মালাজগির্দ‌ের যুদ্ধ

স্থানাঙ্ক: ৩৯°০৮′৪১″ উত্তর ৪২°৩২′২১″ পূর্ব / ৩৯.১৪৪৭২° উত্তর ৪২.৫৩৯১৭° পূর্ব / 39.14472; 42.53917
এটি একটি ভালো নিবন্ধ। আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Battle of Manzikert থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মালাজগির্দে‌র যুদ্ধ
نبرد ملازگرد
মূল যুদ্ধ: বাইজেন্টাইন-সেলজুক যুদ্ধ

১৫শ শতাব্দীর ফরাসি অণুচিত্রে প্রদর্শিত মালাজগির্দে‌র যুদ্ধ।
তারিখ২৬ আগস্ট ১০৭১
অবস্থান
মালাজগির্দে‌র নিকটে, বাইজেন্টাইন আর্মেনিয়া[১][২]
(বর্তমান তুরস্ক)
ফলাফল

সেলজুকদের বিজয়

  • আনাতোলিয়ায় তুর্কি আধিপত্য
বিবাদমান পক্ষ
বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য
  • ফ্রাঙ্ক, ইংরেজ, নরম্যান, জর্জিয়ান, আর্মেনীয়, বুলগেরীয়, তুর্কি পেচেং ও কুমান যোদ্ধা
সেলজুক সাম্রাজ্য
  • পেচেং ও কুমান যোদ্ধা[note ১]
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
চতুর্থ রোমানোস যু. বন্দী
নিকেফোরোস ব্রাইনিওস
থিওডর আলিয়াটস
এন্ড্রোনিকোস ডোকাস
আল্প আরসালান
আফশিন বে
আর্তুক বে
সুলাইমান ইবনে কুতুলমিশ
শক্তি
৪০,০০০[৩] থেকে ৭০,০০০[৪] ২০,০০০[৫] থেকে ৩০,০০০[৬]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি

নিহত: ২,০০০[৭] থেকে ৮,০০০[৫]

  • প্রায় সম্পূর্ণ ভারানজিয়ান গার্ড (স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ও অ্যাংলো-স্যাক্সন যোদ্ধা)
  • ২,০০০ তুর্কি যোদ্ধা

বন্দী: ৪,০০০[৭]
দলত্যাগ: ২০,০০০ থেকে ৩৫,০০০

  • মূলত যুদ্ধের সময় লড়াইয়ে অংশ না নেয়া ফ্রাঙ্ক ও নরম্যান যোদ্ধারা
অজ্ঞাত

মালাজগির্দে‌র যুদ্ধ ১০৭১ সালের ২৬ আগস্ট বর্তমান তুরস্কের মাশ প্রদেশের মালাজগির্দ‌ের নিকটে সেলজুক সাম্রাজ্যবাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত হয় এবং সম্রাট চতুর্থ রোমানোস বন্দী হন[৮] যার ফলে আনাতোলিয়া, আর্মেনিয়ায় বাইজেন্টাইন কর্তৃত্ব হ্রাস পায়[৯] এবং আনাতোলিয়া তুর্কিদের হস্তগত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।

মালাজগির্দ‌ে পরাজয় বাইজেন্টাইনদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এর ফলে গৃহযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় ফলে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সীমান্ত রক্ষার সক্ষমতা হ্রাস পায়।[১০] ফলে তুর্করা ব্যাপক সংখ্যায় মধ্য আনাতোলিয়ায় প্রবেশ করতে থাকে। ১০৮০ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮,০০০ বর্গকিলোমিটার (৩০,০০০ মা) এলাকা সেলজুক তুর্কিরা অধিকার করে নেয়। আভ্যন্তরীণ গোলযোগ দূর করে বাইজেন্টিয়ামে স্থিতিশীলতা আনার জন্য প্রথম আলেক্সিওসের তিন দশক সময় লেগেছিল। ইতিহাসবিদ থমাস এসব্রিজ বলেন: "১০৭১ সালে সেলজুকরা মালাজগির্দে‌র যুদ্ধে (পূর্ব এশিয়া মাইনরে) একটি রাজকীয় বাহিনীকে ধ্বংস করে, এবং ইতিহাসবিদরা একে গ্রীকদের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে আর না ধরলেও এটি ছিল একটি যন্ত্রণাদায়ক বিপত্তি।"[১১] ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বাইজেন্টাইন সম্রাট একজন মুসলিম সম্রাটের কাছে বন্দী হন।[১২]

পটভূমি[সম্পাদনা]

মধ্যযুগে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য শক্তিশালী থাকা সত্ত্বেও[১৩] নবম কনস্টান্টাইন এবং দশম কনস্টান্টাইনের শাসনামলে সামরিক দুর্বলতার কারণে এর অবনতি শুরু হয়। প্রথম আইজ্যাকের দুই বছরের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে সেনাবাহিনীর সংস্কারের ফলে পতন কিছুটা দীর্ঘা‌য়িত হয়।[১৪] নবম কনস্টান্টাইনের শাসনামলে সেলজুক তুর্কিরা আর্মেনীয় রাজধানী আনি অধিকারের প্রচেষ্টা চালালে বাইজেন্টাইনরা সর্বপ্রথম সেলজুকদের সাথে জড়িয়ে পড়ে। কনস্টান্টাইন সেলজুকদের সাথে চুক্তি করেন এবং তা ১০৬৪ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। এরপর তারা আনি অধিকার করে এবং ১০৬৭ সালে কায়সারিয়াসহ আর্মেনিয়ার বাকি অংশ অধিকার করে নেয়।[১৩][১৫]

১০৬৮ সালে চতুর্থ রোমানোস ক্ষমতালাভ করেন এবং দ্রুত কিছু সামরিক সংস্কারের পর সেলজুকদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য ম্যানুয়েল কোমনেনাসকে দায়িত্ব দেন। ম্যানুয়েল সিরিয়ার মানবিজ দখল করেন। এরপর তিনি কোনিয়ায় একটি তুর্কি আক্রমণ প্রতিহত করেন,[৮] কিন্তু এরপর সুলতান আল্প আরসালানের কাছে পরাজিত ও বন্দী হন। সাফল্য সত্ত্বেও আল্প আরসালান ১০৬৯ সালে বাইজেন্টাইনদের সাথে একটি শান্তিচুক্তি করেন। এসময় মিশরের ফাতেমীয়রা তার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল।[৫]

১০৭১ সালের ফেব্রুয়ারি রোমানোস চুক্তি নবায়নের জন্য আল্প আরসালানের কাছে দূত পাঠান। সুলতান এতে সম্মতি দেন।[৫] এডেসার অবরোধ তুলে নিয়ে তিনি ফাতেমীয়দের অধিকারে থাকা আলেপ্পোর দিকে যাত্রা করেন। রোমানোস হৃত দুর্গ পুনরুদ্ধারের জন্য আর্মেনিয়ার দিকে একটি বৃহদাকার বাহিনী নিয়ে যাত্রা করেন, ফলে শান্তিচুক্তি ভেঙে যায়।[৫]

যুদ্ধের পূর্ব অবস্থা[সম্পাদনা]

রোমানোসের প্রতিপক্ষ এন্ড্রোনিকাস ডুকাসও তার সাথে ছিলেন। এই বাহিনীতে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রায় ৫,০০০ নিয়মিত বাইজেন্টাইন সৈনিক ও সমসংখ্যক পূর্বাঞ্চলীয় সৈনিক ছিল। রোসেল ডি বাইলেউলের অধীনে ৫০০ ফ্রাঙ্ক ও নরম্যান ছিল। এছাড়াও ছিল কিছু অগুজ তুর্কি, পেচেং ও বুলগেরীয় যোদ্ধা। এন্টিওকের ডিউকের অধীনে ছিল পদাতিকরা। জর্জীয় ও আর্মেনীয় সেনাদের একটি দলও ছিল। সেসাথে ভারানজিয়ান গার্ডদের কিছু সৈনিকও ছিল। সব মিলিয়ে বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ৪০,০০০ থেকে ৭০,০০০[১৬][১৭]

আল্প আরসালান সেলজুক তুর্কিদেরকে বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এশিয়া মাইনরের মধ্য দিয়ে যাত্রা দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য ছিল। নিজের বিলাসবহুল লাগেজ আনার ফলে সেনাদের ভেতরে রোমানোসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। এছাড়াও তার ফ্রাঙ্ক যোদ্ধাদের লুঠতরাজের কারণে স্থানীয় জনসাধারণও কষ্ট ভোগ করছিল এবং তিনি তাদের পদচ্যুতও করেননি। তারা ১০৭১ সালের জুন মাসে থিওডসিওপোলিস পৌছায়। সেখানে সম্রাটের কয়েকজন সেনাপতি সেলজুক এলাকায় প্রবেশ করে অভিযান চালানো এবং আল্প আরসালান প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে তাকে পরাস্ত করার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে নিকেফোরাস ব্রাইয়েন্নিয়াসসহ অন্যান্যরা অপেক্ষা করার এবং নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আল্প আরসালান দূরে আছেন বা এগিয়ে আসছেন না এমন ধরে নিয়ে রোমানোস ভান হ্রদের দিকে অগ্রসর হন। তিনি দ্রুত মালাজগির্দ‌ অধিকার করতে পারবেন ধারণা করেছিলেন। আল্প আরসালান ইতিমধ্যেই এই এলাকায় ছিলেন। তার সাথে তার মিত্ররা এবং আলেপ্পোমসুলের ৩০,০০০ অশ্বারোহী সৈনিক ছিল। আল্প আরসালানের পদক্ষেপ সম্পর্কে রোমানোস ওয়াকিবহাল না থাকলেও আল্প আরসালানের গুপ্তচররা রোমানোসের সঠিক অবস্থান বের করে ফেলে।

বাইজেন্টাইনদের সাথে শান্তি স্থাপনের পর সেলজুকরা মিশর অভিযানের পরিকল্পনা করে। কিন্তু আলেপ্পোয় আল্প আরসালান বাইজেন্টানদের অগ্রসর হওয়ার খবর পাওয়ার পর তিনি উত্তরে যাত্রা করে বাইজেন্টাইনদের মুখোমুখি হন।।

রোমানোস তার সেনাপতি জোসেফ টারকেনিওটেসকে কিছু নিয়মিত সৈনিক, ভারানজিয়ান এবং পেচেং ও ফ্রাঙ্ক যোদ্ধা নিয়ে খলিয়াতের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন এবং নিজে বাকি বাহিনীকে নিয়ে মালাজগির্দে‌র দিকে অগ্রসর হন। এর ফলে বাহিনীর সক্ষমতা অর্ধেক হয়ে যায়। মুসলিম সূত্র অনুযায়ী জোসেফ টারকেনিওটেসকের বাহিনীকে আল্প আরসালান পরাজিত করেছিলেন। তবে রোমান সূত্রে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।

যুদ্ধ[সম্পাদনা]

যুদ্ধের দিন সকালে আল্প আরসালান তার সেনাবাহিনীকে তলব করেন এবং কাফনের সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।[১৮] এর দ্বারা তিনি যুদ্ধে নিহত হতে প্রস্তুত এই বার্তা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। রোমানোস তখন টারকেনিওটেসের পরাজয় সম্পর্কে জানতেন না এবং মালাওগির্দে‌র দিকে অগ্রসর হন। ২৩ আগস্ট তিনি সহজে মালাজগির্দ‌ অধিকার করেন। সেলজুক তীরন্দাজরা প্রচন্ড আক্রমণ করে তার জবাব দেয়।[১৯] পরের দিন ব্রাইয়েন্নিসের একটি অনুসন্ধানকারী দল সেলজুকদের সেনাবাহিনী দেখতে পায় ফলে তারা মালাজগির্দে‌ পিছু হটে। রোমানোস আর্মেনীয় সেনাপতি বাসিলাকিসকে কিছু অশ্বারোহীসহ প্রেরণ করেন কারণ তার ধারণা ছিল এটি আল্প আরসালানের পুরো বাহিনী নয়। অশ্বারোহী দলটি সেলজুকদের কাছে ধ্বংস হয় এবং বাসিলাকিস বন্দী হন। রোমানোস তার সেনাদের বিন্যস্ত করেন এবং বাহিনীর বাম অংশকে ব্রাইয়েন্নিসের অধীনে প্রেরণ করেন। তারা দ্রুতগতিতে অগ্রসর হওয়া সেলজুকদের হাতে প্রায় আবদ্ধ হয়ে পড়ছিল তাই আরো একবার পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেলজুকরা নিকটস্থ পাহাড়ে সারা রাত গোপনে অবস্থান করছিল ফলে রোমানরা পাল্টা আক্রমণ করতে সক্ষম হয়নি।[৮][২০]

বাইজেন্টাইন অঞ্চল (বেগুনি), বাইজেন্টাইন আক্রমণ (লাল) এবং সেলজুক আক্রমণ (সবুজ)

২৫ আগস্ট রোমানোসের তুর্কি যোদ্ধারা দলত্যাগ করে। এরপর সেলজুকদের পাঠানো শান্তিপ্রস্তাব রোমানোস ফিরিয়ে দেন। তিনি সামরিক পন্থায় পূর্বাঞ্চলের প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে চাইছিলেন। সম্রাট সে অঞ্চলে অনুপস্থিত টারকেনিওটেসকে তলব করেন। সেদিন দুইপক্ষে কোনো লড়াই হয়নি। ২৬ আগস্ট বাইজেন্টাইন সেনারা বিন্যস্ত হয়ে তুর্কি অবস্থানের দিকে যাত্রা করে। বাহিনীর মধ্যভাগে সম্রাট, বাম অংশে ব্রাইয়েন্নিস ও ডান অংশে থিওডর এলায়াটেস নেতৃত্বে ছিলেন। এই সময় একজন তুর্কি সৈনিক আল্প আরসালানকে বলে, "আমার সুলতান, শত্রু সেনারা অগ্রসর হচ্ছে", এবং প্রতিউত্তরে আল্প আরসালান বলেন, "তাহলে আমরাও তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছি"। এন্ড্রোনিকাস ডকাস পেছনের দিকে রিজার্ভ বাহিনীর নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন। চার কিলোমিটার দূরে সেলজুকরা অর্ধ চন্দ্রাকার ফর্মে‌শনে বিন্যস্ত হয়।[২১] বাইজেন্টাইনরা কাছাকাছি আসার পর সেলজুক তীরন্দাজরা তাদের আক্রমণ করে; সেলজুক সেনাদের অর্ধচন্দ্র বিন্যাসের মধ্যভাগ ক্রমাগত পিছিয়ে আসতে থাকে এবং পার্শ্ব‌ভাগ দুটি বাইজেন্টাইনদের ঘিরে ফেলতে থাকে।

বাইজেন্টাইনরা এগিয়ে গিয়ে বিকাল শেষ হওয়ার পূর্বে আল্প আরসালানের শিবিরের নিকটে পৌছে যায়। তবে তীরের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাহিনীর ডান ও বাম অংশগুলি সেলজুকদের সাথে লড়াইয়ের সময় ভেঙে পড়ে। সেলজুক অশ্বারোহীরা সহজে তাদের পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। রোমানোস যুদ্ধ এড়িয়ে রাতের বেলা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। তবে বাহিনীর ডান অংশ নির্দেশ ভুল বোঝে এবং ডকাস সম্রাটের আদেশ অমান্য করেন ও সম্রাট পিছিয়ে আসার সময় তাকে রক্ষা না করে মালাজগির্দ‌ের বাইরে পিছিয়ে আসেন। বাইজেন্টাইনদের এই ভুলবোঝাবুঝির সময় সেলজুকরা সুযোগ গ্রহণ করে আক্রমণ করে।[৮] বাইজেন্টাইন বাহিনীর ডান অংশ প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে, তাদের ধারণা হয়েছিল যে আর্মেনীয় বা সহায়ক তুর্কিরা দলত্যাগ করেছে। কিন্তু মূলত আর্মেনীয়রা প্রথমে দলত্যাগ করে এবং সহায়ক তুর্কিরা শেষপর্যন্ত অনুগত ছিল।[২২] ব্রাইয়েন্নিওসের অধীনে বাহিনীর বাম অংশ কিছু বেশি সময় অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছিল কিন্তু তারাও শেষপর্যন্ত বিধ্বস্ত হয়।[২৩] সম্রাট ও ভারানজিয়ান গার্ডসহ বাইজেন্টাইনদের মধ্যভাগের অবশিষ্টরা সেলুজুকদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। রোমানোস আহত অবস্থায় বন্দী হন। এছাড়া বাইজেন্টাইন বাহিনীর পেশাদার মূল অংশ ভোর নাগাদ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।[২৩]

রোমানোসের বন্দীত্ব[সম্পাদনা]

আল্প আরসালানের সামনে বন্দী সম্রাট চতুর্থ রোমানোস। ১৫শ শতাব্দীর একটি ফরাসি চিত্র।

বন্দী হওয়ার পর সম্রাট রোমানোসকে আল্প আরসালানের সামনে আনা হয়। তবে সুলতান প্রথমে একথা বিশ্বাস করতে চাননি যে বন্দী ব্যক্তিটি সম্রাট রোমানোস। একটি বিখ্যাত আলাপ এই সময় সংঘটিত হয়েছে বলে জানা যায়:[২৪][২৫]

আল্প আরসালান: "যদি আমাকে বন্দী হিসেবে আপনার সামনে আনা হত তবে আপনি কী করতেন?"
রোমানোস: "হয়ত আমি আপনাকে হত্যা করতাম, বা কনস্টান্টিনোপলের রাস্তায় প্রদর্শন করাতাম।"
আল্প আরসালান: "আমার শাস্তি এর চেয়েও কঠিন। আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি, এবং মুক্তি দিচ্ছি।"

আল্প আরসালান তার সাথে ভালো আচরণ করেন এবং যুদ্ধের পূর্বের সন্ধি পুনর্বহাল করেন।[১২]

মুক্তি পেয়ে ফিরে আসার পর রোমানোসের শাসন সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ডকাস পরিবারের বিরুদ্ধে তিনি তিনবার যুদ্ধ করে পরাজিত হন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাকে অন্ধ করে প্রটি দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়। অন্ধ করে দেয়ার সময়ের ক্ষত থেকে তৈরি ইনফেকশনের কারণে শীঘ্রই তিনি মারা যান।

টীকা[সম্পাদনা]

  1. পেচেং ও কুমানরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেলজুকদের পক্ষে চলে যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. The Cambridge Medieval History. — Cambridge University Press, 1986. — vol. 6. — p. 791: "In 1071, five years after Hastings, the Byzantine army, the oldest and best trained military force in Europe, was destroyed in battle with the Seljuq Turks at Manzikert in Armenia."
  2. Steven Runciman. A History of the Crusades. — Cambridge University Press, 1987. — vol. 1. — p. 62-63: "With this large but untrustworthy army Romanus set out in the spring of 1071 to reconquer Armenia. As he was leaving the capital the news came through from Italy that Bary, the last Byzantine possession in the peninsula, had fallen to the Normans. The chroniclers tell in tragic detail of the Emperor's march eastward along the great Byzantine military road. His intention was to capture and garrison the Armenian fortresses before the Turkish army should come up from the south. Alp Arslan was in Syria, near Aleppo, when he heard of the Byzantine advance. He realized how vital was the challenge; and he hurried northward to meet the Emperor. Romanus entered Armenia along the southern branch of the upper Euphrates. Near Manzikert he divided his forces."
  3. Haldon 2001, পৃ. 173
  4. Norwich 1991, p. 238.
  5. Markham, Paul। "Battle of Manzikert: Military Disaster or Political Failure?"। ১৩ মে ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৬ 
  6. Haldon 2001, পৃ. 172
  7. Haldon 2001, পৃ. 180.
  8. Grant, R.G. (২০০৫)। Battle a Visual Journey Through 5000 Years of Combat। London: Dorling Kindersley। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 1-74033-593-7 
  9. Holt, Peter Malcolm; Lambton, Ann Katharine Swynford & Lewis, Bernard (১৯৭৭)। "The Cambridge History of Islam": 231–232। 
  10. Norwich, John Julius (১৯৯৭)। A Short History of Byzantium। New York: Vintage Books। পৃষ্ঠা 241আইএসবিএন 0-679-45088-2 
  11. Thomas S. Asbridge The Crusades (2010) p 27
  12. Alp Arslan, the lion of Manzikert
  13. Konstam, Angus (২০০৪)। The Crusades। London: Mercury Books। পৃষ্ঠা 40। আইএসবিএন 0-8160-4919-X 
  14. Norwich, John Julius (১৯৯৭)। A Short History of Byzantium। New York: Vintage Books। পৃষ্ঠা 236আইএসবিএন 0-679-45088-2 
  15. Norwich, John Julius (১৯৯৭)। A Short History of Byzantium। New York: Vintage Books। পৃষ্ঠা 237আইএসবিএন 0-679-45088-2  — "The fate of Caesarea was well known."
  16. J. Haldon, The Byzantine Wars, 180
  17. Norwich 1991, পৃ. 238.
  18. Carole Hillenbrand (2007), Turkish Myth and Muslim Symbol: The Battle of Manzikert
  19. J. Norwich, Byzantium: The Apogee, 238
  20. Konstam, Angus (২০০৪)। The Crusades। London: Mercury Books। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 0-8160-4919-X 
  21. Norwich, John Julius (১৯৯৭)। A Short History of Byzantium। New York: Vintage Books। পৃষ্ঠা 239আইএসবিএন 0-679-45088-2 
  22. Heath, Ian; McBride, Angus (১৯৭৯)। Byzantine Armies, 886–1118। London: Osprey। পৃষ্ঠা 27। আইএসবিএন 0-85045-306-2 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  23. Norwich, John Julius (১৯৯৭)। A Short History of Byzantium। New York: Vintage Books। পৃষ্ঠা 240আইএসবিএন 0-679-45088-2 
  24. Peoples, R. Scott (2013) Crusade of Kings Wildside Press LLC, 2008. p. 13. আইএসবিএন ০-৮০৯৫-৭২২১-৪, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮০৯৫-৭২২১-২
  25. Wikiquote: Alp Arslan

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]