পাঁচ পীর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পাঁচ পীর বল‌তে পাঁচ জন ধর্মীয় ব‌্যা‌ক্তি‌কে বোঝা‌নো হয়। কা‌রো কা‌রো ধারণা যে, তারা পারস‌্য থে‌কে এ‌সে‌ছিলে, তবে এই পাঁচ পীরের পরিচয় নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারে না। বি‌ভিন্ন স্থা‌নে পাঁচ পী‌রের বি‌ভিন্ন তা‌লিকা পাওয়া বি‌ভিন্ন তা‌লিকা পাওয়া গে‌ছে কিন্তু এ তা‌লিকাগু‌লো‌তে মূলত স্থানীয় পীর‌দের নাম র‌য়ে‌ছে। ত‌বে ‘গাজী মিয়া’র নাম‌টি সকল তা‌লি‌তেই র‌য়ে‌ছে, য‌দিও এই গাজী মিয়া কে তাও জানা সম্ভব হয়‌ নি। যে‌হেত‌ু ধর্মযুদ্ধে মৃত্যু বরণকারীদের শহীদ এবং বিজয়ীদের গাজী বলা হয় এবং গাজী উপাধী সাহসিকতা ও বীরত্বের প্রতীক ছিল, তাই গ্রামের দরিদ্র জনগণ ক্ষমতার প্রতীক হি‌সে‌বে পাঁচ পীরের বন্দনা করত এবং তাঁদের নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনা করত।

‌প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

ইসলা‌মের বিস্তৃতি যত বাড়‌তে থা‌কে মুস‌লিম জনগণ ততই নানা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে আ‌সে, যার কার‌ণে ইসলাম যেমন অন‌্য ধর্মকে প্রভা‌বিত ক‌রে তেম‌নি অন‌্য ধ‌র্মের দ্বারা ইমলা‌ম ধ‌র্মের অনুসারীরাও প্রভা‌বিত হয়। এ‌টি মূলত পীর বা আওলিয়া-দরবেশদের মাধ‌্যমে হয়। এই পাঁচ জন পী‌রের বন্দনা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলার বি‌ভিন্ন অঞ্চ‌লে প্রচ‌লিত হ‌য়ে প‌ড়ে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে, বিশেষ করে সমাজের নিম্নস্তরের জনগণের ম‌ধ্যেই পাঁচ-পীরের বন্দনা প্রচ‌লিত ছিল। পাঁচ পী‌রের বন্দনা কখন থেকে প্রচ‌লিত হয় তা সঠিক ক‌রে কেউ বল‌তে পা‌রে না। গৃহ-দেবতা হিসেবেও মাটির বেদির উপর মানুষের মাথার আদলে এক খন্ড লোহা এবং পাঁচ-পীরের প্রতীক হি‌সে‌বে পাঁচ-আঙ্গুল তা‌দের স্থাপ‌নের মাধ‌্যমে বন্দনা বেদি তৈরি ক‌রে গৃহস্থের বাড়ির কোনো ঘরের উত্তর-পশ্চিম কোণে কাদা মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখা হ‌তো। পূর্ব-বাংলার উপকূলীয় জেলার নাবিকেরা নৌ-যাত্রার পূর্বে আপদ-বিপদ থেকে বাঁচার আশায় পাঁচ পীরের সা‌থে পীর বদরকেও স্মরণ করতেন।

পালাগানে পাঁচ পীরের সঙ্গে পীর বদরকে যুক্ত করা হ‌লেও এই বদর‌ কে তাও কেউ বলতে পা‌রে না। ত‌বে এই পীর বদরকে চট্টগ্রাম বিজয়ের সা‌থে জড়িত পীর বদর শাহ হি‌সে‌বে গণ‌্য কর‌লে ধারণা করা যায় যে, পাঁচ পীরের ধারণা চৌদ্দ শতকের। আবার পরবর্তী সম‌য়েও বদ‌রের না‌মের সা‌থে পাঁচ পী‌রের নাম জ‌ড়িত হ‌য়ে যে‌তে পা‌রে।

পাঁচ পীরের দরগাহ[সম্পাদনা]

সোরারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ভাগলপুর গ্রামে "পাঁচ পীরের দরগাহ" নামক এক‌টি দরগাহও র‌য়ে‌ছে। দরগাহ‌টি তাজমহলের আদলে নির্মিত, তবে দরগাহ‌টি কখন স্থা‌পিত হয় তা কেউ জা‌নে না। দরগাহর পা‌শে এক‌টি মস‌জিদ থাক‌লেও মস‌জিদ‌টির গায়ে নির্মাণের তারিখ সংবলিত কোনো লিপি সংস্থাপিত নেই, তবে ধারণা করা যায় যে, এই দরগাহ এবং মস‌জিদ চতুর্দশ শত‌কে নির্মাণ করা হ‌য়ে‌ছে। দরগাহ এবং মস‌জিদ‌ কোন‌টিই পরবর্তী‌তে সংস্কার করা হয় নি। সেখা‌নে সমজিদ সংলগ্ন কয়েক বিঘা জমি রয়েছে। বর্তমা‌নে সেখা‌নে এক‌টি মাদ্রাসা তৈরি করার প‌রিকল্পনা আ‌ছে।


দরগা‌হটি‌তে মোগল স্থাপত্য কলার অনুপম কারুকাজ লক্ষণীয়।[১] দরগাহ‌টি দেখ‌তে দে‌শি-‌বি‌দে‌শি মানু‌ষেরা ভির জমায়।

পাঁচ পীর মাজার[সম্পাদনা]

"পাঁচ পীর মাজার" না‌মে বাংলা‌দে‌শে বেশ কিছু মাজার আ‌ছে। তার ম‌ধ্যে রাজশাহী বিভা‌গের বগুড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত কাহলু উপ‌জেলায় অব‌স্থিত "পাঁচ পীর মাজার" উ‌ল্লেখযোগ‌্য। এ‌টি কাহলু উপ‌জেলার এক‌টি ঐ‌তিহা‌সিক স্থান। এ‌টি উচু এক‌টি ঢি‌বি বা পাহা‌ড়ের চূড়ার উপর অব‌স্থিত।

সেখ‌া‌নে পাঁচ জন পী‌রের সমা‌ধি আ‌ছে এমন ধারণা করা হয়, তাই স্থান‌টির নাম দেওয়া হ‌য়ে‌ছে পাঁচ পীর এবং মাজারটির নাম একই কার‌ণে পাঁচ পীর মাজার।[২] সম্রাট আকব‌রের শাসনাম‌লে মাজার‌টির এ নাম দ্য়ো হয়। ১৯৫২ সা‌লে এই মাজার এলাকা সমতল করা হয়। স্থানীয়‌দের কাছ থে‌কে জানা যায় যে, মাজার‌ এলাকা সমতল করার দিবাগত রা‌ত্রে সেখানকার একজন বা‌সিন্দা স্ব‌প্নে ভেতর সেই স্থা‌নে পাঁচ জন পী‌রের মাজার দেখ‌তে পান ব‌লে দা‌বি ক‌রেন।

ই‌তিহাস থে‌কে পাওয়া যায় ১৩৩৪ খৃষ্টাব্দে আব্দুল আজিজ (রহঃ) নামক একজন বি‌শিষ্ট ব‌্যক্তি ছি‌ল, যার নেতৃত্বে সাত সদ‌স্যের এক‌টি দল এ‌দে‌শে ইসলাম প্রচা‌রের উ‌দ্দে‌শ্যে আগমন ক‌রেন। প‌রবর্তী সম‌য়ে নুর উদ্দীন ইয়ামিন (রহঃ) এর নেতৃত্বে ০৫ (পাঁচ) সদস্যের একটি দল এ উপ‌জেলায় ইসলাম প্রচার কর‌তে আ‌সে। তারা এ উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামে আশ্রয় নিয়ে ইসলাম প্রচার শুরু ক‌রেন এবং তারা এই উপ‌জেলা‌তেই মৃত‌্যুবরণ ক‌রে‌ছি‌লেন ব‌লে শোনা যায়।

স্থানীয় সূত্র থে‌কে জানা যায় যে, ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দে ইরা‌কের বাগদাদ থেকে পাঁচ পীর আ‌সেন। তা‌দের প্রধান পীরজাদা মোঃ আহমদল্লাহ (রহঃ) প্রথমে মাজারের ১ কি.মি. পশ্চিমে ফকিরপাড়া গ্রামের পাশে দরগাতলার এক‌টি পাকুড় গাছের মাথায় লাল পতাকা লা‌গি‌য়ে তার নি‌চে আস্তানা গড়েন এবং ক‌য়েক‌দিন প‌রে বা‌কি চার জন সেই পতাকা দে‌খে দার সা‌থে একত্রিত হ‌য়ে ইসলাম প্রচার ক‌রেন। ঐ এলাকার তৎকালীন প্রতাপশালী এক জমিদার এ‌তে বাধা প্রদান কর‌লে এলাকার মুসলমানদের সহযোগিতায় জমিদারকে বিতাড়িত করে জ‌মিদা‌রের কাচারী বাড়ী দখল ক‌রে সেখা‌নে ইসলাম প্রচার ক‌রেন। তা‌দের মৃত‌্যুর পর স্থানীয় জনগণ তা‌দের সেই মাজা‌রে কবর দেয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ‌্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সোনারগাঁয়ের পাঁচপীর দরগাহ মসজিদ"যুগাস্তর। ১২ জুলাই ২০১৯। 
  2. "জাতীয় তথ্য বাতায়ন"। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]