ওরে সালেকা

"ওরে সালেকা"
গ্রামোফোন
আজম খান কর্তৃক একক
ভাষা	বাংলা
বি-সাইড	"পাগলার মন"
মুক্তিপ্রাপ্ত	১৯৭৩
রেকর্ডকৃত	১৯৭৩
স্টুডিও	ঢাকা রেকর্ডিং স্টুডিও
স্থান	ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট, বাংলাদেশ
ধারা	রক, পপ
দৈর্ঘ্য	৩:৫০
লেবেল	ঢাকা রেকর্ড, বাংলাদেশ গ্রামোফোন কোম্পানি লিমিটেড
সুরকার	আজম খান
গীতিকার	আজম খান
প্রযোজক	উচ্চারণ
সঙ্গীত ভিডিও
ইউটিউবে "১৯৭৩ সালের সংস্করণ"
সঙ্গীত ভিডিও
ইউটিউবে গডফাদার চলচ্চিত্রে 'ওরে সালেকা'

"ওরে সালেকা" (এছাড়াও "ওরে সালেকা ওরে মালেকা" শিরোনামেও জনপ্রিয়) ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত বাংলাভাষায় রচিত একটি জনপ্রিয় একক পপ সংগীত। গানটি বাংলাদেশের একুশে পদক প্রাপ্ত, প্রখ্যাত পপ সংগীতশিল্পী আজম খানের প্রথম ধারণকৃত ও প্রকাশিত গান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে এই গানের গীতি ও সুর তৈরি করা হয়। আজম খান নিজেই এই গানের গীতিকার ও সুরকার ছিলেন। গানটির সঙ্গীতায়োজন করে আজম খানের ব্যান্ড উচ্চারণ।

পটভূমি

আজম খানের পরিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব সময় হতে ঢাকার কমলাপুরের জসীমউদ্দিন রোডে থাকতেন। জসীমউদ্দিন রোডে একটি নির্মাণাধীন হোটেলের দোতলায় আজম খান তার বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন। এমনই এক আড্ডায় তার বন্ধু (পরবর্তীতে উচ্চারণ ব্যান্ডের গিটারিস্ট) নিলু জলাধারের ঢাকনাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে একই তালে আঘাত করে একটি সুর তুলছিলেন। এই সুরের সাথে তাল মিলিয়ে কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই আজম খান ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ গানের মুখরা গেয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি এই গানটির গীতি ও সুরের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন।

সংগীত ধারণ

১৯৭৩ সালে স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর’র গায়ক ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদের সাথে আজম খানের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় ফেরদৌস ওয়াহিদ তার বন্ধু ইশতিয়াক, ল্যারি, ইদুকে নিয়ে একটি ইংরেজি গান পরিবেশনের দল গড়েছিলেন যারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গান পরিবেশন করতেন। ফেরদৌস ওয়াহিদ তখন নিয়মিত বাংলা গান গাইতেন না। আজম খানের সাথে পরিচয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ আজম খানের বাংলা গান শুনে মুগ্ধ হন এবং নিজের বাংলা গান সহ আজম খানের গান রেকর্ড করার পরিকল্পনা করেন।

ফিরোজ সাঁইয়ের উৎসাহে ফেরদৌস ওয়াহিদ ও তার বন্ধু সাইদ সিদ্দিকী রুমী (ক্যাটস আই-এর প্রতিষ্ঠাতা), বাবব ও শামীমের মিলিত প্রয়াসে ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে অবস্থিত ঢাকা রেকর্ডিং স্টুডিও অর্ধ দিনের জন্য ২৬০ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়েছিলেন। এসময় চারটি গান ধারণ করা হয়েছিল। আজম খানের ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ ছাড়াও ‘হাই কোর্টের মাজারে’ গানও ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া ফেরদৌস ওয়াহিদের গাওয়া ‘চাঁদ জাগে তারা জাগে’ ও ‘দুনিয়াটা কত যে মজার’ গান দুইটিও ধারণ করা হয়েছিল। গানগুলি আজম খানের মেঝো ভাই প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলম খানের তত্বাবধানে ধারণ করা হয়েছিল।

মুক্তিলাভ, গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা

মজার ব্যাপার হলো, আজম নিজেও জানত না, তার রেকর্ড বের হয়েছে। মজিদ খান আমার হাতে আজমের রেকর্ডটি দিলেন এবং আমি সেটা লুকিয়ে নিয়ে তার বাসায় গেলাম। আমরা মোট নয়জন ছিলাম। তাকে বললাম, আগে ভরপেট খাওয়া। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আজম মোট ৪৬ টাকা খরচ করে শিঙাড়াসহ অনেক কিছু খাওয়াল। এরপর আজমকে আমি রেকর্ডটি দিলাম। সে এত খুশি হলো...তার সেই উচ্ছল মুখ আমার এখনো মনে পড়ে।

—সুমনা শারমিনের প্রতি ফেরদৌস ওয়াহিদ

গান ধারণের পর ঢাকা রেকর্ডিং স্টুডিও'র কর্ণধার মজিদ খানের উদ্যোগে এবং ফেরদৌস ওয়াহিদের উৎসাহে আজম খানের গানগুলি ভিনাইল লিপির ৩৩ আরপিএম গ্রামোফোন রেকর্ড (নং ১২১০৩৯) আকারে ঢাকা রেকর্ডের ব্যানারে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৩ সালে প্রত্যেক কপি রেকর্ডের দাম সাত টাকা পঞ্চাশ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘সে যে কেন এলো না’ গানটির জন্য ১৯৭৩ সালের চলচ্চিত্র রংবাজ চলচ্চিত্রের গানের এ্যালবাম ৭-৮ হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল। 'ওরে সালেকা' গান প্রকাশের পর অভাবনীয় জনপ্রিয়তা পায় এবং রংবাজ ছায়াছবির গানের চেয়ে বেশি বিক্রয় হয়। গানটি দীর্ঘমেয়াদে শ্রোতাদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। এই গান প্রকাশের পর ফেরদৌস ওয়াহিদ, ইশতিয়াক আহমেদ 'উচ্চারণ' ব্যান্ডে যোগ দেন। পরবর্তীতে আজম খান এই গানটি বেশ কয়েকবার নতুন সংগীত আয়োজনে গেয়েছেন।

পুনরুৎপাদন

গানটি বেশ কয়েকবার নতুন করে ভিন্ন ভিন্ন অ্যালবামের জন্য ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

• ২০০৫ সালের ১৬ জুন, লেজার ভিশন হতে প্রকাশিত সালেকা মালেকা (পুনঃমিশ্রণ)
• ২০১৫ সালের ৭ জুলাই, মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন তাদের সংগীত বিষয়ক 'অনলাইন প্রবাহমান সেবা' জিপি মিউজিক হতে আজম খান গোল্ডেন কালেকশনস এ্যালবামে গানটি প্রকাশ করে।
• প্রিন্স মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় সাউন্ডটেক হতে প্রকশিত অভিমানী এ্যালবামেও গানটি প্রকাশ করা হয়। এ্যালবামটি সাউন্ডটেকের আনুষ্ঠানিক ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট অবমুক্ত করা হয়।

চলচ্চিত্রে ব্যবহার

২০০৩ সালে আজম খান অভিনীত গডফাদার চলচ্চিত্রে এই গানটি ব্যবহার করা হয়। গানের চিত্রায়ণে আজম খান অভিনয় করেন। ইমন সাহা চলচ্চিত্রের সংস্করণে গানটির সংগীত পরিচালনা করেন। চলচ্চিত্রের সংস্করণটি ঈগল মিউজিকের আনুষ্ঠানিক ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, এবং জি-সিরিজ তাদের ইউটিউব চ্যানেল ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অবমুক্ত করে।