চন্দ্রবর্মণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাজা চন্দ্রবর্মণের শিলালিপি, শুশুনিয়া, বাঁকুড়া জেলা

চন্দ্রবর্মণ (খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী) ছিলেন প্রাচীন বঙ্গের পুষ্করণা রাজ্যের একজন রাজা। এই রাজ্যটি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলা থেকে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা পর্যন্ত ভূখণ্ড জুড়ে বিস্তৃত ছিল।[১][২] গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থানের অব্যবহিত পূর্বে এই রাজ্যটি স্থাপিত হয়েছিল এবং এটি পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) সমতট রাজ্যের পশ্চিমে অবস্থিত ছিল।[১]

চন্দ্রবর্মণ ছিলেন রাজা সিংহবর্মণের পুত্র। তিনি তাঁর রাজ্য পূর্ব দিকে অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।[১] ৩১৫ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রবর্মণ প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের সমুদ্রবন্দর ও শাসনকেন্দ্র নব্যাবকাশিকার অঞ্চল জয় করে ৩০ ফুট উঁচু একটি মাটির দুর্গ (“কোট”) নির্মাণ করেন। এই দুর্গপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ছিল ৪.৪৫ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ছিল ৩ কিলোমিটার। দুর্গটি পরিচিত ছিল “চন্দ্রবর্মণ কোট” নামে এবং দুর্গপ্রাচীরের রক্ষকদের বলা হত “কোটপাল”। অধুনা বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কোটালীপাড়া শহরটির নামের উৎপত্তি ঘটে এই “কোট” বা “কোটপালে”র নামানুসারে।[৩]

গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি অনুযায়ী, সমুদ্রগুপ্ত চন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করেছিলেন এবং তারপরেই এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল:[১]

"(এল. ২১.)- (সমুদ্রগুপ্ত,) যিনি রাজকীয় ক্ষমতার প্রাচুর্যে ভূষিত ছিলেন[। সেই ক্ষমতা] বৃদ্ধি পেয়েছিল রুদ্রদেব, মতিল, নাগদত্ত, চন্দ্রবর্মণ, গণপতিনাগ, নাগসেন, অচ্যুতনন্দিন্, বলবর্মণ ও আর্যাবর্তের অন্য অনেক রাজার [রাজ্য] তীব্র আক্রমণে ধ্বংস করে; যিনি অরণ্যরাজ্যসমূহের সকল রাজন্যবর্গকে নিজ দাসে পরিণত করেছিলেন।"

অপরপক্ষে মালোয়ার মন্দসাউরে প্রাপ্ত শিলালিপিতেও চন্দ্রবর্মণের নাম পাওয়া যায়।[২]

চন্দ্রবর্মণের পরাজয় বাংলায় গুপ্ত সার্বভৌমত্বের পথ সুগম করে।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ancient Indian History and Civilization, Sailendra Nath Sen, New Age International, 1999, p.274
  2. A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century, Upinder Singh, Pearson Education India, 2008 p.477
  3. খান, শামসুজ্জামান (জুন ২০১৩)। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : গোপালগঞ্জ। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ২৫। আইএসবিএন 984-07-5316-9