বিষয়বস্তুতে চলুন

এডমান্ড হ্যালি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এডমান্ড হ্যালি
টমাস মুরে কর্তৃক ১৬৮৭ সালে অঙ্কিত পোর্ট্রেট
জন্ম(১৬৫৬-১১-০৮)৮ নভেম্বর ১৬৫৬
হ্যাগার্সটন, শোরডিচ, লন্ডন, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৪ জানুয়ারি ১৭৪২(1742-01-14) (বয়স ৮৫)
জাতীয়তাযুক্তরাজ্য
মাতৃশিক্ষায়তনঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণহ্যালির ধূমকেতু
দাম্পত্য সঙ্গীমেরি টোকি
সন্তানড. এডমান্ড হ্যালি (d. 1741)
মার্গারেট (d. 1713)
রিচেল (d. 1748)[]
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূ-পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, আবহাওয়াবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ডক্টরাল উপদেষ্টাজন ফ্ল্যামস্টিড

এডমান্ড হ্যালি (ইংরেজি ভাষায়: Edmond Halley) উচ্চারণ /ˈɛdmənd ˈhæli/;[][] (৮ই নভেম্বর, ১৬৫৬ - ১৪ই জানুয়ারি, ১৭৪২) ছিলেন বিখ্যাত ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ভূপদার্থবিদ, গণিতজ্ঞ, আবহাওয়াবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী।

জীবন ও কর্ম

[সম্পাদনা]

হ্যালি ইংল্যান্ডের শোরডিচে এক বিত্তশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সাবান উৎপাদনের সাথে জড়িত ছিলেন। ছোট বয়সেই গণিতের প্রতি বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি। প্রথমে পড়াশোনা করেন সেন্ট পল'স স্কুলে এবং ১৬৭৩ সাল থেকে অক্সফোর্ডের কুইন্‌স কলেজে। স্নাতক ছাত্র থাকার সময়ই তিনি সৌর জগৎ এবং সৌরকলঙ্ক বিষয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন।

অক্সফোর্ড ত্যাগের পর ১৬৭৬ সালে হ্যালি দক্ষিণ আটলান্টিকের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে যান এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে তারা পর্যবেক্ষণ করে তারাগুলোর ক্যাটালগ তৈরির উদ্দেশ্যে সেখানে সেক্সট্যান্ট ও টেলিস্কোপ যন্ত্রসমেত একটি পর্যবেক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেন।[] ১৬৭৮ সালের নভেম্বরে লন্ডনে ফিরে আসেন। পরের বছর রয়েল সোসাইটির পক্ষ থেকে পোল্যান্ডের Gdańsk শহরে যান। উদ্দেশ্য ছিল একটি বিতর্কের মীমাংসায় সাহায্য করা। দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার না করার কারণে জ্যোতির্বিজ্ঞানী Johannes Hevelius এর পর্যবেক্ষণগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন রবার্ট হুক। হ্যালি Hevelius এর সাথে থেকে আবার পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার পর্যবেক্ষণগুলো প্রমাণ করেন। একই বছর তিনি Catalogus Stellarum Australium নামক তারা তালিকাটি প্রকাশ করেন যাতে ৩৪১ টি দক্ষিণাঞ্চলীয় তারার বিস্তারিত তথ্য ছিল। বর্তমানের তারা তালিকার সাথে তার করা তারা তালিকার তুলনা করে তাকে টাইকো ব্রাহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অক্সফোর্ড থেকেই হ্যালিকে এমএ ডিগ্রি দেয়া হয়। এরপর তিনি রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন।

১৬৮৬ সালে হ্যালি তার সেইন্ট হেলেনা অভিযানের পর্যবেক্ষণ নিয়ে করা গবেষণাপত্রের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করেন। বিষুবীয় এবং মৌসুমী বায়ুর জন্য এটি একই সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র ও ছক হিসেবে কাজ করেছিল। এর মাধ্যমে তিনি বায়ুমণ্ডলীয় গতির কারণ হিসেবে সৌর উষ্ণায়নের প্রভাবকে শনাক্ত করেন। একই সাথে সমুদ্র স্তর থেকে কোন স্থানের উচ্চতা এবং ব্যারোমেট্রিক চাপের সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তিনি। এমন এক সময় তিনি এই গবেষণাগুলো প্রকাশ করেন যখন তথ্য প্রত্যক্ষীকরণ কেবল বিকশিত হতে শুরু করেছিল। তার এই গবেষণাগুলো এই ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।

১৬৮২ সালে হ্যালি মেরি টুক-কে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে ৩ সন্তানের জন্ম হয়েছিল। তিনি চন্দ্র পর্যবেক্ষণেই বেশি সময় ব্যয় করতেন। অবশ্য মহাকর্ষ বিষয়খ সমস্যাও তার পছন্দের বিষয় ছিল। কেপলারের গ্রহীয় গতি সূত্রের প্রমাণের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছিল। ১৬৮৪ সালে আইজাক নিউটনে সাথে এ নিয়ে আলাপ করার জন্য কেমব্রিজে যান। গিয়ে দেখেন নিউটন ইতোমধ্যে সমস্যাটির সমাধান করে ফেলেছেন কিন্তু প্রকাশ করেননি তখনও। হ্যালিই নিউটনকে এ নিয়ে একটি বই লিখতে উৎসাহী করে তোলেন। এভাবে হ্যালির উৎসাহ এবং অর্থায়নেই নিউটনের ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা বইটি প্রকাশিত হয়।

এডমান্ড হ্যালি এর প্রতিকৃতি

১৬৯০ সালে হ্যালি একটি ডাইভিং বেল তৈরি করেন। পানির উপরের পৃষ্ঠ থেকে ব্যারেল ব্যারেল বায়ু এই বেলের ভিতর পাঠানো হলে সেখানে তা নতুনভাবে জায়গা করে নিতো। সাবমেরিনের মতো একে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও পানির ভেতরে অনেকক্ষণ থাকতে সাহায্য করতো এটি। প্রদর্শনের জন্য হ্যালি পাঁচজন সাথী নিয়ে এই বেলের সাহায্যে টেম্‌স নদীতে জলপৃষ্ঠের ৬০ ফুট নিচে প্রায় দেড় ঘণ্টা ডুবে ছিলেন। ব্যবহারিক নিরাপত্তার জন্য হ্যালির এই বেল খুব একটা ব্যবহৃত হয়নি কারণ এটা অনেক ভারী ছিল। কিন্তু হ্যালি পরবর্তীতে এর উন্নয়ন সাধন করেন। শেষ পর্যন্ত এটি দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টা যুবে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।

১৭৪২ সালের ১৪ জানুয়ারি এই বিখ্যাত মানুষের জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুর সময় তিনি এক গ্লাস ওয়াইন পান করতে চান এবং তা তৃপ্তি সহকারে পান করে তার জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

নোট ও তথ্যসূত্রসমূহ

[সম্পাদনা]
  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ 
  2. Jones, Daniel; Gimson, Alfred C. (১৯৭৭) [1917]। Everyman's English Pronunciation Dictionary। Everyman's Reference Library (14 সংস্করণ)। London: J. M. Dent & Sons। আইএসবিএন 0-460-03029-9 
  3. Kenyon, John S.; Knott, Thomas A. (১৯৫৩)। A Pronouncing Dictionary of American English। Springfield, MA: Merriam-Webster Inc.। আইএসবিএন 0-87779-047-7 
  4. Ian Ridpath। "Edmond Halley's southern star catalogue"। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-২৯ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]