স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের একটি ফুটবল দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত অর্জন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ফুটবল খেলায় অংশ নেয়। এই দলটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামে পরিচিত ছিল।পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি।[১] বর্তমানে ফিলিস্তিন ফুটবল দল এ ধরনের তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করছে।

সূচনাপর্ব[সম্পাদনা]

৭১ সালের জুন মাসে দলটি গঠিত হয়। প্রথম দিকে কয়েকজনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা উল্লেখ করে মুজিবনগর গিয়ে তাতে যোগ দিতে বলা হয়।এ থেকে শুরু হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক রূপকল্প। মুজিবনগরে প্রথমে গিয়ে উপস্থিত হন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, সাইদুর রহমান প্যাটেল, শেখ আশরাফ আলীসহ আলী ইমাম এবং অন্যরা। এরপর সেখান থেকে আকাশবাণীতে (কলকাতা রেডিও) ঘোষণা দেয়া হলো বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত খেলোয়াড়দের মুজিবনগরে রিপোর্ট করার জন্য। ঘোষণার পরে ৪০ জন খেলোয়াড় মুজিবনগর ক্যাম্পে যোগ দেন। সেখান থেকে ৩০ জন বাছাই করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করা হয়। পরে আরো একজনকে অন্তর্ভুক্ত করলে সদস্য সংখ্যা ৩১ হয়। সে দল ২৩ জুলাই মুজিবনগর থেকে নদিয়া পৌঁছে। নদিয়ার ডিসি দীপককানত্ম ঘোষ এবং স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কর্মকর্তারা দলটিকে অভ্যর্থনা জানান। ২৫ জুলাই কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে নদিয়া একাদশের বিপক্ষে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রথম খেলতে নামে। এই দিন মেহেরপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ম্যাচ উপভোগ করতে স্টেডিয়ামে আসে। খেলা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন দলের সদস্যরা। এ সময় জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়। ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। স্বাধীন বাংলা দলের হয়ে প্রথম গোল করেন শাহজাহান। স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর দায়ে পরদিন নদিয়ার ডিসিকে চাকরিচ্যুত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ব্যবহৃত জার্সি ২১ নভেম্বর ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্যে হস্তান্তর করা হয়। [২]

সদস্যবৃন্দ[সম্পাদনা]

৩৪ জন খেলোয়াড়, সাথে ম্যানেজার এবং কোচসহ সর্বমোট ৩৬ জন নিয়ে গড়া ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু[৩][৪][৫] সহঃ অধিনায়ক ছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। ব্যবস্থাপক ছিলেন তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না (পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা) এবং প্রশিক্ষক ছিলেন ননী বসাক। পুরো দলের চিত্রটি নিম্নরূপঃ

খেলোয়াড়রা হলেন:

সাফল্য[সম্পাদনা]

৮ আগস্ট কলকাতার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি মোহনবাগানের খ্যাতনামা ফুটবলার গোষ্ঠ পাল-র নামে গড়া দলের বিপরীতে পরবর্তী ম্যাচ খেলে স্বাধীন বাংলা দল। মূলত মোহনবাগানের খেলোয়াড়রাই এই দলের হয়ে মাঠে নামেন। এভাবে বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৬টি ম্যাচ খেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি ফান্ড সংগ্রহ করা হয়। ম্যাচগুলো থেকে আয়কৃত পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে জমা দেয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর দেশে ফেরেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের ফুটবলকে চাঙ্গা করতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল কাজ করে।এই দলটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে মোট ১২ টি খেলায় জয়লাভ করে এবং ৩.৫ লাখ রুপি (পাঁচ লাখ টাকা) অর্থ জোগাড়ে সমর্থ হয়।[৭]।সর্বশেষ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় মুম্বই তে যেখানে মহারাষ্ট্র ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের খ্যাতনামা সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি[৫]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

এই দলকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ১৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র মুক্তির জন্য ফুটবল। পরিচালক খিজির হায়াত্ খান পরিচালিত চলচ্চিত্র জাগো তৈরির মূল অণুপ্রেরণা এই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। এছাড়া এই দলের থেকে অনুপ্রানিত হয়ে ২০২২ রায়হান রাফির পরিচালনায় দামাল নামে একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে৷[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "তথ্যচিত্র প্রদর্শনী মুক্তির জন্য ফুটবল ও ধরিত্রীর সঙ্গে বসবাস - প্রথম আলো"দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৩-০৮-৩১। ২০২০-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩১ 
  2. "স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জার্সি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে"NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২১ 
  3. http://nation.ittefaq.com/issues/2009/01/06/news0095.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক এ প্রকাশিত সংবাদ
  4. সিটিসেল প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. http://www.thedailystar.net/story.php?nid=70074 ডেইলি স্টার পত্রিকার সংবাদ
  6. ডিসেম্বর ১৪, ২০০৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
  7. দৈনিক ইত্তেফাক এ প্রকাশিত সংবাদ
  8. "দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদ"। ২০১৭-০৫-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩১