ডাক্তারি ঔষধ
ডাক্তারি ঔষধ (ইংরেজি: Pharmaceutical drug ফার্মাসিউটিক্যাল ড্রাগ) হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত এক প্রকার দ্রব্যবিশেষ যা রোগ নির্ণয়, নিরাময়, চিকিৎসায় ও প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।[১][২] ঔষধি চিকিৎসা (ফার্মাকোথেরাপি) চিকিৎসাক্ষেত্রের এমন একটি অংশ যা তার ক্রমাগত অগ্রগতি ও যথার্থ ব্যবস্থাপনার জন্য যথাক্রমে ঔষধবিজ্ঞান (ফার্মাকোলজি) এবং ঔষধপ্রস্ততি (ফার্মেসি) বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল।
ডাক্তারি ঔষধকে নানাভাগে ভাগ করা যেতে পারে। তার মধ্যে একটি শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি হলো- ভোক্তার ঔষধলভ্যতার ওপর নিয়ন্ত্রণ। এ নিয়ন্ত্রণমাত্রার ওপর নির্ভর করে ড্রাগ দু'রকম হতে পারে-
ব্যবস্থাপত্র-নির্ভর ডাক্তারি ঔষধ যা কিনা একজন ঔষধবিক্রেতা কেবলমাত্র একজন ডাক্তার, ডাক্তারের সহকারী কিংবা একজন যোগ্যতাসম্পন্ন নার্সের দেয়া ব্যবস্থাপত্র বা নির্দেশ সাপেক্ষেই বিক্রয়-বিতরণ করতে পারেন।
সর্বজনলভ্য বা ওভার-দ্য-কাউন্টার ড্রাগঃ (ওটিসি) ডাক্তারি ঔষধ এই ঔষধগুলো একজন ভোক্তা ইচ্ছানুসারে নিজের জন্য কিনতে পারেন অর্থাৎ ভোক্তার নিকট সহজলভ্য।
ঔষধের ধরনের উপর নির্ভর করেও তাকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাসায়নিক পদার্থের অণুর সমন্বয়ে গঠিত সিনথেটিক ড্রাগ এবং বায়োফার্মাসিউটিক্যালস বা জৈবলব্ধ চিকিৎসা উপাদান যেমন- রিকম্বিনেন্ট প্রোটিন, ভ্যাক্সিন বা প্রতিষেধক, চিকিৎসায় ব্যবহৃত রক্ত উপাদান (যেমন- ইনট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন), জিন থেরাপি, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, কোষীয় থেরাপি- বিশেষ করে বর্তমানে বহুল আলোচিত স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি। এছাড়াও কার্যকারিতার ধরন, শরীরে ঔষধ প্রবেশের মাধ্যম, শরীরের কোন অংশে প্রভাব ফেলে ও পরিবর্তন সাধন করে, ভৈষজ প্রভাব প্রভৃতি ভিত্তিতে ঔষধকে নানা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। একটি বিশদ এবং বহুল প্রচলিত শ্রেণিবিন্যাস পন্থা হচ্ছে অ্যানাটমিক্যাল থেরাপিউটিক কেমিক্যাল ক্লাসিফিকেশন সিস্টেমস বা এটিসি সিস্টেম। হু (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) প্রয়োজনীয় ও জরুরি ঔষধের একটি তালিকা সংরক্ষণ করে।
ঔষধের আবিষ্কার ও উন্নয়ন খুবই ব্যয়বহুল ও জটিলতায় ভরপুর বিষয় যার উদ্যোগ ঔষধ কোম্পানি, বিজ্ঞানী ও সরকার নিয়ে থাকেন। কোন কোন ঔষধ বাজারজাত করা হবে, ঔষধসমূহ কীভাবে বাজারজাত করা হবে তা মূলত সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, এমনকি কিছুক্ষেত্রে এখতিয়ার থাকলে ঔষধের দামটিও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ঔষধের দামনির্ধারণ ও নিষ্কাশন নিয়ে সারাবিশ্বে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে।
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]ইউরোপে ডাক্তারি ঔষধকে বলা হয় "মেডিসিনাল প্রোডাক্ট" বা রোগনিরাময়ী দ্রব্য। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এর আইনানুযায়ী,
ক) কোনো দ্রব্য বা দ্রব্যসমষ্টির মানুষের রোগ নিরাময় অথবা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকলে, অথবা
খ) ওষধি, রোগ প্রতিরোধী, বিপাকীয় কার্যকারিতার মাধ্যমে মানুষের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার পুনর্গঠন, সংশোধন এবং পরিবর্তন অথবা রোগ নির্ণয়ের জন্য যদি কোনো পদার্থ বা পদার্থসমষ্টি মানুষকে দেয়া যায় তাহলেই তাকে মেডিসিনাল প্রোডাক্ট বা ঔষধ বলে।
যুক্তরাষ্ট্রে, ড্রাগ হলোঃ
ক) এমন পদার্থ যা ঔষধ প্রস্ততপ্রণালী সংবলিত পুস্তিকা বা নির্দেশনাগ্রন্থ দ্বারা স্বীকৃত। খ) এমন একটি পদার্থ যা রোগের নির্ণয়, নিরাময়, উপশম, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে ব্যবহার করা যাবে। গ) এমন একপ্রকার পদার্থ (খাদ্য ব্যতিরেকে) যা দেহের গঠন অথবা কোনো কার্যকারিতার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। ঘ) এমন একটি পদার্থ যা ঔষধের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হবে কিন্তু কোন যন্ত্র কিংবা যন্ত্রাংশ, যন্ত্র উপাদান ও যন্ত্রানুসঙ্গ হওয়া যাবেনা। ঙ) জৈবিক পদার্থ ও দ্রব্য সমূহও এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের উপরও সাধারণত একই আইন-কানুন ও বিধিমালা ক্রিয়াশীল, তবে তাদের মধ্যে পার্থক্যটা তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায়- এগুলো রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি না হয়ে উৎপাদিত হয় জৈবিক প্রক্রিয়ায়।[৩]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের ড্রাগের ব্যবহার নিয়ে ২০০৫-২০০৬ সালের মধ্যে চালানো সমীক্ষায় দেখা গেছেঃ গড়ে ৭১ বছর বয়সী ২৩৭৭ জন ব্যক্তির মধ্যে শতকরা ৮৪ ভাগ অন্তত একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ, শতকরা ৪৪ ভাগ অন্তত একটি সর্বজনলভ্য ওভার-দ্য-কাউন্টার ড্রাগ এবং শতকরা ৫২ ভাগ মানুষ অন্তত একটি ডায়েটারী সাপ্লিমেন্ট (অতিরিক্ত পুষ্টিবাহী খাদ্যসম্পূরক) নিয়ে থাকেন। ২০১০-১১ সালে চালানো গড়ে ৭১ বছর বয়সী ২২৪৫ জন আমেরিকান বয়োজ্যেষ্ঠের উপর চালানো একইরকম সমীক্ষায় এ সংখ্যা পাওয়া গেছে যথাক্রমে শতকরা ৬৬, ৩৮ ও ৬৪ ভাগ।[৪]
শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]ঔষধ বা ড্রাগের শ্রেণিবিভাগ তার উত্সের ওপর নির্ভরশীল। যেমন-
১) প্রাকৃতিক উত্স থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ: ভেষজ, উদ্ভিজ ও খনিজ উত্স থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ। কিছু কিছু ড্রাগের উত্স সামুদ্রিকও।
২) রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক উত্স থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ: এসকল ড্রাগের কিছু অংশ প্রাকৃতিক ও কিছু অংশ রাসায়নিক উপায়ে তৈরি হয়। যেমন: স্টেরয়েডীয় ড্রাগ।
৩)"' রাসায়নিকভাবে উত্পাদিত ড্রাগ
"'৪)"' প্রাণিজ উত্স থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ: যেমনঃ হরমোন ও এনজাইম বা উত্সেচক।
"'৫)"' অণুজীব উত্স হতে প্রাপ্ত ড্রাগ: যেমনঃ এন্টিবায়োটিক।
"'৬)"' জীবপ্রযুক্তি ও জীনপ্রকৌশলের মাধ্যমে প্রাপ্ত ড্রাগ: যেমনঃ হাইব্রিডোমা টেকনিক।
"'৭)"' তেজস্ক্রিয় বস্তুর মাধ্যমে প্রাপ্ত ড্রাগ
এক ধরনের মুখ্য শ্রেণিবিভাগ হলো- ক্ষুদ্র রাসায়নিক পদার্থের অণুর সমন্বয়ে গঠিত সিনথেটিক ড্রাগ যা রাসায়নিক উপায়ে তৈরি এবং জৈবলব্ধ চিকিৎসা উপাদান যেমন- রিকম্বিনেন্ট প্রোটিন, ভ্যাক্সিন বা প্রতিষেধক, চিকিৎসায় ব্যবহৃত রক্ত উপাদান (যেমন- ইনট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন), জিন থেরাপি, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, কোষীয় থেরাপি- বিশেষ করে বর্তমানে বহুল আলোচিত স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি। ঔষধ বা ড্রাগ তথা রোগ নিরামক তাদের উত্স , কার্যকারিতার ধরন, ওষধি ক্রিয়া ও গুণাগুণ ব্যতীতও অন্য অনেকভাবে নানা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়,"'[৭]"' যেমনঃ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, ঔষধ শরীরে প্রবেশের মাধ্যম বা ধরন, যেই স্থান বা অংশে ক্রিয়াশীল ও পরিবর্তন আনয়নকারী এবং ওষধি তথা চিকিৎসা গুণাগুণ ইত্যাদি। একটি বিশদ এবং বহুল প্রচলিত শ্রেণিবিন্যাস পন্থা হচ্ছে অ্যানাটমিক্যাল থেরাপিউটিক কেমিক্যাল ক্লাসিফিকেশন সিস্টেমস বা এটিসি সিস্টেম। হু (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) প্রয়োজনীয় ও জরুরি ঔষধের একটি তালিকা সংরক্ষণ করে।
বিভিন্ন প্রকার ঔষধের মধ্যে রয়েছে: এন্টিপাইরেটিকস: এগুলো জ্বর (পাইরেক্সিয়া বা পাইরেসিস) কমায়।
এনালজেসিক: এরা বেদনা বা ব্যাথার উপশম করে। (ব্যাথানাশক)
এন্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগ: ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
এন্টিবায়োটিক: জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করে।
এন্টিসেপটিক: পোড়া, কাটা কিংবা ক্ষতের আশেপাশে জীবাণুর বৃদ্ধি বন্ধ করা।
মুড স্ট্যাবিলাইজার্: লিথিয়াম এবং ভ্যালপ্রোমাইড এ কাজ করে।
হরমোন রিপ্লেসমেন্টস: প্রিমারিন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ US Federal Food, Drug, and Cosmetic Act, SEC. 210., (g)(1)(B). Accessed 17 August 2008.
- ↑ Directive 2004/27/EC of the European Parliament and of the Council of 31 March 2004 amending Directive 2001/83/EC on the Community code relating to medicinal products for human use. Article 1. Published 31 March 2004. Accessed 17 August 2008.
- ↑ "Medication Definition & Meaning | Britannica Dictionary"। www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-৩১।
- ↑ Qato DM; Wilder J; Schumm L; Gillet V; Alexander G (১ এপ্রিল ২০১৬)। "Changes in prescription and over-the-counter medication and dietary supplement use among older adults in the united states, 2005 vs 2011"। JAMA Internal Medicine। 176 (4): 473–482। ডিওআই:10.1001/jamainternmed.2015.8581। পিএমআইডি 26998708। পিএমসি 5024734 ।