ইসহাক ফরিদী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাওলানা
মুহাম্মদ ইসহাক ফরিদী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম৫ জুন ১৯৫৭
হোগলাকান্দি, গজারিয়া থানা, মুন্সিগঞ্জ জেলা
মৃত্যু৫ জুন ২০০৫(2005-06-05) (বয়স ৪৮)
জাতীয়তা
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
সন্তান
প্রাক্তন শিক্ষার্থীজামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা
ব্যক্তিগত তথ্য
পিতামাতা
  • আব্দুস সালাম সিকদার (পিতা)
  • সাকিনা বেগম (মাতা)
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহ
ঊর্ধ্বতন পদ
এর শিষ্য

ইসহাক ফরিদী (৫ জুন ১৯৫৭ — ৫ জুন ২০০৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত, লেখক ও গবেষক।[১][২][৩][৪][৫][৬] বাংলা সাহিত্যিক আলেম হিসেবে তিনি ৭০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনার করেছেন। তার আলোচিত বইগুলো ছিলো: ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন, ইসলামী রাষ্ট্র ও রাজনীতি, ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বাতিল যুগে যুগে, নবী প্রেমের অমর কাহিনী, উজ্জ্বল একটি নক্ষত্র, সুদ একটি অর্থনৈতিক অভিশাপ, জীবন গঠনে কুরআনের অবদান, ইসমতে আম্বিয়া (উর্দু), সিনেমার কুফল, কওমী মাদরাসা কি কেন? ইত্যাদি।[৭][৮][৯][১০]

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

ইসহাক ফরিদী ১৯৫৭ সালের ৫ জুন মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানাধীন হোগলাকান্দি গ্ৰামে জন্মগ্ৰহণ করেন। তার পিতা আব্দুস সালাম সিকদার ও মাতা সাকিনা বেগম। দীর্ঘ ১৮ বছর নিঃসন্তান জীবন কাটানোর পর তার জন্ম হওয়ায় তার মাতাপিতা ইব্রাহিমসারার ইসলামি কিংবদন্তি স্মরণ করে তার নাম রাখেন ইসহাক। তিনি নিজ গ্ৰাম হোগলাকান্দি জামে মসজিদ মাদ্রাসায় কুরআনুল কারিম হিফজ করেন। হিফজ শেষ করে নারায়ণগঞ্জ জেলার দেওভোগ এবং ঢাকার জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় প্রথম কয়েকটি ক্লাস অধ্যয়ন করেন। এরপর কাফিয়া শরহেজামি শরহেবেকায়া হেদায়া ও জালালাইন জামাত পড়েছেন ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদে। বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর অধীনে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় শরহেবেকায়া জামাতে তিনি সারাদেশে ২য় স্থান অর্জন করেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর অধীনে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসা থেকে ১৯৮৩ সালে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধা তালিকায় ৩য় স্থান অর্জন করেন।[১১][১২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কুমিল্লায় শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি যখন কাসিমুল উলুম মাদ্রাসায় গমন করেন তখন তা ছিল কাফিয়া জামাতে সীমাবদ্ধ। এক বছরেই সেটাকে দাওরা হাদীসে উন্নীত করেন। এখানে তার চেতনা যোগ্যতা সমকালিন বিষয়ে সচেতনতা আদর্শিক প্রেরণা এবং মননশীলতার বিকাশ ঘটে। তিনি শিক্ষাদানে বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে নিজ এলাকায় রওযাতুল উলূম কাউনিয়াকান্দি মাদরাসা, পীরজঙ্গি মাদরাসা, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা এবং সর্বশেষ চৌধুরী পাড়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। কর্মজীবনে তিনি কিছু দিন ঢাকার শাহজাহানপুরের ঝিলমসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি মিফতাহুল উলূম মধ্যবাড্ডা, দেওভোগ ও চৌধুরী পাড়া মাদরাসার শায়খুল হাদীস ছিলেন। তিনি অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসার তত্ত্বাবধান করতেন। তিনি কলিমউল্লাহ কওমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা বর্তমানে ইসহাক ফরিদী রহ. কমপ্লেক্স নামে চলমান।[১২]

সাহিত্যচর্চা[সম্পাদনা]

কাফিয়া শরহে বেকায়ার ছাত্র থাকাকালে বাংলাসাহিত্যে আলেমদের পশ্চাদপরতা দেখে তিনি বাংলার সাহিত্য নিয়ে সচেষ্ট হোন। শিক্ষকতাকালে কিছুসংখ্যক ছাত্র গড়ে তুলেন। তিনি সত্তরেরও অধিক বই রচনা অনুবাদ ও সম্পাদনার কাজ করেছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লেখক গবেষক ও সম্পাদক ছিলেন। তার লেখার মধ্যে রয়েছে কুরআন, হাদীস, ফেকাহ, সংস্কৃতি, দাওয়াত, দাঈ, ইতিহাস, আধ্যাত্ম্য, জীবনী, রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যাংকিং, সামাজিক জীবনসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রমাণ্যগ্রন্থ।[১২]

সংগঠন[সম্পাদনা]

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর খেলাফত আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার সভাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। একুশ শতকের প্রারম্ভে গঠিত ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির তিনি যুগ্মমহাসচিব ছিলেন। পরবর্তীতে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা হন।

ছাত্রাবস্থায় তিনি ইসলামী ছাত্র ঐক্য পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীতে সাহিত্য সংগঠন ‘লাজনাতুত ত্বলাবা'-তে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। উনিশশ সাতানব্বই সালে তিনি আসআদ মাদানীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সেবামূলক সংগঠন ইসলাহুল মুসলিমীনের যুগ্মমহাসচিব হন। নিজ এলাকার আলেমদের নিয়ে হেফাজতে মুসলিমীন পরিষদ গঠন করেন।

তিনি আসআদ মাদানীর হাতে প্রথমে বায়আত গ্রহন করেন। এরপর তিনো জমিরুদ্দিন নানুপুরির হাতে বায়আত গ্রহন ও তার থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি জমিরুদ্দিন নানুপুরির কাছ থেকে খেলাফত লাভের কিছুদিন পর ২০০৫ সালের ৫ জুন তার সর্বশেষ লিখিত ‘ইহসান তাওউফ ও আত্মশুদ্ধি’ গ্রন্থটি নিয়ে নানুপুরির কাছে যাওয়ার পথিমধ্যে চট্রগ্রামে রোডএক্সিডেন্টে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে গজারিয়া কাউনিয়াকান্দি বাগে জান্নাত মসজিদের মাকবারায় সমাহিত করা হয়।[১২][১৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মূসা, মুহাম্মদ (২০০৫)। ইসহাক ফরিদীইসলামী বিশ্বকোষ। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৬৯২–৬৯৩। আইএসবিএন 984-06-0955-6 
  2. এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। (ইসহাক ফরিদী)বাংলার শত আলেমের জীবনকথাবাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ২২২—২৩৩। আইএসবিএন 9847016800481। ৩১ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  3. আশরাফ, জুবাইর আহমদ (২০২১)। স্মরণীয় মনীষী। ঢাকা: চেতনা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৯১–১৯৯। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  4. হাবিবুর রহমান, মুহাম্মদ (২০০৯)। আমরা যাদের উত্তরসূরী (শতাধিক পীর-মাশায়েখ ও উলামায়ে কেরাম এর জীবন ও কর্ম)। ঢাকা, বাংলাদেশ: আর কাউসার প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৪১০–৪১২। ৩১ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  5. মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী, মুফতী (২০১৫)। বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন (৩য় সংস্করণ)। ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ৮৫। আইএসবিএন 98483916605। ১২ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  6. উল্লাহ, মুহাম্মদ আহসান (২০২১)। বাংলা ভাষায় হাদিস চর্চা (১৯৫২-২০১৫) (পিএইচডি)। বাংলাদেশ: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৪০৩। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. তাশফিন, সাআদ (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। "সাংবাদিকতা ও বাংলা ভাষাচর্চায় আলেমসমাজ"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২৬ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  8. কাদির, মাসউদুল (১১ নভেম্বর ২০২০)। "লেখালেখির অসাধারণ প্রতিভা ইসহাক ফরিদী রহ."দৈনিক আমার বার্তা। ২০২২-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৫ 
  9. মুহাম্মদ সায়েম, আবু সাঈদ (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। "আল্লামা ইসহাক ফরিদী রহ: একজন আদর্শ মানুষ"দৈনিক আমার বার্তা। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. Harun, Mizan (২০১৮)। رجال صنعوا التاريخ وخدموا الإسلام والعلم في بنغلاديش للشاملة [Men Who Shaped History And Served Islamic Science In Bangladesh: A Comprehensive Perspective] (আরবি ভাষায়)। Dhaka: Darul Bayan। পৃষ্ঠা 417–423। ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  11. মুফতি, হাফিজুদ্দিন। আমার দেখা আকাবির 
  12. মুহাম্মদ সায়েম, আবূ সাঈদ (২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "আল্লামা ইসহাক ফরিদী রহ: এক মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানব"আওয়ার ইসলাম। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  13. আল্লামা ইসহাক ফরিদী রহ. স্মারক গ্রন্থ