দারিংবাড়ি
দারিংবাড়ি ଦାରିଙ୍ଗବାଡ଼ି | |
---|---|
শৈল শহর | |
উড়িষ্যায় অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ১৯°৫৪′০০″ উত্তর ৮৪°০৮′০০″ পূর্ব / ১৯.৯° উত্তর ৮৪.১৩৩৩৩৩° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | উড়িষ্যা |
জেলা | কন্ধমাল |
উচ্চতা | ৯১৪.৪ মিটার (৩,০০০.০ ফুট) |
ভাষা | |
সময় অঞ্চল | ভাপ্রস (ইউটিসি+৫:৩০) |
টেলিফোন কোড | +৯১ (০)৬৮৪৯ |
যানবাহন নিবন্ধন | ওডি-১২ |
নিকটবর্তী শহর | ফুলবনী (১০০ কিমি),বালিগুডা (৫০ কিমি) |
দারিংবাড়ি উড়িষ্যা রাজ্যের কন্ধমাল জেলার একটি উল্লেখযোগ্য শৈলশহর, মনোরম আবহাওয়ার আকর্ষণীয় শৈলময় পরিবেশের জন্য একে "উড়িষ্যার কাশ্মীর"[১] বলা হয়ে থাকে। উড়িষ্যার কন্ধমাল জেলায় এই পার্বত্যময় জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৯১৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থান করছে। পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণির বিভিন্ন শৃঙ্গগুলি উঁচুনিচু তরঙ্গায়িত ছন্দে শহরটিকে ঘিরে আছে। অপূর্ব নৈসর্গিক পরিমণ্ডল স্থানটিকে স্বর্গীয় মাধুর্য দান করেছে। এর চতুর্দিকে কোথাও পাইন জঙ্গল, কোথাও নিবিড় শালবন, কফি বাগিচা বা সবুজ উপত্যকা যেন প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে । পাশাপাশি আছে ঘন রেন ফরেস্ট আর বন্য জীবজন্তুর আনাগোনা। শীতের দিনে এখানে যথেষ্ট ঠাণ্ডা পড়ে, এখনও পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নথি অনুযায়ী -0.৫ ডিগ্রী সেণ্টিগ্রেড।[২] শীতের দিনে কোনো কোনো সময় ঘাসের ডগায় বরফ জমে থাকতে দেখা যায়। দারিংবাড়ি একটি ব্লক ও তহসিল হেডকোয়ার্টার ; মোট আয়তন ৭৬৯.৬৮ বর্গ কিমি.। মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৩ ভাগ কন্ধ উপজাতির মানুষ। স্থানীয় কুইভাষায় 'দারিং'- শব্দের অর্থ উপত্যকা, আর 'বাড়ি'- অর্থে ঘর, সেইদিক থেকে 'দারিংবাড়ি' - শব্দের অর্থ হলো- উপত্যকার বাড়ি।
পৌঁছাবার উপায়
[সম্পাদনা]উড়িষ্যা রাজ্যের রাজধানী শহর ভুবনেশ্বর থেকে বাসে ২৫১ কিমি. দূরে দারিংবাড়ি পৌঁছানো যায়, অথবা দারিংবাড়ির নিকটতম রেল স্টেশন গঞ্জাম জেলার ব্রহ্মপুর বা বেরামপুর থেকে সড়ক পথে ১২০ কিমি. দূরের জায়গাটিতে সহজেই পৌঁছান যেতে পারে। এই সুন্দর শৈল শহরটি ফুলবনী থেকে ১০০ কিমি., বালিগুডা থেকে ৫০ কিমি. এবং জি.উদয়গিরি থেকে ৫৮ কিমি. দূরে অবস্থিত।
দারিংবাড়িতে দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- হিল ভিউ পার্ক- এই হিল ভিউ পার্কটি দারিংবাড়ি থেকে মাত্র এক কিমি.দূরে বালিগুডা যাওয়ার পথে অবস্থিত। পার্কের ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমগ্র দারিংবাড়ি এবং তার পারিপার্শ্বিক অঞ্চল দৃশ্যমান।
- কফি বাগিচা- এখানে কফি ও গোলমরিচ বাগান পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ । ৪৫ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত এই বাগিচা উড়িষ্যা সরকারের ভূমিসংরক্ষণ ও বনদপ্তর বিভাগ তত্ত্বাবধান করে থাকে। অসংখ্য রূপালী রঙের ওক গাছে আবৃত বাগানটি আর গোলমরিচ লতাগুলি গাছগুলিকে আশ্রয় করে অদ্ভুত সৌন্দর্য সুষমা রচনা করেছে ।
- মড়ুবান্দা জলপ্রপাত- দারিংবাড়ি থেকে ১৫ কিমি. দূরে বামুনিগাম যাওয়ার পথে ঘন অরণ্যময় পরিবেশে এই সুদৃশ্য জলপ্রপাতটি বর্তমান । স্থানীয় কুইভাষায় 'মড়ু' শব্দের অর্থ ময়ূর আর 'বান্দা' অর্থে পুকুরকে নির্দেশ করে।
- দুলুরি নদী- অপরিমিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পাহাড়ী দুলুরী সুন্দরী বয়ে চলেছে সঙ্গে আছে সুদৃশ্য জলপ্রপাত। পাইন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সশব্দে বয়ে যাওয়ার দুলুরির নৈসর্গিক দৃশ্যময়তা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকের সৌন্দর্য পিয়াসী মনকে থমকে দিতে সক্ষম।
- পুতুদি জলপ্রপাত- এটি উড়িষ্যার অন্যতম জলপ্রপাত, চারিদিক ঘন অরণ্যে আবৃত। দারিংবাড়ি থেকে ১২৫ কিমি.দূরে ফুলবনী ব্লকে এর অবস্থান।
- বেলঘর অভয়ারণ্য- দারিংবাড়ি থেকে ৫০ কিমি. দূরে এই ক্রান্তীয় অরণ্যভুমি নিঃসন্দেহে এখানকার বড় আকর্ষণ। ১৬,১৭৪,৪৬ একর জুড়ে বিস্তৃত এই অরণ্যভূমি যার মধ্যে ৩৮৭৬.৪৪ একর ভূমি চাষযোগ্য আর বাকিটা সংরক্ষিত বনভূমি। গভীর এই অরণ্যে বড় বড় দাঁতাল হাতি সহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর বাস।
- ডোডোবাড়া বা লাভার্স পয়েন্ট- দারিংবাড়ি থেকে ১৯ কিমি. দূরে সদর মহকুমা শহর বালিগুডা যাওয়ার পথে কিরিকুটি নামক গ্রামের নিকট ঘন সবুজ অরণ্যের মাঝে এ স্থানটি অবস্থিত। অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরা স্থানটিকে পাহাড়ীনদীর সশব্দ প্রবাহ আরও আকর্ষণীয় করেছে । স্থানটির কাছাকাছি বেশ কয়েকটি স্বাভাবিক গুহা বিদ্যমান। চাইলে উৎসাহী পর্যটকেরা এখানে পিকনিকের আয়োজন করে সারাটাদিন অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে পারেন।
- এমু ফার্ম- ডোডোবাড়ার কাছেই পর্যটকদের জন্য অপর একটি আকর্ষণ এমু ফার্ম। অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক এই পাখিগুলি তাদের সুস্বাদু মাংসের জন্য সুপরিচিত। বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রকল্পটি অবশ্যই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
- পাইন জঙ্গল- আদিবাসী অধ্যুষিত শহর দারিংবাড়ি থেকে দক্ষিণে ২ কিমি. গেলেই রাস্তার দু-পাশে সবুজ পাইন গাছের সমারোহ। ৭০ এর দশকে উড়িষ্যার বনবিভাগ এই পাইন প্লানটেশন শুরু করে। এই পাইন জঙ্গলের মধ্য দিয়েই সশব্দে ব'য়ে চলেছে দুলুরি নদী ।
- মন্দাসুরে কুঠি- দারিংবাড়ি থেকে ৪২ কিমি. দূরে রাইকিয়া ব্লকে অবস্থিত এই কুঠির দুটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে পারিপার্শ্বিক ঘন অরণ্যশোভিত পর্বতের অনির্বচনীয় শোভা পরিলক্ষিত হয়। পাহাড় জঙ্গলের নীরব সৌন্দর্য উপভোগের এক ঈর্ষনীয় স্থান। বহুক্ষণ অনায়াসেই এখানে বসে প্রাকৃতিক সুধারস পান করে মনে আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরা যায় ।
- ডোকরা কুটিরশিল্প- দারিংবাড়ি থেকে ৬০ কিমি. দূরে বালিগুডা ব্লকের বারাখামা গ্রামে আদিবাসী মানুষদের ডোকরা শিল্পের একটি কেন্দ্র আছে। সরকারী ঋণের সাহায্যে হতদরিদ্র মানুষগুলি মোমের বিভিন্ন প্রকার ছাঁচে পিতল গলিয়ে নানারকম মূর্তি তৈরী করে থাকেন। সুন্দর এই শিল্পকর্মটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। নিঃসন্দেহে বলা যায় ডোকরা শিল্পীদের হাতের এ যাদুকর্ম পর্যটকদের মনে নান্দনিকতার ছোঁয়া দেবে।
- লুদু জলপ্রপাত- দারিংবাড়ি থেকে প্রায় ১৪০ কিমি. দূরে কোটগড় ব্লকে এই সুদৃশ্য জলপ্রপাতটি অবস্থিত। ঘন অরণ্যের মধ্যে এমন একটি জলপ্রপাত সৌন্দর্য পিয়াসী পর্যটকদের মনে অবশ্যই আলোড়ন তুলবে।
- অন্যান্য- এছাড়াও দারিংবাড়ি থেকে ৮২ কিমি. দূরে জলেশপাতা আশ্রম, ৭২ কিমি. দূরে বিরূপাক্ষ মন্দির, ১৪৫ কিমি. দূরে ফুলবনী ব্লকের কাত্রামাল জলপ্রপাত, ৮০ কিমি. দূরে হরভাঙ্গী জলাধার, ১৫ কিমি. দূরে বুঢান পাটা, ২ কিমি. দূরে সাইলেন্স ভ্যালি ও ১১০ কিমি. দূরে তুমুদিবাঁধ ব্লকে বেলঘর অভয়রণ্যের মধ্যে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলে তৈরী কাঠের বাংলো পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Sahoo, Chidananda। "Kashmir of Odisha"। The HIndu। ৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ http://indianexpress.com/article/india/india-others/daringbadi-records-0-5-degree-c-in-odishas-kandhamal-district/