ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার (চিত্রকর্ম)
ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার | |
---|---|
শিল্পী | নরম্যান রকওয়েল |
বছর | ১৯৪৯ |
উপাদান | ক্যানভাসে তৈলচিত্র |
আয়তন | ১১৬.২ সেমি × ৯০ সেমি (৪৫.৭৫ ইঞ্চি × ৩৫.৫ ইঞ্চি) |
অবস্থান | নরম্যান রকওয়েল জাদুঘর, স্টকব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার হল মার্কিন চিত্রশিল্পী নরম্যান রকওয়েল কর্তৃক সৃষ্ট জনপ্রিয় ফোর ফ্রিডমস তৈলচিত্রের শেষ অংশ। ধারাবাহিকটি ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট কর্তৃক প্রদেয় ফোর ফ্রিডমস নামে বিবৃত চারটি লক্ষের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ১৯৪৩ সালের ১৩ মার্চ দা সেটারডে ইভিনিং পোস্টে সেসময়ের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ স্টিফেন ভিনচেন্ট বেনেটের প্রবন্ধের সাথে ধারাবাহিকের এই কর্মটি প্রকাশিত হয়েছিল। চিত্রকর্মটি সাধারণত দা ব্লিটজের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানি কর্তৃক যুক্তরাজ্যের উপর বোমাহামলা) সময় অভিভাবক কর্তৃক শিশুদের ঘুম পারানো হচ্ছে তা বুঝানো হয়।
নেপথ্য কথা
[সম্পাদনা]ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার হল নর্মান রকওয়েলের আঁকা ফোর ফ্রিডম শিরোনামের চারটি তৈলচিত্র ধারাবাহিকের মধ্যে সর্বশেষ। চিত্রকর্মগুলি ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি, ৭৭তম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে দেওয়া স্টেট অব দা ইউনিয়ন ভাষণে রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট দ্বারা তার কাজগুলি অনুপ্রাণিত হয়েছিল; সেই বক্তৃতায় ফোর ফ্রিডমের (চারটি স্বাধীনতা) কথা উল্লেখ করা হয়।[১] ফোর ফ্রিডমস থিমটি পরবর্তীতে আটলান্টিক সনদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়[২][৩] এবং এটি জাতিসংঘের সনদের অংশ হয়ে ওঠে।[১] ১৯৪৩ সালের শুরুর দিকে টানা চার সপ্তাহে প্রখ্যাত লেখকদের রচনার সাথে দা সেটারডে ইভনিং পোস্টে চিত্রগুলির ধারাবাহিক ছাপা হয়েছিল: ফ্রিডম অব স্পিচ (বাক স্বাধীনতা) (২০ ফেব্রুয়ারি), ফ্রিডম অব ওরশিপ (উপাসনার স্বাধীনতা) (২৭ ফেব্রুয়ারি), ফ্রিডম ফ্রম ওয়ান্ট (চাওয়ার স্বাধীনতা) (৬ মার্চ) এবং ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার (ভয় থেকে মুক্তি) (১৩ মার্চ)। ফলশ্রুতিতে, ধারাবাহিকটি পোস্টাকারে প্রকাশিত হলে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছিল, এবং মার্কিন সরকারের দ্বিতীয় যুদ্ধ বন্ড ড্রাইভে সহায়ক হিসেবে সেগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল।
দা ব্লিটজ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি দ্বারা যুক্তরাজ্যের টেকসই কৌশলগত বিমান আক্রমণকাল। ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪১ সালের ২১ মে পর্যন্ত ১৬টি ব্রিটিশ শহর বড় ধরনের বিমান হামলার শিকার হয়। ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে লন্ডনে লুফটওয়াফের দ্বারা টানা ৫৭ রাত বোমা হামলা হয়।[৪] সামগ্রিকভাবে, ব্লিটজের সময় লন্ডনের এক মিলিয়নেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এবং ৪০ হাজারেরও অধিক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল, তাদের প্রায় অর্ধেক লন্ডনে।[৫]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]চিত্রকর্মটি শিশুদের এই বিশ্বের বিপদসমুহ না জেনে নিরাপদে তাদের বিছানায় শয়ন প্রদর্শন করে যেখানে তাদের পিতা-মাতা তাদের দিকে চেয়ে আছে। মা যখন তাদের ঘুম পাড়াচ্ছে তখন বাবা একটি সংবাদপত্র ধরে আছে যেখানে যুদ্ধের বিষাদ বর্ণিত আছে। কিন্তু বাবার দৃষ্টি সম্পূর্ণরূপে তার সন্তানদের উপর, ভীতিপদ খবরগুলোর উপর নয়। যদিওবা চিত্রকর্মটি সাধারণত দা ব্লিটজের সময় পিতামাতা কর্তৃক মার্কিন শিশুদের ঘুম পারানো হচ্ছে তা বুঝানো হয়েছে, কিন্তু শিশুরা ইতোমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। পিতামাতা ঘুমিয়ে পড়ার আগে সন্তানদেরকে তাদের সংকীর্ণ বিছানায় দেখতে এসেছে। মাকে বিছানার চাদর ঠিক করতে দেখা যায়। বাবা "ক্লাসিক রকওয়েল অনলুকার" হিসাবে প্রদর্শিত হয়েছে, যে কিনা চিত্রকর্মে দর্শকের ভূমিকা পালন করে। যেহেতু তিনি তার চশমা ধরে আছেন, তাই আমরা অনুমান করি যে তিনি তার হাতের বেনিংটন ব্যানার পড়া শেষ করেছেন। সংবাদপত্রটির শিরোনাম "বমিং কি ... হরর হিট", যা কিনা বিমান আক্রমণকে নির্দেশ করে।[৬] পেছনে দরজার সাথে সংযোগকারী হলওয়ে ও সিঁড়ি রয়েছে।[৬]
রকওয়েল চিত্রকর্মটির তেমন যত্ন নেননি। তার মতে ছবিটা একটি সোজা ধারণা থেকে আঁকা হয়েছে। লন্ডনে বোমাবর্ষণের সময় আঁকা ছবিটা বোঝাতে চেয়েছে "ধন্যবাদ ঈশ্বর, আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ও এ অনুভূতি দিয়ে ঘুম পাড়াতে পেরেছি যে তারা জানে রাতে তাদের হত্যা করা হবে না।"[৭]
সৃজন
[সম্পাদনা]এই চিত্রকর্মের জন্য মডেল হয়েছিলেন জিম মার্টিন, মিস এডগার লরেন্স (ডরোথি)[৮], এবং রকওয়েলের ছুতার ওয়াল্ট স্কয়ারসের দুই সন্তান।সবাই ছিলেন ওলিংটন, ভারমন্টে রকওয়েলের প্রতিবেশী।[৯] রকওয়েলের অনুরোধে এই কাজে ব্যবহারের জন্য বেনিংটন ব্যানার একটি প্রতীকী সংস্করণ প্রস্তুত করেছিল।[৮] ১৯৪৩ সালের ১৩ মার্চ, সেটারডে ইভিনিং পোস্টে স্টিফেন ভিনচেন্ট বেনেটের প্রবন্ধের সাথে ধারাবাহিকের এই চিত্রকর্মটি প্রকাশিত হয়েছিল।[১০] কাকতালীয়ভাবে যেদিন এটা প্রকাশিত হয়েছিল সেদিন কবি, ঐপন্যাসিক এবং ছোট-গল্প লেখক বেনেট মারা গিয়েছিলেন।[১১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]"চতুর্থটি হল ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার—বৈশ্বিক পরিভাষায় যার অর্থ দাঁড়ায়, বিশ্ব পরিসরে এমন এক পর্যায় পর্যন্ত এবং এমন এক উপায়ে যুদ্ধোপকরণ হ্রাস পায় যেন কোন জায়গার কোন দেশ যাতে প্রতিবেশী কারো প্রতি আগ্রাসনে সক্ষম না থাকে"
—ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ৬ জানুয়ারি ১৯৪১, ৭৭তম ইউনাইটেড কংগ্রেসে
এই চিত্রকর্মটি হল ফোর ফ্রিডম ধারাবাহিকটি গঠনের পূর্বের একমাত্র নতুন চিত্রকর্ম। যদিও এটি মূলত ব্রিটেনের যুদ্ধকে পেশ করতে সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিন্তু সেটারডে ইভিনিং পোস্ট এটিকে প্রকাশ করেনি।[১২] ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ফোর ফ্রিডমের চিত্রকর্মগুলোকে দেশব্যাপী পরিভ্রমণ করায়। ফোর ফ্রিডমের চিত্রকর্মগুলোর পরিভ্রমণ $১৩০,০০০,০০০ এর পর্যন্ত ওয়ার বন্ডের বিক্রি বাড়ায়।[১২] রকওয়েলের ফোর ফ্রিডমের চিত্রকর্মগুলো ওয়ার বন্ড প্রদর্শনীতে বিক্রির জন্য ডাকটিকিট স্মারক হিসেবে পুনঃপ্রস্তুত করা হয়েছিল।[১৩]
সমালোচকদের মন্তব্য
[সম্পাদনা]দৃশ্যটিকে মাত্রাতিরিক্ত অন্তরঙ্গ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আসবাবপত্রের ও আলোক বিন্যাস এই অন্তরঙ্গতা সৃজনে ভূমিকা রেখেছে।[১২] ডেবোরাহ সোলোমন দৃশ্যটিকে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন, "কিছুটা ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ অনুভব, সাথে ভালোবাসার অত্যাধুনিক ছোঁয়া।"[৬] দা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ব্রুস কোল বলেছেন, "যুদ্ধের এই প্রসঙ্গটি এতই সুনির্দিষ্ট যে, এটি ভয় বা রুজভেল্টের বৈশ্বিক নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা সম্পর্কে সামান্য চিহ্নই বহন করে। রকওয়েল তার হাত হালকা বাঁধাগুলোর পাশ দিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি।"[১৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "100 Documents That Shaped American:President Franklin Roosevelt's Annual Message (Four Freedoms) to Congress (1941)" [১০০ টি ডকুমেন্টস যা আমেরিকাকে আকার দিয়েছে: প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের কংগ্রেসের প্রতি বার্ষিক বার্তা (ফোর ফ্রিডম) (১৯৪১)]। মার্কিন সংবাদ ও বিশ্ব প্রতিবেদন। মার্কিন সংবাদ ও বিশ্ব প্রতিবেদন, এল.পি.। ২০০৮-০৪-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১১।
- ↑ বয়েড ২০১২, পৃ. ১২।
- ↑ কার্ন ২০০৭, পৃ. ২৮৭।
- ↑ ব্রুস রবিনসন (২০১১-০৩-৩০)। "দা ব্লিটজ"। বিবিসি। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২৭।
- ↑ রিচার্ডস ১৯৫৩, পৃ. ২১৭।
- ↑ ক খ গ সলোমন ২০১৩, পৃ. ২১০।
- ↑ হ্যালপার্ন ২০০৬, পৃ. ৩৫-৩৬।
- ↑ ক খ মারে এবং ম্যাককেব
- ↑ মেয়ার ও রকওয়েল ১৯৮১, পৃ. ১৩৩।
- ↑ "নরম্যান রকওয়েলের ফোর ফ্রিডম: একটি জাতিকে অনুপ্রাণিত করা ছবি"। আমাজন.ইন। ২০০৮। ২০১৬-০১-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৯।
- ↑ মারে এবং ম্যাককেব, পৃ. ৬২
- ↑ ক খ গ হেনেসি, রকওয়েল এবং নরম্যান ১৯৯৯, পৃ. ১০২।
- ↑ ক্লারিজ ২০০১, পৃ. ৩১৩।
- ↑ কোল, ব্রুস (২০০৯-১০-১০)। "মুক্ত বক্তৃতা ব্যক্তিত্ব: নরম্যান রকওয়েলের অনুপ্রেরণামূলক এবং স্থায়ী পেইন্টিং"। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ২০১৩-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩১।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- ক্লারিজ, লরা (২০০১)। "২১: দা বিগ আইডিয়াস"। নরম্যান রকওয়েল: আ লাইফ। র্যান্ডম হাউস। পৃষ্ঠা ৩০৩–৩১৪। আইএসবিএন 0-375-50453-2।
- হেনেসি; রকওয়েল, মৌরিন হার্ট; নুটসন, অ্যান (১৯৯৯)। "দা ফোর ফ্রিডমস"। নরম্যান রকওয়েল: পিকচার্স ফর দা আমেরিকান পিপল। Harry N. Abrams, Inc. with High Museum of Art and Norman Rockwell Museum। পৃষ্ঠা ৯৪–১০২। আইএসবিএন 0-8109-6392-2।
- মেয়ার, সুসান ই; রকওয়েল, নরম্যান (১৯৮১)। নরম্যান রকওয়েল'স পিপল (ইংরেজি ভাষায়)। হ্যারি এন. আব্রামস। পৃষ্ঠা ১২৮–১৩৩। আইএসবিএন 0-8109-1777-7। ওসিএলসি 7283547।
- রিচার্ডস, ডেনিস (১৯৫৩)। রয়্যাল এয়ার ফোর্স ১৯৩৯-১৯৪৫: ভলিউম ১ দ্য ফাইট অ্যাট অডস (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: এইচএমএসও।
- সলোমন, ডেবোরা (২০১৩)। "১৫: দা ফোর ফ্রিডমস (মে ১৯৪২ থেকে মে ১৯৪৩ পর্যন্ত)"। আমেরিকান মিরর: দা লাইফ অ্যান্ড আর্ট অব নরম্যান রকওয়েল (ইংরেজি ভাষায়)। ফারার, স্ট্রস ও গিরোক্স। পৃষ্ঠা ২০১–২২০। আইএসবিএন 978-0-374-11309-4।
- বয়েড, কার্ক (২০১২)। 2048: Humanity's Agreement to Live Together [২০৪৮: একসাথে বসবাস করার জন্য মানবতার চুক্তি]। রিড হাউ ইউ ওয়ান্ট। আইএসবিএন 978-1-4596-2515-0।
- কার্ন, গ্যারি (২০০৭)। The Kravchenko Case: One Man's War on Stalin [ক্রাভচেঙ্কো কেস: স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির যুদ্ধ]। এনিগমা বুকস। পৃষ্ঠা ২৮৭। আইএসবিএন 978-1-929631-73-5।
- হ্যালপার্ন, রিচার্ড (২০০৬)। Norman Rockwell: The Underside of Innocence [নরম্যান রকওয়েল: দা আন্ডারসাইড অব ইনোসেন্স]। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। আইএসবিএন 0-226-31440-5।