রামচন্দ্র দত্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রামচন্দ্র দত্ত
রামচন্দ্র দত্ত
জন্ম(১৮৫১-১০-৩০)৩০ অক্টোবর ১৮৫১
মৃত্যু১৭ জানুয়ারি ১৮৯৯(1899-01-17) (বয়স ৪৭)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাসরকারি কর্মচারী
চিকিৎসক
রসায়নবিদ
লেখক
পরিচিতির কারণশ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য
আত্মীয়স্বামী বিবেকানন্দ

রামচন্দ্র দত্ত (৩০ অক্টোবর ১৮৫১ — ১৭ জানুয়ারি ১৮৯৯) ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পরম ভক্ত, গৃহী সন্ন্যাসী ও লেখক।  তিনি ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং সমাজ সংস্কারক  স্বামী বিবেকানন্দর আত্মীয় ছিলেন । স্নাতক হওয়ার পর সরকারী চাকরি নেন ও রসায়ন গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি দেশজ ওষধিগাছপালার নির্যাস হতে রক্ত আমাশয়ের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন এবং "আধুনিক বিজ্ঞান"-এর প্রসারে কাজ করেন।

রামচন্দ্রশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শিষ্য হন এবং নরেন্দ্রনাথ দত্তকে তিনি দক্ষিণেশ্বরে নিয়ে যান এবং রামকৃষ্ণের সাথে সাক্ষাত করাতে উদ্দমী হন। তিনি ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই জানুয়ারি হৃদরোগে ও দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানির কারণে মারা যান।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

রামচন্দ্র বৃটিশ ভারতের কলকাতার নারকেলডাঙায় ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে অক্টোবর এক বৈষ্ণবকুলে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা নৃসিংহ প্রসাদ দত্ত ছিলেন একজন  কৃষ্ণভক্ত এবং মাতা তুলসীমণি ছিলেন উদার এবং দয়াময়ী এক গৃহিণী। রামচন্দ্র আড়াই বৎসর বয়সে মাতৃহারা হন।[১] তাঁদের এক আত্মীয়া স্বামী বিবেকানন্দর মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী রামচন্দ্রের যত্ন নেন ও প্রতিপালন করেন [২] শৈশবেই রামচন্দ্র  কৃষ্ণভজনায় আগ্রহী হন। তাদের বাড়ির কাছের  বিভিন্ন মতাবলম্বী সাধকদের আশ্রমে যাতায়াতে তার ধর্মীয় আচরণ প্রকাশ পায়। তিনি নিরামিষাসী ছিলেন এবং আমিষ আহার কখনো গ্রহণ করতেন না। এমনকি যখন তার বয়ঃক্রম দশ বৎসর হয় তখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে আমিষ রান্না করা খাবার  আহার করাতে পীড়াপীড়ি করা হলে তিনি তৎক্ষনাৎ  সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন।

পিতা নৃসিংহ প্রসাদ দ্বিতীয়বার বিবাহ করলে, রামচন্দ্র সৎমা' কে মানিয়ে নিতে না পেরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন[৩]

বহু প্রতিকূলতার মাঝে রামচন্দ্র জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করেছেন। তারপর তিনি কলকাতার ক্যাম্বেল মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন ও স্নাতক হন।[৩]

তিনি কৃষ্ণপ্রেয়সীকে বিবাহ করেন এবং বিবাহের সময় নরেন্দ্রনাথের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

স্নাতক হওয়ার পর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে রামচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজে রসায়ন গবেষণাগারে কুইনাইন রিসার্চ প্রফেসরের সহকারী হিসাবে যোগ দেন। তার আর্থিক অবস্থা সচ্ছল হলে তিনি মধ্য কলকাতায় একটি বাড়ি কেনেন।[৩]

কর্মক্ষেত্রে তার এক বৃটিশ  কর্মকর্তা সি এফ উডের কাছে রসায়নশাস্ত্র শেখেন। তিনি দেশজ ওষধি গাছপালার নির্যাস হতে রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। তিনি  সরকারের স্বীকৃতিও  লাভ করেন। অগ্রণী চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশনে তার আবিষ্কৃত প্রতিষেধক লিখতে শুরু করেন। ফলস্বরূপ,  রামচন্দ্র প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি 'কেমিস্ট্র অ্যাসোসিয়েশন অব লন্ডন'-এর সদস্য হন এবং সরকারের রাসায়নিক পরীক্ষক পদে উন্নীত হন। সেই সাথে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপকও  হন।[৩] এইসময় কৃমি ও জ্বরের প্রতিকারে কুটছে বা কুড়ি থেকে 'কুড়চিসীন'আবিষ্কার করেন। তিনি ডা.মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানশালায়ও রসায়নশাস্ত্রের উপদেশ দিতেন।[৪]

আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার ফলে তিনি নাস্তিক ও যুক্তিবাদী হয়ে ওঠেন। তিনি প্রায়ই বলতেন  —

" সেসময় আমরা ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলাম না। আমরা মনে করতাম প্রকৃতির নিয়মে সবকিছু ঘটে চলেছে,  পরিবর্তিত হচ্ছে, সমাধানও হচ্ছে। আমরা বাস্তববাদী ছিলাম এবং আমাদের জীবন শৈলির সব কিছুই জীবনের কল্যাণের জন্যই। "

তার  ঈশ্বর ও ধর্মীয় বিষয়ে ভালো জ্ঞান ছিল। নাস্তিকতার  দৃষ্টিতে ভালো বক্তব্য রাখতেন এবং তার এই ভাবনা পাঁচ বছর চলেছিল।[৩]

আকস্মিকভাবে তার কনিষ্ঠা  কন্যা সন্তানের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ পান আত্ম প্রতিফলনে ঈশ্বরের প্রতি মনোভাবে  তত্ত্বান্বেষণের সূচনা হয় তার। সান্ত্বনা পেতে তিনি ব্রাহ্ম খ্রীষ্ট হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসে নির্ভর করতে চাইলেন, কিন্তু  ঈশ্বর সম্পর্কে তার জিজ্ঞাস্য বিষয়ের সন্ধান মিলল না। অবশেষে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই নভেম্বর তার এক বন্ধু গোপাল চন্দ্র মিত্র ও  মাসতুতো ভাই মনোমোহন মিত্রের সাথে  দক্ষিণেশ্বরে এসে শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শনলাভ করেন। দর্শনমাত্র তার হৃদয় শান্ত হয়। এই ঘটনা ছিল তার জীবনের এক সন্ধিক্ষণ।তিনি ঠাকুরের একনিষ্ঠ  ভক্ত হন এবং তার কাছে নিয়মিত  যাতায়াত শুরু করেন এবং তিনিই যে তার আরাধ্য দেবতা তা অনুভব করতে থাকেন। ১৮৮০ এবং ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দে রামকৃষ্ণ তাঁহার গৃহে শুভাগমন করেন। ফলে রামচন্দ্রের মন আমূল পরিবর্তন আসে । তিনি ও মনোমোহনবাবু একযোগে রামকৃষ্ণকে অবতার হিসাবে  প্রচার করতে থাকেন। রামচন্দ্র  এই বিষয়ে অনেক বক্তৃতা করেন। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২ রা জুন বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে বৈশাখের পূর্ণিমার দিন শ্রীরামকৃষ্ণ রামচন্দ্রের বাড়িতে যান, সেদিনটি এক উৎসবে পরিণত হয়েছিল।[৩]

আধ্যাত্মিক জীবন[সম্পাদনা]

রামচন্দ্র দত্ত শ্রীরামকৃষ্ণের  গৃহী শিষ্য ছিলেন । তিনি তার গুরু সম্পর্কে এমন ভাব ও ভালবাসা অনুভব করতেন যে,  তার গুরু, এমনকি গুরুর বাহক ও বাহন যেখানে গমন করত সেস্থান যেন পবিত্র হয়ে যেত[৩]

১৮৮২ - ৮৬ খ্রিস্টাব্দে  শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যদের মধ্যে দুটি গোষ্ঠী ছিল — গৃহী শিষ্য গোষ্ঠী যার মধ্যে রামচন্দ্র দত্ত ছিলেন এবং অপর এক গৃহত্যাগী শিষ্য গোষ্ঠী যার অন্যতম হলেন — তার মাসতুতো ভাই নরেন্দ্রনাথ দত্ত (পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দ)। এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ছিল। [৫]

রামচন্দ্র তার 'কথামৃত' গ্রন্থে তা প্রকাশ করছিলেন -

"তিনি (রামকৃষ্ণ) গৃহী শিষ্যদের উপস্থিতিতে গৃহত্যাগী শিষ্যদের বিষয়ে কথা বলতেন না, আবার গৃহত্যাগী শিষ্যদের উপস্থিতিতে গৃহীশিষ্যদের কথা বলতেন না। কিন্তু যখন উভয় গোষ্ঠীই উপস্থিত থাকতেন, মাঝেমধ্যে উভয়েরই সমালোচনা করতেন একে অপরের শাস্তির কথা বলতেন। এভাবে দুটি গোষ্ঠীর মাঝে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে বীরত্ব তথা 'বীরভাব'-এর অনুভূতি রাখতেন"

[৫]

গুরুর প্রতি রামচন্দ্রের ভক্তি এতটাই গভীর ছিল যে, ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ১৬ ই আগস্ট শ্রীরামকৃষ্ণের প্রয়াণে গঙ্গার তীরে তার দেহ সংস্কারের [৩] পর দেহাবশেষ-বিভূতি তার কাশীপুরের শ্মশানঘাট  থেকে এক কলসে সংগ্রহ করে প্রথমে রামকৃষ্ণদেবের বাসকক্ষে বিছানায় রাখা হয়েছিল। সময় বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের জীবনের রহমতের ঘটনা বর্ণনা করে শোকাহত শিষ্যদের শান্ত করতে চেয়েছিলেন। রামচন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণের দেহাবশেষ-বিভূতিপূর্ণ  কলসটি  তার কাঁকুড়গাছির বাড়িতে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিবেকানন্দর সহকর্মীরা বিবেকানন্দর সম্মতিতে এক কৌশল অবলম্বন করে। তারা অর্ধেকেরও বেশিরভাগ দেহাবশেষ-বিভূতি অন্য একটি কলসে ভরেন এবং আগেরটি রামচন্দ্র কে দিয়ে দেন। রামচন্দ্র সেটি ২৩ শে আগস্ট জন্মাষ্টমীর দিন তার কাঁকুড়গাছির বাড়িতে যোগোদ্যানে প্রতিষ্ঠা করেন। [৬][৩]

শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি তার ভক্তি এত গভীর ছিল যে, প্রভুর এই অবশিষ্টাংশ নিয়ে পবিত্র জ্ঞানে এক মন্দির স্থাপন করেন। তিনি এখানে কেবল উপাসনা করতেন না, তিনি প্রচার করতেন যে, রামকৃষ্ণ ছিলেন ঈশ্বরের এক প্রতিভূ — এক অবতার। তিনি তার প্রভুর কাছ থেকে অর্জিত  আধ্যাত্মিক জ্ঞানে একজন 'ধর্ম-প্রচারক' হয়ে যান। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবন ও শিক্ষার উপর কলকাতার স্টার, সিটি এবং মিনার্ভা থিয়েটার্স সহ বিভিন্ন স্থানে আঠারোটি সর্বজনীন বক্তৃতা করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের এক শুক্রবারে তার প্রথম বক্তৃতার শিরোনাম ছিল — " রামকৃষ্ণ পরমহংস কি অবতার?"[৩]

আধ্যাত্মিক জ্ঞানে আধারিত হয়ে তিনি মিতব্যয়ী জীবন যাপন করতেন। সিমলার বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন, কিন্তু সেখান থেকে প্রতিদিন কাঁকুড়গাছির যোগোদ্যানে পূজার জন্য যাওয়া এক নির্দিষ্ট নিয়মে পরিণত হয়েছিল। সরকারি কর্মজীবনে তিনি জনসাধারণ ও সরবরাহকারীদের সাথে আচরণে অত্যন্ত শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন। তিনি সরকারি সরবরাহ ও বিতরণে তাদের মানের ত্রুটি হলে বা বিনিময়ে  কোন রকমের অনুগ্রহ স্বীকার করতেন না।[৩]

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এতটাই দার্শনিক হয়ে ওঠেন যে, যখন তার এক কন্যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়, তার উদাসী প্রতিক্রিয়া ছিল - 'প্রভু আমাকে সেই কন্যাটিকে দিয়ে ছিলেন আর তিনিই তাকে নিয়ে নিলেন, সুতরাং কেন আর বিলাপ করব?'[৩]

পরবর্তী জীবন[সম্পাদনা]

রামচন্দ্রের তপস্বীর জীবনযাপন স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আমাশয়ে আক্রান্ত হলে তার দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিস এবং কার্বনকলের সমস্যাকে জটিল করে তোলে। স্ত্রী, বন্ধু বান্ধব ও শিষ্যদের  পরিচর্যার মাঝে[৩] ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই জানুয়ারি তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় হৃদরোগে আর দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানিতে এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইচ্ছানুসারে যোগোদ্যানে শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির সংলগ্ন স্থানে তার দেহাবশেষ সমাহিত করা হয়। তিনি চেয়েছিলেন যেন তার দেহাবশেষের স্বল্পাংশ যোগোদ্যানের প্রবেশদ্বারে কবরস্থ করা হয়, প্রভুর শিষ্যেরা যখন উদ্যানে প্রবেশ করবেন আমার মস্তক  তাদের পায়ের স্পর্শ পাবে চিরকাল।"[৩]

স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

রামচন্দ্র দত্ত স্বামী বিবেকানন্দের আত্মীয় ছিলেন এবং তাঁকে দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে রামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে রাজি করান।

রামচন্দ্র ছিলেন নরেন্দ্রনাথ  দত্তর মাতা ভুবনেশ্বরী দেবীর  ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি নরেন্দ্রনাথের থেকে বয়সে বারো বছরের বড় ছিলেন, কিন্তু ভুবনেশ্বরী দেবী তাকে নিজের সন্তান হিসাবে গণ্য করতেন। নরেন্দ্রনাথের ছোট ভাই মহেন্দ্র নাথ ছোটবেলা থেকেই রামচন্দ্রকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসাবেই জানতেন। [৬]

১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে আয়োজিত সভায় গৃহী শিষ্যদের মধ্যে  রামচন্দ্র ও তার ষোল বৎসর বয়সী মাসতুতো ভাই নরেন্দ্রনাথ দত্তের উপস্থিতিতে শ্রীরামকৃষ্ণ  খুশী হন। নরেন্দ্রনাথ তখনো ছাত্র ছিলেন এবং এই রকম সভা-সমাবেশে গান করতেন। রামকৃষ্ণ কিশোরটির গান খুব পছন্দ করতেন এবং রামচন্দ্র ও সুরেন্দ্রকে প্রায়শই  বলতেন কিশোরটিকে দক্ষিণেশ্বরে নিয়ে আসতে। তিনি নরেন্দ্রনাথের সাথে দেখা করতে এতটাই উদগ্রীব হতেন যে, তিনি একদিন সরাসরি নরেন্দ্রকে বলেন তার সাথে দেখা করতে। রামকৃষ্ণ নরেন্দ্রের প্রতি এতটাই অনুরাগী ছিলেন এবং এর প্রভাব এত গভীর ছিল যে, নরেন্দ্রের সাথে দেখা না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস ধরে কেবলই কেঁদেছিলেন। নরেন্দ্রনাথ কিন্তু রামকৃষ্ণকে এক বাতিকগ্রস্ত লোক ভেবেই সময় নিয়েছিলেন। [৫]

১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে যখন রামচন্দ্র গুরুতর অসুস্থ হন, পশ্চিমী দেশগুলি থেকে ফিরে আসার পর স্বামী বিবেকানন্দ তার খুড়তুতো ভাইয়ের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে রামচন্দ্রের কাছে যান। সেসময় সেখানে কেউ না থাকার কারণে বিবেকানন্দ তাকে সহায়তা করেন এমনকি রামচন্দ্রকে শৌচাগারে নিতে পায়ে চপ্পল পরাতে পর্যন্ত সাহায্য করেন। বিবেকানন্দের এই আসাটা আর তার দয়ালু ব্যবহার, রামচন্দ্রের কাছে এতটাই মর্মস্পর্শী ছিল যে, অশ্রুসিক্ত নয়নে রামচন্দ্র বলেন -

বিলে, আমেরিকা ভ্রমণে, এত খ্যাতি অর্জন করার পর আমি ভেবেছিলাম, তুই আমাদের ভুলে গেছিস। কিন্তু না, তুই আমাদের সেই ছোট ভাই, বিলেই আছিস।"

[৩]

রচিত জীবনীগ্রন্থ[সম্পাদনা]

  • ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে রামচন্দ্র রচিত শ্রীরামকৃষ্ণের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা র উপর কিছু সংকলন রামকৃষ্ণের পরামর্শ অনুসারে  অবিলম্বে প্রকাশিত হয় নি। কেননা, তিনি বলেছিলেন -

" এখনই আমার জীবনী প্রকাশ করবেন না। যদি করেন, আমার পার্থিব শরীর আর স্থায়ী হবে না।"

রামচন্দ্র সম্মত হন এবং পরবর্তীতে লেখেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনবৃত্তান্ত যা কিনা পরে  তত্ত্ব-প্রকাশিকা নামে বহুল প্রচলিত হয়। এই সময় একটি বাংলা মাসিক পত্রিকা তত্ত্ব-মঞ্জরী তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হত।[৩] [৪]

  • ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে রামচন্দ্র সাধক রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবন ও শিক্ষায় গোপন তান্ত্রিক বিষয়ে 'গুহ্যকথা' অভিব্যক্তি ব্যবহার করে তত্ত্বাসার [৫]
  • তিনিজীবনবৃত্তান্ত নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। যে গ্রন্থে বিবেকানন্দর নাম নেওয়া হলে রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন। তাই বইটিতে তিনি তার নাম "বোশ অ্যান্ড রট" উল্লেখ করেন। [৫]
  • রসায়ন বিজ্ঞান[৪]
  • শ্রীরামকৃষ্ণদেবের উপদেশ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের পরিচয়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬ 
  2. Samkara 2011
  3. Swami Chetananda। "Biography of Ram Chandra Datta"They Lived With God। Advaita Ashrama, Mayavati। Archived from the original on ৮ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩ 
  4. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬৫৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  5. Kripal 1998
  6. Chattopadhyaya 1999