পোল সাবাতিয়ে
পোল সাবাতিয়ে | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৪ আগস্ট ১৯৪১ | (বয়স ৮৬)
জাতীয়তা | ফরাসি |
মাতৃশিক্ষায়তন | কোলেজ দে ফ্রাঁস ইকোল নরমাল সুপেরিয়র |
পরিচিতির কারণ | অসমসত্ব অনুঘটন (Heterogeneous Catalysis) |
পুরস্কার | রসায়নে নোবেল পুরস্কার (১৯১২) ডেভি পদক (১৯১৫) অ্যালবার্ট পদক (১৯২৬) ফ্রাঙ্কলিন পদক (১৯৩৩) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | অজৈব রসায়ন |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | কোলেজ দে ফ্রাঁস বর্দো বিশ্ববিদ্যালয় তুলুজ বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | মার্সেলোঁ বার্তেলো[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
অধ্যাপক পোল সাবাতিয়ে FRS(For)[১] HFRSE (Paul Sabatier; ফরাসি : [sabatje]; ৫ নভেম্বর ১৮৫৪ - ১৪ আগস্ট ১৯৪১) ছিলেন একজন ফরাসি রসায়নবিদ। তার জন্ম দক্ষিণ ফ্রান্সের কারকাসোন (Carcassonne) শহরে। ১৯১২ সালে তিনি ভিক্তর গ্রিনিয়ার (Victor Grignard) এর সাথে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ধাতুর উপস্থিতিতে জৈব প্রজাতিসমূহে হাইড্রোজেন সংযোজন (হাইড্রোজেনেশন) প্রক্রিয়ার উন্নয়ন সাধনে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]সাবাতিয়ে ১৮৭৪ সালে ইকোল নরমাল সুপেরিয়র (École Normale Supérieure) এ ভর্তি হন। তিন বছর পর, তিনি শ্রেণিতে শীর্ষস্থান সহকারে সেখান থেকে স্নাতক উপাধি লাভ করেন।[২] ১৮৮০ সালে, কোলেজ দে ফ্রাঁস (Collège de France) থেকে তিনি ডক্টর অফ সায়েন্স উপাধি অর্জন করেন।[২]
১৮৮৩ সালে সাবাতিয়ে বিজ্ঞান অনুষদে এদুয়া ফিলিওল (Édouard Filhol) এর স্থলাভিষিক্ত হন। তখন থেকে জাঁ-বাতিস্ত সন্দ্রাঁস (Jean-Baptiste Senderens) এর সাথে তার দীর্ঘ সহযোগিতা শুরু হয়, তা এতই ঘনিষ্ঠ ছিল যে, তাদের কারো কাজই আলাদা করার উপায় ছিল না। তারা যৌথভাবে অ্যাকাউন্টস অফ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এ ৩৪টি নিবন্ধ, বুলেটিন অফ দ্য ফ্রেঞ্চ কেমিক্যাল সোসাইটি তে ১১টি স্মৃতিকথা, এবং অ্যানাল্স অফ কেমিস্ট্রি অ্যান্ড ফিজিক্স এ দুটি যৌথ স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন।[৩] ১৯০২ সালে, সাবাতিয়ে ও সন্দ্রাঁস কর্তৃক সর্বপ্রথম এর মিথেন সংযোজন (methanation) প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়।[৪] এই সাবাতিয়ে-সন্দ্রাঁস প্রক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য ১৯০৫ সালে তারা অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এর জেকার পুরস্কার লাভ করেন।[৩]
১৯০৫-০৬ সালের পর থেকে সন্দ্রাঁস এবং সাবাতিয়ে খুব অল্প সংখ্যক কাজ যৌথভাবে প্রকাশ করেন। খুব সম্ভবত যৌথভাবে প্রকাশিত কাজে মেধার যথার্থ স্বীকৃতিজনিত সমস্যার কারণেই এমনটা হয়েছিল।[৩] ১৯০৫ সালে তুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে নিযুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত, জীবনের অধিকাংশ সময় ধরে সাবাতিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবেই কাজ করেছেন।
গবেষণা
[সম্পাদনা]শুরুর দিকে সাবাতিয়ে'র গবেষণার বিষয় ছিল সালফার এবং ধাতব সালফেট এর তাপরসায়ন নিয়ে, যার জন্য পরবর্তীকালে তিনি ডক্টরেট উপাধি পান। তুলুজে, তিনি সালফাইড, ক্লোরাইড, ক্রোমেট এবং তামা'র যৌগসমূহ নিয়ে তার ভৌত ও রাসায়নিক অনুসন্ধান চালিয়ে যান। নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ এবং নাইট্রো-সোডিসালফোনিক অ্যাসিড ও তার লবণসমূহ নিয়েও তিনি অধ্যয়ন করেন; বিভাজন গুণাঙ্ক (partition coefficient) এবং শোষণ বর্ণালি (absorption spectra) নিয়েও তিনি মৌলিক গবেষণা করেন। শিল্পক্ষেত্রে হাইড্রোজেনেশন বা হাইড্রোজেন সংযোজন বিক্রিয়ার প্রয়োগ সহজতর করতে সাবাতিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮৯৭ সালে, আমেরিকান রসায়নবিদ জেমস বয়েস এর সাম্প্রতিক জৈবরাসায়নিক গবেষণার ভিত্তিতে তিনি আবিষ্কার করেন যে, অধিকাংশ কার্বন যৌগসমূহের হাইড্রোজেন সংযোজন (হাইড্রোজেনেশন) বিক্রিয়ার সময় নগণ্য মাত্রায় নিকেল (অনুঘটক হিসেবে) যোগ করলে, হাইড্রোজেন সংযোজনের হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।
নিকেল প্রভাবকের আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে, উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে হাইড্রোজেন চালনা করে কার্বন ডাই অক্সাইডের বিজারণের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস প্রস্তুত করা। এই বিক্রিয়াটি সাবাতিয়ে বিক্রিয়া নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই বিক্রিয়া প্রয়োগ করে প্রয়োজনীয় পানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে, যাতে পৃথিবীর পানির মজুদের ওপর নির্ভর করতে না হয়।[৫]
(বিক্রিয়া শুরুর জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু শক্তি/ তাপের প্রয়োজন)
সাবাতিয়ে সবচেয়ে সুপরিচিত সাবাতিয়ে প্রক্রিয়া এবং জৈব রসায়নে অনুঘটন (La Catalyse en Chimie Organique; ১৯১৩ সালে প্রকাশিত) নিয়ে তার কাজের জন্য। তিনি ১৯১২ সালে, স্বদেশী আরেক রসায়নবিদ ভিক্তর গ্রিনিয়ার এর সাথে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি অনুঘটনের সাবাতিয়ে নীতি'র জন্যও পরিচিত।
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]ব্যক্তিজীবনে সাবাতিয়ে বিবাহিত এবং চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন, যাদের একজন ইতালীয় রসায়নবিদ এমিলিও পমিলিও'র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।[২]
ফ্রান্সের তুলুজের পল সাবাতিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হয়েছে সাবাতিয়ে'র সম্মানার্থে। তিনি এবং ওলন্দাজ গণিতবিদ তোমাস ইয়োভানেস স্টিলজেস মিলে (Thomas Joannes Stieltjes) অ্যানাল দে লা ফ্যাকাল্তে দে সিয়ঁস দে তুলুজ (Annales de la Faculté des Sciences de Toulouse; তুলুজ বিজ্ঞান অনুষদের বার্ষিক ইতিবৃত্ত) প্রতিষ্ঠা করেন।
সম্মাননা
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Rideal, E. K. (১৯৪২)। "Paul Sabatier. 1859-1941"। Obituary Notices of Fellows of the Royal Society। 4 (11): 63–66। এসটুসিআইডি 137424552। ডিওআই:10.1098/rsbm.1942.0006।
- ↑ ক খ গ "Paul Sabatier - Biography"। The Nobel Foundation। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-০৭।
- ↑ ক খ গ Alcouffe 2006, পৃ. 10।
- ↑ Rönsch এবং অন্যান্য 2016।
- ↑ Administrator, NASA Content (২০১৫-০৮-১৭)। "The Sabatier System: Producing Water on the Space Station"। NASA (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৫-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-০৬।
উৎস
[সম্পাদনা]- Alcouffe, Alain (ডিসেম্বর ২০০৬), La loi de 1905 et l'université de Toulouse ou la La laïcité au bon sens du terme (ফরাসি ভাষায়), Iesr – Toulouse, সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-২৬
- Rönsch, Stefan; Schneider, Jens; Matthischke, Steffi; Schlüter, Michael; Götz, Manuel; Lefebvre, Jonathan; Prabhakaran, Praseeth; Bajohr, Siegfried (২০১৬-০২-১৫), "Review on methanation – From fundamentals to current projects", Fuel, 166: 276–296, ডিওআই:10.1016/j.fuel.2015.10.111
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "Paul Sabatier (to 150th anniversary of his birthday)"। Russian Journal of Applied Chemistry। 77 (11): 1909–1912। ২০০৪। এসটুসিআইডি 195233988। ডিওআই:10.1007/s11167-005-0190-6।
- Rideal, E. K. (১৯৫১)। "Presidential address. Concepts in catalysis. The contributions of Paul Sabatier and of Max Bodenstein"। Journal of the Chemical Society (Resumed): 1640–1647। ডিওআই:10.1039/JR9510001640।
- Taylor, H. (১৯৪৪)। "Paul Sabatier 1854–1941"। Journal of the American Chemical Society। 66 (10): 1615–1617। ডিওআই:10.1021/ja01238a600।
- Nobelprize.org-এ পোল সাবাতিয়ে (ইংরেজি)
including the Nobel Lecture, December 11, 1912 The Method of Direct Hydrogenation by Catalysis