ম্যাক্স মুলার
ম্যাক্স মুলার | |
---|---|
জন্ম | ফ্রিডরিখ ম্যাক্স মুলার ৬ই ডিসেম্বর, ১৮২৩ ডেসাউ, আন্হাল্ট, প্রুশিয়া |
মৃত্যু | ২৮শে অক্টোবর, ১৯০০ |
শিক্ষা | লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | জার্মান পণ্ডিত |
পরিচিতির কারণ | ভারত বিদ্যাবিশারদ, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, অধ্যাপক, সংস্কৃত ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ জার্মান পণ্ডিত, সমাজতত্ত্ববিদ ও অনুবাদক |
দাম্পত্য সঙ্গী | জর্জিনা অ্যাডিলেড গ্রেনফেল |
সন্তান | ৫টি |
স্বাক্ষর | |
ম্যাক্স মুলার বা ফ্রিডরিখ মাক্স মুলার (জার্মান: Friedrich Max Müller; জন্ম: ৬ই ডিসেম্বর, ১৮২৩ - মৃত্যু: ২৮শে অক্টোবর, ১৯০০) ছিলেন বিখ্যাত ভারতবিশারদ, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, অধ্যাপক, সংস্কৃত ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ জার্মান পণ্ডিত ও অনুবাদক। রুশ দার্শনিক আফ্রিকান আলেকসান্দ্রোভিচ স্পিরের ডেংকেন উন্ট ভির্কলিশকাইট ("চিন্তা ও বাস্তবতা") শিরোনামের লেখা তাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল।[১]
শৈশবকাল
[সম্পাদনা]মুলার ৬ই ডিসেম্বর, ১৮২৩ সালে তৎকালীন প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত আন্হাল্ট রাজ্যের রাজধানী ডেসাউ শহরে (বর্তমানঃ মর্জন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উইলহেম মুলার ছিলেন একজন বিশিষ্ট রোমান্টিক কবি ও গ্রন্থাগারিক। উইলহেম মুলারের কবিতাগুলোকে অস্ট্রিয়ান সুরকার 'ফ্র্যাঞ্জ স্কুবার্ট' 'ডাই স্কুন মুলারিন' এবং 'উইন্টাররিজ' নামের দু'টি গানে সুরারোপ করেন। তার মা এডেদলহেইড মুলার ছিলেন অ্যানহাল্ট-ডেসাউ শহরের মুখ্যমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠা কন্যা। ফেলিক্স মেন্ডেলসন এবং কার্ল মারিয়া ভন ওয়েবার-কে ধর্ম পিতা-মাতা হিসেবে সম্বোধন করতেন ম্যাক্স মুলার। মাত্র চার বছর বয়ঃক্রমকালে পিতার মৃত্যুর পর আর্থিক কৃচ্ছ্রতার মধ্য দিয়ে শৈশবকাল অতিক্রম করতে হয়েছিল তাকে।[২]
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]শৈশবে ম্যাক্স মুলার সঙ্গীতশাস্ত্রে বিশেষ মেধার পরিচয় দিলেও জনৈক শুভানুধ্যায়ীর পরামর্শে জীবিকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঙ্গীতসাধনা পরিত্যাগ করেন। ১৮৩৬ সালে স্থানীয় বিদ্যালয়ের পড়াশোনা সমাপন করেন। ১৮৪১ সালে লিপজিগ নগরে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[২] এরপর লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বিভিন্ন প্রাচীন ইউরোপীয় ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্যে। গ্রীক, ল্যাটিন, আরবী, ফার্সি ইত্যাদি ভাষার সঙ্গে সদ্যস্থাপিত সংস্কৃত ভাষার পাঠ্যক্রমও অধ্যয়ন করেন। ১৮৪৩ সালে বারুখ স্পিনোজা'র দর্শন-চিন্তার উপর লিখিত অভিসন্দর্ভের জন্য 'লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়' থেকে পি.এইচ-ডি বা 'ডক্টর অব ফিলোসোফি' উপাধিপ্রাপ্ত হন।[৩]
সংস্কৃত শিক্ষালাভ
[সম্পাদনা]অনতিকাল পরে ১৮৪৪ সালে ম্যাক্স মুলার তার প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তা ছিল বিষ্ণু শর্মা'র সংস্কৃত ভাষায় রচিত ভারতীয় উপকথার সংগ্রহশালা ও হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদের শেষাংশ হিতোপদেশ গ্রন্থের জার্মান ভাষার অনুবাদ। ঐ বছরই তিনি বার্লিন নগরে চলে আসেন আরো ভালোভাবে সংস্কৃত শিক্ষালাভের জন্য। সেখানে তিনি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবিশারদ অধ্যাপক ফ্রাঞ্জ বোপ্ ও দার্শনিক ফ্রেডরিখ শিলিংয়ের কাছে যথাক্রমে সংস্কৃত এবং দর্শন অধ্যয়ন করেন। তিনি সিলিংয়ের জন্য উপনিষদ অনুবাদ করতে শুরু করেন। সিলিং ভাষার ইতিহাসের সাথে ধর্মের ইতিহাসের সম্পর্ক বিষয়ে মুলারকে যথোপযুক্ত শিক্ষা দেন। এক বছর পর প্যারিস নগরে এসে প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক ইউগেনি বার্নোফের তত্ত্বাবধানে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষালাভ করতে থাকেন। বার্নোফ ইংল্যান্ডে প্রাপ্ত পান্ডুলিপি ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে সংস্কৃত ভাষায় পূর্ণাঙ্গ ঋগ্বেদ প্রকাশের জন্য ব্যাপকভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তার সারাজীবন যে বিষয়ের পঠন-পাঠন ও বিশ্লেষণে অতিবাহিত হবে সেই ঋগ্বেদ চর্চার দিকে তাকে বার্নোফই পরিচালিত করেছিলেন।[২]
হিন্দু ধর্ম
[সম্পাদনা]
প্রাচীনতম ধর্ম হিসেবে হিন্দু ধর্ম বা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের দেব-দেবীর উপর বিশ্বাসের পাশাপাশি খাঁটি একেশ্বরবাদী ধ্যান-ধারণাও বিদ্যমান রয়েছে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে যেহেতু বেশীরভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠীই দেবতাদের পূজা করে থাকেন তাই বাহ্যিক দৃষ্টিকোণে অন্যান্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনেকেরই ধারণা যে হিন্দু ধর্ম হয়তোবা এটি বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম। এ প্রসঙ্গে ম্যাক্স মুলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন,[৪]
“ | আসলে বেদের যে দেবতাতত্ত্ব তাকে বহু ঈশ্বরবাদ হিসেবে আখ্যায়িত না করে বরং এক পরম সত্ত্বায় বহু দেবতার মিলনস্থল বলাই উত্তম। | ” |
ঋগ্বেদ চর্চা
[সম্পাদনা]লন্ডনের ইস্ট ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রাচীন সংস্কৃত সংগ্রহ অনুধাবনের উদ্দেশ্যে প্যারিস থেকে বিলেত চলে আসেন তিনি ১৮৪৬ সালের জুন মাসে। সৃষ্টিশীল লেখনী হিসেবে তার 'জার্মান লাভ' উপন্যাসটি ঐসময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতিবিদ হিসেবে তিনি ব্রিটেনে কর্মজীবন গড়ে তোলেন। এরফলে তিনি ব্রিটিশশাসিত ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে অন্যতম বুদ্ধিজীবী ও ভাষ্যকার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন। এ নেতৃত্বগুণের ফলেই তিনি ব্রিটিশ এবং ভারতের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় বিশেষ করে ব্রাহ্মসমাজের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেছিলেন। এখানে থাকার সময়েই প্রখ্যাত সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হোরেস হেম্যান উইলসন প্রমুখের চেষ্টায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ম্যাক্স মুলার সম্পাদিত ঋগ্বেদ প্রকাশের যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করতে রাজি হয়। এবং সায়নাচার্যের ভাষ্য সহযোগে ঋগ্বেদের একখানি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।[৫] গ্রন্থটি মুদ্রণের ব্যবস্থা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মুদ্রণালয়ে হবার ফলে তিনি ১৮৪৮ সালের মে মাসে লন্ডন থেকে অক্সফোর্ডে চলে আসেন। অতঃপর আমৃত্যু অক্সফোর্ড নগরেই বসবাস করতে থাকেন।[২]
বৈদিক ভাষা হিসেবে সংস্কৃতকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন ভাষা হিসেবে মনে করা হয়। তারপরও মুলার নিজেকে মনেপ্রাণে এ ভাষা শিক্ষায় সমর্পণ করেছেন নতঃশিরে। এবং ঐ সময়েই তিনি নিজেকে সংস্কৃত ভাষায় অন্যতম প্রধান বিদ্যানুরাগী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরফলেই মুলার প্রাচীনকালের হস্ত লিখিত হরফের বৈদিক সাহিত্য হিসেবে ঋগ্বেদের নিগূঢ় রহস্য উন্মোচনে সফল হয়েছিলেন।[৬]
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
[সম্পাদনা]
মুলার ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালী যোগসাধক, দার্শনিক এবং ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের চিন্তাধারা বিশেষ করে 'বেদান্ত দর্শনের' প্রতি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধ হন। তিনি তার প্রচারিত ধর্মীয় চিন্তাধারা ও ভাবধারায় পরিবাহিত হয়ে তাকে ঘিরে অনেকগুলো মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন এবং বই লিখেন।[৭]
প্রতাপচন্দ্র মজুমদার প্রথম ইংরেজিতে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন ১৮৭৯ সালে। থেইস্টিক কোয়ার্টারলি রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত দ্য হিন্দু সেইন্ট নামের রচনাটি তার নজর কাড়ে। এর ফলেই তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন।[৮] ফলশ্রুতিতে মানবতাবাদে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অবদানের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রী অরবিন্দ, লিও তলস্তয় প্রমুখ চিন্তাবিদদের পাশাপাশি তিনিও। পরবর্তীকালে ১৮৯৮ সালে মুলার রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের উপর জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ
[সম্পাদনা]
স্বামী বিবেকানন্দের সাথে কিছু যোগাযোগ ছিল ম্যাক্স মুলারের। ১৮৯৬ সালের মে মাসে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রধান শিষ্য এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময় পিমলিকোতে এক গৃহে অবস্থান করেন। সেখানে মুলার তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।[৯]
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
[সম্পাদনা]১৮৫০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ইউরোপীয় ভাষা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক এবং ১৮৫৪ সালে প্রধান অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। ১৮৫৯ সালে তার 'প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস' গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। উক্ত গ্রন্থের নির্ঘণ্ট প্রস্তুত করে দেন বয়ঃকনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রাচ্যবিদ যোহান জর্জ বুল।[২] ১৮৬০ সালে সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যানের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীতে তিনি ১৮৬৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বীয় বিভাগ পরিবর্তন করে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিভাগে অক্সফোর্ডের ইতিহাসে প্রথম অধ্যাপকরূপে অল সোলস্ কলেজে যোগদান করে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন।[৫]
এছাড়াও, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্রাইস্ট চার্চ কলেজের সদস্য হয়েছিলেন ১৮৫১ সালে। সেখানে তিনি তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা প্রদান করেন।
কীর্তিগাঁথা
[সম্পাদনা]১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৩ সাল পর্যন্ত লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে ভাষাবিজ্ঞান ও তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব চর্চার ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন মুলার। অনুরূপভাবে তিনি তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও তুলনামূলক পুরাণ আলোচনারও পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য হয়ে আছেন। ঋগ্বেদের সম্পাদনা ও ভাষ্য রচনা করে তিনি তার জীবনের অক্ষয় কীর্তি হিসেবে রেখে গেছেন। বৈদিক সাহিত্য বিষয়ে তিনি তার জীবদ্দশায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সমগ্র পৃথিবীতে সমাদৃত হয়ে আছেন।[২]
ম্যাক্স মুলারের সংস্কৃত ভাষা শিক্ষাগ্রহণকাল এমন সময়ে হয়েছিল যখন বিদ্যানুরাগীরা অন্যান্য ভাষা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজ দেশের সাথে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে তৎপর ছিলেন।
প্রাচ্যভাষা ও সাহিত্যে তার গভীর পাণ্ডিত্য বিরাজমান ছিল। ভারতবর্ষের প্রতি তার যে সুগভীর টান বা অনুরাগ ছিল, তা তার কথায় ও রচিত গ্রন্থসমূহে বহুভাবে প্রমাণ করে গেছেন। তিনি ধর্ম এবং ভাষার সমালোচনা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছেন।[৫]
এছাড়াও, তিনি ইংরেজি জাতীয় সঙ্গীতকে সংস্কৃত ভাষায় পদ্যে অনুবাদ বা রূপান্তর করেন।
তবে, ভারতপ্রেমিক এ ক্ষণজন্মা মনীষী তার সুগভীর ভারতপ্রেমের অপরাধে কখনো ভারতবর্ষে পদার্পণ করতে পারেননি। ভারতবর্ষে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক অনুসৃত শাসনপদ্ধতির কড়া সমালোচনা করার ফলেই মূলত আমৃত্যু তাকে এ শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল।[২]
রচনাসমগ্র
[সম্পাদনা]ম্যাক্স মুলার সম্পাদিত ঋগ্বেদের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৪৯ সালে। এর সর্বশেষ ষষ্ঠ খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। ১৮৭৫ সালে 'সেক্রেড বুক অব দি ইস্ট' নামে প্রাচ্যদেশীয় ধর্মপুস্তকের ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থমালা সম্পাদনা ও প্রকাশের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সর্বমোট ৫১-খণ্ডে সমাপ্ত এ গ্রন্থমালার ৪৮-খণ্ড জীবৎকালেই প্রকাশ করে যেতে পেরেছিলেন তিনি। এবং তারই অনুরোধে সুযোগ্য শিষ্য মরিটস্ হিবন্টারনিটস্ এ গ্রন্থমালায় প্রকাশিত যাবতীয় গ্রন্থের মধ্যে আলোচিত নাম ও বিষয়সূচির বিস্তারিত যে নির্ঘণ্ট প্রস্তুত করে দেন তা পরবর্তীতে দু'খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[২] লক্ষ্যণীয় যে, এ গ্রন্থমালার অন্তর্ভুক্ত ৪৯-খণ্ডের মধ্যে -
- ২১টি ছিল বৈদিক-ব্রাহ্মণ ধর্ম সম্পর্কে;
- ১০টি বই ছিল বৌদ্ধ ধর্ম ও সাহিত্য বিষয়ে;
- ২টির বিষয় ছিল জৈন ধর্ম ও সাহিত্য এবং
- অবশিষ্ট খণ্ডসমূহ ছিল পারসিক, ইসলাম ও চৈনিক ধর্মসংক্রান্ত।
১৮৯৪ সালে 'বেদান্ত দর্শন' সম্পর্কে তার কতিপয় বক্তৃতা পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত হয় তার সুবিশাল গ্রন্থ 'সিক্স সিস্টেমস্ অব ইণ্ডিয়ান ফিলোসোফি'।
অন্যান্য রচনা
[সম্পাদনা]তার প্রধান কীর্তির মধ্যে নিম্নলিখিত গ্রন্থাবলি বিবেচিত হয়ে আসছে।[২]
|
|
উপর্যুক্ত সকল গ্রন্থ ইংরেজি ভাষায় রচনা করার মাধ্যমে ম্যাক্স মুলারের ইংরেজি ও প্রাচ্যভাষা জ্ঞানের জ্বলন্ত সাক্ষ্য আজো বহন করছে।[৫]
সম্মাননা
[সম্পাদনা]- প্রুশিয়া ও ইতালি সরকার কর্তৃক 'নাইট' উপাধি প্রদান।
- সুইডেন, ফ্রান্স, বাভেরিয়া ও তুরস্ক সরকার কর্তৃক খেতাব প্রদান।
- ১৮৯২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রাচ্যবিদ্যা সম্মেলনের ৯ম অধিবেশনে সভাপতির পদ অলঙ্কৃতকরণ।
- ১৮৯৬ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক 'প্রিভি কাউন্সিলর' নিযুক্ত।
- ভারতের শিল্প-সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রাখায় গ্যাটে ইন্সটিটিউট, ভারত শাখা 'ম্যাক্স মুলার ভবন' নামে পরিচিত হয়ে আসছে।[১০]
- ১৯৭৪ সালে দ্য স্কলার এক্সট্রাঅর্ডিনারী: দ্য লাইফ অব প্রফেসর দ্য রাইট অনারেবল ফ্রেডরিক ম্যাক্স মুলার, পি.সি. শীর্ষক জীবনী গ্রন্থ রচনা করেন খ্যাতনামা বাঙালি লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নীরদচন্দ্র চৌধুরী।
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]ম্যাক্স মুলার বিবাহিত ছিলেন। তিনি জর্জিনা এডিলেইড নাম্নী এক রমণীর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ১৯১৬ সালে জর্জিনা মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত মুলারের যাবতীয় কাগজপত্র সযত্নে রক্ষণাবেক্ষন করতেন ও যোগাযোগ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতেন। প্রামাণ্য দলিল-পত্রগুলো বর্তমানে অক্সফোর্ডের বোদলিয়ান লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে।[১১] মুলারের একমাত্র সন্তান উইলহেম ম্যাক্স মুলারও ছিলেন প্রতিভাবান বুদ্ধজীবী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচ্যভাষাবিৎ।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]ম্যাক্স মুলার ২৮ অক্টোবর, ১৯০০ইং সালে অক্সফোর্ড নগরে দেহত্যাগ করেন।[৫]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- উপনিষদ্
- রামকৃষ্ণ পরমহংস
- স্বামী বিবেকানন্দ
- নীরদচন্দ্র চৌধুরী
- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Neuchâtel, 1948, p. 231, n. 7.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম (সম্পাদনা), বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ২য় সংস্করণ, ১৯৯৭ইং, পৃঃ ২৪১
- ↑ "গিলফোর্ড লেকচার্স ওয়েবসাইটে মুলারের জীবনী"। ৯ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১১।
- ↑ "শ্রীমদ্ভগবৎ গীতায় কর্মবাদ ও আমরা সনাতনীরা"। ১২ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ সরল বাঙ্গালা অভিধান, সুবলচন্দ্র মিত্র (সম্পাদনা), নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃঃ ১১১৩
- ↑ Müller, এফ. ম্যাক্স, রিগ-বেদা-সংহিতাঃ দ্য সেক্রেড হাইমস্ অব দ্য ব্রাহ্মণস্
- ↑ "বেদান্ত সোসাইটি অব নিউইয়র্কঃ রামকৃষ্ণ"। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১১।
- ↑ Mukherjee, Dr. Jayasree (মে ২০০৪)। "সমকালীন ভারতীয় সমাজে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রভাব"। Prabuddha Bharatha। ২০০৮-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-০৪।
- ↑ Prabhananda 2003, পৃ. 234
- ↑ Deepa A, Chitra (২০০৭-০৫-১৪)। "নতুন পরিচয়ে ম্যাক্স মুলার ভবন"। The Hindu। ২০০৮-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-০৩।
- ↑ বোদলিয়ানে মুলারের সংগ্রহশালা
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Max Müller. (2011). In Encyclopædia Britannica. Retrieved from http://www.britannica.com/EBchecked/topic/396833/Max-Muller
- গুটেনবের্গ প্রকল্পে Friedrich Max Müller-এর সাহিত্যকর্ম ও রচনাবলী (ইংরেজি)
- Online Library of Liberty - Friedrich Max Müller ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ মে ২০১১ তারিখে
- Gifford Lecture Series - Biography - Friedrich Max Müller ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ এপ্রিল ২০১০ তারিখে by Dr Brannon Hancock
- Lourens P. van den Bosch,"Theosophy or Pantheism?: Friedrich Max Müller's Gifford Lectures on Natural Religion": full text of the article
- Vedas and Upanishads
- Vivekananda on Max Müller
- Friedrich Max Müller, The Hymns of the Rigveda, with Sayana's commentary London, 1849-7, 2nd ed. 4 vols., Oxford, 1890-92. PDF format.