বিষয়বস্তুতে চলুন

জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নেব্রা শেইব।

আদি ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রাচীন সংস্কৃতিতে খ-বস্তুসমূহকে দেবতা এবং পবিত্র আত্মার সত্তা দ্বারা চিহ্নিত করা হতো। আর যেহেতু প্রাচীন বিশ্বাসমতে দেবতারা প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটাতেন তাই এটিই সাধারণ বিশ্বাস ছিল যে এই খ-বস্তুসমূহের আপেক্ষিক অবস্থানের পরিবর্তনের কারণেই বৃষ্টি, খরা, ঋতু এবং জোয়ারের মত ঘটনাসমূহ ঘটে থাকে। এটি সাধারণ্য প্রচলিত ছিল যে সবচেয়ে দক্ষ পেশাদার জ্যোতির্বিদরা হলেন ধর্মগুরু (যেমন, ম্যাগি) এবং তারা যেভাবে স্বর্গের ব্যাখ্যা করতেন তাকে অলৌকিক বলে মনে করা হতো। সুতরাং জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাচীন ইতিহাসকে বলা যায় জ্যোতিষ শাস্ত্রের ইতিহাস। জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত যেসকল প্রাচীন স্থাপত্য পাওয়া যায় (যেমন: স্টোনহেঞ্জ) তার সবগুলো যে একইসাথে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ের কাজ করতো তা বলাই বাহুল্য।

পৃথিবীর বর্ষপঞ্জিসমূহ তৈরি করা হয়েছিলো সূর্য এবং চন্দ্রের আচরণের উপর ভিত্তি করে। এদের আচরণের মাধ্যমেই যে দিন, মাস এবং বছরের আবর্তন ঘটে তা আমরা আজ ভাল করেই জানি। এই বর্ষপঞ্জিসমূহ কৃষিকাজে প্রভূত সহযোগিতা করতো, কারণ ফসলের ভালো ফলন নির্ভর করে বছরের ঠিক সময়ে এটি লাগানো হলো কি-না তার উপর। তাই কৃষির ইতিহাস শুরুর পরপরই এর প্রয়োজন দেখা দিয়েছিলো। সবচেয়ে পুরনো আধুনিক বর্ষপঞ্জি তৈরি হয়েছে রোমান বর্ষপঞ্জির উপর নির্ভর করে। রোমানরা এক বছরকে বার মাসে এবং প্রত্যেক মাসকে ত্রিশ অথবা একত্রিশ দিনে বিভক্ত করেছিলো। ৪৬ খৃস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজার বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনে এবং এর সাথে অধিবর্ষ যোগ করে।

বাইবেলে মহাবিশ্বে পৃথিবীর অবস্থান এবং তারা ও অন্যান্য গ্রহসমূহের প্রকৃতি নিয়ে বেশ কিছু ভাষ্য রয়েছে। দেখুন: বাইবেলীয় বিশ্বতত্ত্ব

মেসোপটেমিয়া

[সম্পাদনা]

পশ্চিমা জ্যোতির্বিজ্ঞানের সূচনা ঘটে মেসোপটেমিয়ায়। মেসোপটেমিয়া - শব্দটির অর্থ "নদীসমূহের মধ্যবর্তী ভূমিসমূহ"। এই অঞ্চলটি টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নামক দুইটি নদীর মাঝে অবস্থিত ছিল। এই অঞ্চলেই সুমের, অ্যাসিরিয়া এবং ব্যাবিলনিয়ার মত সুপ্রাচীন সম্রাজ্যসমূহ গড়ে উঠেছিলো। খৃস্টপূর্ব প্রায় ৩৫০০ - ৩০০০ অব্দে সুমেরীয়রা কীলকাকার নামে একধরনের লিখন পদ্ধতি তৈরি করেছিলো। এই সুমেরীয়রা খুব মৌলিক কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কাজ করেছিলো। এই কাজগুলো খুব বেশি না হলেও এগুলো ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সুমেরীয়রা নাক্ষত্রিক ধর্মতত্ত্বের (ভৌতিক ধর্মতত্ত্ব নামেও পরিচিত) গোড়াপত্তন করে। এই ধর্মতত্ত্ব মেসোপটেমীয় পুরাণ এবং ধর্মে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া ষাটভিত্তিক একধরনের সংখ্যাপদ্ধতি ব্যবহার করতো যা তাদেরকে খুব বড় বা ছোট সংখ্যাসমূহ উপস্থাপনের কাজে সহযোগিতা করতো। তারাই প্রথম একটি বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রীতে ভাগ করে এবং তার প্রতিটিকে ৬০ মিনিটে ভাগ করে। আরও তথ্যের জন্য দেখুন: ব্যাবিলনীয় সংখ্যাপদ্ধতি এবং ব্যাবিলনীয় গণিত

বর্তমানকালে চিরায়ত উৎসসমূহ নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে যেয়ে আমরা প্রায়ই ক্যালডিয়ান (Chaldeans) শব্দটি ব্যবহার করি। এই শব্দটি মেসোপটেমিয়ার জ্যোতির্বিদদের বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যারা মূলত জ্যোতিষ শাস্ত্রের চর্চা করতো এবং ধর্মীয় অলৌকিকত্ব প্রদর্শন করে বেড়াতো। এজন্যে ক্যালডিয়ান শব্দটির আরেক অর্থ হচ্ছে: জ্যোতির্বেত্তা বা ভবিষ্যৎ বক্তা

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]