কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রান্সিস ফ্রিথ অঙ্কিত চিত্র (১৮৫০ থেকে ১৮৭০-এর দশকের মধ্যবর্তী সময়)।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সূচিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতের সবচেয়ে পুরনো আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়।[১]

প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। সেই সময় ভারতে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা সচিব ছিলেন ড. ফ্রেডরিক জন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে কলকাতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু প্রথম দিকে সেই প্রস্তাব অনুমোদিত না হওয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। যদিও ১৮৫৪ সালে কলকাতা ও বোম্বাই শহরে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন লাভ করে। উড'স ডেসপ্যাচের মাধ্যমে এই বিষয়ে পদক্ষেপ গৃহীত হয়। ১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণের জন্য একটি ৪১ সদস্যের সেনেট গঠিত হয়। সেই সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকাটি লাহোর (অধুনা পাকিস্তান রাষ্ট্রে) থেকে রেঙ্গুন (অধুনা মায়ানমার রাষ্ট্রে) পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। কোনো ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এটিই ছিল বৃহত্তম এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা।[১]

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ শিক্ষাপ্রাঙ্গনের (কলেজ স্ট্রিট শিক্ষাপ্রাঙ্গন) প্রবেশদ্বার।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর ও ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন যথাক্রমে গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং ও সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস স্যার জেমস উইলিয়াম কোলভিল[২] ১৮৫৮ সালে যদুনাথ বসুবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্নাতক হন। [৩]

প্রশাসন[সম্পাদনা]

১৮৫৮ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কাজ করতে শুরু করে।[৩] সিন্ডিকেটের প্রথম সভাটি আয়োজিত হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সিল রুমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়টি ক্যামাক স্ট্রিটের (অধুনা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি) একটি ভাড়াবাড়িতে শুরু হয়। এরপর কয়েক বছর সেনেট ও সিন্ডিকেটের সভা আয়োজিত হয়েছে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের একটি ঘরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় ২৪৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৫৭ সালের মার্চ মাসে কলকাতা টাউন হলে এই পরীক্ষা আয়োজিত হয়েছিল। ১৮৬২ সালে সেনেট সিদ্ধান্ত নেয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব একটি ভবন নির্মাণ করবে। এরপরই ২,৫২,২২১ টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক সেনেট হলটি নির্মিত হয়। এই হল উদ্বোধন করা হয় ১৮৭৩ সালের ১২ মার্চ।

অনুমোদন[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠার পর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে।

বিশিষ্ট শিক্ষক ও ছাত্র[সম্পাদনা]

১৮৮২ সালে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়চন্দ্রমুখী বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক হন।[৩] বিচারপতি গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হন। তিনিই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় ভাইস চ্যান্সেলর।[২] স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় পরপর চারবার (১৯০৬-১৯১৪) ও পঞ্চমবার দুই বছরের মেয়াদে (১৯২১-২৩) ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। ১৯০২ সালে ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটি কমিশন গঠিত হলে সেনেটের একটি কনস্টিটিউশন কার্যকর হয়। ১৯০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রন্থাগার চালু হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণবিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জগদীশচন্দ্র বসু (১৯০৭ সালে ইউনিভার্সিটি লেকচারার নিযুক্ত হন), প্রফুল্লচন্দ্র রায় (১৯১৬ সালে রসায়নের অধ্যাপক নিযুক্ত হন) সারদাপ্রসন্ন দাস (১৯০০-১৯০১ ও ১৯১৫-১৯৩০ সালের দুটি পৃথক মেয়াদে গণিতের অধ্যাপক নিযুক্ত হন), সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৯১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন), সি. ভি. রামন (১৯১৭ সালে পদার্থবিদ্যার পালিত অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন), মেঘনাদ সাহা (১৯১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন), সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন (১৯২১ সালে দর্শনের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন), অনিলকুমার গুঁই (গণিত ও পরিসংখ্যানবিদ্যার অধ্যাপক) প্রমুখ।[৩] স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা ও গবেষণার একটি কেন্দ্রানুগ ব্যবস্থা চালু হয় ১৯১৭ সালে। ১৯২৬ সালে আশুতোষ ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৯৩৭ সালে আশুতোষ সংগ্রহশালা স্থাপিত হয়। ১৯৪৫ সালে মেঘনাদ সাহার তত্ত্বাবধানে ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স চালু হয়। এটি ছিল ভারতের পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভারতীয় আচার্য হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রচনা চক্রবর্তী (২০১২)। "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. "Genesis and Historical Overview of the University"University and its Campuses। University of Calcutta। ২০০৭-০৩-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-২২ 
  3. "Memorable Events"University and its Campuses। University of Calcutta। ২০০৭-০৩-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-২২