বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালস
প্রাক্তন নামবেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক
ধরনসরকারি মালিকানাধীন
শিল্পঔষধনির্মাণ শিল্প, রাসায়নিক শিল্প
পূর্বসূরীবেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্কস (১৮৯২-১৯০১)
প্রতিষ্ঠাকাল১২ এপ্রিল ১৯০১, কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
প্রতিষ্ঠাতাপ্রফুল্ল চন্দ্র রায়
সদরদপ্তর৬, গণেশচন্দ্র এভিনিউ, ,
প্রধান ব্যক্তি
পি এম চন্দ্রাইয়া (এমডি)
পণ্যসমূহগৃহসামগ্রী
ন্যাপথলিন বল
ফিনাইল ইত্যাদি
আয়বৃদ্ধি ₹১০০.৫ crore[১] (২০১৮-১৯)
বৃদ্ধি ₹২৫.২৬ crore[১] (২০১৮-১৯)
মালিকভারত সরকার
কর্মীসংখ্যা
হ্রাস 195[১] (২০১৮-১৯)
বিভাগসমূহ
  • অ্যালুমিনিয়াম সালফেট
  • প্রসাধনী এবং গৃহসামগ্রী
  • ড্রাগ ও ফার্মাসিউটিক্যাল
ওয়েবসাইটbengalchemicals.co.in

বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালস হল প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত  ভারতের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। এখানে গৃহস্থালি সামগ্রী হিসেবে ভারতীয় পণ্য, যেমন নেপথেলিন বল এবং ফিনাইল তৈরি করা হয়। ৬ দশক ধরে অর্থনৈতিক মন্দার পর, বিসিপিএল ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৪ কোটি মার্কিন ডলার লাভ করেছে।[২][৩] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেঙ্গল কেমিক্যাল তৎকালীন ভারত সরকারকে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সামগ্রী সরবরাহ করে।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সূচনাকাল[সম্পাদনা]

বেঙ্গল কেমিক্যালের দ্রাক্ষারিষ্ট ঔষধের বোতল

১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কলকাতার ৯১ আপার সার্কুলার রোডে বাড়ি ভাড়া করে ৭০০ টাকার মূলধন (মার্কিন ডলার ৯.৭০) নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক স্থাপন করেন। প্রফুল্লচন্দ্র বাঙালি তরুণদের মধ্যে উদ্যোগী মনোভাব গড়ার উদ্দেশ্যে এবং ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের চাকরির বিকল্প হিসেবে একটি পৃথক সংস্থা হিসাবে সংস্থাকে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতাযর ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কংগ্রেসের ভেষজ পণ্য উৎপাদনে এই সংস্থা দায়িত্ব নেয়।[৫]

কোম্পানির খ্যাতি বৃদ্ধি পেলে, বিজ্ঞানী রায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কোম্পানির কাছে ২ লক্ষ টাকা (২৮০০ মার্কিন ডলার) অতিরিক্ত মূলধন যোগ করেন। সংস্থাটি একটি লিমিটেড কোম্পানি রূপে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১২ এপ্রিল ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির নামকরণ করা হয় বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস লিমিটেড[৬] ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জন কুমিং বাংলায় শিল্প ও অবস্থানের সম্ভাব্যতার পর্যালোচনা করে লিখেছিলেন যে এই সংস্থাটি ব্যবসায়িক দক্ষতার লক্ষণগুলি দেখায়, যা এই প্রদেশের পুঁজিপতিদের জন্য শেখার বিষয় হওয়া উচিত।

সূচনাকালে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মানিকতলায় একটিমাত্র কারখানা নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যালসের পথচলা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরও তিনটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে পানিহাটিতে, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইতে এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে কারখানা তিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বেঙ্গল কেমিক্যালসের মূল দপ্তর ছিল কলকাতার গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউতে।[৭]

আর্থিক মন্দা ও জাতীয়করণ[সম্পাদনা]

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের মৃত্যুর পর এবং ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেঙ্গল কেমিক্যালস ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর এই সংস্থাটির পরিচালনার দায়িত্ব ভারত সরকার গ্রহণ করে এবং ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর সংস্থাটির জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ থেকে নতুন পাবলিক সেক্টর পরিচালিত সংস্থা চালু হয় এবং নামকরণ করা হয় বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বিসিপিএল)।[৮][৯] জাতীয়করণের পরেও সংস্থাটির বার্ষিক ক্ষতি অব্যাহত থাকায় ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বিসিপিএলকে শিল্প ও আর্থিক পুনর্গঠন কমিটির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।[১০]

আর্থিক লাভ[সম্পাদনা]

দীর্ঘ কয়েকবছর দশক ধরে ক্ষতির মধ্যে দিয়ে চলার পর ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে সংস্থাটি মুনাফায অর্জন করতে সক্ষম হয়।[৯] করোনা মুকাবিলায় বিশ্বজুড়ে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা বেড়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল কমিশন বেঙ্গল কেমিক্যালকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদনের অনুমতি দেয়। এছাড়াও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অনুমতি থাকায় ২০২০ অর্থবর্ষে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় এবং লাভের আলো দেখে।[১১][১২]

বিভাগ[সম্পাদনা]

কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে থাকে-

  • বিভাগ ক - অ্যালুমিনিয়াম সালফেট(অ্যালাম),
  • বিভাগ খ - ড্রাগ এবং ফার্মাসিউটিক্যালস, যেমন- অ্যানালজেসিক ও অ্যান্টিপাইরেটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ড্রাগ, নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ, অ্যান্টি-টিউবারকিউলোসিস ড্রাগ, অ্যান্টিম্যালেরিক ড্রাগ, ভিটামিন প্রস্তুতি অ্যান্টি ভেনাম সিরাম প্রস্তুতি,
  • বিভাগ গ - প্রসাধনী ও গৃহসামগ্রী

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "38th Annual Report 2018-2019" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০ 
  2. "Bengal Chemicals and Pharmaceuticals Ltd. Kolkata company profile, news, and business information | HighBeam Business: Arrive Prepared"web.archive.org। ২০১৪-০৩-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৩ 
  3. "Financial Results 2018-19" (পিডিএফ)Bengal Chemicals & Pharmaceuticals Ltd.। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০ 
  4. কর, যামিনীমোহন (১৯৫৫)। নবভারতের বিজ্ঞান-সাধক। কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট, কলকাতা: গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স। পৃষ্ঠা 22। 
  5. "How India's oldest pharma company smelt success after 6 decades"www.hindustantimes.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৪-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৩ 
  6. "Chemistry of nationalism"www.telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৩ 
  7. bcpladmin। "Our Founder & BCPL History"Bengal Chemicals & Pharmaceuticals Ltd. (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১০ 
  8. bcpladmin। "BCPL Today"Bengal Chemicals & Pharmaceuticals Ltd. (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১০ 
  9. Rakshit, Avishek (২০১৭-০৪-১৩)। "Bengal Chemicals posts profit after 63 years"Business Standard India। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১০ 
  10. "Bengal Chemicals FY19 profit jumps 150% to ₹25 crore"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। Special Correspondent। ২০১৯-০৫-০১। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১০ 
  11. সংবাদদাতা, নিজস্ব। "চাহিদা তুঙ্গে, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরির অনুমতি পেল বেঙ্গল কেমিক্যালস"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১০ 
  12. Gupta, Nikhil; Goswami, Binita (২০২০-০৬-০৮)। "Letter to the Editor: Acharya Prafulla Chandra Ray, Hydroxychloroquine and COVID-19"The Indian Journal of Surgery: 1–2। আইএসএসএন 0972-2068ডিওআই:10.1007/s12262-020-02446-xপিএমআইডি 32837069 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)পিএমসি 7279711অবাধে প্রবেশযোগ্য |pmc= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)