বুটিবল্গা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বুটিবল্গা
Spot swordtail
ডানা বন্ধ অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Papilionidae
গণ: Graphium
উপগণ: Pathysa
প্রজাতি: P. nomius
দ্বিপদী নাম
Graphium nomius
(Esper, 1793)

বুটিবল্গা[১] (বৈজ্ঞানিক নাম: Graphium nomius(Esper)) এক প্রজাতির বড় আকারের প্রজাপতি। এরা প্যাপিলিওনিডি পরিবার এবং প্যাপিলিওনিনি উপগোত্র এবং গ্রাফিয়াম বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি।[২][৩]

আকার[সম্পাদনা]

বুটিবল্গা এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৭৫-৯০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[৪]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

ভারতে প্রাপ্ত বুটিবল্গা এর উপপ্রজাতি হল-[৫]

  • Graphium nomius nomius (Esper, 1799) – Indian Spot Swordtail[৩]
  • Graphium nomius swinhoei (Moore, 1878) – Indo-Chinese Spot Swordtail

বিস্তার[সম্পাদনা]

ভারত (ভারতীয় উপদ্বীপ গুজরাত পর্যন্ত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মনিপুর এবং অরুনাচল প্রদেশ ইত্যাদি),[৪], নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

স্ত্রী পুরুষ উভয় প্রকারই কাটিবল্গা (Chain swordtail)এর সাথে ভীষন সাদৃশ্যযুক্ত; ডানার উপরিতল এবং নিম্নতল উভয়ক্ষেত্রেই প্রচুর মিল। বুটিবল্গা এর সামনের ডানার নিম্নপৃষ্ঠ সাব-টার্মিনাল সাদা প্রায় গোলাকৃতি ছোপের সারি দেখা যায় এবং কাটিবল্গাএর ওই একই অবস্থান অর্থাৎ সাব-টার্মিনাল অংশে ইষদ সবজে শিকল (chain) এর মত সরলরৈখিক ছোপের সারি বর্তমান।

ডানার উপরিতল : বুটিবল্গা এর স্ত্রী পুরুষ উভয় প্রকারের ডানার উপরিতল নীলচে সাদা এবং কালো পটি এবং বন্ধনীযুক্ত। সামনের ডানার সেল এ ৫ টি তীর্যক চওড়া পটি অথবা বন্ধনী বর্তমান; যাদের মধ্যে বাইরের দিকের প্রথম বন্ধনী দুটি সেল এর মধ্যেই সীমাবন্ধ;- মধ্যবর্তী বন্ধনীটি সেল ছাড়িয়ে ২ নং শিরামধ্য পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ডানার গোড়ার দিকের বেসাল এবং সাব-বেসাল বন্ধনী দুটি ডরসাম অবধি বিস্তৃত। উভয় ডানার অ্যাপেক্স অথবা শীর্ষভাগ, টার্মেন এবং টর্নাস চওড়া ভাবে কালো। সাবটার্মিনাল নীলচে সাদা ছোপের সারি কোস্টার ঠিক নীচ থেকে টর্নাস এর সামান্য উপর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এই সরলরৈখিক সারিতে একমাত্র দ্বিতীয় শীর্ষ ছোপটি সারির সামান্য বাইরের দিকে অবস্থিত।[৬]

পিছনের ডানার মূল রঙ ডরসাম বরাবর এবং ৭ নং শিরার উপরে সাদাটে, ডরসাম বরাবর একটি দাগ (streak); একটি সাববেসাল এবং একটি তীর্যক ডিসকাল বন্ধনী দৃশ্যমান। উক্ত সাববেসাল এবং ডিসকাল বন্ধনী কোস্টা থেকে শুরু হয়ে সেল এর মধ্যদিয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। দ্বিতীয় বন্ধনী অপেক্ষা প্রথমটি অধিক চওড়া তবে নিচের দিকে ক্রমশ সরু হয়েছে। সাবটার্মিনাল ছোপের সারিতে ছোপগুলি বক্র এবং অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি। ছাইরঙা সাদা টর্নাল অংশে কয়েকটি অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি সরু কালো দাগ চোখে পড়ে। টর্নাসের উপর ১ নং শিরামধ্যে একটি ছোট কালো ছোপ; ৪ নং শিরামধ্যের নিচে অপর একটি কালো ছোপ বিদ্যমান। সরু সাদা রেখায় আবৃত কালো লম্বা তরবারির ন্যায় লেজটি ২ নং শিরা থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়েছে।

ডানার নিম্নতল : ডানার নিম্নতল মধ্যধভ্যাগে সবজে সাদা এবং চারিদিকে চওড়া বাদামী, দাগ-ছোপ পটি/বন্ধনী উপরিতলেরই প্রায় অনুরূপ। সামনের ডানায়, ৪ নং শিরার নীচে সাবটার্মিনাল ছোপ সারির ভিতরের দিকে কালো অংশ চোখে পড়ে। সেল অভ্যন্তরস্থ মধ্যবর্তী এবং সাববেসাল বন্ধনীর ঠিক নীচে যথাক্রমে একটি কালো ছোপ এবং লম্বা চওড়া কালো দাগ লক্ষ্য করা যায়। পিছনের ডানায় ডিসকাল অংশে ভিতরের দিকে কালো, সরু একটি অনিয়মিত এবং ভাঙ্গা ভাঙ্গা বন্ধনী এবং এর বাইরের পাশে কালো বহিঃপ্রান্ত সীমায় ঘেরা লাল, বিভিন্ন আকৃতির ডিসকাল ছোপ দেখা যায়। পিছনের ডানার টার্মেন ঢেউ খেলানো (wavy)।

শুঙ্গ কালো এবং শীর্ষে মুগুরের মতো আকৃতিযুক্ত (clubed)। মাথা, বক্ষ এবং উদর উপরিতলে কালো রবং নিম্নতলে ইষদ হলদেটে সাদা।[৬]

আচরণ[সম্পাদনা]

স্বভাব চঞ্চল এই প্রজাতির উড়ান অত্যন্ত দ্রুত ও শক্তিশালী, কখনও প্রায় স্থির হয়ে বসতে দেখা যায় না। এরা সাধারনত ভূমির কাছাকাছি নীচ দিয়ে ওড়ে সোজাপথে। উষ্ণ আবহাওয়ায় প্রায়শই ভিজে পথ, জঙ্গলের স্যাঁতস্যাঁতে কাঁচা রাস্তা এবং কাদামাটিতে ঝাঁক বেঁধে বসে থাকা এদের ভীষন প্রিয় অভ্যাস। গ্রীষ্মকালে এবং প্রাক্‌ বর্ষার বৃষ্টির পরে এরা জঙ্গলস্থ নদী অথবা ঝর্না সংলগ্ন ভিজে এবং স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে (riparian region) প্রচুর সংখ্যায় বিচরণ করে মাড পাডল করার উদ্দেশ্যে। এরা অন্যান্য প্রজাতির সাথে দলবদ্ধ হয়ে, আবার কখনো কখনো নিজেরা অপেক্ষাকৃত ছোট দলে ভাগ হয়ে মাডপাডল করে। প্রায়শই দেখা যায় এরা কোনো কোনো ভিজে মাটির ছোপে আচমকা উড়ে এসে অবস্থান করে, খানিক জলপান করে কয়েক পা হেঁটে বেড়ায় এবং প্বার্শবর্তী অন্য স্থানগুলি পরিদর্শন করেই হঠাৎ উড়ে যায়। এরা এতটাই স্বভাবচঞ্চল যে এমনকি জলপান অথবা বিভিন্ন প্রানীর বিষ্ঠা থেকে রসপান করার সময়ও ক্রমাগত দ্রুতবেগে ডানা ঝাপটে চলে। এই প্রজাতি স্বভাবগত অতি চঞ্চলতার কারনে ভীষন সতর্ক এবং সামান্য বিরক্ত হলেই উড়ে চলে যায় এবং আর সেই স্থানে ফিরে আসে না। সোজাপথে উড়ার সময় এদের উড়ান পথের ধরন খানিক উঁচুতে উঠে আবার খানিক নিচুতে নেমে আসা এবং পুনরায় খানিক উঁচুতে ওঠা; উড়ানের এই ধরন অপেক্ষাকৃত তীব্র হয় বাধা পেলে অথবা ভয় পেলে। তবে পছন্দসই মাড-পাডলের জায়গা খুঁজে পেলে ও একবার ঠিকমতো বসে গেলে এরা খানিকটা সময় জলপানের কাজে নিমগ্ন হয়ে যায় এবং এইসময় এদের স্বভাবগত চাঞ্চল্য একটু কমে, সহনশীলতা বাড়ে এবং আশেপাশের নড়াচড়ায় কম বিরক্ত হয়।[৪]

ফুলের মধুপানে এদের আসক্তি খানিক কম এবং প্রায়শই ফুলে বসতে দেখা যায় না। এরা সাধারনত গুল্ম এবং বড় গাছের ফুলে অবস্থান করে এবং কখনো কখনো অনেক সংখ্যায় একসাথে বড় গাছের ফুলে এদের মধুপান লক্ষ্য করা যায়। গামারি নামক একপ্রকার পর্ণমোচী বৃক্ষের ফুল (যা শুকনো অঞ্চলে দেখা যায়) এদের সবচেয়ে প্রিয় মধুপানের জায়গা। এই প্রজাতি ভূমির কাছাকাছি জায়গায় রোদ পোহায় গুল্ম অথবা ঝোপঝাড়ের পাতায় বসে ডানা সামান্য অথবা সম্পূর্ণ মেলে।

এই প্রজাতি সাধারনত ১০০০মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পর্নমোচী বনাঞ্চলে বসবাস করতে পছন্দ করে, তবে নিচু উচ্চতাবিশিষ্ট বনাঞ্চলে, সমতলভূমিতে এবং কখনো কখনো ২০০০ মিটার উচ্চতা অবধি এদের বিচরন লক্ষ্য করা যায়। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গরমের মাসগুলিতে এদের অধিক দর্শন মেলে।[১]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

ডিম[সম্পাদনা]

ডিম গোলাকৃতি, হলদেটে এবং সামান্য চক্‌চকে বর্ণের। ডিমগুলি স্ত্রী বুটিবল্গা একটি একটি করে আলাদা কচি পাতা অথবা কুঁড়ির নিচের অংশে, কিনারায় অথবা পাতার উপরিতলে ডিম পাড়ে।[৬]

শূককীট[সম্পাদনা]

শূককীট কালো এবং নীচের অংশ সবুজ বর্নের হয়। এদের দেহের উপরিতল পাশাপাশি ভাবে সাদা ডোরাযুক্ত। পৃষ্ঠদেশের মাঝ বরাবর একটি চওড়া খয়েরী দাগ সমস্ত দেহখন্ড জুড়েই অবস্থান করে। অগ্র এবং পশ্চাৎ ভাগের দেহখন্ডগুলি হলদেটে। বক্ষভাগে প্রতি দেহখন্ডে একজোড়া করে এবং পায়ুদেশে একজোড়া কালোকাঁটা বর্তমান। সর্বমোট ৪ জোড়া কাঁটা দেখা যায়; কাঁটাগুলি ছোট তবে ধারালো। অসমেটারিয়াম চক্‌চকে সবুজ বর্নের। বুটিবল্গার শূককীট অলস প্রকৃতির এবং এরা মূলত সন্ধ্যাবেলা এবং রাত্রে খাদ্যগ্রহন করে।[৬]

আহার্য উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

এই প্রজাতির শূককীট Annonaceae পরিবারের উদ্ভিদ Miliusa tomentosum, Miliusa velutina, দেবদারু (Polyalthia longifolia) পর্ণমোচী প্রকারের গাছের কচি পাতার রসালো অংশ আহার করে।

মূককীট[সম্পাদনা]

গ্রাফিয়াম বর্গভুক্ত প্রজাতিদের অন্যান্য সদস্যদের মতন বুটিবল্গা এর মূককীট শিংযুক্ত। মাথার দুইপাশে একটি করে ছোট উৎক্ষিপ্ত অংশ দৃশ্যমান। মূককীটের গায়ের রঙ মেটে এবং বাদামীর মিশ্রণ। আহার্য উদ্ভিদে মূককীট অবস্থান করে না; পাথরের নীচে অথবা পাথরের ফাটলে এরা অবস্থান করে।[৬]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১০। 
  2. Varshney, R.K.; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 11। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  3. Savela, Markku। "Graphium nomius (Esper, 1799)"Lepidoptera and Some Other Life Forms। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০ 
  4. Kunte, Krushnamegh (২০১৩)। Butterflies of The Garo Hills। Dehradun: Samrakshan Trust, Titli Trust and Indian Foundation of Butterflies। পৃষ্ঠা ১৪১। 
  5. "Graphium nomius (Esper, 1799) - Spot Swordtail"Butterflies of India। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০২৩ 
  6. Bingham, C.T. (১৯০৭)। The Fauna of British India, Including Ceylon and BurmaII (1st সংস্করণ)। London: Taylor and Francis, Ltd.। পৃষ্ঠা 101–103। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]