অতিনবতারা পর্যবেক্ষণের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
+
১১৭ নং লাইন: ১১৭ নং লাইন:


== দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ ==
== দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ ==
সুপারনোভার সত্যিকারের প্রকৃতি কিছু সময়ের জন্য অস্পষ্ট ছিল। ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষকরা এক ধরণের তারকার সন্ধান পেলেন যেগুলোর ঐজ্জ্বল্য দীর্ঘ সময়ের পর্যায়ক্রমিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়। [[জন রাসেল হাইন্ড]] ১৮৪৮ সালে এবং [[নরম্যান পগসন]] ১৮৬৩ সালে কিছু তারকা সনাক্ত করেন যেগুলোর ঔজ্জ্বল্যতা হঠাৎ করে বদলে যায়। এই পর্যবেক্ষণটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছিল। অবশেষে ১৮৬৬ সালে ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী [[উইলিয়াম হাগিন্স]] নব তারকার জন্য প্রথম বর্ণালী মানমন্দির স্থাপন করেন। [[টি কর্ণিয়া বরালিস]] নোভার অস্বাভাবিক হাইড্রোজেন বর্ণালী আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি পর্যবেক্ষণকেন্দ্রটি তৈরী করেন। হাগিন্স অস্বাভাবিক বিষ্ফোরণের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়ার একটি তত্ত্ব প্রস্তাবনা করেন যা অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মনযোগ আকর্ষণ করে।        
সুপারনোভার সত্যিকারের প্রকৃতি কিছু সময়ের জন্য অস্পষ্ট ছিল। ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষকরা এক ধরণের তারকার সন্ধান পেলেন যেগুলোর ঐজ্জ্বল্য দীর্ঘ সময়ের পর্যায়ক্রমিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়। [[জন রাসেল হাইন্ড]] ১৮৪৮ সালে এবং [[নরম্যান পগসন]] ১৮৬৩ সালে কিছু তারকা সনাক্ত করেন যেগুলোর ঔজ্জ্বল্যতা হঠাৎ করে বদলে যায়। এই পর্যবেক্ষণটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছিল। অবশেষে ১৮৬৬ সালে ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী [[উইলিয়াম হাগিন্স]] নব তারকার জন্য প্রথম বর্ণালী মানমন্দির স্থাপন করেন।<ref>{{cite journal
| last = Higgins | first = William | title=On a New Star
| journal=[[Monthly Notices of the Royal Astronomical Society]]
| date=1866 | volume=26 | pages=275
| bibcode=1866MNRAS..26..275H
}}</ref> [[টি কর্ণিয়া বরালিস]] নোভার অস্বাভাবিক হাইড্রোজেন বর্ণালী আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি পর্যবেক্ষণকেন্দ্রটি তৈরী করেন। হাগিন্স অস্বাভাবিক বিষ্ফোরণের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়ার একটি তত্ত্ব প্রস্তাবনা করেন যা অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মনযোগ আকর্ষণ করে।<ref>{{cite web
| last = Becker | first = Barbara J. | date = 1993
| url = http://eee.uci.edu/clients/bjbecker/huggins/ch3.html
| title = Eclecticism, Opportunism, and the Evolution of a New Research Agenda: William and Margaret Huggins and the Origins of Astrophysics
| publisher = University of California&mdash;Irvine
| accessdate = 2006-09-27 }}</ref>        
[[চিত্র:Sn discoveries.gif|right|frame| এনিমশনটি ১৮৮৫ সাল থেকে গঠিত সুপারনোভার R.A এবং Dec. দেখাচ্ছে। সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো হাইলাইটেড রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।]]
[[চিত্র:Sn discoveries.gif|right|frame| এনিমশনটি ১৮৮৫ সাল থেকে গঠিত সুপারনোভার R.A এবং Dec. দেখাচ্ছে। সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো হাইলাইটেড রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।]]
১৮৮৫ সালে, এস্তোনিয়ার, 'আর্নেস্ট হার্টউইং' দ্বারা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মতো কিছু একটা পর্যবেক্ষিত হয়। তখন 'এস এন্ড্রোমিডা'র ঔজ্জ্বল্যতা ৬ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। গ্যালাক্সির কেন্দ্রের ঐজ্জ্বল্যতা অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আবার নবতারার মতো বিলীন হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে [[জর্জ উইলিয়াম রিৎচি]] সেই সময়ের এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দুরত্ব নির্ণয় করেন এবং পরিমাপের পরে ফলাফল অনুযায়ী এটি যা ধারণা করা হয়েছিল তার থেকে অনেক দূরে। এর মানে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি শুধু গ্যালাক্সি লাইনে ছিল তা নয় বরং এটি গ্যালাক্সি লাইনের কেন্দ্রেই ছিল এবং এটি প্রচুর শক্তি উৎপাদন করেছিল যা নবতারার থেকে অনেক বেশি।         
১৮৮৫ সালে, এস্তোনিয়ার, 'আর্নেস্ট হার্টউইং' দ্বারা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মতো কিছু একটা পর্যবেক্ষিত হয়। তখন 'এস এন্ড্রোমিডা'র ঔজ্জ্বল্যতা ৬ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। গ্যালাক্সির কেন্দ্রের ঐজ্জ্বল্যতা অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আবার নবতারার মতো বিলীন হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে [[জর্জ উইলিয়াম রিৎচি]] সেই সময়ের এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দুরত্ব নির্ণয় করেন এবং পরিমাপের পরে ফলাফল অনুযায়ী এটি যা ধারণা করা হয়েছিল তার থেকে অনেক দূরে। এর মানে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি শুধু গ্যালাক্সি লাইনে ছিল তা নয় বরং এটি গ্যালাক্সি লাইনের কেন্দ্রেই ছিল এবং এটি প্রচুর শক্তি উৎপাদন করেছিল যা নবতারার থেকে অনেক বেশি।<ref>{{cite web
| last =van Zyl | first = Jan Eben | date = 2003
| url = http://www.aqua.co.za/assa_jhb/new/canopus/can2003/c039litu.htm
| title = Variable Stars VI
| publisher = [[Astronomical Society of Southern Africa]]
| accessdate = 2009-07-17 |archiveurl = http://web.archive.org/web/20060923095244/http://www.aqua.co.za/assa_jhb/new/canopus/can2003/c039litu.htm |archivedate = 2006-09-23}}</ref>        


নতুন করে নবতারা দেখার ইতিহাস ১৯৩০ সাল থেকে [[ভাল্টার বাডে]] এবং [[ফ্রিট্‌জ জুইকি]] দ্বারা মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরি থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।<ref>{{cite journal
নতুন করে নবতারা দেখার ইতিহাস ১৯৩০ সাল থেকে [[ভাল্টার বাডে]] এবং [[ফ্রিট্‌জ জুইকি]] দ্বারা মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরি থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারা 'এস এন্ড্রোমিডা' সনাক্ত করেছিল যাকে তারা ভেবেছিল একটি সাধারণ অতিনবতারকা বা সুপারনোভা। এটি একটি বিস্ফোরণ ছিল যার ফলে সূর্যের ১০^৭ (১০,০০,০০০) বছরের শক্তি উৎপন্ন হয়েছিল। তারা  এই অস্বাভাবিক বিস্ফোরণটিকে বলতে শুরু করলো সুপারনোভা। তারা দাবি করলো যে সাধারণ তারকার মধ্যাকর্ষণ চাপের কারণে চুপসে যাওয়ার ফলে শক্তি নির্গত হওয়ার পর সেগুলো [[নিউট্রন তারা]]তে পরিণত হয়। সুপার-নোভা নামটি প্রথম ১৯৩১ সালে [[ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি]]র একটি লেকচারে ফ্রিটজ জুইকি ব্যবহার করেন। পরে ১৯৩৩ সালে [[আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি]] এর এক মিটিং-এ এটিকে সাধারণভাবে সুপারনোভা বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে 'সুপার-নোভার) এর হাইফেন উঠে গিয়ে সুপারনোভা নামে ব্যবহার করা শুরু হয়।           
| first=W. | last=Baade |author2=Zwicky, F.
| title=On Super-Novae
| journal=Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America
| date=1934 | volume=20 | issue=5 | pages=254–259
| pmc=1076395 | bibcode=1934PNAS...20..254B | doi=10.1073/pnas.20.5.254
| accessdate=2008-06-04 | pmid=16587881}}</ref> তারা 'এস এন্ড্রোমিডা' সনাক্ত করেছিল যাকে তারা ভেবেছিল একটি সাধারণ অতিনবতারকা বা সুপারনোভা। এটি একটি বিস্ফোরণ ছিল যার ফলে সূর্যের ১০^৭ (১০,০০,০০০) বছরের শক্তি উৎপন্ন হয়েছিল। তারা  এই অস্বাভাবিক বিস্ফোরণটিকে বলতে শুরু করলো সুপারনোভা। তারা দাবি করলো যে সাধারণ তারকার মধ্যাকর্ষণ চাপের কারণে চুপসে যাওয়ার ফলে শক্তি নির্গত হওয়ার পর সেগুলো [[নিউট্রন তারা]]তে পরিণত হয়।<ref>{{cite journal
| first=D. E. | last=Osterbrock
| title=Who Really Coined the Word Supernova? Who First Predicted Neutron Stars?
| journal=Bulletin of the American Astronomical Society
| date=1999 | volume=33 | pages=1330
| bibcode=2001AAS...199.1501O }}</ref> সুপার-নোভা নামটি প্রথম ১৯৩১ সালে [[ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি]]র একটি লেকচারে ফ্রিটজ জুইকি ব্যবহার করেন। পরে ১৯৩৩ সালে [[আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি]] এর এক মিটিং-এ এটিকে সাধারণভাবে সুপারনোভা বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে 'সুপার-নোভার) এর হাইফেন উঠে গিয়ে সুপারনোভা নামে ব্যবহার করা শুরু হয়।<ref>{{cite book
| author=Murdin, Paul; Murdin, Lesley
| title=Supernovae | page=42 | edition=2nd
| publisher=Cambridge University Press
| date=1985 | isbn=0-521-30038-X }}</ref>          


যদিও সুপারনোভা একটি বিরল ঘটনা তবুও প্রতি ৫০ বছরে এটি আমাদের গ্যালাক্সিতে ঘটে। গ্যালাক্সিগুলোর দুরত্ব পরিমাপ করার জন্য ঘন ঘন সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ হয়। ১৯৩৩ সালে  প্রথম সুপারনোভা সনাক্তকরণ পেট্রল শুরু হয় জুইকি দ্বারা। ১৯৩৬ সালে তিনি [[ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি]] এর যোসেফ যে. জনসন এর সাহায্যে সুপারনোভা সনাক্তকরণ পেট্রল  যোগ দেন। [[প্যালমার মানমন্দির]] থেকে ৪০ সে.মি. [[স্মিট দূরবিক্ষণ যন্ত্র]] দ্বারা অতি-গ্যালাক্টিক ফটগ্রাফিক প্লেটের সাথে তুলনা করে  তারা ৩ বছরে ১২টি সুপারনোভা আবিষ্কার করেছিল। [[১৯৩৬ সালে|<nowiki/>]]
যদিও সুপারনোভা একটি বিরল ঘটনা তবুও প্রতি ৫০ বছরে এটি আমাদের গ্যালাক্সিতে ঘটে। গ্যালাক্সিগুলোর দুরত্ব পরিমাপ করার জন্য ঘন ঘন সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ হয়। ১৯৩৩ সালে  প্রথম সুপারনোভা সনাক্তকরণ পেট্রল শুরু হয় জুইকি দ্বারা। ১৯৩৬ সালে তিনি [[ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি]] এর যোসেফ যে. জনসন এর সাহায্যে সুপারনোভা সনাক্তকরণ পেট্রল  যোগ দেন। [[প্যালমার মানমন্দির]] থেকে ৪০ সে.মি. [[স্মিট দূরবিক্ষণ যন্ত্র]] দ্বারা অতি-গ্যালাক্টিক ফটগ্রাফিক প্লেটের সাথে তুলনা করে  তারা ৩ বছরে ১২টি সুপারনোভা আবিষ্কার করেছিল।<ref>{{cite book
| first=John Lewis | last=Heilbron | date=2005

| title=The Oxford guide to the history of physics and astronomy | volume=10 | page=315
১৯৩৮ সালে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভাল্টার বাডে প্রথম আবিষ্কার করেছেন সাধারণ [[নীহারিকা]] হলো সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষ। তিনি প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন ক্র্যাব নেবুলা হলো 'এস এন ১০৫৪' এর অবশিষ্টাংশ। তিনি উল্লেখ করেছেন যখন [[গ্রহ নীহারিকা]] দেখা যায় তখন সুপারনোভা বিস্ফোরণে বেগ সাধারণ থেকে অস্বাভাবিক রকমের বেশি হয়। একই বছরে বাডে'র প্রস্তাবনা অনুযায়ী আই.এ ধরনের সুপারনোভাগুলো সহায়ক দুরত্ব নির্দেশক। পরবর্তীতে অ্যালান ট্যাম্যান এবং গুস্তাভ ট্যাম্যান এর গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে আই.এ ধরনের সুপারনোভাগুলো [[মহাবিশ্ব]] এর বড় দূরত্ব মাপতে এক ধরণের 'স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল'         
| publisher=Oxford University Press US | isbn=0-19-517198-5 }}</ref>


১৯৩৮ সালে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভাল্টার বাডে প্রথম আবিষ্কার করেছেন সাধারণ [[নীহারিকা]] হলো সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষ।<ref>{{cite journal
| last = Rudolph | first = Minkowski
| title=Spectra of Supernovae
| journal=[[Publications of the Astronomical Society of the Pacific]]
| date=1941 | volume=53 | issue=314 | pages=224
| bibcode=1941PASP...53..224M
| doi=10.1086/125315 }}</ref> তিনি প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন ক্র্যাব নেবুলা হলো 'এস এন ১০৫৪' এর অবশিষ্টাংশ। তিনি উল্লেখ করেছেন যখন [[গ্রহ নীহারিকা]] দেখা যায় তখন সুপারনোভা বিস্ফোরণে বেগ সাধারণ থেকে অস্বাভাবিক রকমের বেশি হয়। একই বছরে বাডে'র প্রস্তাবনা অনুযায়ী আই.এ ধরনের সুপারনোভাগুলো সহায়ক দুরত্ব নির্দেশক। পরবর্তীতে অ্যালান ট্যাম্যান এবং গুস্তাভ ট্যাম্যান এর গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে আই.এ ধরনের সুপারনোভাগুলো [[মহাবিশ্ব]] এর বড় দূরত্ব মাপতে এক ধরণের 'স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল'।<ref>{{cite journal
| first=L. A. L. | last=da Silva
| title=The Classification of Supernovae
| journal=Astrophysics and Space Science | date=1993
| volume=202 | issue=2 | pages=215–236
| bibcode=1993Ap&SS.202..215D
| doi=10.1007/BF00626878 }}</ref>
১৯৪১ সালে সুপারনোভার এর বর্ণালীগত বৈশিষ্ট্যদ্বারা [[রুডলফ মিঙ্কোউইস্কি]] প্রথম মহাবিশ্বের বড় দূরত্ব মাপেন। সুপারনোভার বর্ণালীতে হাইড্রোজেন উপাদানের উপর ভিত্তি করে সুপারনোভাগুলোকে তিনি ২ ভাগে বিভক্ত করেছেন। পরে জুইকি আরো ৩ ধরণের সুপারনোভা আবিষ্কার করেন। যদিও জুইকির আরো ৩টি আবিষ্কার এখন আর একক সুপারনোভার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়না। পরবর্তীতে বর্ণালী ক্যাটাগরির উপ-বিভাগকে আধুনিক সুপারনোভা মডেলে স্কিম বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।       
১৯৪১ সালে সুপারনোভার এর বর্ণালীগত বৈশিষ্ট্যদ্বারা [[রুডলফ মিঙ্কোউইস্কি]] প্রথম মহাবিশ্বের বড় দূরত্ব মাপেন। সুপারনোভার বর্ণালীতে হাইড্রোজেন উপাদানের উপর ভিত্তি করে সুপারনোভাগুলোকে তিনি ২ ভাগে বিভক্ত করেছেন। পরে জুইকি আরো ৩ ধরণের সুপারনোভা আবিষ্কার করেন। যদিও জুইকির আরো ৩টি আবিষ্কার এখন আর একক সুপারনোভার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়না। পরবর্তীতে বর্ণালী ক্যাটাগরির উপ-বিভাগকে আধুনিক সুপারনোভা মডেলে স্কিম বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।       


[[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] এর পর [[ফ্রেড হয়েল]] কীভাবে মহাবিশ্বের পরিবর্তনশীল বস্তুগুলো উৎপন্ন হয় তা নিয়ে গবেষণা করলো।  ১৯৪৬ সালে তিনি প্রস্তাবনা করেছেন, উচ্চ ভরসম্পন্ন তারকাগুলো [[থার্মোনিউক্লিয়ার]] বিক্রিয়া করে, আর নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার কারণেই তারকা থেকে শক্তি নির্গত হয় এবং এর ফলে তারকা চুপসে যায়। চুপসে যাওয়া তারকা ক্রমান্বয়ে অস্থির হয়ে যায় এবং বিষ্ফোরক বস্তু উৎপন্ন করে যা বিষ্ফোরণের ফলে নক্ষত্রমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬০ সালে ফ্রেড হয়েল এবং [[উইলিয়াম আলফ্রেড ফাওলার]] দাবি করেন যে নিউক্লিয়ার ফিউশনই হলো সুপারনোভা বিষ্ফোরণের শক্তির উৎস।
[[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] এর পর [[ফ্রেড হয়েল]] কীভাবে মহাবিশ্বের পরিবর্তনশীল বস্তুগুলো উৎপন্ন হয় তা নিয়ে গবেষণা করলো।<ref>{{cite journal
| last = Hoyle | first = Fred | authorlink = Fred Hoyle
| title=The Synthesis of the Elements from Hydrogen
| journal=[[Monthly Notices of the Royal Astronomical Society]]
| date=1946 | volume=106 | pages=343–383
| bibcode=1946MNRAS.106..343H
| doi = 10.1093/mnras/106.5.343 }}</ref> ১৯৪৬ সালে তিনি প্রস্তাবনা করেছেন, উচ্চ ভরসম্পন্ন তারকাগুলো [[থার্মোনিউক্লিয়ার]] বিক্রিয়া করে, আর নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার কারণেই তারকা থেকে শক্তি নির্গত হয় এবং এর ফলে তারকা চুপসে যায়। চুপসে যাওয়া তারকা ক্রমান্বয়ে অস্থির হয়ে যায় এবং বিষ্ফোরক বস্তু উৎপন্ন করে যা বিষ্ফোরণের ফলে নক্ষত্রমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬০ সালে ফ্রেড হয়েল এবং [[উইলিয়াম আলফ্রেড ফাওলার]] দাবি করেন যে নিউক্লিয়ার ফিউশনই হলো সুপারনোভা বিষ্ফোরণের শক্তির উৎস।<ref>{{cite journal
| first=S. E. | last=Woosley
| title=Hoyle & Fowler's Nucleosynthesis in Supernovae
| journal=[[Astrophysical Journal]] | date=1999
| volume=525C | pages=924
| bibcode=1999ApJ...525C.924W }}</ref>


[[নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়]]- এ প্রথম ১৯৬০ সালে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। তারা [[নিউ মেক্সিকো]]র কোরালিটস পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে ২৪ ইঞ্চির একটি টেলিস্কোপ তৈরী করে যা কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। টেলিস্কোপটি প্রতি মিনিটে একটি করে গ্যালাক্সি দেখতে পারতো এবং টিভি স্ক্রীনে পর্যবেক্ষকরা তা দেখতে পেত। এর মাধ্যমে তারা ২ বছরে ১৪টি সুপারনোভা আবিষ্কার করতে পারলো।   
[[নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়]]- এ প্রথম ১৯৬০ সালে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। তারা [[নিউ মেক্সিকো]]র কোরালিটস পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে ২৪ ইঞ্চির একটি টেলিস্কোপ তৈরী করে যা কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। টেলিস্কোপটি প্রতি মিনিটে একটি করে গ্যালাক্সি দেখতে পারতো এবং টিভি স্ক্রীনে পর্যবেক্ষকরা তা দেখতে পেত। এর মাধ্যমে তারা ২ বছরে ১৪টি সুপারনোভা আবিষ্কার করতে পারলো।<ref>{{cite book
| first=Laurence A. | last=Marschall | date=1994
| title=The supernova story | pages=112–113
| series=Princeton science library
| publisher=Princeton University Press
| isbn=0-691-03633-0 }}</ref> 


== ১৯৭০-১৯৯৯ ==
== ১৯৭০-১৯৯৯ ==

২২:১৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ক্র্যাব নেবুলা হলো ১০৫৪ অতিনবতারা'র  সাথে সংযুক্ত একটি পালসার উইন্ড নেবুলা

১৮৫ সাল থেকে অতিনবতারা অথবা সুপারনোভা পর্যবেক্ষণের ইতিহাস শুরু হয়, যখন অতিনবতারা 'এস এন ১৮৫' দেখা যায়। পুরানো সুপারনোভা দেখা যাওয়ার ইতিহাস প্রাচীন মানুষ দ্বারাই সংরক্ষিত হয়েছিল। প্রাচীন কালে ছায়াপথ আকাশগঙ্গা'র মধ্যে অন্যান্য অতিনবতারাগুলোও সেই সময় থেকে পর্যবেক্ষণ হয়ে আসছে। অতিনবতারা ১৬০৪ হলো আমাদের ছায়াপথের অতিসম্প্রতি গঠিত সুপারনোভা।[১]  

দূরবীক্ষণ যন্ত্র'র উন্নয়নের পর থেকে অন্যান্য ছায়াপথেও সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ থেকে আকাশগঙ্গাগুলোর দুরত্ব নির্ণয়ের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সুপারনোভার সফল মডেল আবিষ্কার হয় এবং একটি তারকা গঠনে সুপারনোভার ভূমিকা বিজ্ঞানীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রাথমিক ইতিহাস

১০৫৪ সালে চাইনিজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী দ্বারা আবিষ্কৃত আগন্তুক তারকা অতিনবতারা ১৬০৪ হিসেবে পরিচিত। তারকার লক্ষণীয় পরিবর্তন হলো অতিনবতারা

ভেলা সুপারনোভা রেমন্যান্ট- এ সুপারনোভা বিষ্ফোরণ খুব সম্ভবত ১০,০০০-২০,০০০ বছর আগে ঘটিত হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে দক্ষিণ গোলার্ধের আদিবাসীরা এই বিষ্ফোরণের সাক্ষী এবং প্রাচীন অধিবাসীরা প্রতীক আকারে এগুলো সংরক্ষণ করে যেতে পারে। এক বছর পর প্রত্নতত্ত্ববিদ জর্জ মাইকেনওস্কি আঞ্চলিক আমেরিকানদের দ্বারা বলিভিয়ায় ফেলে যাওয়া কিছু প্রাচীন ধারণাতীত চিহ্ন এর কথা মনে করেন। একটি চিহ্নে ছোট চারটি বৃত্তের দুই পাশে বড় দুইটি বৃত্ত দেখতে পান। ছোট বৃত্তগুলো ভেলা এবং কারিনা মন্ডলের নক্ষত্রপুঞ্জের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বড় বৃত্ত দু'টির একটি হতে পারে ক্যাপেলা তারকা। অন্যটি সুপারনোভা রেমন্যান্টের পাশে অবস্থিত। জর্জ মাইকেনওস্কি মনে করেন অন্য বড় বৃত্তটি খুব সম্ভবত আদিবাসীদের সুপারনোভা বিস্ফোরণ দেখার স্বাক্ষ্য বহন করে।[২]  

১৮৫ সালে চাইনিজ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন, এটি আকাশ থেকে বিলীন হতে ৮ মাস সময় লেগেছিল। এটি একটি চকচকে তারকা হিসেবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল;আকাশ দিয়ে চলাচল করা ধূমকেতু হিসেবে নয়। এই পর্যবেক্ষণ সুপারনোভার অস্তিত্ব প্রমাণ করে এবং ধারণা করা হয় ১৮৫ সালের এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম সফলভাবে সুপারনোভার ইতিহাস সংরক্ষিত হয়। ধারণা করা হয় ১৮৫ সালের সুপারনোভাটি সম্ভবত রোমান সাম্রাজ্যতেও সংরক্ষিত হয়েছে, যদিও এর কোনো প্রমাণ নেই।[৩] গ্যাসীও শেল আর-সি-ডব্লিউ ৮৬ কে এই ঘটনার অবশিষ্টাংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিক কালের রঞ্জন রশ্মি'র এক গবেষণার মাধ্যমেও কাঙ্খিত ফলাফল প্রকাশিত হয়।[৪][৫]

৩৯৩ সালে চাইনিজরা আধুনিক বৃশ্চিক (তারকামণ্ডল)-এ  'এস এন ৩৯৩' নামক অন্য একটি আগন্তুক তারকার পর্যবেক্ষণ করে।[৬] এছাড়াও অন্যান্য অনিশ্চিত সুপারনোভা ৩৬৯, ৩৮৬, ৪৩৭, ৮২৭ এবং ৯০২ সালে পর্যবেক্ষিত হয়।[৭] যাই হোক, এগুলো এখনো সুপারনোভা রেমন্যান্টের সাথে মিলেনি অর্থাৎ, এগুলো এখন শুধুমাত্র ধারণা।[১] পরবর্তী প্রায় ২,০০০ বছরে চাইনিজরা ইসলামিক, ইউরোপিয়ান এবং ইন্ডিয়ান বিষ্ফোরণের মতো এরকম ২০টি ঘটনা আবিষ্কার করেছে।[১][৮]

সুপারনোভা এস এন ১০০৬ দক্ষিণ তারকামন্ডল 'লুপাস' এ ১০০৬ সালে দেখা গিয়েছিল। এটি রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা ছিল। এই ঘটনাটি গণচীন, ইজিপ্ট, ইরাক, ইতালি, জাপান এবং সুইজারল্যান্ড এর মানুষেরা লিখে রেখেছিল। এছাড়াও সম্ভবত ফ্রান্সসিরিয়া এবং উত্তর আমেরিকা'র মানুষেরা লিখে রেখেছিল। ইজিপ্টিয়ান ফিজিশিয়ান, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং জ্যোতিষসাস্ত্রবিদ আলি ইবনে রিদওয়ান তারকাটির উজ্জ্বলতা চাঁদের ৪ ভাগের ১ অংশ হিসেবে মনে করেছিলেন। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন বিষ্ফোরণটির শেষ অবশিষ্টাংশের দুরত্ব পৃথিবী থেকে ৭,১০০ আলোকবর্ষ।[৯]   

১০৫৪ সালে এস এন ১০৫৪ নামক আরেকটি সুপারনোভা দেখা গিয়েছিল যা আরব, চাইনিজ এবং জাপানি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্বারা সংরক্ষিত হয়েছিল। সম্ভবত আনাসাজিরা পাথর খোদাই করে এটি সংরক্ষণ করেছিল। বিষ্ফোরণটি ঘটেছিল বৃষ তারকামন্ডলে যেখানে ক্র্যাব নেবুলার শেষ অংশ হয়েছিল। এস এন এর উচ্চাংশে, এর ঐজ্জ্বল্যতা শুক্র গ্রহ থেকে ৪ গুণ বেশি। এটি দিনের আকাশে ২৩ দিন এবং রাতের আকাশে ৬৫৩ দিন দেখা গিয়েছিল।       

এস এন ১০৫৪ ঘটিত হবার প্রায় ১০০ বছর পর ক্যাশিওপিয়া তারকামন্ডলে ঘটিত সুপারনোভা এস এন ১১৮১ এর কিছু সংরক্ষণলিপি রয়েছে। জাপানি এবং চাইনিজ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাটি সংরক্ষণ করেছে। যাই হোক, পালসার ৩সি৫৮ খুব সম্ভবত এই ঘটনার অবশিষ্টাংশ।[১০]    

ডেনমার্ক এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ট্যুকো ব্রাহেআইসল্যান্ড এর পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থেকে রাতের আকাশে তার পর্যবেক্ষণের ফলাফল খুব যত্ন করে সংরক্ষণ করে রাখেন। ১৫৭২ সালে তিনি ক্যাশিওপিয়া তারকামন্ডলে একটি নতুন তারকা পর্যবেক্ষণ করেন। পরবর্তীতে এর নাম দেওয়া হয় এস এন ১৫৭২। এই সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আকাশে ছিল।[১১][১২]

ইউরোপীয়দের মধ্যে এই সময় একটি সাধারণ বিশ্বাস প্রচলিত ছিল।[১৩][১৪][১৫] তারা এরিস্টটল এর ধারণা বিশ্বাস করতো। তারা মনে করতো চাঁদ এবং গ্রহগুলি পৃথিবী থেকে বহু দূরে এবং সেগুলো স্থিতিশীল। তাই পর্যবেক্ষণকারীরা যুক্তি দিলেন যে এই ঘটনা নিশ্চয়ই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের কারণেই ঘটেছে। আই হোক, ট্যুকো লিখেছেন বস্তুটি স্থির ছিল এবং কখনো এর লম্বন পরিবর্তন করতো না। অর্থাৎ, এটি দূরে থাকা আবশ্যক। তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণ  লাতিন ভাষায় একটি ছোট বই-এ ১৫৭৩ সালে লিখে গেছেন। বইয়ের নাম, 'দে নোভা এত নুলিয়ুঁ আএঁভি মেমরিয়াঁ ভিসা স্তেল্লা' যার অর্থঃ নতুন এবং পুরাতন অদৃশ্য তারকা সম্পর্কে। এর আধুনিক নামঃ পরিবর্তনশীল তারকার আকস্মিক বিপর্যয়।[১৬]         

অতি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রঞ্জন রশ্মি ব্যবহার করে ১৬০৪ সালের কেপলার সুপারনোভা রেমন্যান্টের তোলা ছবি। (চন্দ্র এক্স-রশ্মি মানমন্দির)

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অতি সম্প্রতি ঘটিত সুপারনোভা হলো অতিনবতারা ১৬০৪ যা ১৬০৪ সালে ৯ অক্টোবরে দেখা যায়। কিছু মানুষ এই পর্যবেক্ষণ সংরক্ষণ করেন। তবে ইয়োহানেস কেপলার তাঁর পদ্ধতিগত গবেষণার কারণে উল্লেখযোগ্য হয় উঠেন। 'দে স্তেলা নোভা ইন পেদি সেরপেন্তারিঁ' বইতে কেপলার তাঁর পর্যবেক্ষণ লিখে যান।[১৭][১৮] 

ট্যুকো'র মতো গ্যালিলিও গ্যালিলেই নতুন তারকার লম্বন পরিমাপ করতে গিয়েও ব্যর্থ হন এবং পরবর্তীতে তিনি এরিষ্টোটলের আকাশের স্থিতিশীল অবস্থা তত্ত্বের বিরুদ্ধে যুক্তি দেন। এই সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ ১৯৪১ সালে মাউন্ট উইলসন মনমন্দির সনাক্ত করে।[১৯][২০] 

দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ

সুপারনোভার সত্যিকারের প্রকৃতি কিছু সময়ের জন্য অস্পষ্ট ছিল। ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষকরা এক ধরণের তারকার সন্ধান পেলেন যেগুলোর ঐজ্জ্বল্য দীর্ঘ সময়ের পর্যায়ক্রমিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়। জন রাসেল হাইন্ড ১৮৪৮ সালে এবং নরম্যান পগসন ১৮৬৩ সালে কিছু তারকা সনাক্ত করেন যেগুলোর ঔজ্জ্বল্যতা হঠাৎ করে বদলে যায়। এই পর্যবেক্ষণটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছিল। অবশেষে ১৮৬৬ সালে ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হাগিন্স নব তারকার জন্য প্রথম বর্ণালী মানমন্দির স্থাপন করেন।[২১] টি কর্ণিয়া বরালিস নোভার অস্বাভাবিক হাইড্রোজেন বর্ণালী আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি পর্যবেক্ষণকেন্দ্রটি তৈরী করেন। হাগিন্স অস্বাভাবিক বিষ্ফোরণের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়ার একটি তত্ত্ব প্রস্তাবনা করেন যা অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মনযোগ আকর্ষণ করে।[২২]        

 এনিমশনটি ১৮৮৫ সাল থেকে গঠিত সুপারনোভার R.A এবং Dec. দেখাচ্ছে। সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো হাইলাইটেড রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।

১৮৮৫ সালে, এস্তোনিয়ার, 'আর্নেস্ট হার্টউইং' দ্বারা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মতো কিছু একটা পর্যবেক্ষিত হয়। তখন 'এস এন্ড্রোমিডা'র ঔজ্জ্বল্যতা ৬ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। গ্যালাক্সির কেন্দ্রের ঐজ্জ্বল্যতা অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আবার নবতারার মতো বিলীন হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে জর্জ উইলিয়াম রিৎচি সেই সময়ের এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দুরত্ব নির্ণয় করেন এবং পরিমাপের পরে ফলাফল অনুযায়ী এটি যা ধারণা করা হয়েছিল তার থেকে অনেক দূরে। এর মানে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি শুধু গ্যালাক্সি লাইনে ছিল তা নয় বরং এটি গ্যালাক্সি লাইনের কেন্দ্রেই ছিল এবং এটি প্রচুর শক্তি উৎপাদন করেছিল যা নবতারার থেকে অনেক বেশি।[২৩]        

নতুন করে নবতারা দেখার ইতিহাস ১৯৩০ সাল থেকে ভাল্টার বাডে এবং ফ্রিট্‌জ জুইকি দ্বারা মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরি থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।[২৪] তারা 'এস এন্ড্রোমিডা' সনাক্ত করেছিল যাকে তারা ভেবেছিল একটি সাধারণ অতিনবতারকা বা সুপারনোভা। এটি একটি বিস্ফোরণ ছিল যার ফলে সূর্যের ১০^৭ (১০,০০,০০০) বছরের শক্তি উৎপন্ন হয়েছিল। তারা  এই অস্বাভাবিক বিস্ফোরণটিকে বলতে শুরু করলো সুপারনোভা। তারা দাবি করলো যে সাধারণ তারকার মধ্যাকর্ষণ চাপের কারণে চুপসে যাওয়ার ফলে শক্তি নির্গত হওয়ার পর সেগুলো নিউট্রন তারাতে পরিণত হয়।[২৫] সুপার-নোভা নামটি প্রথম ১৯৩১ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির একটি লেকচারে ফ্রিটজ জুইকি ব্যবহার করেন। পরে ১৯৩৩ সালে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি এর এক মিটিং-এ এটিকে সাধারণভাবে সুপারনোভা বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে 'সুপার-নোভার) এর হাইফেন উঠে গিয়ে সুপারনোভা নামে ব্যবহার করা শুরু হয়।[২৬]          

যদিও সুপারনোভা একটি বিরল ঘটনা তবুও প্রতি ৫০ বছরে এটি আমাদের গ্যালাক্সিতে ঘটে। গ্যালাক্সিগুলোর দুরত্ব পরিমাপ করার জন্য ঘন ঘন সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ হয়। ১৯৩৩ সালে  প্রথম সুপারনোভা সনাক্তকরণ পেট্রল শুরু হয় জুইকি দ্বারা। ১৯৩৬ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এর যোসেফ যে. জনসন এর সাহায্যে সুপারনোভা সনাক্তকরণ পেট্রল  যোগ দেন। প্যালমার মানমন্দির থেকে ৪০ সে.মি. স্মিট দূরবিক্ষণ যন্ত্র দ্বারা অতি-গ্যালাক্টিক ফটগ্রাফিক প্লেটের সাথে তুলনা করে  তারা ৩ বছরে ১২টি সুপারনোভা আবিষ্কার করেছিল।[২৭]

১৯৩৮ সালে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভাল্টার বাডে প্রথম আবিষ্কার করেছেন সাধারণ নীহারিকা হলো সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষ।[২৮] তিনি প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন ক্র্যাব নেবুলা হলো 'এস এন ১০৫৪' এর অবশিষ্টাংশ। তিনি উল্লেখ করেছেন যখন গ্রহ নীহারিকা দেখা যায় তখন সুপারনোভা বিস্ফোরণে বেগ সাধারণ থেকে অস্বাভাবিক রকমের বেশি হয়। একই বছরে বাডে'র প্রস্তাবনা অনুযায়ী আই.এ ধরনের সুপারনোভাগুলো সহায়ক দুরত্ব নির্দেশক। পরবর্তীতে অ্যালান ট্যাম্যান এবং গুস্তাভ ট্যাম্যান এর গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে আই.এ ধরনের সুপারনোভাগুলো মহাবিশ্ব এর বড় দূরত্ব মাপতে এক ধরণের 'স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল'।[২৯] ১৯৪১ সালে সুপারনোভার এর বর্ণালীগত বৈশিষ্ট্যদ্বারা রুডলফ মিঙ্কোউইস্কি প্রথম মহাবিশ্বের বড় দূরত্ব মাপেন। সুপারনোভার বর্ণালীতে হাইড্রোজেন উপাদানের উপর ভিত্তি করে সুপারনোভাগুলোকে তিনি ২ ভাগে বিভক্ত করেছেন। পরে জুইকি আরো ৩ ধরণের সুপারনোভা আবিষ্কার করেন। যদিও জুইকির আরো ৩টি আবিষ্কার এখন আর একক সুপারনোভার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়না। পরবর্তীতে বর্ণালী ক্যাটাগরির উপ-বিভাগকে আধুনিক সুপারনোভা মডেলে স্কিম বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।       

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর পর ফ্রেড হয়েল কীভাবে মহাবিশ্বের পরিবর্তনশীল বস্তুগুলো উৎপন্ন হয় তা নিয়ে গবেষণা করলো।[৩০] ১৯৪৬ সালে তিনি প্রস্তাবনা করেছেন, উচ্চ ভরসম্পন্ন তারকাগুলো থার্মোনিউক্লিয়ার বিক্রিয়া করে, আর নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার কারণেই তারকা থেকে শক্তি নির্গত হয় এবং এর ফলে তারকা চুপসে যায়। চুপসে যাওয়া তারকা ক্রমান্বয়ে অস্থির হয়ে যায় এবং বিষ্ফোরক বস্তু উৎপন্ন করে যা বিষ্ফোরণের ফলে নক্ষত্রমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬০ সালে ফ্রেড হয়েল এবং উইলিয়াম আলফ্রেড ফাওলার দাবি করেন যে নিউক্লিয়ার ফিউশনই হলো সুপারনোভা বিষ্ফোরণের শক্তির উৎস।[৩১]

নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়- এ প্রথম ১৯৬০ সালে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। তারা নিউ মেক্সিকোর কোরালিটস পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে ২৪ ইঞ্চির একটি টেলিস্কোপ তৈরী করে যা কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। টেলিস্কোপটি প্রতি মিনিটে একটি করে গ্যালাক্সি দেখতে পারতো এবং টিভি স্ক্রীনে পর্যবেক্ষকরা তা দেখতে পেত। এর মাধ্যমে তারা ২ বছরে ১৪টি সুপারনোভা আবিষ্কার করতে পারলো।[৩২] 

১৯৭০-১৯৯৯

১৯৭৩ সালে ওয়ালেন এবং আইবেনের একটি প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে বর্তমানে আই.এ ধরণের সুপারনোভা বিষ্ফোরণের তত্ত্ব প্রচলিত হয়েছে। একই সময়ে এন.জি.সি ৫২৫৩ এর 'এস এন ১৯৭২ ই' এর আলোর বক্রতা ১ বছর ধরে পর্যবেক্ষিত হয়। সুপারনোভাটি প্রতিদিনে ০.০১ আপাত মান এ বিলীন হয়ে যেতে লাগলো। অন্য পরিমাপের এককএ রূপান্তর করলে বলা যেতে পারে এটি কোবাল্ট-৫৬ এর অবক্ষয় মানের সমান। যার হাফ-লাইফ হলো ৭৭ দিন। অবক্ষয়িত বিষ্ফোরণ মডেল অনুসারে প্রায় সৌর ভরের সমান ভরের নিকেল-৫৬ এর উৎপাদন ঘটে বিষ্ফোরিত তারা দিয়েই ঘটে। নিকেল এবং কোবাল্টের অবক্ষয়ের কারণে সুপারনোভা বিষ্ফোরণের শক্তি উৎপন্ন হয় এবং বিষ্ফোরণের শেষ কালে তা বিকিরণ করে দেয়। কিছু পর্যবেক্ষণ এর উপর ভিত্তি করে ১৯৭২ সালের পরে অবক্ষয়-বিষ্ফোরণ মডেলটি স্বীকৃতি পেতে থাকে।              

আই.এ ধরণের সুপারনোভার আলোর বক্রতা পর্যবেক্ষণ করে আবিষ্কৃত হয় যে এগুলো একটি সর্বোচ্চ ঔজ্জ্বল্য প্রাপ্তির মাধ্যমে দেখা যায়। সুপারনোভাগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গ্যালাক্সির দূরত্ব সঠিকভাবেই অনুমান করা যায়। এভাবেই মহাবিশ্বের বড় দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য এই ধরণের সুপারনোভাগুলো অনেক সাহায্য করে। ১৯৯৮ সালে, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে অনেক দূরের আই.এ সুপারনোভাগুলো খুবই অস্পষ্ট হয়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে আমাদের মহাবিশ্বের বৃদ্ধি ত্বরিত হচ্ছে।   

যদিও ১৬০৪ সালের পর থেকে আমাদের ছায়াপথে কোনো সুপারনোভা দেখা যায়নি, এটা ভাবা হয়  যে ৩০০ বছর আগে ১৬৬৭ থেকে ১৬৮০ সালের মাধ্যে ক্যাশিওপিয়ায় একটি সুপারনোভা বিষ্ফোরণ ঘটেছিল। এর অবশিষ্টাংশ হলো ক্যাশিওপিয়া এ যা তারকামন্ডলের ধুলো দিয়ে অস্পষ্ট হয়ে আছে। এটিকে এরকম ভাবার কারণ হলো এটি কখনো স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। হতে পারে অন্য দিক থেকে একে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। যাই হোক, এটি আমাদের সৌরজগতের থেকে বহুদূরে সবচেয়ে উজ্জ্বল বেতার উৎস।      

কেন্দ্রে সুপারনোভা ১৯৮৭এ- এর অবশিষ্টাংশ

১৯৮৭ সালে সুপারনোভা ১৯৮৭এ বড় 'মেগলানিক মেঘ' এর মধ্যে শুরু হবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দেখা গিয়েছিল। এটি ছিল প্রথম নিউট্রিনো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সনাক্তকৃত সুপারনোভা। সুপারনোভার আপেক্ষিক নৈকট্য এর বর্ণনা দিয়েছিল। এটী সুপারনোভা'র আধুনিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিল।     

২০ শতকে সুপারনোভা'র আবিষ্কার ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। ১৯৯০ সালে সুপারনোভা পর্যবেক্ষণের জন্য কিছু স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম আবিষ্কার হয়।  ১৯৯২ সালে লেইজনার মানমন্দিরে সুপারনোভা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি প্রোগ্রাম বানানো হয়। একই বছরে এতে বের্কলি অটোমেটেড ইমেজিং টেলিস্কোপ প্রোগ্রামও স্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালে লিক মানমন্দিরে ক্যাটযম্যান অটোমেটিক ইমেজিং টেলিস্কোপের স্থাপনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী প্রগ্রামগুলো সফল হয়। ২০০ সালে লিক প্রোগ্রাম ৯৬ টি সুপারনোভা আবিষ্কার করেছিল। যার কারণে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা প্রোগ্রাম হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

১৯৯০ সালে একটি প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে টাইটানিয়াম-৪৪'র গামা রশ্মি এর মাধ্যমে সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ পাওয়া সম্ভব। এর হাফ-লাইফ হলো ৯০ বছর। এর ফলে গামা রশ্মি সহজেই গ্যালাক্সিতে প্রবেশ করতে পারবে। এর ফলে খুব সহজেই আমরা গত সহস্রাব্দের কোনো সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ সনাক্ত করতে পারি। পূর্বে ২ টি অবশিষ্টাংশ পাওয়া গিয়েছিল। ক্যাশিওপিয়া-এ এবং আর.এক্স. জে০৮৫২.০-৪৬২২ যা ভেলা সুপারনোভা রেমন্যান্ট এর অধিক্রমণের মাধ্যমে আবিষ্কার হয়েছিল।

১৯৯৯ সালে, আইসি ৭৫৫ তারকাকে বিষ্ফোরিত হতে দেখা যায় যার নাম এসএন ১৯৯৯এ.এন।

এই অবশিষ্টাংশটি (আরএক্স জে০৮৫২.০-৪৬২২) অপেক্ষাকৃত বড় ভেলা সুপারনোভা রেমন্যান্ট এর সামনে দেখা গিয়েছিল। টাইটানিয়াম-৪৪ এর অবক্ষয় থেকে প্রাপ্ত গামা রশ্মি দেখিয়েছিল যে এটি সম্ভবত ১২০০ সালের একটি বিষ্ফোরণের অংশ, কিন্তু এর কোনো ঐতিহাসিক সংরক্ষণ নেই। গামা রশ্মি এবং এক্স রশ্মির প্রবাহ নির্দেশ করেছিল যে সুপারনোভাটি আমাদের অপেক্ষাকৃত কাছি ছিল (খুব সম্ভবত ২০০ পারসেক)। যদি তাই হয় তবে এটি খুব বিষ্ময়কর। কারণ ২০০ পারসেক এর কম দূরত্বে সুপারনোভাগুলো বছরে কমপক্ষে ১০০,০০০ বার চোখে পড়ে।   

২০০০ থেকে বর্তমান

কসমিক লেন্স এমএসিএস জে১৭২০+৩৫ হাবল টেলিস্কোপকে দুরবর্তী সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে।

'এসএন ২০০৩এফজি' ২০০৩ সালে একটি নতুন বা গঠন হচ্ছে এমন গ্যালাক্সিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। রিয়েল-টাইম গবেষণার সময় এই সুপারনোভা উঠে আসে। এর ফলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্ন উঠে এসেছিল যেহেতু এটিকে দেখতে চন্দ্রশেখর সীমা এর বেশি ভরের মনে হচ্ছিল।  

এসএন ২০০৬জিওয়াই সুপারনোভা যা এনজিসি ১২৬০ নামক একটি গ্যালাক্সিতে (২৪০ মিলিয়ন আলোক-বর্ষ দূরে) দেখা গিয়েছিল, ছিল ২০০৭ এর অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল সুপারনোভা। এই বিষ্ফোরণের ঐজ্জ্বল্যতা ছিল আগের অন্যান্য আবিষ্কৃত সুপারনোভার ঔজ্জ্বল্যতার কমপক্ষে ১০০ গুণ বেশি। সুপারনোভাটি যে তারকা থেকে উৎপন্ন হয়েছিল সেটি ছিল সূর্য থেকে ১৫০ গুণ বেশি ভরসম্পন্ন। যদিও সুপারনোভাটির বৈশিষ্ট্য আই.এ সুপারনোভার মতোই ছিল তবুও এর বর্ণালীতে হাইড্রোজেনের  অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় 'এসএন ২০০৬জিওয়াই' ছিল দুইটি অস্থায়ী সুপারনোভার একত্রিত রূপ। এসএন ২০০৫এপি, যা রবার্ট কিম্বি আবিষ্কার করেছেন ছিল এসএন ২০০৬জিওয়াই এর মতোই সুপারনোভা। এবং এটি ছিল সাধারণ টাইপ ২ সুপারনোভার থেকে ৩০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল।   

ক্যালশিয়াম-রিচ সুপারনোভার হোস্ট গ্যালাক্সি

২১ মে ২০০৮ সালে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেছিল যে তারা একটি ক্যামেরায় সদ্য বিষ্ফোরণরত একটি সুপারনোভা সনাক্ত করেছে। পৃথিবী থেকে ৮৮ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে এঞ্জিসি ২৭৭০ তে পর্যবেক্ষণের সময় হঠাৎ এক্স রশ্মির বিষ্ফোরণ দেখে এসএন ২৭৭০ আবিষ্কার করা হয়ছিল। অবশেষে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়'র আলিসিয়া সোডারবার্গ এটি নিশ্চিত হয়েছিল যে এই বড় এক্স রশ্মির বিষ্ফোরণটি ছিল সুপারনোভার জন্মের সূচনা।      

একজন শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যারোলিন মুর, পাকেট অবজারভেটরি সুপারনোভা সার্চ টিম'র সদস্য ২০০৮ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে এসএন ২০০৮এইচএ নামক একটি সুপারনোভা পেয়েছিলেন। তখন মহিলা বিজ্ঞানী ক্যারোলিন মুরের বয়স ছিল ১৪ বছর। তাঁকে সবচেয়ে ছোট বয়সী সুপারনোভা আবিষ্কারক বলা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারীতে, ১০ বছরের এক মেয়ে 'ক্যাথরিন আরোরা গ্রে' বলেছেন যে তিনি একটি সুপারনোভা সনাক্ত করেছেন। তাই বর্তমানে তাঁকেই বলা হয় সবচেয়ে ছোট সুপারনোভা আবিষ্কারক। মিস. গ্রে, তাঁর বাবা এবং এক বন্ধু মিলে এসএন ২০১০এলটি নামক একটি সুপারনোভা দেখতে পায় যা পৃথিবী থেকে ২৪০ মিলিয়ন দূরে ইউসিজি ৩৩৭৮ গ্যালাক্সির ক্যামেরোপ্যারড্যালিস নক্ষত্রমন্ডলে অবস্থিত।  

সর্পিল গ্যালাক্সি 'এনসিজি ৪৪২৪' এর মধ্যে 'এসএন ২০১২সিজি' নামক সুপারনোভা।

২০০৯ সালে এন্টার্টিকার গভীর স্থানের বরফ কোরে কঠিন কিছু পায় যেগুলো ১০০৬ এবং ১০৫৪ সালের সুপারনোভার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুপারনোভার গামা রশ্মি দ্বারা নাইট্রোজেন অক্সাইড তৈরী হয়েছিল। এই পদ্ধতিটি দ্বারা কয়েক হাজার বছর আগের সুপারনোভা সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে।       

২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নাসা'র চন্দ্র এক্স-রশ্মি মানমন্দির ব্যবহার করে ঘোষণা দিলেন, 'মেজিয়ার ১০০' গ্যালাক্সিতে  'এসএন ১৯৭৯সি' সুপারনোভা পরিক্ষা করার সময় তারা মাত্র ৩০ বছর বয়সী একটি কৃষ্ণ বিবর দেখতে পান। নাসা আরও সম্ভাবনা দেখিয়েছে যে কৃষ্ণ বিবরটি হতে পারে ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারা যা উচ্চ শক্তির কণিকা উৎপন্ন করে।    

২০১১ সালের ২৪ আগস্ট, প্যালমার ট্রান্সিয়েন্ট ফ্যাক্টরির স্বয়ংক্রিয় জরিপ পিনহুইল গ্যালাক্সি এম১০১-এ আই.এ ধরণের সুপারনোভা 'এসএন ২০১১ এফএ' এর বিষ্ফোরণের অল্প সময়ের মধ্যেই আবিষ্কার করে। ২১ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরের এই সুপারনোভার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে খুব তাড়াতাড়ি সময়েই। এর ফলে বিজ্ঞানীরা এই ধরণের সুপারনোভার জন্ম সম্পর্কে জানতে সক্ষম হবে।     

২০১২ সালের ১৬ই মার্চ টাইপ ২ সুপারনোভা যার নাম এসএন ২০১২এডব্লিউ, এম৯৫ গ্যালাক্সিতে আবিষ্কার করেন।  

২০১৪ সালের জানুয়ারীর ২২ তারিখে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন অবজারভেটরিতে ছাত্ররা এম৮২ গ্যালাক্সি(সিগার গ্যালাক্সি)'র কাছাকাছি 'এসএন ২০১৪জে' নামক সুপারনোভা আবিষ্কার করেন। এটি পৃথিবী থেকে ১২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। সাম্প্রতিক কালে এই সুপারনোভাটিই হলো এই দশকের সবচেয়ে কাছের পর্যবেক্ষণকৃত সুপারনোভা।  

ভবিষ্যত

আনুমানিক ভাবে বলা হয় যে আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সির আকার অনুযায়ী প্রতি ৫০ বছরে একবার সুপারনোভা বিষ্ফোরণ হবে। এই মানটি আসল মান থেকে উচ্চ। এর মানে মহাকাশের ধূলিকণার কারণে পৃথিবী থেকে ভালো করে এগুলো দেখা যায়না। নতুন যন্ত্রপাতি যেমনঃ নিউট্রিনো ডিটেক্টর, তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী দিয়ে হতে পারে ভবিষ্যতে এরকম সমস্যা থেকে মুক্তির পথ। পরবর্তীতে আমরা মহাকাশের ধূলিকণা ভেদ করেও হয়তো সুপারনোভাগুলো দেখতে পাবো।  

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Clark, D. H.; Stephenson, F. R. (জুন ২৯, ১৯৮১)। "The Historical Supernovae"। Supernovae: A survey of current research; Proceedings of the Advanced Study Institute। Cambridge, England: Dordrecht, D. Reidel Publishing Co.। পৃষ্ঠা 355–370। বিবকোড:1982sscr.conf..355C 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; time19731022 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. Stothers, Richard (1977). "Is the Supernova of CE 185 Recorded in Ancient Roman Literature". Isis 68 (3): 443447.
  4. Stothers, Richard (১৯৭৭)। "Is the Supernova of CE 185 Recorded in Ancient Roman Literature"। Isis68 (3): 443447। ডিওআই:10.1086/351822 
  5. "New evidence links stellar remains to oldest recorded supernova"। ESA News। সেপ্টেম্বর ১৮, ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৫-২৪ 
  6. Wang, Z.-R.; Qu, Q. Y.; Chen, Y. (১৯৯৮)। "The AD 393 Guest Star; the SNR RX 51713.7-3946"। Proceedings of IAU Symposium #188। Dordrecht: Kluwer Academic। পৃষ্ঠা 262। বিবকোড:1998IAUS..188..262W 
  7. Clark, D. H.; Stephenson, F. R. (June 29, 1981). "The Historical Supernovae". Supernovae: A survey of current research; Proceedings of the Advanced Study Institute. Cambridge, England: Dordrecht, D. Reidel Publishing Co. pp. 355–370.
  8. Hartmut Frommert, Christine Kronberg। "Supernovae observed in the Milky Way: Historical Supernovae"। SEDS। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-০৩ 
  9. "Astronomers Peg Brightness of History's Brightest Star"। NAOA News। মার্চ ৫, ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-০৮ 
  10. Greening, Dan (১৯৯৫)। "1054 Supernova Petrograph"। Pomona College Astronomy Program। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২৫ 
  11. Collins II, G. W.; Claspy, W. P.; Martin, J. C. (১৯৯৯)। "A Reinterpretation of Historical References to the Supernova of A.D. 1054"। Publications of the Astronomical Society of the Pacific111 (761): 871–880। arXiv:astro-ph/9904285অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1086/316401বিবকোড:1999PASP..111..871C 
  12. Brecher, K.; Fesen; Maran; Brandt (১৯৮৩)। "Ancient records and the Crab Nebula supernova"। The Observatory103: 106–113। বিবকোড:1983Obs...103..106B 
  13. Cowen, R. (১৯৯৯)। "Danish astronomer argues for a changing cosmos"। Science News156 (25 & 26)। 
  14. Nardo, Don (২০০৭)। Tycho Brahe: Pioneer of Astronomy। Compass Point Books। আইএসবিএন 0-7565-3309-0 
  15. Stacey, Blake। "Supernovas: Making Astronomical History"। SNEWS: Supernova Early Warning System। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২৫ 
  16. "3C58: Pulsar Gives Insight on Ultra Dense Matter and Magnetic Fields"Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics। ডিসেম্বর ১৪, ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২৬ 
  17. "Johannes Kepler: De Stella Nova"। New York Society Library। ২০০৭-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১৭ 
  18. Villard, R.; Sanders, R. (জুলাই ২৪, ১৯৯১)। "Stellar survivor from 1572 CE explosion supports supernova theory"। UCBerkeley News। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২৫ 
  19. Wilson, Fred L. (জুলাই ৭, ১৯৯৬)। "History of Science: Galileo and the Rise of Mechanism"। Rochester Institute of Technology। ২০০৭-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১৭ 
  20. Blair, Bill। "Bill Blair's Kepler's Supernova Remnant Page"। NASA and Johns Hopkins University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২০ 
  21. Higgins, William (১৮৬৬)। "On a New Star"। Monthly Notices of the Royal Astronomical Society26: 275। বিবকোড:1866MNRAS..26..275H 
  22. Becker, Barbara J. (১৯৯৩)। "Eclecticism, Opportunism, and the Evolution of a New Research Agenda: William and Margaret Huggins and the Origins of Astrophysics"। University of California—Irvine। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২৭ 
  23. van Zyl, Jan Eben (২০০৩)। "Variable Stars VI"Astronomical Society of Southern Africa। ২০০৬-০৯-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১৭ 
  24. Baade, W.; Zwicky, F. (১৯৩৪)। "On Super-Novae"Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America20 (5): 254–259। ডিওআই:10.1073/pnas.20.5.254পিএমআইডি 16587881পিএমসি 1076395অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:1934PNAS...20..254B 
  25. Osterbrock, D. E. (১৯৯৯)। "Who Really Coined the Word Supernova? Who First Predicted Neutron Stars?"। Bulletin of the American Astronomical Society33: 1330। বিবকোড:2001AAS...199.1501O 
  26. Murdin, Paul; Murdin, Lesley (১৯৮৫)। Supernovae (2nd সংস্করণ)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 42। আইএসবিএন 0-521-30038-X 
  27. Heilbron, John Lewis (২০০৫)। The Oxford guide to the history of physics and astronomy10। Oxford University Press US। পৃষ্ঠা 315। আইএসবিএন 0-19-517198-5 
  28. Rudolph, Minkowski (১৯৪১)। "Spectra of Supernovae"। Publications of the Astronomical Society of the Pacific53 (314): 224। ডিওআই:10.1086/125315বিবকোড:1941PASP...53..224M 
  29. da Silva, L. A. L. (১৯৯৩)। "The Classification of Supernovae"। Astrophysics and Space Science202 (2): 215–236। ডিওআই:10.1007/BF00626878বিবকোড:1993Ap&SS.202..215D 
  30. Hoyle, Fred (১৯৪৬)। "The Synthesis of the Elements from Hydrogen"। Monthly Notices of the Royal Astronomical Society106: 343–383। ডিওআই:10.1093/mnras/106.5.343বিবকোড:1946MNRAS.106..343H 
  31. Woosley, S. E. (১৯৯৯)। "Hoyle & Fowler's Nucleosynthesis in Supernovae"। Astrophysical Journal525C: 924। বিবকোড:1999ApJ...525C.924W 
  32. Marschall, Laurence A. (১৯৯৪)। The supernova story। Princeton science library। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 112–113। আইএসবিএন 0-691-03633-0 

বহিঃসংযোগ

  • Hecht, Jeff (জুন ১৯, ২০০৬)। "Enigmatic object baffles supernova team"। NewScientist.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১৭