সুলতান জেম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুলতান জেম
পিনটুরিকিও (বার্নার্দিনো দি বেটো) কর্তৃক অঙ্কিত সুলতান জেম এর প্রতিকৃতি।
উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান (দাবিদার)
রাজত্ব২৮শে মে, ১৪৮১− ২০শে জুন, ১৪৮১
দ্বিতীয় ভালি আহাদ
রাজত্ব১৪৭৪ – ১৪৮১
কারামানের শাসক
রাজত্ব১৪৭৪ – ১৪৮১
কাস্তামনু'র শাসক
রাজত্ব১৪৬৯ – ১৪৭৪
জন্ম২২শে ডিসেম্বর, ১৪৫৯
এদরিয়ানোপোল প্রাসাদ, এদিরনে, রুমেলিয়া, উসমানীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যু২৫ ফেব্রুয়ারি ১৪৯৫(1495-02-25) (বয়স ৩৫)
কাপুয়া, নেপলস রাজ্য
সমাধি
মুস্তাফার সমাধি, মুরাদিয়ে কমপ্লেক্স, বুরসা, তুরস্ক
দাম্পত্য সঙ্গীগুলশিরিন হাতুন
বংশধরশাহজাদা ওঘুযান
শাহজাদা মুরাদ
গেভারমুলুক সুলতান
আয়শে সুলতান
পূর্ণ নাম
জেম বিন মেহেম্মেদ হান
রাজবংশউসমানীয়
পিতাদ্বিতীয় মেহমেদ
মাতাচিচেক হাতুন
ধর্মইসলাম
তুঘরাসুলতান জেম স্বাক্ষর

সুলতান জেম (২২শে ডিসেম্বর, ১৪৫৯ – ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ১৪৯৫, উচ্চারিত [ˈdʒem sulˈtaːn]; উসমানীয় তুর্কি: جم; তুর্কি: Cem Sultan), যিনি ফরাসীগণ কর্তৃক জেম সুলতান বা জিজিম নামেও পরিচিত, ছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীতে উসমানীয় সিংহাসনের একজন দাবিদার। জেম ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের তৃতীয় পুত্র এবং সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদের সৎভাই এবং এরূপে সুলতান প্রথম সেলিমের সৎচাচা। বায়েজীদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর জেম মামলুকগণ, রোডস দ্বীপের সেন্ট জনের নাইটস হস্পিটালার এবং সর্বশেষ পোপের আশ্রয়ে মিশর এবং ইউরোপে নির্বাসনে চলে যান।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

জেম ১৪৫৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর এদিরনে'তে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ছিলেন চিচেক হাতুন। একজন উসমানীয় রাজপুত্রের (শেহজাদে, শাহজাদা) জন্য নির্দিষ্টকৃত প্রথানুযায়ী, ১৪৬৯ সালে জেম কাস্তামনু প্রদেশের প্রাদেশিক শাসক নিযুক্ত হন। ১৪৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, জেম কোনিয়ার কারামান প্রদেশের শাসক হিসেবে তার মরহুম ভাই শাহজাদা মুস্তাফাকে প্রতিস্থাপিত করেন। [১]

উত্তরাধিকার বিবাদ[সম্পাদনা]

১৪৮১ সালের ৩রা মে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের মৃত্যুকালীন সময়ে বায়েজীদ ছিলেন শিভাস এবং টোকাত প্রদেশের শাসক এবং জেম শাসন করছিলেন কারমান এবং কোনিয়া প্রদেশ।

মেহেদমের পর কোন মনোনীত উত্তরাধিকারী না থাকায়, জেম এবং বায়োজীদের মধ্যে উত্তরাধিকারকে ঘিরে সঙ্ঘাতের সূত্রপাত ঘটে। শরীয়তের বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির দাফন করার ক্ষেত্রে কোনরূপ অহেতুক বিলম্ব করার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, দ্বিতীয় মেহমেদের মরদেহ কনস্টান্টিনোপলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যেখানে দেহটি তিন দিন শায়িত ছিল। তার উজিরে আজম কারামানি মেহমেত পাশা প্রয়াত সুলতানের ইচ্ছা পূরণার্থে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন যাতে করে সুলতানের ছোট ছেলে কোনিয়ার শাসক জেম তার বড় ভাইয়ের পূর্বেই কনস্টান্টিনোপল এসে পৌঁছান এবং সিংহাসন দাবি করতে সক্ষম হন যেখানে তার শাসনস্থল তার ভাই বায়েজীদের শাসনস্থল আমাসিয়া অপেক্ষা রাজধানীর নিকটবর্তী ছিলো।

যাইহোক, বায়েজীদ প্রভাবশালী পাশাগণ (যার মধ্যে দুজন তার জামাতা ছিলেন), জেনেচেরিগণ এবং যারা সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ এবং উজিরে আজমের নীতির বিরুদ্ধাচরণ করতেন তাদের সাথে রাজনৈতিক যোগসূত্র গড়ে তুলেন।

কারামানি মেহমেত পাশার গোপন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সুলতান মেহমেদের মৃত্যু এবং জেমকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা জেনেচেরি বাহিনীর দ্বারা উদঘাটিত হয়ে যায়, যারা জেমের চেয়ে বায়েজীদকে বেশি পছন্দ করতো এবং যাদেরকে সুলতানের মৃত্যুকালীন সময়ে রাজধানীর বাহিরে রাখা হয়েছিলো। ফলস্বরূপ, জেনেচেরি বাহিনী রাজধানীতে প্রবেশ করে বিদ্রোহ করে এবং উজিরে আজম কারামানি মেহমেত পাশাকে নির্বিচারে হত্যা করে।

কারামানি মেহমেত পাশার মৃত্যুর পরে কনস্টান্টিনোপলে জেনেচেরিদের মাঝে ব্যাপক দাঙ্গা শুরু হয়ে যায় যেহেতু সেখানে তদারকির জন্য সুলতান বা উজিরে আজম, কেউ ছিলেন না। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে সাবেক উজিরে আজম ইসহাক পাশা, বায়েজীদকে যেকোনো প্রকারে দ্রুত রাজধানীতে পৌঁছানোর অনুরোধ করেন। ইতোমধ্যে, ইসহাক পাশা, বায়েজীদের এগারো বছর বয়সী ছেলে শাহজাদা কোরকুতকে তার বাবা রাজধানীতে না পৌঁছানো পর্যন্ত রাজপ্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করেন।[২]

১৪৮১ সালের ২১শে মে শাহজাদা বায়েজীদ কনস্টান্টিনোপল এসে পৌঁছান এবং সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ হিসেবে ঘোষিত হন। মাত্র ছয় দিন পরে, জেম ৪,০০০ সৈন্য নিয়ে ইনেগোল শহর কবজা করেন। সুলতান বায়েজীদ তার ভাইকে হত্যা করার জন্য উজির আয়াস পাশার নেতৃত্বে সৈন্য প্রেরণ করেন। ২৮শে মে জেম বায়েজীদের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করে এবং বুরসায় রাজধানী স্থাপন করে নিজেকে আনাতোলিয়ার সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি তার ভাই বায়েজীদের জন্য ইউরোপীয় অংশ রেখে, তার ভাই এবং তার মাঝে সাম্রাজ্য বিভক্ত করার প্রস্তাব করেন। "শাসকদের মধ্যে কোন আত্মীয়তা নেই", এমন ঘোষণা দিয়ে[৩] বায়েজীদ ক্ষিপ্তবৎ ভাবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বুরসা অভিমুখে রওনা করেন। ১৪৮১ সালের ১৯শে জুন উসমানীয় সিংহাসনের এই দুই দাবিদারের মধ্যে ইয়েনিশেহির শহরের নিকটে চূড়ান্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয়। জেম পরাজিত হন এবং তার পরিবারসহ মামলুক কায়রোতে পালিয়ে যান।

কায়রোতে[সম্পাদনা]

মামলুক সুলতান কায়িত বে কায়রোতে জেমকে সম্মানের সহিত অভ্যর্থনা জানান এবং এই সুযোগে জেম মক্কায় গিয়ে হজ পালন করেন। তিনিই একমাত্র উসমানীয় শাহজাদা যিনি হজ পালন করেছেন।[৩]

কায়রোতে জেম তার ভাইয়ের কাছ থেকে একটি চিঠি পান যেখানে সিংহাসনের জন্য লড়াই করা বন্ধ করতে তাকে দশ লক্ষ আকচে'র (উসমানীয় মুদ্রা) প্রস্তাব দেওয়া হয়। জেম প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয় এবং পরবর্তী বছরে তিনি আঙ্কারার সানজাক-বে এবং কারামানের শাসনকারী রাজবংশের উত্তরাধিকারী কাসিম বে'র সমর্থনে আনাতোলিয়ায় একটি অভিযান শুরু করেন। ১৪৮২ সালের ২৭শে মে জেম কোনিয়া অবরোধ করেন কিন্তু শীঘ্রই পরাজিত হয়ে আঙ্কারাতে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। তিনি এসব কিছু ছেড়ে দিতে এবং কায়রো ফিরে যেতে মনস্থির করেছিলেন কিন্তু মিশর যাওয়ার সব রাস্তাই বায়েজীদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলো। তারপর জেম তার ভাইয়ের সাথে পুনরায় ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করেন। বায়েজীদ তাকে জেরুজালেমে শান্তিপূর্ণভাবে থাকার জন্য ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব দেন কিন্তু সাম্রাজ্য বিভাজন করতে অস্বীকৃতি জানান, ১৪৮২ সালের ২৯শে জুলাই জেমকে রোডস এ পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করে।

কারাবাস[সম্পাদনা]

রোডসে এক নৈশভোজে পিয়ারে ডি'আউবুসসান এবং জেম সুলতান(মাঝে)

নাইটস হস্পিটালার[সম্পাদনা]

রোডসে পৌঁছানোর পর, বদ্রুম দূর্গের ফরাসি সেনাধ্যক্ষের কাছে সুরক্ষা চান। দ্বীপটির ল্যাটিন ক্যাথলিক ক্রম সেন্ট জনের নাইটস হস্পিটালারের সর্বপ্রধান গুরু ছিলেন পিয়ারে ডি'আউবুসসান। ২৯শে জুলাই-এ, জেম রোডসে পৌঁছেন এবং সম্মানের সাথে গৃহীত হন। নতুন সুলতান বায়েজীদকে উৎখাতের জন্য, শাহজাদা জেম উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং খ্রিস্টান সমাজের মধ্যে চিরস্থায়ী শান্তিচুক্তি প্রস্তাব করেন যদি কিনা তিনি উসমানীয় সিংহাসনে বসতে পারেন। যাইহোক, পিয়ারে ডি'আউবুসসান বুঝতে পেরেছিলেন যে বায়েজীদের সাথে দ্বন্দ্ব অবিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে, তাই তিনি গোপনে বায়েজীদের কাছে পৌঁছে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন এবং তারপর ১৪৮৩ সালের মার্চ মাসে জেমের বন্দীদশা সম্পর্কিত একটি পৃথক চুক্তিতে পৌঁছেন। ডি'আউবুসসান বায়েজীদের কাছ হতে জেমের ভরণপোষণের জন্য বাৎসরিক ৪০,০০০ দুকাত (এক ধরনের মুদ্রা) প্রদানের বিনিময়ে তাকে আটকে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

তাই নাইটরা এই অর্থ নিয়েছিল এবং জেমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, যিনি এরপরে রোডসের একজন সুব্যবহারপ্রাপ্ত বন্দীতে পরিণত হয়েছিলেন। এর পরে, জেমকে ফ্রান্সে পিয়েরে ডি'আউবুসসানের দুর্গে পাঠানো হয়েছিল।

ফ্রান্স[সম্পাদনা]

পনেরো শতকের শেষের দিকে জেন্টাইল বেলিনি কর্তৃক একটি কাগজে অঙ্কিত জেমের চিত্র।

১৪৮২ সালের ১৭ই অক্টোবর জেম হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে নিসে পৌঁছেন কিন্তু নাইটরা সময়ক্ষেপন করছিল। তাঁর কারাবাস সম্পর্কিত চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে, তিনি জিম্মি হন, পাশাপাশি একটি শক্তিশালী হাতিয়ারেও পরিণত হন। মামলুক সুলতান কায়িত বে, হাঙ্গেরির রাজা ম্যাথিয়াস কোরভিনাস এবং অষ্টম পোপ ইনোসেন্ট সহ কতিপয় ব্যক্তিবর্গ জেমের নাম ও ব্যক্তিত্বকে ব্যবহার করে উসমানীয় রাজ্যে অশান্তি বাড়ানোর অভিপ্রায় করেছিল। অন্যরা ব্যক্তিবর্গ, যেমন: সেন্ট জনের নাইটসরা, ভেনেশীয়রা, নেপলসের রাজা এবং ষষ্ঠ পোপ আলেকজান্ডার ইউরোপে জেমের উপস্থিতিকে খ্রিস্টীয় জগতের বিরুদ্ধে উসমানীয় আগ্রাসনের প্রতিরোধক এবং লাভের সুযোগ হিসেবে দেখছিল। সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ, তার প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থাৎ জেম যে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক ছিল তা নিশ্চিত করার জন্য পশ্চিমাদের কাছে রাষ্ট্রদূত ও গুপ্তচরদের প্রেরণ করেছিলেন, এমনকি তিনি হত্যার মাধ্যমে তাকে নির্মূল করার চেষ্টাও করেছিলেন।[১]

সেভয় ডুশিতে জেম এক বছর কাটান। ফ্রান্সের রাজা ষষ্ঠ লুইস তার ভূখন্ডে একজন মুসলিমকে জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তাই ১৪৮৩ সালের ৩০ শে আগস্ট রাজা ষষ্ঠ লুইসের মৃত্যুর পরে সেন্ট জনের নাইটস জেমকে লিমুজিন (ডি'আউবুসসানের জন্মস্থান)-এ স্থানান্তর করেন। জেম পরবর্তী পাঁচ বছর সেখানে অতিবাহিত করেন, বিশেষত বুর্গেনিয়াফ-এ। তিনি উত্তম ব্যবহারপ্রাপ্ত হয়েছিলেন কিন্তু মূলত একজন বন্দীই ছিলেন (তাকে রাখার জন্য একটি সুরক্ষিত দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। ) জেম যেন রোডসে ফিরে আসেন সেজন্য ডি'আউবুসসানের সাথে এবং ফ্রান্সে তাকে আটকে রাখার জন্য ফ্রান্সের নতুন রাজা অষ্টম চার্লসের প্রতিনিধিগিণের সাথে দ্বিতীয় বায়েজীদ মধ্যস্থতা করেছিলেন। যখন হাঙ্গেরির রাজা এবং অষ্টম পোপ ইনোসেন্ট, ঊভয়ই শাহজাদা জেমের তত্ত্বাবধানের দাবি করেন তখন পোপ পরাজিত হন এবং জেম ১৪৮৯ সালের ১৩ই মার্চ রোমে পৌঁছান।

রোম[সম্পাদনা]

১৪৯২ এবং ১৪৯৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঘোড়ার পিঠে বসা জেম

অষ্টম ইনোসেন্ট মামলুকদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং উসমানীয় বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ চালুর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, কিন্তু এ যুদ্ধের মুলতুবী ঘোষণা করা হয় যখন ১৪৯০ সালের ৬ই এপ্রিল হাঙ্গেরির রাজা ম্যাথিয়াস কোর্ভিনাস মারা যান। এসব কর্মকাণ্ড বায়েজীদকে উদ্বিগ্ন করে তুলে, যিনি ডি'আউবুসসান সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং এছাড়াও ১৪৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে মুস্তাফা বে (পরবর্তীতে উজিরে আজম)-কে রোমে একটি গোপন শান্তিচুক্তি সম্পাদন করতে প্রেরণ করেছিলেন। সুলতান রোডস, রোম বা ভেনিস আক্রমণ না করার পাশাপাশি শাহজাদা জেমের কারাবন্দিত্বের বিনিময়ে পোপকে তার ভরণপোষণের জন্য ভাতা হিসেবে ৪০,০০০ দুকাত(যার মধ্যে ১০,০০০ দুকাত সেন্ট জনের নাইটসের জন্য নির্ধারিত ছিল) প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, জেমের নিকট ফ্রান্সের চেয়ে রোমে জীবনধারণকে অধিক মনোরম মনে হয়েছিল এবং তিনি উসমানীয় সিংহাসন দখলের আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন, তবে তিনি মুসলিম ভূখন্ডে মারা যেতে চেয়েছিলেন। যদিও তাঁর ইচ্ছা আদায় হবে না।[১]

অষ্টম পোপ ইনোসেন্ট উসমানীয়দের বিরুদ্ধে একটি নতুন ধর্মযুদ্ধ শুরু করতে জেমকে ব্যবহারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিলেন।[৪] এছাড়াও পোপ জেমকে খ্রিস্টধর্মে রূপান্তরিত করার অসফল চেষ্টা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও রোমে জেমের উপস্থিতি পোপের জন্য সার্থক ছিল, কারণ যখনই বায়েজিদ বলকানের খ্রিস্টান দেশগুলির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখনই পোপ তার ভাইকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার হুমকি দিতেন।

জেমকে জিম্মিদশায় বজায় রাখার বিনিময়ে বায়েজীদ অষ্টম ইনোসেন্টকে ১,২০,০০০ ক্রাউন (মুদ্রার একক) প্রদান ছাড়াও (যা ঐ সময়ে পোপসংক্রান্ত রাজস্বের অন্যান্য সব বার্ষিক উৎসগুলির সমান) পূতঃ বল্লমের একটি ধ্বংসাবশেষ, একশত মুর ক্রীতদাস এবং ৪৫,০০০ দুকাতের বাৎসরিক ভাতা প্রদান করেছিলেন। সিস্টাইন চ্যাপেলের সাথে যুক্ত বেশিরভাগ ব্যয়ই উসমানীয় মুক্তিপণের তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছিল।[৫]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৪৯৪ সালে, অষ্টম চার্লস নেপলসের রাজত্ব দখল করতে ইতালি আক্রমণ করে এবং তুর্কিদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। তিনি ষষ্ঠ পোপ আলেকজান্ডারকে বাধ্য করেছিলেন জেমকে আত্মসমর্পণ করাতে। তাই জেম ১৪৯৫ সালের ২৮ শে জানুয়ারীতে ফরাসী সেনাবাহিনীর সাথে রোম ছেড়েছিলেন। একই বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি শাহজাদা নেপলসে মৃত্যুবরণ করেন। কতিপয় বিবৃতি তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষ প্রদানকে দায়ী করেছে, তবে সম্ভবত তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

ফ্রান্সের রাজা অষ্টম চার্লসের নেতৃত্বে নেপলস বিজয়ের সামরিক অভিযান চলাকালীন শাহজাদা সুলতান জেম কাপুয়াতে মৃত্যুবরণ করেন। সুলতান বায়েজীদ তিনদিনব্যাপী জাতীয় শোক ঘোষণা করেন। তিনি ইসলামী নিয়মানুযায়ী জানাজার জন্য জেমের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, তবে জেমের মৃত্যুর চার বছর পর তার দেহাবশেষ শেষ পর্যন্ত উসমানীয় ভূখন্ডে নিয়ে আসা হয়ে কারণ জেমের মরদেহ ফেরত সাপেক্ষে আরও স্বর্ণ প্রাপ্তির চেষ্টা করা হয়েছিল। অতঃপর তিনি বুরসায় সমাধিস্থ হন।[৩]

পরিবার[সম্পাদনা]

  • স্ত্রী: গুলশিরিন হাতুন[৬]
  • পুত্র: জেমের দু'জন পুত্রসন্তান ছিলো:
  • কন্যা: জেমের দু'জন কন্যাসন্তান ছিলো:
    • গেভারমুলুক সুলতান,[৯] প্রথমে ১৪৯৬ সালে কায়িত বে'র পুত্র জামাতা সুলতান আন-নাসির মুহাম্মদকে বিয়ে করেন, পরবর্তীতে ১৫০৩ সালে আনাতোলিয়ার বেলারবে জামাতা সিনান পাশাকে বিয়ে করেন;[৮]
    • আয়শে সুলতান,[১০] ১৫০৩ সালে সিনান পাশার ছেলে আওয়ান্নিনার সানজাক-বে জামাতা মেহমেদ বে কে বিয়ে করেন[৯]

সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে চিত্রায়ণ[সম্পাদনা]

সাহিত্যে[সম্পাদনা]

৯০ এর দশকে, লাতিন ভাষার একটি বই জেমের জীবন নিয়ে লেখা হয়েছিল। এটি নাইটস হস্পিটালারের উপাচার্য গিলিয়াম কাউর্সিন দ্বারা চিত্রিত হয়েছিল। বইটি বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় শহরে প্রকাশিত হয়েছিল যাদের মুদ্রণের সক্ষমতা ছিল: ভেনিস, প্যারিস, ব্রুজেস, সালামানকা, উল্‌ম এবং লন্ডন। বইটির অধিকাংশ চিত্র ছিলো পশ্চিম ইউরোপে সর্বপ্রথম তুর্কি জনগণের পোশাক এবং অস্ত্রের সঠিকভাবে বর্ণিত উপস্থাপনা।

হাইতিয় লেখক এবং রাজনৈতিক নির্বাসনপ্রাপ্ত ডেমেসভার ডেলোরমে দ্বারা লিখিত ঐতিহাসিক উপন্যাস-ফ্রান্সেসকা: লেস জিউক্স ডু সর্ট (১৮৭২) এর মূল উপজীব্য ছিলো জেমের বন্দিদশা এবং রাজনৈতিক চক্রান্ত করে তাকে বন্দী করে রাখা সম্পর্কিত একটি বিবৃতি।[১১]

এছাড়াও আইভো এন্ড্রিক রচিত দ্য ডেমড ইয়ার্ড (১৯৫৪) নামক বইয়ের একটি চরিত্রের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় রাজনীতিতে জেম সুলতানের গুরুত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বুলগেরীয় উসমানীয় ইতিহাসবিদ ভেরা মুতাফজিয়েভা জেম সম্পর্কে ১৯৬৭ সালে দ্য জেম কেস নামক একটি উপন্যাস লিখেন। বইটি ঐতিহাসিক নির্ভুলতার জন্য প্রচেষ্টা করে এবং তুর্কি, জার্মান, রুমানীয়, পোলিশ, রুশ, চেক, স্লোভাক, হাঙ্গেরীয়, ফরাসি, এস্তোনীয়, গ্রীক এবং ক্রোয়েশীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল।

চলচ্চিত্রে[সম্পাদনা]

১৯৫১ সালে, ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র জেম সুলতান মুক্তি পেয়েছিল যার প্রধান চরিত্র বেলেন্ট উফুক চিত্রিত করেছিলেন।

১৯৬৯ সালে, মুক্তি পেয়েছে রেমজি জন্তুর্ক পরিচালিত ঐতিহাসিক অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র মালকোচুলু জেম সুলতান মুক্তি পায়, যাতে জেম সুলতানের চরিত্রকে জাহাঙ্গীর গাফফারি চিত্রিত করেছেন।

টেলিভিশন-এ[সম্পাদনা]

  • শোটাইম ধারাবাহিক দ্য বোর্জিয়াস-এ জেম চরিত্রে অভিনয় করেন ব্রিটিশ অভিনেতা ইলিয়াস গাবেল এবং অষ্টম ইনোসেন্ট ইনোসেন্টের উত্তরসূরী ষষ্ঠ পোপ আলেকজান্ডারের পোপ শাসনের অধীনে রোমকে চিত্রিত করা হয়। এছাড়াও জেমকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা এবং ষষ্ঠ আলেকজান্ডারের পুত্র জুয়ান বোর্জিয়ার দ্বারা তাকে হত্যার জন্যও, জেমকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
  • ক্যানাল+ ধারাবাহিক বোর্জিয়াতে জেম চরিত্রে অভিনয় করেন নিকোলাস বেলমোন্টে।
  • এমবিসি ধারাবাহিক কিংডমস অব ফায়ারএ জেম, দ্বিতীয় বায়েজীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তারপর তিনি ক্রুসেডদের কাছে আশ্রয় চান যারা তাকে উসমানীয় সুলতান এর কাছ হতে বার্ষিক ভাতা প্রাপ্তির বিনিময়ে আশ্রয় দিতে সম্মত হয়।

ভিডিও গেম-এ[সম্পাদনা]

  • অ্যাসাসিন'স ক্রিড: রেভেলেশানস নামক ভিডিও গেমে, ইডেনের আপেল ধারণের জন্য জেমকে উল্লেখ করা হয়েছিল, তারপরে তিনি রদ্রিগো বোর্জিয়ার সাথে পরিচিত হয়ে টেম্পলার হয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তাকে অ্যাসাসিনরা হত্যা করেছিল।[১২]

মন্তব্য[সম্পাদনা]

  1. "Cem - Brill Reference"referenceworks.brillonline.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-০৪ 
  2. Finkel, 2006, pp. 81–82.
  3. Freely, John (২০০৪)। Jem Sultan, The adventures of a Captive Turkish Prince in Renaissance Europe। Hammersmith, London: Harper Collins Publishers। পৃষ্ঠা 145। আইএসবিএন 0007150660 
  4. Finkel, 2006, p. 87.
  5. Duffy, 2006, p. 196.
  6. Gök, İlhan (২০১৪)। II. Bâyezîd Dönemi İn‘âmât Defteri ve Ceyb-i Hümayun Masraf Defteri (Thesis)। পৃষ্ঠা 580। 
  7. Cem, Hasan (২০০৪)। Osmanlı tarihinde katledilen şehzadeler। Geçit Kitabevi। পৃষ্ঠা 131। আইএসবিএন 978-9-757-69989-7 
  8. Thuasne, Louis (১৮৯২)। Djem, Sultan, fils de Mohammed II, frère de Bayezid II, (1459–1495) d'après les documents originaux en grande partie inédits: Etude sur la question d'orient à la fin du XVe siècle। Leroux। পৃষ্ঠা 388–9। 
  9. Mustafa Çağatay Uluçay (২০১১)। Padişahların kadınları ve kızları। Ankara, Ötüken। পৃষ্ঠা 50 n. 18, 48 n. 14। 
  10. Güler, Mustafa (২০০২)। Osmanlı Devleti'nde haremeyn vakıfları (XVI-XVII. yüzyıllar)। TATAV। পৃষ্ঠা 132। আইএসবিএন 978-9-756-59610-4 
  11. Delorme, Demesvar. Francesca: Les Jeux du Sort. Paris: E. Dentu, Libraire-Editeur, 1872.
  12. বোডেন, অলিভার (২০১১)। অ্যাসাসিন'স ক্রিড: রেভেলেশানস। পেঙ্গুইন গ্রুপ। পৃষ্ঠা ৮১। আইএসবিএন 978-1-101-57100-2 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও পড়া[সম্পাদনা]

  • Encyclopaedia Iranica, Vol. XIV, Fasc. 6