লেজ
লেজ প্রাণীদেহের সবচেয়ে পেছনের অঙ্গ। সাধারণভাবে লেজ বলতে প্রাণীদেহের সাথে সংযুক্ত একটি নমনীয় অভিক্ষেপ বা উপাঙ্গকে বোঝায় যা প্রাণীদেহের একেবারে পেছনে অবস্থিত। স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পাখিদের দেহে লেজ মূলত স্যাক্রাম ও কক্কিক্সের একটি অংশ। লেজ যদিও প্রাথমিকভাবে মেরুদন্ডী প্রাণী একটি বৈশিষ্ট্য, বহু অমেরুদণ্ডী প্রাণী বিদ্যমান যাদের লেজ রয়েছে। বিছে, স্প্রিংটেইল, শামুক ও কয়েক প্রজাতির গুগলির দেহে লেজের মত অভিক্ষেপ রয়েছে। বাংলায় লেজের অনেকগুলো প্রতিশব্দঃ লাঙ্গুল, লেঙ্গুড়, পুচ্ছ ইত্যাদি।
ব্যবহার
[সম্পাদনা]প্রাণীদের জীবনে লেজের গুরুত্ব অপরিসীম। মাছ এবং বেশিরভাগ জলজ প্রাণী তাদের চলাফেরার জন্য লেজের ওপর নির্ভরশীল। পাখিরা ওড়ার সময় ভারসাম্য ও দিক নির্ণয়ের জন্য লেজের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ভূচর প্রাণীরা তাদের লেজ ব্যবহার করে মশা-মাছি তাড়ায়। কয়েক প্রজাতির প্রাণী ভারসাম্য রক্ষার জন্য লেজের উপর নির্ভরশীল, যেমন- বিড়াল, ক্যাঙ্গারু, কাঠঠোকরা ইত্যাদি। অপোসাম আর বহু প্রজাতির বানর ও হনুমানেরা লেজ ব্যবহার করে জিনিসপত্র ধরতে পারে, এমনকি এক ডাল থেকে আরেক ডালে সাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে। এই বিশেষ ধরনের লেজকে বলে গ্রাহী লেজ। ব্যাঙের লেজ ও পাখা তাদের অপরিণত অবস্থায় থাকে কিন্তু এর বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ওই লেজ লুপ্ত হয়ে যায়। যখন লেজ থাকে তখন তা স্থলে ও জলে চলাফেরায় সাহায্য করে। সব সরীসৃপের সুগঠিত লেজ থাকে।
সামাজিক যোগাযোগ এবং সংযোগের ক্ষেত্রেও লেজ বহুল ব্যবহৃত। কিছু প্রজাতির হরিণ লেজ উঁচিয়ে তাদের লেজের উজ্জ্বল নিম্নভাগ দেখিয়ে বিপদ সম্পর্কে দলের অন্য সদস্যদের সতর্ক করে দেয়। কুকুরজাতীয় প্রাণীদের লেজের গতিবিধি দেখে তাদের অনুভূতি ও অভিব্যক্তি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বিড়াল জাতীয় প্রাণীরাও লেজের মাধ্যমে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে। পাখিদের সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও লেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষকরে পুরুষ পাখিরা প্রজনন মৌসুমে তাদের বাহারি লেজ নাচিয়ে স্ত্রী পাখিদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে। বিড়ালগোত্রের প্রাণীরা তাদের লেজের মাধ্যমে সন্তানদের শিকার-বিষয়ক প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়। হাতির বাচ্চারা মায়ের লেজ ধরে ঘুরে বেড়ায়। কাঠবিড়াল যখন শীত ঋতুতে শীত অনুভব করে তখন তাদের ভারি লেজ কম্বলের কাজ করে। সতর্কতাসূচক সঙ্কেতের জন্য খরগোশরা তাদের লেজ ব্যবহার করে।
প্রাণীরা আত্মরক্ষার জন্যও লেজ ব্যবহার করে। বিছেরা তাদের লেজে সংরক্ষিত বিষের মাধ্যমে আত্মরক্ষা করে, কোন কোন সময় শিকারও ধরে। আক্রান্ত হলে ছোট চতুষ্পদ সরীসৃপেরা তাদের লেজ "খসিয়ে" শিকারীদের বিভ্রান্ত করে পালিয়ে যায়। খসে যাওয়া লেজ আবার গজায়, তবে গজানো লেজের রঙ বেশ গাঢ় হয়।
প্রবাদ ও বাগধারায় লেজ
[সম্পাদনা]বাংলাতে লেজ বিষয়ক অসংখ্য প্রবাদ-প্রবচন ও বাগধারা প্রচলিত রয়েছে। যেমন- কুকুরের লেজ সোজা হয় না, বাঘের লেজে কান চুলকানো, লেজ গুটানো, লেজ কাটা, লেজ ধরে টানা ইত্যাদি।
-
বিছের লেজ
-
Oratosquilla oratoria
-
গ্লিপ্টোডন (Glyptodon asper)
-
Longhorn cowfish (Lactoria cornuta)
-
জেব্রা (Equus grevyi)
-
ঘোড়া (Equus ferus caballus)
-
আমেরিকার অ্যালিগেটর (Alligator mississipiensis)
-
জলহস্তি (Hippopotamus amphibius)
-
সিংহ লেজের মাধ্যমে সন্তানদের শিকার-বিষয়ক প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়
-
গিরগিটির খসে পড়া লেজ