তাজিকিস্তানী তালেবান
জামাতে আনসারুল্লাহ (তাজিকিস্তানি তালেবান) | |
---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | আমরুদ্দীন তোবারভ |
প্রতিষ্ঠাতা নেতা | আমরুদ্দীন তোবারভ |
নেতা |
|
অপারেশনের তারিখ | ২০০৮ - বর্তমান |
দেশ | আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান |
আনুগত্য | তালেবান,আল কায়েদা |
উদ্দেশ্য | তাজিকিস্তানে একটি ইসলামি আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা |
সদরদপ্তর | বাদাখশান, আফগানিস্তান |
সক্রিয়তার অঞ্চল | |
মতাদর্শ | |
আকার | ৩০০ থেকে ৫০০ |
মিত্র |
|
বিপক্ষ | তাজিকিস্তান |
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধ | তালেবান বিদ্রোহ |
জামাতে আনসারুল্লাহ বা তাজিকিস্তানী তালেবান হল বর্তমান আফগানিস্তানের বাদাকশানের পাহাড়ি অঞ্চলে সক্রিয় একটি তাজিক জিহাদি সংগঠন।[১] গোষ্ঠীটি সাধারণভাবে তাজিকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত। এটি পূর্বে তেহরিক-ই-তালেবান তাজিকিস্তান নামে পরিচিত ছিল।[২] ২০০৮ সালে তাজিক বংশোদ্ভূত আমরুদ্দীন তোবারভ গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটির প্রধান উদ্দেশ্য হল, তাজিকিস্তানে আফগানিস্তানের মতো একটি ইসলামি আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা। ধারণা করা হয় যে, কার্যক্ষেত্রে এটি তালেবান ও আল কায়েদার সাথে সম্পর্কিত এবং তালেবানের সহায়তা ও সমর্থনে গোষ্ঠীটি পরিচালিত হয়।[৩][৪]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]২০০৮ সালে তাজিকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমরুদ্দীন তোবারভের নেতৃত্বে জামাতে আনসারুল্লাহ বা তাজিকিস্তান সংগঠিত হয়। এটি ২০১০ সালে তাজিকিস্তানের খুজান্দ শহরে একটি পুলিশ স্টেশনকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর সময় পরিচিতি পায়। এতে তিনজন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছিল। ২০১২ সালে তাজিক সরকার এই দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
২০১৫ সালে গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সদের হাতে নিহত হয়। এরপর তার স্থলাভিষিক্ত হন তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুহাম্মদ শাফিরভ, যিনি মাহদি আরসালন নামে বেশি পরিচিত। ২০২১ সালের গ্রীষ্মকালীন আক্রমণের সময় আফগান তালেবান তাজিকিস্তানী তালেবানকে আরো সম্প্রসারণ করে উত্তর বাদাখশান প্রদেশের পাঁচটি জেলার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ দেয়।[৫] [৪]২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরসালান তাজিকিস্তানে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন এবং তালেবানের অপারেশনাল গাইডেন্সের পরামর্শও নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। [৬]
জনবল ও নিয়োগ
[সম্পাদনা]তাজিকিস্তানী তালেবানের বেশিরভাগ যোদ্ধাই আদি প্রজন্মের যোদ্ধাদের সন্তান ও আত্মীয়। একটি রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে, এটিতে ১০০ জনেরও কম যোদ্ধা রয়েছে।[৫] তবে ধারণা করা হয় যে, এটিতে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৫০০ জন যোদ্ধা আছে। অনেকে এটিকে তালেবানের একটি স্বতন্ত্র ইউনিট মনে করে। দলটি আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, মধ্য এশিয়া এবং রাশিয়া থেকেও জনবল নিয়োগ দেয় বলে জানা যায়। [৫]
কার্যক্রম
[সম্পাদনা]ধারণা করা হয় যে, তাজিকিস্তানী তালেবান উত্তর আফগানিস্তান সক্রিয় থেকে তালেবান ও ইসলামিক মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্তানের সমর্থনে পরিচালিত হয়। এই দলটি বর্তমানে তালেবানের দখলীকৃত উত্তর বাদাখশান প্রদেশে সীমান্তরক্ষী হিসেবে কাজ করছে। কুফ আব, খোয়াহান, মাইমায়, নুসায় ও শেকে জেলায় আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে বলে ধারণা করা হয়। তারা বাদঘিস প্রদেশের জাওয়ান্দ ও আব কামারিও নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ করা হয়। [৫]
তাজিকিস্তান সরকার প্রথমদিকে গোষ্ঠীটিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু সীমান্তে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের পর তাজিকিস্তান তাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিতে শুরু করে। জানা যায় যে, দলটির কিছু সদস্য প্রতিদিন তাদের ওয়াচ টাওয়ারে আসে এবং তাজিকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে অপমান করে লাউডস্পিকারে চিৎকার করে হুমকি দেয়। তাজিকিস্তান ২০০১ সালের পর থেকে তালেবান-বিরোধী উত্তর-জোটকে সমর্থন করার কারণে আফগান তালেবান ও তাজিকিস্তানের মাঝে উত্তেজনা আগে থেকেই ছিল। তাজিকিস্তান দাবি করে যে, তালেবান সরকার গোষ্ঠীটিকে সক্রিয় থাকতে এবং তাজিকিস্তানকে হুমকি দেওয়ার অনুমতি দিলে উভয় দেশের মাঝে অবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ একটি বক্তৃতায় বলেন যে, আফগানিস্তান থেকে কোনো প্রতিবেশী দেশকে কোনো হুমকি দেওয়া হবে না এবং তিনি তাজিক সরকারকে এই সমস্যা মোকাবেলায় তাদের সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।[৬]
লক্ষ এবং উদ্দেশ্য
[সম্পাদনা]গোষ্ঠীটির প্রধান লক্ষ্য বর্তমান তাজিক সরকারকে উৎখাত করে দেশকে শরিয়া আইন দ্বারা শাসিত একটি ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিস্থাপন করা। ২০১১ সালে গোষ্ঠীটি একটি ভিডিও সিরিজ জারি করে এবং এতে বলা হয় যে, মুসলিমদের মধ্যে যারা নামাজ পড়ে এবং রোজা রাখে; কিন্তু শরিয়া সমর্থিত আইনের বিপরীতে গণতান্ত্রিক আইনকে সমর্থন করে তারা ধর্মচ্যুত ও কাফের।[৭]
মতাদর্শ
[সম্পাদনা]আফগান তালেবান, পাকিস্তানি তালেবান, আল কায়েদা, ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তান ও তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টিসহ অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীর মত এই সংগঠনটিরও মতাদর্শ এক ও অভিন্ন। এটির লক্ষ্য হল, তাজিকিস্তানে আফগানিস্তান তালেবানের মতো শরিয়া শাসিত একটি ইসলামি আমিরাতে পরিণত করা। [৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Tajik terrorist serves as Taliban commander in northern Afghanistan | FDD's Long War Journal"। www.longwarjournal.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৫-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪।
- ↑ "Tehrik-e Taliban Tajikistan and terrorism in Central Asia" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৭-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪।
- ↑ "بدخشان پایگاه و گذرگاه تروریستان خارجی به کشورهای آسیای مرکزی"। خبرگزاری نشانه (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪।
- ↑ ক খ "Taliban Threats To Uzbekistan, Tajikistan Underline Tension Between Militant Group And Central Asian Neighbors"। www.rferl.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪।
- ↑ ক খ গ ঘ "Exclusive: Taliban Puts Tajik Militants Partially In Charge Of Afghanistan's Northern Border"। RadioFreeEurope/RadioLiberty (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪।
- ↑ ক খ "Tajik terrorist serves as Taliban commander in northern Afghanistan | FDD's Long War Journal"। www.longwarjournal.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৫-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪।
- ↑ Foundation, Jamestown (২০১২-০৯-২৫)। "Islamic Extremist Group Jamaat Ansarullah Overcomes Tajikistan's Inter-Tribal Conflicts; Eurasia Daily Monitor Volume: 9 Issue: 174"। http://www.jamestown.org/programs/edm/single/?tx_ttnews%5Btt_news%5D=39883&cHash=4066da6e2ec63cdfff65e8ff667051cf (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ "ISBN"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১০-১৮।