ব্যবহারকারী:Azamvai/আহমেদুল হক সিদ্দিকী
আহমেদুল হক সিদ্দিকী ( আহমদ শাহ বাঙ্গালী) | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | {{ }} |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান(১৯৭১ সালের আগে) বাংলাদেশ (স্বাধীন বাংলাদেশ) |
শিক্ষা | বি এ |
পেশা |
|
আদি নিবাস | কক্সবাজার |
পিতা-মাতা |
|
'আহমেদুল হক সিদ্দিকী' (জন্ম: ৫ নভেম্বর, ১৯৪৯) একজন বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও লোকশিল্পী । তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের রচিয়তা। তিনি মুক্তি যুদ্ধকালীন ভারতে বিভিন্ন জনসভার মঞ্চে নিজের গান গেয়ে মুক্তি যোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করে ছিলেন- শুনেন শুনেন বিশ্ববাসি শুনেন বাঙ্লার কাহানী"লও লও শেখ মুজিব লও লও লও সালাম"৷ আরও আছে -""চান মুখে মধু হাসি /দেবাইল্লা বানাইল মোরে সম্পানের মাঝি/ কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধারে সাম্পানওয়ালার ঘর..."" "আর কতকাল সইবেরে বাঙ্গালী " কুতুবদিয়া আঁর বাড়ি ফরি নযাইও "।ওরে সাম্পানওয়ালা তুই আমারে করলি দেওয়ানা...কুতুবদিয়া বন্ধুর বাড়ি বিচ্ছেদের জ্বালা সইতে নারি " জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু কই গেলা লুকাইয়ারে (১৯৭৫)" এমন অনেক জনপ্রিয় গান।।
মুক্তি যুদ্ধ
[সম্পাদনা]১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় আহমেদুল হক সিদ্দিকী স্বরচিত গান দপার ট্যালায় খানের বংশ দেশ ছাড়ি পালাইয়াছে, শেখ মুজিবের মুক্তি তরি উজান চইলাছে গেয়ে ছিলেন। গানটি শুনে মুগ্ধ জনতাকে এতো আনন্দ দিয়ে ছিলেন - তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান তার নাম দিয়ে ছিলেন ' আহমদ শাহ বাঙ্গালী ' তিনি এখনও চট্টগ্রাম ও কুতুবদিয়া অঞ্চলে ' আহমদ শাহ বাঙ্গালী নামেই পরিচিত।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধকালীন কুতুবদিয়া-বাঁশখালীর বিএলএফ কমান্ডার ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরীর নির্দেশে চট্টগ্রাম কাট্টলী থেকে ১১০ জন হিন্দু নারী শিশু নিয়ে নিজের জীবনবাজি রেখে পাক-হানাদার ও তাদের দোসরদের চোখে ফাকি দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে পৌঁছে দেন।ভারতে গিয়ে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি যোদ্ধকালে প্রস্তুতি বাহিনী বা পাক-হানাদার বাহিনীর গোপন তথ্য সংগ্রহের দ্বায়িত্ব পালন করেন।তিনি বিভিন্ন জনসভায় তার স্বরচিত গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন যেমন,
'শুনেন শুনেন বিশ্ববাসী শুনেন বাংলার কাহিনি/ সাত কোটি বাঙ্গালী সবাই মুক্তিবাহিনী।
"উনিশ একাত্তর সালে পচিশে মার্চ রাতে/পাক বাহিনী লেলায় দিল রাজধানী ঢাকাতে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রাখলো না জনপ্রাণী / সাত কোটি বাঙ্গালী আমরা মুক্তি বাহিনী।"
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]এই গীতিকারের শিক্ষা জীবন শুরু হয় গ্রামের বড়ঘোপ কুতুবদিয়া এটাস্ট প্রাইমারি স্কুলে ১৯৫৫ সালে। ১৯৬৬ সালে 'কুতুবদিয়া মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন।রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাঁর গান গাওয়া ও লেখায় বাঁধা আসতো। কিন্তু তিনি সব বাঁধা উপেক্ষা করে চলে যেতেন বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে। ১৯৬৫ সালে ছাত্র অবস্থায় লিখা প্রথম কালজয়ী গান চান মুখে মধুর হাসি... ও ভাই/ দ্যাবাইল্যা বানাইল মোরে সম্পানের মাঝি/ কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধারে সম্পানওয়ালার ঘর এই গানটি। গানের টানে তিনি ১৯৬৫ সালে এসে ছিলেন জামালখান আসকার দীঘির পাড়ে চাচা ছৈয়দুল হুদা ছিদ্দিকীর বাড়িতে, সেখানে থেকেই তৎকালীন পাকিস্থান আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে গানের অডিশনে যোগ দেন। সেই বার তিনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।গান শিক্ষার জন্য যান উস্তাদ রুনু বিশ্বাসের কাছে, তার কাছে দীক্ষিত হয়ে আবার ১৯৬৮ সালে পাকিস্থান, আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে গানের অডিশনে যোগ দিয়ে শিল্পীর খাতায় নাম লেখান।
শিক্ষা ও কর্ম জীবন
[সম্পাদনা]গানের টানে গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে এসে ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে। ১৯৬৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট সমাপ্ত করে একই কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে তিনি বি এ পাশ করে। ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা দ্বেবীদ্বার থানা গোপাল নগর উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি কর্ম জীবন শুরু করেন।এর পর বদলি হয়ে ১৯৮০ সালে মৌলভীবাজার কমলদাহ উচ্চবিদ্যায়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। গান লেখা ও গাওয়ার আসক্তি থেকে ফিরিয়ে সংসার মুখি করার জন্য ১৯৮৩ সালে তার বড় ভাই মাওলানা আজিজুল হক সিদ্দিকী তার প্রতিষ্ঠিত কুতুব আউলিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য করেন।তিনি ১৯৮৭ সালে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন।
সঙ্গীত সাধনা
[সম্পাদনা]সঙ্গীত সাধনা শুরু করেন ছোট থেকে গ্রামের নাটক মঞ্চ ও যাত্রাপালা এবং গানের অনুষ্ঠানে আকৃষ্ট হয়ে।চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ছাত্রাবস্থায় তিনি নিয়মিত গান চর্চা শুরু করেন । ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে গান লেখায় পাকিস্থান সরকার তাকে বিশৃঙ্খলাকারী হিসেব মমলা করে। ১৯৭১ সালে মুক্তি যোদ্ধ শুরু হলে ১৬ই এপ্রিল তিনি ভারত চলে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন।আগরতলা মাশিমতুর হেডকোয়াটারে ১৯ দিন যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন।ভারতের বিভিন্ন জনসভায় নিজের রচিত গান গেয়ে মুক্তি যোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেন। গান গুলোর মধ্যে উল্ল্যেখ যোগ্য হলো 'রক্ত গঙ্গা বইয়া দিল সোনার বাংলায় /দপার ট্যালায়, খানের বংশ দেশ ছেড়ে পালাইছে ' ' শুনেন শুনেন বিশ্ববাসী শুনেন বাংলার কাহিনি' 'লও লও শেখ মুজিব লও লও লও সালাম' 'আর কতকাল সইবেরে বঙ্গালী' আরও অনেক গান। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ডিসি হিল নন্দন কানন শেফালী ঘোষের বাসায় থেকে লিখেছেন অনেক গান। ১৯৭০ সালে কুতুবদিয়ায় সিরাজদৌল্লাহ নাট্য মঞ্চ হয়ে ছিল ওখানে শিল্পী শেফালী ঘোষ তার লেখা গান কুতুবদিয়ায় প্রথম গেয়ে ছিলেন। 'ওরে সম্পানওয়ালা, তুই আমারে করলি দেওয়ানা /কুতুবদিয়া বন্ধু বাড়ি বিচ্ছেদের জ্বালা সইতে নারি ' গানটি। মহেশখালীর আরও একটি গানের অনুষ্ঠানে আব্দুল গফুর হালী ও আহমদ কবির আজাদ শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিল উক্ত অনুষ্ঠানে আবদুল গফুর হালী কে লিখে দিয়ে ছিলেন 'রসিক তেলকাজলা, লাল কোর্তাওয়ালা...দিলি বড় জ্বালারে পাঞ্জাবিওয়ালা' যে গানটির গানের সুর করেন বিখ্যাত গীতিকারও সুরেকার আবদুল গফুর হালী নিজে।