ্য বিস্তার করে কোলারে তার রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন৷

জনশ্রুতি অনুযায়ী চোল সাম্রাজ্যের অধীনস্থ রাজা শ্রীধর কোরা (রাজত্ব ৯৭০–৯৮৮) দেবী রেণুকার প্রতি মন্দির নির্মাণ করান এবং কোলাহলপুরম শহরটির পত্তন ঘটান৷ বীর চোল, বিক্রম চোল এবং প্রথম রাজেন্দ্র চোল অবনি, মুলবাগিল, সিতিবেটা এবং বিভিন্ন স্থানে শিলালেখ সহ মন্দির নির্মাণ করেন৷ নথি অনুসারে কোলারের শাসক আদিত্য চোল (৮৭১-৯০৭), রাজারাজ চোল এবং প্রথম রাজেন্দ্র চোল প্রত্যেকেই কোলারকে নিকরিলী চোলমণ্ডলম এবং জয়ঙ্কোণ্ডম চোলমণ্ডলম বলে উল্লেখ করেছেন৷ কোলারাম্মা মন্দিরে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের শিলা অনুশাসনও রয়েছে৷ চোল রাজাদের রাজত্বকালে এই অঞ্চলে একাধিক শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়, এগুলির মধ্যে সোমেশ্বর মন্দির, মারিকুপ্পমে অবস্থিত উদ্ধণ্ডেশ্বরী মন্দির, ঊরুগৌমপেটে অবস্থিত ঈশ্বরণ মন্দির এবং মাড়িবল গ্রামে অবস্থিত শিব মন্দির অন্যতম।

১১১৭ খ্রিস্টাব্দে কোলার হৈসল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১২৫৪ খ্রিস্টাব্দে এটি রাজা বীর সোমেশ্বর এর পুত্র রামনাথ এবং তার দুই পুত্রকে অর্পণ করা হয়। ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে হৈসল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং কোলার অঞ্চল বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোলার বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সময়ে কোলারের সোমেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রায় অর্ধ শতাব্দীর জন্য কোলার জায়গীর প্রথার মাধ্যমে মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তী ৭০ বছর এটি মুসলিম শাসনের অধীনস্থ হয়। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে কোলার কাডাপার নবাব এবং হায়দ্রাবাদের নিজাম দ্বারা শাসিত হতো। ১৭৬৮ থেকে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুবছর এই অঞ্চলটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যথাক্রমে মারাঠা এবং হায়দার আলী পুনরায় এই অঞ্চলের অধিকার ফিরে পায়। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে চার্লস কর্নওয়ালিস কোলার অধিগ্রহণ করেন এবং ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি দ্বারা মহীশূর রাজ্যকে এটি ফেরত দেন।

কুলার অঞ্চলের অনুশাসন থেকে এই অঞ্চলে মহাবলী পল্লব এবং বৈদুম্বদের শাসনের কথার উল্লেখ পাওয়া যায়। [৪][৫][৬][৭][৮] বেঞ্জামিন লিউইস রাইস কুলার জেলা থেকে ১,৩৪৭ টি অনুশাসন উদ্ধার করেন, যা তিনি তাঁর এপিগ্রফিয়া কর্ণাটিকা বইটিতে মোট ১০ টি খণ্ডে লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রাপ্ত এই অনুশাসন গুলির মধ্যে ৪২২ টি ছিল তামিল ভাষায়, ২১১ টি ছিল তেলুগু ভাষায় এবং ৭১৪ কি ছিল কন্নড় ভাষায়[৯]

তালুক[সম্পাদনা]

কোলার জেলাতে মোট ছয়টি তালুক রয়েছে সেগুলি হল:

জনতত্ত্ব[সম্পাদনা]

জনসংখ্যা বৃদ্ধি 
আদমশুমারিজনসংখ্যা
১৯০১'৩,৯২,৬৫১
১৯১১৪,২৯,১৯৩৯.৩%
১৯২১৪,৩৬,০৬৬১.৬%
১৯৩১৪,৬৯,৮১১৭.৭%
১৯৪১৫,৫৫,৫৪৫১৮.২%
১৯৫১৬,৫০,৮০৭১৭.১%
১৯৬১৭,২১,৮২২১০.৯%
১৯৭১৮,২৬,৫৬৩১৪.৫%
১৯৮১১০,৪৪,৩৯৪২৬.৪%
১৯৯১১২,১১,৮৫৮১৬.০%
২০০১১৩,৮৭,০৬২১৪.৫%
আনুঃ ২০১১১৫,৭১,৭০০১৩.৩%
উৎস: ইলার ওয়েবসাইট[১০]

২০১১ খ্রিস্টাব্দে ২০১১ ভারতের জনগণনা ভারতের জনগণনা অনুসারে কোলার জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫,৩৬,৪০১ জন,[১১]—যা মোটামুটি ভাবে গ্যাবন রাষ্ট্রের [১২] বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের জনসংখ্যার সমতুল্য। [১৩] ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মোট ৬৪০ টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে এই জেলার স্থান ৩২৪তম। [১১] জেলাটির জনঘনত্ব ৩৮৪ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৯৯০ জন/বর্গমাইল)।[১১] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ অবধি এই জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১১.০৪ শতাংশ। [১১] এখানে প্রতি হাজার পুরুষে নারীর সংখ্যা ৯৭৬ জন।[১১] জেলাটির সর্বমোট সাক্ষরতার হার ৭৪.৩৯ শতাংশ যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮১.৮১ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ৬৬.৮৪ শতাংশ। [১১] জেলাটির ৫১.৫ শতাংশ লোক কন্নড়ভাষী, ২২.৭ শতাংশ লোক তেলুগুভাষী, ১২.৯ শতাংশ লোক উর্দুভাষী, ১১ শতাংশ লোক তামিলভাষী। তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতি সংখ্যা যথাক্রমে ৩০.৩ এবং ৫.১ শতাংশ। [১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "A Handbook of Karnataka - Administration" (পিডিএফ)। Government of Karnataka। পৃষ্ঠা 354, 355। ৮ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১০ 
  2. "A green view"The Hindu। Chennai, India। ১১ মার্চ ২০০৬। ২৩ আগস্ট ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১০ 
  3. "Temples of Karnataka - Kolar"। templenet.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১০ 
  4. Mythic Society (Bangalore, India) (১৯১৮)। The Quarterly Journal of the Mythic Society9–10: iv, 5, 8, 300।  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  5. Goodwill, Fred (১৯১৮)। "Nandidroog"The Quarterly Journal of the Mythic Society9–10: 300। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৪ 
  6. Goodwill, Fred (১৯২১)। "The Religious and Military Story of Nudydurga"। KGF Mining and Metallurgical Society (5)। 
  7. Srikumar, S (২০১৪)। Kolar Gold Field: (Unfolding the Untold) (International সংস্করণ)। Partridge India। পৃষ্ঠা 40–46। আইএসবিএন 9781482815078। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৪ [নিজস্ব উৎস]
  8. Chandrashekar, Gayatri (২০১৫)। Grit and Gold (ইংরেজি ভাষায়)। Partridge Publishing। আইএসবিএন 9781482855845। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৬ 
  9. Rice, Benjamin Lewis (১৯৯৪)। Epigraphia Carnatica: Volume X: Inscriptions in the Kolar District। Mangalore, British India: Department of Archeology, Mysore State। পৃষ্ঠা i। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৫ 
  10. "Kolar district at a glance" (পিডিএফ)। ১২ মার্চ ২০১১ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১০ 
  11. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০ 
  12. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১Gabon 1,576,665 
  13. "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। ৯ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০Hawaii 1,360,301